আমার অসম্ভব প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার বিখ্যাত দীর্ঘশ্বাসমূলক কবিতা 'কেউ কথা রাখেনি'তে নানা বিষয়ে ক্ষোভ এবং হতাশা ঝেড়েছেন। প্রিয় লেখক হবার সুবাদে যা হয় আর কী? তার আনন্দ বেদনা আমাকেও ছুঁয়ে গেছে। মন খারাপ হয়েছে ওই সব মানুষদের উপর।
ফাজিলগুলো, প্রতারকগুলো কথা রাখলো না কেন?
যে কারনে, ওই কবিতাটি অনেকবার পড়েছি জীবনে। তবে পড়তে পড়তে ইদানিং দেখেছি যাদের বিরুদ্ধে সুনীল দা'র এতো অভিযোগ তারা কী সত্যিই অতোটা দোষী?
যেমন ধরেন, বোষ্টমীর কথাই ধরি, সুনীলের ভাষায় ওই মহিলা তাকে শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে বলেছিল।
মানে, আরেকদিন শোনাবে। কথা হচ্ছে, এখনকার সঙ্গীত চর্চা আর আগের সঙ্গীত সাধণা তো এক ছিল না। এটা তো সুনীলের মাথায় রাখা দরকার ছিল। হাল আমলের গীতিকারগণ যেমন এক বসাতেই গোটা দশেক গান না লিখে উঠতে পারেননা। সেই বোষ্টমী হয়তো বাকী অন্তরাটুকু লিখতে পারেনি।
কারণ, তারা এখনকার মতো এমন বাণিজ্যিকভাবে গানটাকে নেয়নি। আর সবচেয়ে বড় কথা একটা গান শোনার জন্য পঁচিশ বছর অপেক্ষাটাও সুনীল'দার বাড়াবাড়ি ছিল। যে কোনো শোকের আয়ুও যেখানে মাত্র একবছর।
আচ্ছা পরের কথা আসি, সুনীলের মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো। ভালো কথা।
নিয়ে যায়নি। এখানে নাম শুনেই মনে হচ্ছে নাদের আলী ব্যাটার বয়স অনেক। সে ব্যাটা আসলে বেঁচে ছিল কিনা সে ব্যাপারেও কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেননি দাদা এখানে। আর সুনীল'দাকে বলা উচিত, দাদা লম্বা হলেই বড় হয় না। একথাটা আপনার বোঝা উচিত ছিল।
তারপর আসি তার অকালপক্ক এক প্রত্যাশায়, বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও ...।
কেন বলেছিলেন?
সুনীল গাঙ্গুলীর হতাশা, একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো, লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা। ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি। ভিতরে রাস-উৎসব অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা কত রকম আমোদে হেসেছে। আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি! আমার কথা হচ্ছে, ভাই যে সময়ে আপনি রয়্যাল গুলি, লাঠি-লজেন্স খেতে চেয়েছিলেন সেই সময়ে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা আপনার দিকে তাকাবে সে প্রত্যাশাও করেছেন! হাস্যকর।
আপনার অকালপক্কতা ইর্ষণীয়। লজেন্সের আমলে আপনি ফর্সা রমনীদের কামনা করতেন? ছিঃ।
ভাই সুনীল, ছেলের এই চারিত্রিক দোষ দেখে কোনো বাবা কী কথা রাখতে চাইবে? আপনিই বলেন!
আর বরুণা ম্যাডামের কথা কী বলমু! পৃথীবীর নিয়মই এইটা। বহু আগে থেকেই এটা জানা কথা, তেনারা প্রেম করেন কবির সাথে, বিয়ে করেন সওদাগরকে। দেখেন না যে কারনে আমিও কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছি।
আমার কোনো কবিতা কোনো পত্র-পত্রিকায় বা ইদানিং ব্লগ-টগে দেখেন? দেখেন না। যে কারণে ক'দিন আগে বাসা থেকে টাকা পয়সা নিয়ে সামান্য ব্যাবসায় হাত দিয়েছি। যাই হোক। আর আমি বুঝিনা, বরুনা দিদিরে নিয়ে পার্কে ঘুরতে না যাইয়া, রাস্তার পাশে ফুলের দোকান থেকে গোলাপ না কিনে দিয়ে আপনি কেন, ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছিলেন? দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম খুজতে গিয়েছিলেন?
তাই সুনীলদা, আপনার প্রতি অনুরোধ রইলো, ব্লগের এই পোষ্ট যদি পড়ে থাকেন তাহলে অনতিবিলম্বে এই বিভ্রান্তিমূলক কবিতাটি সংস্কার করেন। শুধু মানুষের দোষ দেখলেই তো হয় না।
সবারই জীবনে সমস্যা থাকে। তাদেরও হয়তো ছিল। সেটাও মাথায় রাখা জরুরী ছিল।
কেউ কথা রাখেনি কবিতাটির জন্য ::: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।