আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমজানে হলো না জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার

আমি কিছুই লিখব না।

রমজান মাসে মসজিদে মসজিদে তারাবি ও জুমার নামাজের পরে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারের কথা থাকলেও তা হয় নি। সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধে 'উদ্বুদ্ধকরণ' (মোটিভেশন) কার্যক্রমও থমকে আছে। গত মাসে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারাবি ও জুমার নামাজের পরে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারের কথা বলেছিলেন। রাজধানীর কয়েকটি মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়েন এমন মুসল্লিরা জানিয়েছেন, তারা তারাবি বা জুমার নামাজের সময় ইমামদের মুখে জঙ্গিবাদবিরোধী কোন কথা শোনেন নি।

এমনকি শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমাতুল বিদার খুতবাতেও জঙ্গি প্রসঙ্গে কোন কথা বলা হয় নি। খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে খুতবার বয়ান করেন। শবে-কদরের পরের দিনের এ জুমাতুল বিদায় ব্যাপকসংখ্যক মানুষ নামাজ পড়তে যান। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ফাঁসি হওয়া শায়খ আবদুর রহমানের এলাকা জামালপুরে এ ধরনের কোন প্রচার হয় নি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু অবশ্য শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, "আমি এলাকার যেসব মসজিদে নামাজ পড়েছি সেখানকার ইমামরা জঙ্গিবাদবিরোধী খুতবা দিচ্ছেন।

হাইকোর্টের মসজিদেও জঙ্গিবাদবিরোধী খুতবা আমি শুনেছি। কাজেই আমার ধারণা, সব মসজিদেই এ ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে। তবে অনেক ব্যতিক্রম থাকবে। " ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ পার্ক জামে মসজিদে রমজানে নিয়মিত জুমার নামাজ পড়েছেন সুমন মোল্লা। তিনি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, সেখানে তারাবি, জুমার খুতবাতে জঙ্গিবাদবিরোধী কোনও কথা শোনেননি।

আমাদের জামালপুর প্রতিনিধি লুৎফর রহমান জানান, বেশ কয়েকজন জঙ্গি নেতার বাড়ি জামালপুর শহরের কাচারি শাহী জামে মসজিদে খুতবার সময় ইমাম জঙ্গিবাদবিরোধী কোন কথা বলেন নি। ঠাকুরগাঁও কাচারি জামে (বড়) মসজিদের ইমামও খুতবার সময় এ ধরনের কোনও বক্তব্য দেন নি বলে জানিয়েছেন সেখানকার মুসল্লি বাতেন সরকার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গত এপ্রিলে একটি মোটিভেশন কমিটি গঠনের পর এ পর্যন্ত কমিটির মাত্র দু'টি বৈঠক হয়েছে। প্রচারের ক্ষেত্রেও তেমন কোনও অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, "আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে আলোচনা করে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

তবে তা বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে তা জানি না, অগ্রগতিও উল্লেখ করার মতো নয়। " গত ২২ এপ্রিল তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদকে প্রধান করে ১৭ সদস্যের জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও প্রতিকার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করে জঙ্গি কার্যক্রম প্রতিরোধে স্বল্প-মেয়াদী কৌশল হিসেবে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় ও গণমাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার চালানোর কথা বলা হয়। এরপর গত ১২ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় কমিটির প্রথম সভা হয়। তাতে চলমান অভিযানের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমনে স্বল্পমেয়াদী ছয়টি কর্মকৌশল হাতে নেওয়া হয়। গত ৩১ মে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তানজিম আহমেদ।

শামসুল হক টুকু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১১ আগস্ট এ কমিটির দ্বিতীয় সভার পর তিনি জানিয়েছিলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে রমজান মাসে তারাবি নামাজ ও জুমার নামাজের পরে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রচার চালানো হবে। র‌্যাবের একজন ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "জঙ্গিবাদ দমনে আমরা প্রথম পর্যায়েই আটকে আছি। জঙ্গিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বা উৎসে এখনও হাত দিতে পারিনি। আমরা কেবল তাদের নাশকতা থেকে দূরে রাখতে পেরেছি।

" তার মতে, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদরা সঠিকভারে ব্যাখ্যা করে ইসলামে জঙ্গিবাদের অবস্থান তুলে ধরলেই সাধারণ মানুষ জঙ্গিবাদের কুফল বুঝতে পারবে এবং এদের অবশ্যই ঘৃণা করবে। এ বিষয়ে শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক বলেন, "কমিটির সামনের সভায় এ কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা হবে। "জঙ্গিবাদ রাষ্ট্রের মহাশত্র"- এ সত্যটি প্রচারের জন্য আমরা বলেছি। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে খুতবার আগে এই প্রচার করার কথা বলা হয়েছে। আমরা বলেছি, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

" তিনি জানান, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মসজিদের খতিব ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির আরও মূল্যায়ন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে বিভাগীয়ভাবে ইমামদের সঙ্গে কথা বলা হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।