আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপ্লবী নব প্রজন্মের প্রতি মাস্টারদা সূর্যসেনের খোলা চিঠি।

আমি অগোছালো শব্দের কুন্ডলি, আমি ভালোবাসতে পারি, মায়ের মুখের জন্য ছিনিয়ে আনতে পারি হাসি, আমি ছিনিয়ে আনতে পারি মানচিএ, গড়তে পারি দেশ। যদিও বা আমি অগোছালো শব্দের কুন্ডলি। ছুঁয়ে দেখো আমায়; আমি অগোছালো শব্দের কুন্ডলি, আমি ভালোবাসতে পারি। । বিপ্লবী নব প্রজন্মের প্রতি মাস্টারদা সূর্যসেনের খোলা চিঠি।

হে বিপ্লবী নব প্রজন্ম! আমি তোমাদের মাস্টারদা সূর্যসেন বলছি, শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে, প্রজন্ম বিপ্লবের মহাজাগরণে তোমাদের সাথে আমি একাত্ততা ঘোষণা করছি। অন্যায়, অবিচার, শোষন ও শাসনের কালো হাত থেকে স্বদেশ রক্ষার এই মহান প্রয়াস, মাতৃভূমির সাথে বিশ্বাস ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে নব প্রজন্মের এই মহাজাগরনে, ইতিহাসের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সকল বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে তোমাদের জানাই বিপ্লবী শুভেচ্ছা। আমি এই বাংলায় স্বদেশী আন্দোলনের ১৯০৫, ২০, ৩০, আর ৪৭ দেখেছি । আমি দেখেছি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১-এর সাধীনতা সংগ্রাম আর ৮৯-এর গণজাগরনের রঙ । ২০১৩-র প্রজন্ম বিপ্লবের এই রূপ আমি দেখিনি কখনো।

মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে মৃত্যুকে হাসিমুখে করেছিলাম আলিঙ্গন, তোমাদের মাঝে জন্ম নেব বলেই অপেক্ষায় ছিলাম প্রতিক্ষণ। হে গৌরবের মহাপ্রজন্ম, আমি লাখো প্রানের সঞ্চারণে আজ উজ্জীবিত! বহু কাল পরে, তোমাদের মাঝে আমি আবার প্রাণ ফিরে পেলাম। তোমরা প্রমান করেছ আবার, বিপ্লবীরা মৃত্যুঞ্জয়ী হয়। একজন বিপ্লবীর জীবনের বিনিময়ে কালে কালে সহস্র বিপ্লবীর জন্ম হয়। তোমরাই তো নবপ্রজন্মের ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা,কল্পনা দত্ত, রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, ভাসানী ফজলুল হক আর শেখ মুজিব।

তোমরাইতো বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, জাহানারা ইমাম আর নুর হোসাইনের চিরচেনা মুখ। বাঙ্গালি জাতীর অধিকার আদায়ের বিপ্লবী ঐতিহ্য তোমরা রেখেছো সমন্নুত, আমি শ্রদ্ধায় অবনত। লাখো শহীদের বহুকালের অতৃপ্ত আত্মা আজ তৃপ্তির স্বাদ পেলো! হে ক্রান্তিকারী মহাপ্রজন্ম, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে,অতীতের প্রতিটি বিপ্লব যদি ইতিহাস হয়ে থাকে, তবে জেনে রেখো, তোমরা এই মুহুর্তে অনাগত ভবিষ্যতের ইতিহাস রচনা করছো। লাখো শহীদের তাজা রক্ত লেগে আছে এই দেশ, এই মাটি, এই পতাকায়। অসংখ্য জননীর সম্ভ্রম লুণ্ঠনের গল্প লুকানো এই "স্বাধীনতায়"।

