রাসেল
আল্লাহর ভালোবাসা
যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভালোবাসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহর গভীরতম সত্তায় স্থান করে নেয় তখন তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণ ছাড়া আর সব চিন্তাকে বের করে দেয়। সব মানুষের মধ্যে আল্লাহ প্রেমিকই সত্তার ভেতরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য সবচেয়ে মোখলেস (আন্তরিক)।
সে তার কথায় সবচেয়ে সত্যবাদী, প্রতিশ্র“তি রক্ষায় সবচেয়ে বিশ্বস্ত, কাজকর্মে সবচেয়ে বুদ্ধিমান, যিকর-এ সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং ইবাদাতে তার নিজ সত্তাকে নিয়োজিত করায় শ্রেষ্ঠতম।
ফেরেশতারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করে তার সাথে কথা বলার জন্য এবং তাকে দেখেছে বলে গর্ব করে বেড়ায়। তার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর ভূমিকে সমৃদ্ধি দেন এবং তার সম্মানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাহদের সম্মানিত করেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জনগণকে দান করেন যখন তারা তাঁর কাছে চায় এই ব্যক্তির অধিকারের মাধ্যমে এবং তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেন তাঁর রহমতের মাধ্যমে। যদি জনগণ জানতো তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে কী সম্মানপ্রাপ্ত তাহলে তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকবর্তী হতে চাইতো না তাদের পায়ের ধূলোর মাধ্যমে ছাড়া।
আমিরুল মুমিনীন বলেছেনঃ “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভালোবাসা হলো একটি আগুন যা কোন কিছুর পাশ দিয়ে যায় না তাকে পুড়িয়ে না ফেলে - আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নূর কোন কিছুর ওপর হাজির হয় না একে আলোকিত না করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আকাশগুলো কোন মেঘ সৃষ্টি করে না এর নীচে যা আছে তাকে না ঢেকে; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বাতাস কোন কিছুর উপর প্রবাহিত হয় তাকে না নাড়িয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পানি সবকিছুকে জীবন দেয় এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পৃথিবীর মাটি থেকে সবকিছু জন্মায়।
যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভালোবাসে তাকে সব সম্পদ এবং ক্ষমতা দেয়া হয়। ”
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার উম্মতের ভেতর কোন বান্দাহকে ভালোবাসেন, তিনি তার ভালোবাসাকে স্থাপন করেন তাঁর বন্ধুদের অন্তরে, ফেরেশতাদের ও তাঁর আরশ বহনকারীদের রুহের ভেতরে যেন তারা তাকে ভালোবাসে। এ প্রেমিকের আছে অঢেল প্রশান্তি এবং কেয়ামতের দিনে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে সুপারিশ করতে পারবে। ”
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য ভালোবাসা
যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য ভালোবাসে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভালোবাসার পাত্র এবং যাকে ভালোবাসা হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে সেও আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র। যেহেতু তারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “মানুষ যাকে ভালোবাসে সে তার সাথেই থাকে। যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পথে কোন বান্দাহকে ভালোবাসে সে আল্লাহকে ভালোবাসে। কেউ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভালোবাসে না সে ছাড়া যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ভালোবাসেন। ” আরও বলেছেনঃ ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পর মানুষের মাঝে তারাই এ পৃথিবীতে ও আখেরাতে উত্তম যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে। ’ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া অন্য কোন কারণের উপর ভিত্তি করে যে ভালোবাসা আসে তা শত্র“তা আনে - শুধু এ দু’টো ছাড়া, কারণ তারা আসে একই উৎস থেকে।
এদের ভালোবাসা সবসময় বৃদ্ধি পায় এবং কখনও কমে না। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
বন্ধুরা সেদিন পরস্পরের শত্র“ হয়ে যাবে শুধু তারা ছাড়া যারা (অন্যায়ের বিরুদ্ধে) সতর্ক পাহারা দেয়। ” (৪৩ঃ৬৭)
কারণ ভালোবাসার শিকড় হলো সবকিছু থেকে মুক্ত হওয়া একমাত্র মাহবুব (যাকে ভালোবাসা হয়) ছাড়া।
আমিরুল মুমিনীন বলেছেনঃ “জান্নাতে সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে যা মিষ্টি-মধুর তা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভালোবাসা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাতে ভালোবাসা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রশংসা। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন ঃ তাদের শেষ দোয়া হবেঃ
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।
” (১০ঃ১০)
কারণ যখন তারা জান্নাতের নেয়ামতগুলো দেখে তখন তাদের ভেতরে ভালোবাসা জেগে ওঠে এবং তখন তারা শব্দ করে বলে ওঠেঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। ”
আল্লাহকে পাওয়ার আকাক্সক্ষা
যে আকাক্সক্ষা করে সে না চায় খাবার, না পায় পানি পানে কোন তৃপ্তি, না সে সহজে উত্তেজিত হয়, না সে কারো ঘনিষ্ট এমনকি তার নিকট বন্ধুদের সাথেও না, না সে আশ্রয় খোঁজে কোন বাড়িতে, না সে বাস করে কোন শহরে, না সে কোন পোষাক পরে এবং না সে তার প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ট বিশ্রাম নেয়।
সে রাত দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাত করে, তার আকাক্সক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর আশায়। সে তাঁর সাথে কথা বলে আকাক্সক্ষার জিহবা দিয়ে - তার গভীরতম সত্তায় যা আছে তা প্রকাশ করে। মূসা (আঃ) সম্পর্কে এটিই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন যখন সে তার রবের মোলাকাতে গেলোঃ
“আমি আপনার কাছে দ্রুত আসছি হে আমার রব, যেন আপনি সন্তুষ্ট হন।
” (২০ঃ৮৪)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার অবস্থা এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “সে না খেত, না পান করতো, না ঘুমাতো, না সে এর কোন কিছু চেয়েছে চল্লিশ দিন ধরে আসা ও যাওয়াতে - তার রবের প্রতি তার আকাক্সক্ষার কারণে। ”
যখন তুমি আকাক্সক্ষার এলাকায় প্রবেশ কর তখন তাকবীর বলো তোমার জন্য এবং এ পৃথিবীতে তোমার আশা আকাক্সক্ষাগুলোর জন্য। বিদায় জানিয়ে দাও সব পরিচিত জিনিসকে এবং সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও শুধু তিনি ছাড়া যাকে তুমি সবচেয়ে বেশী চাও। ‘লাব্বায়েক’ (আপনার খেদমতে হাজির) শব্দটি বলো তোমার জীবন ও মৃত্যুর মাঝে ঃ “তোমার খেদমতে হে আল্লাহ, তোমার খেদমতে!’ তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমার পুরস্কারকে করবেন মহান। যে ব্যক্তি আকাক্সক্ষা করে সে ডুবন্ত মানুষের মত, তার চিন্তা শুধু রক্ষা পাওয়া এবং ভুলে যায় বাকী সবকিছু।
(মিশবাহুশ শারিয়াহ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।