আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওরা যুগের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে চায়

বড়াইগ্রাম(নাটোর) উপজেলার সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে এই ব্লগে আলোচনা করা হবে। বেশী করে নিমগাছ লাগান, আপনার পরিবেশ ভাল থাকবে।

সময় বদলে গেছে। নারী এখন কেবলই রান্না আর সন্তান মানুষ করার মধ্যেই তার দায়িত্ব শেষ মনে করতে চায় না। জ্ঞানের প্রতিটি স্তরেই শুধু নয় কর্মেক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে নারী সফলতার স্বাক্ষর রাখতে চায়।

সমাজের প্রায় প্রতিটি নারীই এখন ঘরে বসে না থেকে অজানাকে জানতে চায়, অদেখাকে দেখতে চায়। হতে চায় আত্বনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী। বাবা, ভাই ও স্বামীর মতোই সমাজ ও দেশ গঠনে তারা অনবদ্য ভূমিকা রাখতে চায়। নাটোরের মেয়েরা তাই নিজেদের বর্তমান সমাজের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে কম্পিউটারে দক্ষতা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়েছে। তারা ঘরে বসেই পৃথিবীকে জানতে চায়।

আধুনিক যুগের তথ্য প্রযুক্তির পুরোটা সুবিধাই তারা ভোগ করতে চায়। কেস স্টাডি-১ শেলী খাতুন। এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬০ পেয়ে বানিজ্য বিভাগ থেকে পাশ করেছে। ৪ ভাই বোনের মধ্যে শেলী দ্বিতীয়। বড় বোনটা জন্মগত ভাবেই মানসিক প্রতিবন্ধী।

বাবা নওশের আলী শহরের বাসায় বাসায় ঘুরে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত কাঠের গুড়া বিক্রি করে। তাতে যা আয় হয় তা দিয়ে অতি কষ্টে দিন কেটে যায় পরিবারটির। ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে রাজশাহী অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শেলী কোচিং করতে পারেনি। বাড়িতেই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শেলীদের পরিবারের কেহই শিক্ষিত নয়।

তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা নিতে চায় শেলী। পাশাপাশি ভবিষ্যতে দেশের জন্য নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চায়। বড় হয়ে একজন বড় মাপের ব্যাংকার হবার স্বপ্ন দেখে অসহায় পরিবারের এই মেয়েটি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় যে পরিবারের সেই পরিবারের এই মেধাবী মেয়েটি এখন প্রতিদিন দুই ব্যাচ ৮ জন ছাত্র-ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়িয়ে পরিবারের খরচ যোগায়। এত কিছুর মধ্যেও শেলী বুঝে বর্তমানে যুগে সফল হতে হলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

রাখতে হবে পৃথিবীর সর্বশেষ খোঁজ-খবর। কম্পিউটারে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাই সে এখন নিয়মিত কম্পিউটার শিখছে। সে বলে কম্পিউটার জানার জন্য যদি লেখা পড়ার মাঝে কোন খন্ডকালীন চাকুরী পাই ! আর তাই বাবা নওশের আলী শত কষ্টের মাঝেও মেয়ের কম্পিউটার প্রশিক্ষণে ভর্তির জন্য এক হাজার টাকা ভর্তি ফির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আর্থিক সামর্থ না থাকলেও চেষ্টা করছে শেলী।

তার বিশ্বাস কম্পিউটারে দক্ষতা অর্জনই তাকে তার লক্ষ্যে অবশ্যই একদিন পৌছে দিবে। কেস স্টাডি-২ সুমনা ও শারমিন দুই বোন। ওরা চার ভাই ও দুই বোন। দুবোনই নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজে পড়ছে। সুমনা রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে আর শারমিন ডিগ্রীতে পড়ছে।

ওদের আদি নিবাস কুমিলায়। বাবা কেরামত আলী নাটোর পিডিবিতে চাকুরীর সুবাদে ওরা এখন নাটোর শহরের আলাইপুরে বসবাস করে। লেখাপড়া শেষে ওরা ভালো চাকুরী করতে চায়। ভালো চাকুরীরর জন্য যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে ওরা কম্পিউটার শিখছে। সুমনা মনে করে কম্পিউটারের ব্যাপক জ্ঞান ছাড়া শুধু লেখাপড়া সনদ দিয়ে আগামী দিনে আর ভালো কোন চাকুরী ব্যবসা কিছুই করা যাবে না।

বর্তমান যুগে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে বা স্বাবলম্বী হতে হলে সবাইকেই কম্পিউটারে দতা অর্জন করতে হবে। তাই পড়ালেখার মাঝেই ওরা নিয়মিত কম্পিউটার শিখছে। ওরা তাই ভর্তি হয়েছে মহিলা ও শিশু অধিদপ্তরের অধিনে পরিচালিত মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। কেস স্টাডি-৩ মুস্তারিফা খাতুন। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট।

বাবা মজিবুর রহমান মাদরাসা শিক্ষক। বর্তমানে ও নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অর্নাস প্রথম বর্ষে পড়ছে। ওদের বাড়ি শহরের ভাঙ্গা মসজিদ এলাকায়। ছোট বেলা থেকেই মুস্তারিফার কম্পিউটারের প্রতি ছিলো ভিষন ঝোক। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবার পক্ষে মেয়ের ইচ্ছার মূলায়ন করতে অনেক কষ্টকর হলেও বাবা মজিবুর রহমান শত কষ্টের মধ্যেও দুই বছর আগেই ওকে কম্পিউটার কিনে দিয়েছে।

