যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
মাঝারী গোছের সন্ত্রাসী। একটা মাত্র খুন করেতে পেরেছে। কমপক্ষে আট/দশটা কেস ফসকে গেছে, কখনও গুলি লেগেছে টার্গেটের গায়ে, কখনও মিস - কিন্তু মৃত্যুদূত হতে পারে নি। ফলে 'একটা খুনের খুনী' এর চেয়ে তাকে বেশী কিছু বলতে পারছে না র্যাব-৫১ এর মেজর। কিন্তু সন্ত্রাসী রুস্তুম অনেক বেশী জ্বালাতন করছে ইন্টারোগেশন টিমকে।
এখনও শুরু হয়নি। মেজরের রুমে বসে উল্টো এক নাগারে প্রশ্ন করে যাচ্ছে।
স্যার...আপনাদের হাতের টিপস কেমুন? এই প্রশ্নে শুরু হয়েছিলো উৎপাত। মেজর প্রথমে বুঝতে না পেরে সহকর্মীর সাথে সাইট সিলেকশন এ মনযোগ দিল। রুস্তুম বলে চললো, সালার একটা খুন করছি মাত্র...নিশান ঠিক থাকলে দশটা ফালাইতে পারতাম এতদিনে!
সহকর্মী দুই গ্রেড নিচের কর্মকর্তা।
মুখের কোনে হাসি ঝোলে। মেজর সাহেবকে বলে, স্যার, শুনছেন সালার কথা! সালারে হাতের টিপস কি এখনই দেখাইয়া দিমুনি!
মেজর সাব এইবার বুঝলেন। গুরু গম্ভীরভাবে বললেন সহকর্মীকে, আপনি আপনার কাজ করেন!
রুস্তুম কিন্তু দমে যাবার পাত্র নয়। বলে, স্যারদের হাতের নিশানা মনে হয় সুবিধার না। আপনাদের ডাইরেক্ট ফায়ারের কোনো খবর তো এখন পর্যন্ত শুনলাম না!
সহকর্মী এবারও হেসে ফেলে।
মেজর সাহেব কিন্তু বেঁড়ি বাঁধের দিকে একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছে মানচিত্রে। মার্কার দিয়ে গোল একটা চক্র আঁকে একটা জায়গায়। বলে, এই পুলটার নীচে!
রুস্তুম বলে, স্যার, আমি কিন্তু দৌড়াদুড়ির পাবলিক না। যেইখানে বসাইয়া রাখবেন সেইখানে বইসা থাকমু। আমারে নিয়া কুনু চিন্তা করবেন না।
মানচিত্রে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে। ঢাকার মানচিত্র তার মুখস্থ। মেজরের হাতের মার্কারের অবস্থান দেখে বুঝে ফেলে এটা রায়েরবাজারের ঢাল। আবার বলে, স্যার, আমার ওস্তাদের নাম শহিদ, ঐ যে কানা শহিদ - ট্রিপল মার্ডারের আসামী। শ্যামলী জামশেদ ওস্তাদের ওয়ার্কশপে গিয়া চান্নুরে খুঁজলে দেখাইয়া দেবে।
তবে স্যার যাইতে হবে ফাউসের কথা কইয়া।
মেজর এবার একটু উৎসাহী হয়। কানা শহিদকে সে অনেকদিন যাবত ধরার চেষ্টা করছে। প্রতিবারই কানের পাশ দিয়ে যায়। চেয়ার থেকে উঠে রুস্তুমের সামনে দাড়ায়।
রুস্তুমের হাত-পা খোলা। স্বাভাবিকভাবে বসে আছে। মেজর সাহেব তার সামনে দাড়িয়ে হাতের ছড়িটা রুস্তুমের গলায় ছোঁয়ায়। জিজ্ঞেস করে, ফাউস কি!
রুস্তুম মনে হয় এত মজা জীবনে পায় নাই। হো হো করে হেসে ওঠে।
এইটা স্যার বলা যাইবে না! আবার হাসতে থাকে মাথা দুলিয়ে।
মেজরের ছড়ি সপাৎ করে আছড়ে পড়ে রুস্তুমের পিঠে। তারপরও হাসতে থাকে। মেজর দাঁত চিবিয়ে বলে, ফাউস কি! আরো কাটাকাটা শব্দে।
ডান হাতের তালু দিয়ে পিঠের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটাকে মালিশ করার চেষ্টা করতে করতে বলে, স্যার আমারে নেয়া লাগবে না পুলের নিচে।
আপনাদের নিশানার কোনো ভরসা নাই। ডাইরেক্ট ফায়ার শুনলাম না একটাও। আর কানা শহীদরে আপনারা ফাউস হইয়া গেলেই ধরতে পারবেন!
মেজর সাহেব এইবার আরো জোরে নামিয়ে আনে চাবুকের মত ছড়িখানি। রুস্তুম চেয়ার থেকে ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ে। তবুও তারা হাসি কমছে না।
বলে, স্যার আমার কি দোষ! কানা শহীদ পুলাপাইন পছন্দ করে, বুঝতেই পারতেছেন স্যার - সে পুলাপাইনের সাথে ইয়ে করে। আপনারা যদি চান্নুরে গিয়ে বলেন, নতুন ফাউস আছে, তাইলে কানা শহীদ যেইখান থেকে পারে উড়াল দিয়া আসবে! আর স্যার, আপনার শরীরখানা যা বানাইছেন...কাইন্না হালায় দেখলে পুরা পাগল হইয়া যাইবে!
মেজরের কান দিয়ে ধুয়ো বের হচ্ছে। ফ্লোরে আছড়ে পড়া রুস্তুমের উপরে নেমে আসে সপাং সপাং ছড়ির আঘাত। সহকর্মীকে হাক ছেড়ে বলে, রামদলাই টা নিয়ে আসেন তো শরাফত! রামদলাই হচ্ছে তিনইঞ্চি মোটা লোহার ডান্ডা, কাউকে মেরে ফেলতে হলে রামদলাই চালিয়ে থাকে মেজর সাহেব।
রুস্তুম কিন্তু হেসেই চলে।
বলে, স্যার মনে হয় আমারে পুলের নীচে নিবেন না! গুড স্যার। কিন্তু রাম দলাই কেন স্যার! কিছু করতে হলে ডাইরেক্ট ফায়ার করেন, এই রুমের মধ্যে করেন, নাকি এইখানেও ক্রসফায়ার হইয়া যাওয়ার ভয় পাইতেছেন স্যার!
রুস্তুমের প্রাণখোলা হাসিতে রুমের মধ্যে মেজর সাহেব বন্য হয়ে ওঠেন। পিস্তল বের করে সোজা তিনটে বুলেট ঢুকিয়ে দেন রুস্তুমের বুকে। মরতে মরতে রুস্তুমের মুখে সেই হাসি আরও ছড়িয়ে পড়ে। বিড়বিড় করে বলে, মনে রাখিস হারামীর বাচ্চারা, তোদের ডাইরেক্ট-ফায়ার শিখিয়ে গেলাম! কিভাবে বুকে গুলি করতে হয়, পিঠে নয়!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।