দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
জানুয়ারীর ১ তারিখ। প্রতি বছর এ দিনটা এলেই ভ্যালারিকে মনে পড়ে। আমি ওর ঠিকানায় ছোট্ট একটা চিঠি ছাড়ি। এক দিন বাদে মেয়েটিও ছোট্ট করে আমাকে একটা উত্তর করে।
ব্যাস ঐ টুকুই, তার পর এক বছর। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। যে মেয়েটির সাথে এক চাঁদ জোৎস্নায় দিগন্ত বিস্তৃত তুষার পেরিয়ে ছুটে ছিলাম চলন্ত রেল গাড়ীর পেছন বেসামাল! চাঁদের আলোয় প্লাবিত রাত, চারিদিকে পিচ্ছিল বরফ আবৃত পৃথিবী জোৎস্না আলোয় উদ্ভাসিত জীবন! সেই আলোক নগরে সিটি মেরে ধেয়ে আসা রেলগাড়ীর শব্দ। জীনের অপার এক ভালোলাগায় সে দিন আর একটু হলেই পিছলে রেলের চাকার তলে পরে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারতাম। আজ ভাবলেই গা শিউরে ওঠে, অথচ সে রাতে কি অবলিলায় ছুটে ছিলাম! জীবন ছেড়ে জীবনের আনন্দে!
আমার জীবনের অদ্ভুত এক পরিচ্ছদের নাম ভ্যালরী।
ফরাসী তরুনী। পেশায় ফ্যিল্যান্স ফটোগ্রাফার। ভ্যালারি থাকত সেইন্ট ভিয়াতুর স্ট্রীটের এক কোনায়। পারি থেকে এসে ওর এক বান্ধবীর ওখানে উঠেছিল। মন্ট রয়্যাল এলাকাটি এক সময় নাকি খুব জমজমাট ছিল।
বলা যায় এক সময় এ এলাকাটি ছিল শহরের প্রাণ কেন্দ্র। সেইন্ট ক্যাথরীন, সেইন্ট ডেনিসের মত এক সময় মন্ট র্যাল ও তার আশপাশের ঝলমল ঝলমল করত রাতে দিনে। সেটা বেশ আগেরই কথা। সেই মন্টরয়ালের কাছেই একটা রাস্তা সেন্ট ভিয়াতুর। রাস্তাটা ধরে হাটলেই সারি সারি কফি শপ, বুটিক, বার রেস্তোরা।
দেখলেই কেমন যেনো ভালো লাগে! ভেলরী কাজ করতো সেন্ট ভিয়াতুরে ইহুদী মালিকের এক বেগল শপে। দীর্ঘ্য সময় এ শহরে থাকলেও কখনো ঐ দিকটায় যাওয়া হয়নি। ভেলরীই আমাকে ও পথের ঠিকানা দিল প্রথম।
যে বাড়ীটিতে ওরা থাকত আসলে ওটা ছিল একটি পরিত্যাক্ত ফ্যাক্টরীর। এক রকম খোলা একটা ফ্লোর সম্ভবত কোন গার্মেন্টস্ টারমেন্টস্ ছিল এক কালে।
ওটা পুরোটাই কম দামে ভাড়া নিয়েছে ওরা দুই তিনজন মিলে। কেউ হয়ত নাট্য শিল্পী কেউ কোন পাবের ডিজে কেউবা ভেলরীর মত ভিন দেশী ফটোগ্রাফার/ মুসাফির। বিশাল ফ্লোরের তিন কোনায় আধাপার্টিশন করে তিনটা বিছানা পাতা এক কোনায় ওপেন কিচেন সারা ঘর ময় ছোট বড় নানা পদের গাছগাছালি। ঊচু ছাদ ঘেকে ঝুলছে নানান পদের হালকা আলোর বাতি। বিশাল লৌহদ্বার পেরিয়ে ঢুকতেই এক প্রস্থ সিড়ি।
উপরে উঠতেই একট টেবিল ঘিরে চার পাঁচটা কাউচ। পাশে সেই পুরোনো মডেলের কাঠের বাক্সে ভরা এক টিভি সেট। ঘরের ঠিক মাঝখানটায় গোলকরে পর্দায় ঘেরা একটা স্নান ঘর! কি যে পাগল করা এক বসত, কোউ না দেখলে বুঝবেনা! এতোই বড় সেই যায়গা এক বার ভেলারির তোলা ছবি আর আমার তোলা ভিডিওর একটা প্রদর্শনী করে ছিলাম আমরা ওখানে। ব্যাপারটাই এমন, হয়ত দেখা গেল কোন মিউজিসিয়ান ওখানে ওর গানের এ্যলবামের ওপেনিংটা করছে ত কোন পেইন্টার তার চিত্র প্রদর্শনী। এ ধরনের আবাসকে স্থানীয় ভাষায় ওরা লোফ্ট বলে শুনেছি।
ভ্যালের সাথে আমার পরিচয় ঘোরতর এক শীতে, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এক মিছিলে। সে গল্প হয়ত কোন দিনই আমি ঠিকঠাক লিখতে পারবো না, তবে প্রতি বছর জানুয়ারীর এক তারিখ এলে কিছু স্মৃতি আমাকে নির্ঘূম করে দেয় আরো। ভেলরীকে আমি পাহাড়ে উঠবার গল্প বলেছিলাম একবার। মন্ট রয়াল পাহাড়টা দেখিয়ে বলেছিলাম শীতটা যখন আরো ঘন হয়ে আসবে বরফ ঢেকে দেবে সমস্ত মন্টরয়াল পাহাড়। পত্রপল্লবহীন বৃক্ষগুলো দাড়িয়ে থাকবে শুনসান।
তখন এক দিন আমি তোমাকে ঐ পাহাড়ের চুড়ায় নিয়ে যাবো মেয়ে। ভ্যালের হাসিটা আজো মনে পড়ে!
একবার জানুয়ারীর পহেলা তারিখে ভ্যালরীকে নিয়ে বরফ কেটে কেটে ঐ পাহাড় চুড়ায় উঠে ছিলাম। ঠান্ডায় জমে যাওয়া হাতে দুকাপ হট চকোলেট ধরে বরফের ওপর বসে ছিলাম কতক্ষন জানি না। সে রাতে আমি আর বাড়ী ফিরে যাইনি। অমন রাতের মত রাত পৃথিবীতে বুঝি খুব কমই আসে।
ইশ ঐ পাহাড়ে ওঠার গল্প নিয়ে যদি কোন দিন একটা ছবি বানাতে পারতাম!
ভ্যাল ফ্রান্সে ফিরে যাবার আগে যে প্রদর্শনীটা করে ছিল ওখানে স্লাইডে একটা স্টলেশন ছিল এই রকম: দেয়ালে একটা বালিশ তার ওপর ঘুরে ঘুরে কিছু স্লাইড চলছে। মন্ট্রিয়লে তোলা কিছু স্মৃতি জড়ানো মুখ। ভ্যালের রুমমেট, আরও কজন বন্ধু। একটা ছবিতে এক ইন্ডিয়ান রেস্তোরায় ডিনারে হাসি মুখে তাকিয়ে আছি আমি। ভ্যাল আমার পাশে এসে ফিসফিস করে বলে, আমি যখন ঘুমোবো তখন এ স্মৃতি গুলো আমার সাথে থাকবে!
কত সহস্র স্মৃতির সমহ্নয় আমাদের এ অসহায় জীবন, কে জানে কে জানে কে জানে!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।