মুস্তারিফা মনে করে, বর্তমান সময়ে কম্পিউটারে দক্ষতা ছাড়া সময়ের সাথে চলার কোন সুযোগ নেই। কোন নারী যদি দক্ষভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চায় এবং নিজেকে পুরুষের চাইতে পিছনে ফেলে না রেখে স্বাবলম্বী বা প্রতিষ্ঠিত হতে চায় তবে তাকে অবশ্যই কম্পিউটারে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। বাড়িতে কম্পিউটার থাকলেও সেখানে শেখানোর মানুষ নেই। তাই কম্পিউটারে দক্ষতা বাড়াতে এবং সঠিকভাবে শিখতে মুস্তারিফা প্রশিক্ষণ কোর্স করছে। কেস স্টাডি-৪ অঞ্জনা পাল ও অজন্তা পাল।

ওরা দুই বোন। বাড়ি নাটোর শহরের মীর পাড়ায়। দুজনই বিবাহিতা। ১৯৯৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষে পড়ার সময় অঞ্জনা পালের বিয়ে হয়। স্বামী রঞ্জন পাল গ্রামীন ব্যাংকের কর্মকর্তা।

ওদের আকাংখা (৯)ও আনন্দী (৩) নামে দুটি মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পরেই অঞ্জনা পাল বিএ এবং বিএড করেছেন। অজন্তা পাল বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। অজন্তা পালের স্বামী তরুন সরকার সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অন্বেষা নামে তাদেরও একটি আড়াই বছরের মেয়ে রয়েছে।

স্বামী সন্তান পরিবার সব সামলেও দুবোনই স্বপ্ন দেখে আরো বড় হবার। বড় হবার জন্য ওরা যেন সিড়ি খুঁজছিলো। সেই সিড়ি হিসেবেই ও কম্পিউটারে জ্ঞান বাড়ানোর সিন্ধান্ত নেয়। ছোট বোন এবং ভগ্নিপতি বড় বোনকে উৎসাহ দিয়ে ভর্তি করেছে কম্পিউটার প্রশিন কেন্দ্রে। অজন্তা পাল তার সন্তানকে আধুনিক প্রযুক্তির সব শাখার সঠিক ধারনা দিতে চায়।

অজন্তা বলেন, যুগ হিসেবে এখন শুধু শিতি মা হলেই চলবে না সন্তানকে সময়োপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রতিটি সচেতন মাকে কম্পিউটারের সঠিক ধারনা অর্জন করতে হবে। কেস স্টাডি-৫ আক্তার বানু বীথি। নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর ঘাট এলাকায় মেয়ে। বাবা আবু বকর সিদ্দিক একজন কৃষক। বীথি বর্তমানে নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজে দর্শনে অর্নাস শেষ বর্ষে পড়ছে।

ছোট বেলা থেকেই বীথির ইচ্ছা বড় হয়ে বীথি সাংবাদিক হবে। সমাজের অসহায় অবহেলিত দুঃখি মানুষের এবং না জানা নানা সাফ্যলের কাহিনী লিখে দেশের মানুষকে জানাবে। বীথি মনে করে সাংবাদিকরা সমাজের অনেক বেশী দায়িত্ব পালন করা সম্ভব। একজন সাংবাদিক প্রতিদিন নতুন নতুন অজানা তথ্যে ভরা রহস্যের বাহিনী দেশের মানুষকে জানাতে পারে। একজন মানুষের ইচ্ছা ও চিন্তা সমাজের সকলের কাছে প্রকাশের এর চেয়ে সহজ মাধ্যম আর নেই।

একজন সফল সাংবাদিক হতে হলে তাকে অবশ্যই দেশ বিদেশের সর্বশেষ নানা তথ্য জানতে হবে। এ জন্য তাকে অবশ্যই কম্পিউটার ও ই-মেইল, ইন্টারনেট দক্ষভাবে ব্যবহার জানতে হবে। বীথি তাই দক্ষতা বাড়াতে কম্পিউটার শিখছে। বীথির মতোই সীমা, শাম্মী, শিরিনা ও সালমার মতো ৪০ জন নিজেদের সমাজের উপযোগী এবং দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে কম্পিউটার শিখছে। ওরা সবাই কর্ম জীবনে সফল হতে চায়।

শুধূ সফলতা নয়, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে কর্মজীবনে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষ হাতে সব কিছু পরিচালনা করতে চায়। হতে চায় স্বাবলম্বী নারী ও দক্ষ এবং অভিজ্ঞ জননী। সন্তানকেও তারা নিজেই আধুনিক প্রযুক্তির সব শাখার সঠিক ধারনা দিতে চায়। তাই এরা নাটোর শহরে কানাইখালীতে স্থাপিত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত জাতীয় মহিলা সংস্থা বাস্তবায়িত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হয়েছে। এখানকার প্রশিক্ষক মোঃ মনিরুল ইসলাম মনির জানান অত্যন্ত কম খরচে এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

প্রতি ব্যাচে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাসিমা বানু লেখা নিয়মিত এই কোর্সের তদারকি করছেন। তথ্য ও ছবিঃ নাটোর জেলা সংবাদদাতা, নয়াদিগন্ত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।