www.facebook.com/mahamudul.hasan.9619 ভ্রমন করা, লেখালেখি করা, বিজ্ঞান ওয়েবসাইট দেখা, অনেক বই ও ম্যাগাজিন পড়ি এবং ওয়েবসাইট প্রোগ্রামিং করতে খুব পছন্দ করি।
ভারতীয় টেলিভিশন ইটিভি বাংলার খবরে জানানো হয়, সোমবার রাত ২টায় কলকাতায় নিজের বাড়িতে মারা যান ৭৮ বছর বয়সী এই সাহিত্যিক। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
ইতিহাসের ছায়ায় লেখা ‘সেই সময়’ আর ‘প্রথম আলো’র মতো উপন্যাস যার কলম দিয়ে বেরিয়েছিল, যার কবিতার পংক্তি থেকে ধার করে বাঙালি যুবকেরা আরো বহুদিন বলবে- কেউ কথা রাখেনি, সেই কবি, কথাশিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর নেই।
তার পারিবারিক বন্ধু দীপেন্দু ভট্টচার্য বলেন, “শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না।
কালও ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ও বললো পরে যাব। রাতে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। এরপর বাথরুমে গেল। কয়েক মিনিট পর হার্ট অ্যাটাক। ”
সুনীলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকালেই শোকের ছায়া নেমে আসে দুই বাংলার সাহিত্যিক, শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।
অনেকেই তার কলকাতার বাড়িতে ছুটে যান, এই সাহিত্যিককে শেষবারের মতো দেখতে।
সকালে বাড়ি থেকে সুনীলের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পিস হেভেন সংরক্ষণাগারে। বুধবার কলকাতায় এই কবির শেষকৃত্য হবে বলে ইটিভি বাংলা জানিয়েছে।
একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সাংবাদিক ও কলাম লেখক সুনীলের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের ফরিদপুরে। পরিবারের সঙ্গে কলকাতা চলে যান মাত্র চার বছর বয়সেই।
তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এবং ব্যক্তিগত সফরে বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।
বয়সের পার্থক্য থাকলেও বাংলা ভাষার আরেক জনপ্রিয় কথশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সুনীলের বন্ধুত্বের নৈকট্য তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশে বেড়াতে এসে গাজীপুরে হুমায়ূনের গড়া নুহাশ পল্লীতেও বেড়াতে গেছেন সুনীল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও গভীরভঅবে নাড়া দিয়েছিল তরুণ সুনীলকে। ১৯৭১ সালের সেই দিনগুলোয় বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে তিনি কলম চালিয়েছেন জন্মস্থানের মানুষের পক্ষে।
পরিণত বয়সের অনেকটা সময় গদ্য লেখায় মজে থাকলেও সুনীলের ‘প্রথম প্রেম’ ছিল কবিতা। ১৯৫৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার ঠিক আগের বছর তিনি কবিতার পত্রিকা কৃত্তিবাসের সম্পাদনা শুরু করেন, যা পরে পরিণত হয় তখনকার তরুণ লেখকদের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে।
সেই সময় ভারতে ‘হাংরিয়ালিজম’ নামের সাহিত্য আন্দোলনে যারা যুক্ত হয়েছিলন, সুনীল ছিলেন তাদেরই একজন। সুনীলের লেখা ‘নিখিলেশ’ আর ‘নীরা’ সিরিজের কবিতাগুলো তরুণদের মুখে মুখে ছিল বহুদিন।
১৯৫৮ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর ১৯৬৬ সালে পাঠকের হাতে পৌঁছায় সুনীলের প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’।
নীললোহিত, সনাতন পাঠক, নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে সুনীল লিখে গেছেন ভ্রমণ কাহিনী, গোয়েন্দ গল্প, কখনো বা শিশুতোষ সাহিত্য। ‘আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’, ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘অর্ধেক জীবন’, ‘প্রথম আলো’, ‘সেই সময়’, ‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘মনের মানুষ’ এর মতো বইগুলো যেমন পাঠকপ্রিয় হয়েছে, তেমনি পেয়েছে সমালোচকদের স্তুতি।
সুনীলের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ও ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ উপন্যাসকে চলচ্চিত্রের রূপ দিয়েছেন অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়। আর লালনকে নিয়ে লেখা সুনীলের ‘মনের মানুষ’ এর চলচ্চিত্রায়ন করেছেন গৌতম ঘোষ।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭২ ও ১৯৮৯ সালে দুই দফা আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, ২০১১ সালে দ্য হিন্দু লিটারেরি পুরস্কারসহ জীবনভার বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন।
বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ থাকলেও সুনীল এখনই চলে যাবেন- তা ভাবতে পারেননি কলাকাতায় তার ঘনিষ্ট সাহিত্যক বন্ধুরাও।
পশ্চিমবঙ্গের আরেক জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কলকাতার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, “সবাই তো জানে, সে কতো বড় মাপের সাহিত্যিক ছিল। কিন্তু কতো বড় মাপের মানুষ সে ছিল- তা তো সবাই জানবে না। ”
“এতো কোমল, এতো আবেগপ্রবণ মানুষ, এতো ন¤্র ভদ্রলোক সচরাচর দেখা যায় না। ও যে কতোজনকে গোপানে সাহায্য করেছিল, তা আমি জানি।
”
জীবিকার জন্য সুনীল পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতা। ভারতের সর্বাধিক পঠিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দায়িত্ব পালন করেছেন ভারতের জাতীয় সাহিত্যপ্রতিষ্ঠান সাহিত্য আকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসেবেও।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বরেণ্য এই কথ সাহিত্যিককে ২০০২ সালে সাম্মানিক পদ ‘কলকাতার শেরিফ’ হিসাবে নিয়োগ দেয়।
দুই শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা সুনীল ১৯৬৭ সালে স্বাতী বন্দোপাধ্যায়কে।
তাদের একমাত্র সন্তান সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়।
খবর: bdnews24.com/bangla
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।