আমি নিশ্চিত জানি, যুগে যুগে লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে যে স্বধীনতা তোমাদের আমরা চেয়েছি দিতে, সেই স্বাধীনতা তোমরা পাওনি আজো খুঁজে। এখনো ক্ষুধার্তের হাহাকার ঘরে ঘরে, মেলেনি জীবনের নুন্যতম নিশ্চয়তা, মায়ের সম্ভ্রম বিক্রি হয় খোলা বাজারে, অধিকার বঞ্চিত মানুষ উন্মুক্ত রাস্তায় করে নিদ্রা যাপন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির হয়েছে দুরারোগ্য ব্যাধি, কৃষক পায়নি আজো ফসলের ন্যায্য দাম, গনতন্ত্রের নামে চলছে নিয়ম তান্ত্রিক লুটেরা রাজতন্ত্র, সার্বভৌম ক্ষমতা আজ সন্ত্রাস আর কালোবাজারীর হাতে, মজুতদারের হয়েছে বিত্ত বৈভবের পাহাড়, বাংলার অরক্ষিত সীমান্তে মানবতা হয় নগ্ন লাঞ্ছিত, বাক স্বাধীনতা হয়েছে খর্ব আর ধর্মকে করা হয়েছে কুলষিত। রাজাকারের নীল্ নকশায় স্বাধীনতার বুকে পা দিয়ে ২০০৯ এ পিল্খানায় হয় গণ ধর্ষণ, লুটতরাজ আর গনহত্যা। ৭১-এর স্বাধীনতার দোসররা আজো নিরাপদে আশ্রিত, থাকে চালকের ভূমিকায়, যোগায় ইন্ধন, নাচে নাশকতায়। তারাইতো রাজাকার, যারা শত্রুর সাথে করে আঁতাত আর স্বদেশের সাথে মাতে বিশ্বাস ঘাতকতায় ।

বেলাশেষে সব শোষকের রঙ হয় এক, বসে জুয়ার টেবিলে, ভাগ করে নেয় মানচিত্র আর জনমানুষের অদৃষ্ট। শুধু ৭১ নয়, তার পরও আরো কতো রাজাকারের জন্ম হয়েছে এই বাংলায়। ১৯৭১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সেইসব রাজাকার অথবা রাজাকারদের আশ্রয় দাতার এখনো হয়নি সাজা। স্বাধীনতা এখনো দুষ্ট রাজনীতির বানিজ্যিক পণ্য,পসরা। তাইতো নব প্রজন্মের মহাবিপ্লবের এই ভয়ঙ্কর রূপ,এই মহাগনজাগরণ! আমিও আজ সব বিপ্লবীদের সাথে একসুরে বলছি : ৭১-এর স্বাধীনতার সংগ্রাম এখনো হয়নি শেষ, এইবার স্বাধীনতার স্বাদ পাবে আমার বাংলাদেশ! ওহে ক্ষণজন্মা মহাপ্রজন্ম, কালান্তরে শত বিপ্লবী যেই পতাকার স্বপ্নে ছিল বিভোর, সয়েছে অসহ্য মৃত্যু যন্ত্রণা, মুহুর্তে গিলে নিয়েছে প্রাণনাশী বিষ, করেছে লাগাতার অনশন, জীবনকে করেছে উৎসর্গ অকাতরে,তোমাদের হাতে সেই স্বপ্নিল পতাকা আজ উড়ে কি প্রবল অহংকারে! গণজাগরণের এই মহেন্দ্রক্ষণে, সাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ৪৩ বছরের সুফল জননীর হাতে তুলে দেবার গুরু দায়িত্ব যে আজ তোমাদেরই কাঁধে! মনেরেখো, বিপ্লবীরা যেমন কখনো মরেনা, তেমনই কখনো করেনা আদর্শের বেচাকেনা।

