আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপ্লবী কমল কৃষ্ণ গুহ

মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।

বিপ্লবী কমল কৃষ্ণ গুহঃ মেহনতি মানুষের জীবনশিল্পী[ ইদানিংকালে সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের গণতন্ত্রের পথে অগ্রসরমানতাকে এনমভাবে হাততালি দিয়ে প্রশংসা করছে যেন তাদের কোনো জয় হয়েছে। তারা বুঝাতে চাচ্ছে গণতন্ত্র পুঁজিবাদের নিজস্ব বস্তু, তা ধারণে সমাজতন্ত্র অসমর্থ এবং গণতন্ত্র বিকাশ হওয়া মানে সমাজতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়া। কিন্তু ইতিহাস বলে সমাজতান্ত্রিক দেশেই মানুষের জন্য অধিকতর গণতন্ত্র নিশ্চিত হয়েছে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের বিকাশ তো দুরের কথা বরং পুঁজির শিকলে গণতন্ত্র বন্দী, তা ইতোমধ্যে বিশ্ববাসী দেখেছে।

প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের কোনো দরদ নেই। তাদের দরদ পুঁজিবাদের জন্য। ----কমল কৃষ্ণ গুহ, তিনি ভুসুক ছদ্মনামে সাপ্তাহিক অনুসন্ধান পত্রিকায় লিখতেন। এ লেখাটি ১৯৮৮ সালের ১৮ এপ্রিল ছাপা হয়। এটা সম্পূর্ণ লেখা নয়, একটা অংশমাত্র।

মেহনতি মানুষের জীবনশিল্পী কমল কৃষ্ণ গুহের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১ জানুয়ারী। রাজবাড়ি জেলার বিলনয়াবাদ গ্রামের এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে। বাবা কিরণ চন্দ্র গুহ। কমল কৃষ্ণের বয়স যখন ৮ বছর তখন তিনি মারা যান। নিজ বাড়িতেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি রাজবাড়ির মড়েল হাইস্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন।

ওই স্কুল থেকে তিনি ১৯৬২ সালে এসএসসি পাশ করে রাজবাড়ি সরকারী কলেজে আইএসসি’তে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে তিনি এই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কশাস্ত্রে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার অব সায়েন্স ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে তিনি চলে যান ফরিদপুরে।

সেখানে একটি হাইস্কুলে শিক্ষতা শুরু করেন। কিছু দিন পর তিনি পাংশা কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। এই কলেজে তিনি ১২ বছর অধ্যাপনা করেন। ষাটের দশকের প্রথমভাগে তিনি ছাত্র আন্দোলনে যোগদেন। লড়াই-সংগ্রামের গৌরবোজ্জল ঐতিহ্যবাহী সংগঠন-বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন।

ছাত্রসমাজের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন তিনি। প্রাথমিক সদস্য থেকে শুরু করে এই সংগঠনের প্রথমসারির ছাত্রনেতার পদ অলঙ্কৃত করেন। তিনি ছাত্রসমাজের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি ডাকসুর সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যুক্ত হন।

সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে তিনি রাজবাড়ী জেলা ন্যাপের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন ভার পান। এ দায়িত্ব আন্তরিক নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে তিনি প্রথম সারির একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে তিনি সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হন। শুরু করেন কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের শোষণমুক্তির লড়াই-সংগ্রাম। ১৯৭৫-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি গোয়ালন্দ মহাকুমায় পার্টির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে আইন পেশায় যুক্ত হন। ওই বছর তিনি সবিতা চন্দকে সহধর্মিনী করেন।

সবিতাও ছিলো প্রগতিশীল। তাদের সংসারজীবন ছিলো আনন্দময় ও কর্মমুখী। দু’জনেই মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করতেন। তাদের একটি সন্তান জন্মেছিলো। তার নাম ঐশর্য গুহ (বৈশাখী গুহ)।

১৯৮৪ সালে ৫ দফা আন্দোলন চলাকালে তাকে এরশাদের পুলিশ বাহিনী গ্রেফতার করে। এ সময়ে বেশ কিছু দিন তিনি কারাগারে ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথেও যুক্ত হয়ে রাজবাড়ি জেলাব্যাপি কার্যক্রম বিস্তৃত করেন। একাজের জন্য বেছে নেন বিপ্লবী সত্যেন সেনের হাতেগড়া মেহনতি মানুষের সুখ-দুঃখের কথাগুলোকে গেঁথে সুর-ছন্দ দিয়ে গ্রাম-বাংলার পথে-ঘাটে পৌছে দেয়ার সংগঠন_উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’কে। ধীরে ধীরে রাজবাড়ি জেলায় গড়ে তোলেন উদীচীর সংগঠন।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হলেন তিনি। এ দায়িত্ব মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন। ১৯৮৭ সালে এরশাদের পুলিশ বাহিনী আবার তাকে গ্রেফতার করে। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলেন। কমিউনিষ্ট পার্টির ও উদীচীর নেতা-কর্মীকে এই আন্দোলনে যুক্ত করেন।

৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৪৩ বছর জীবনের মধ্যে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি লেখালেখিতে জড়িত ছিলেন। তাঁর কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও ছড়ায় আমরা সময় ও বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তিনি মূলত একজন রাজনৈতিক সাহিত্যিক ছিলেন। পৃথিবীতে নতুন কিছুই ঘটে না।

সমস্ত ঘটনা নিয়েই পৃথিবী। ক্রমশঃ এগিয়ে আসে দৃশ্যাবলী কখনও নীরবে অশ্রুপাত, কখনও হাততালি। কমল কৃষ্ণ গুহ যকৃতের রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯০ সালের ১৮ আগষ্ট মারা যান।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।