"স্বাধীনতা" শব্দের প্রকৃত অর্থ হাতে করে,তোমাকে যে ফিরতেই হবে ঘরে । নয়তো এমন আরো কতো ৪৩ বছর বয়ে যাবে বেহিসেবে, বাংলার মানুষ পাবেনা স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ, ইতিহাসও করবেনা কখনো তোমাদের ক্ষমা। হে বিপ্লবী মহাপ্রজন্ম তোমারা শোনো, ১৮ এপ্রিল ১৯৩০-চট্ট্রগ্রামে বিপ্লবি সহযোদ্ধাদের সাথে করে লুটে নিয়েছিলাম ইংরেজ শ্বাসকেদের অস্ত্রাগার, দখল করে নিয়েছিলাম পুলিশ ব্যারাক, ঘোষনা দিয়েছিলাম এই বাংলার প্রথম স্বাধীনতার, উড়িয়ে দিয়ে ছিলাম বিজয় কেতন ! ক্ষনিকের তরে হলেও মুখ থুবরে পড়েছিল ব্রিটিশ শ্বাসন। যেই স্বাধীনতার জন্যে পাগলের মতো ছুটেছিলাম রাত দিন, সেই স্বাধীনতার দৈর্ঘ্য ছিলো মাত্র চার দিন ! স্বাধীনতার দোসরদের আতাতে আমায় গ্রেফতার করেছিল ইংরেজ। করেছিলো কারাবন্দী আর পাশবিক নির্যাতন, অতপর ফাঁসির আদেশ।

হাতুড়ির নির্মম আঘাঁতে ভেঙ্গে দিয়েছিলো প্রতিটি দাঁত, গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো প্রতিটি অস্থী, থেথ্লে দিয়েছিলো পুরো শরীর বিপ্লব মুছে দেবে বলে। জানো, এই বাংলায় ওরা আমায় করেনি দাহন, ছুড়ে দিয়েছিলো বঙ্গপসাগরে বেঁধে লোহার কাফন। ওরা জানেনা, কালের বিপ্লব কখনো থেথলে দেওয়া যায়না, গুড়িয়ে দেয়া যায়না, দাবিয়ে রাখা যায় না। জীবন মৃত্যুর স্বন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলাম: "প্রিয় বন্ধু শোনো, মৃত্যু আমার দরজার কড়া নাড়ছে অবিরাম, আমার সত্তা করছে যাত্রা অনন্তের পথে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার এইতো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়! জীবনের এই আনন্দঘন, অলিক মহালগ্নে, আমি তোমাদের জন্য এক উপহার রেখে গেলাম। রেখে গেলাম আমার স্বপ্ন, আমার এক বুক সোনালী স্বপ্ন, স্বাধীন এক জন্মভূমি! প্রিয় বন্ধু,সামনে এগিয়ে যাও; পিছু ফিরিবার আর নেই যে সময়।

দাসত্বের দিন অতীত হলো বলে ! স্বাধীনতার চোখ ধাধানো স্বরূপ ঐতো দেখা যায়! জেগে উঠো এক সাথে, আর স্বপ্নটাকে রেখোনা অপূর্ণ। সাফল্য তোমাদের পথসঙ্গী হবেই। " ভুলে যেওনা লক্ষ শহীদের প্রানের দাবি, এক সাগর রক্তের প্রতিদান, মুছে দাও গত ৪২ বছরের কলঙ্কের অধ্যায়, যদি দিতে হয় রক্ত তবে দাও প্রাণ। সহস্র বছরের ইতিহাস রবে সাক্ষী , অনাগত প্রজন্ম গাইবে তোমাদের বিজয়ের জয়োগান! হে কালজয়ী মহাপ্রজন্ম, শত বিপ্লবীর প্রানের নির্যাস আমি তোমাদের উপর ছড়িয়ে দিলাম। তোমাদের সাথে আমি একাত্ততা ঘোষণা করলাম।

মহাপ্রজন্ম তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী হও মহাকালের, আর প্রজন্ম চত্বর শাহবাগ হউক নবজাগরণের গণ আদালত। “আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা”-তোমাদের পাশেই আছি, তোমাদের মাস্টারদা, সূর্যসেন। লিখেছেন - ব্লগার মাস্টারদা, সূর্যসেন মাস্টারদা সূর্যসেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।