প্রতিবারের মত এইবারও রমজান চলে আসল, টের পাবার আগেই হুশ করে আধখান চলে গেল। আজকাল প্রায়ই মনে হয় আগের মত সময়ের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও আপ্রাণ চেষ্টা করি জীবনকে আঁকড়ে ধরার। রমজান শেষ হবার আগে কোরআন এক খতম শেষ করতেই হবে, এখনো বহু পেছনে আছি। এই সপ্তাহে একটু ফাঁক বের করে গেল হফতার আলসেমীটুকু পুষিয়ে নিতে হবে।
রমজান আসলেই প্রায়ই আগের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। পিচ্চিকালের ঘটনা, ক্লাস ফাইভে পড়ি মনে হয়। লক্ষী ছেলের মত স্কুলে যাই আসি, বিকালে কার্টুন দেখি আর তিন গোয়েন্দা পড়ি। এর মধ্যে রোজার মাস আসল। সামনের বাসার এক বড়ভাই জিজ্ঞেস করলেন, কি যাবা নাকি? আমি অবাক হয়ে বললাম কোথায়? উনি বললেন তারাবীতে।
আমি ভালমানুষ জিন্দেগীতেও তারাবীর নাম শুনি নাই। বললাম তারাবী কি জিনিষ? উনি বুঝালেন রোজা রাখলে তারাবী পড়তে হয়। তার আগ পর্যন্ত দুই তিনটার বেশী রোজার সাহস করি নাই, সেই বছর ঠিক করেছিলাম রোজা ছাড়ুম না। তাই বাসায় গিয়ে আম্মারে ধরলাম, আম্মা! জিয়া ভাই বলেছেন তারাবীতে যেতে হবে। আম্মা বলল যাও।
সেবার মহা উৎসাহে গিয়ে তারাবী পড়া হল। রমজানের যা সিস্টেম, টের পাবার আগেই আবার হুশ করে পার হয়ে গেল।
রমজান যখন পার হয়ে গেল, তখন দেখা গেল এশার টাইম হলে এমনিতেই ঘড়ির দিকে চোখ চলে যায়। মাসখানেকের প্র্যাক্টিসের ফলে অভ্যাসের ভিতর চলে এসেছে। তাই গুটিগুটি করে এশার নামাজে যাওয়া শুরু হল (পড়ার টাইমে ফাঁকি দেয়াও আরকটা মোটিভেশন)।
খেয়াল করে দেখা হল আসর আর মাগরিব হল খেলার টাইমের একটু আগে আর পরে, তাই চাইলে সেগুলাও মসজিদে গিয়ে পড়া যায়। পরের দুতিন বছরে আস্তে আস্তে অভ্যাসের ভেতর চলে এসেছে নামাজের জন্য মসজিদে নিয়মিত হওয়া। আমার নিজের নামাজের গ্রহণযোগ্যতা আর মনঃসংযোগ সম্পর্কে উচ্চধারণা কখনোই নাই, কিন্তু আমার সারা জীবনের যত নামাজই মসজিদে গিয়ে পড়া হবে, তার পূর্ণ সমপরিমাণ প্রতিদানের উপযোগী হবেন আমার পিচ্চিকালের সেই জিয়াভাই। আমি আমার স্কুলজীবনের পরে থেকেই ঘরছাড়া। প্রায় একযুগ হতে চলল বাড়ী ফেরা হয়নি।
তবে এই সুদীর্ঘ পথচলায় পৃথিবীর যেই কোণেই গিয়েছি, সেখানেই মসজিদকে আমার মাথার ওপর দ্বিতীয় ছাদ হিসেবে পেয়েছি। সেটি না হলে আমি এই আমি হতাম কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
আবার রমজান চলে এসেছে, মসজিদগুলো আবার মুসল্লী আর আমলে ভরে উঠছে (দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাকি ১১ মাস খালি)। এই ব্লগের অনেকেই হয়তো তারাবীর জন্য মসজিদে নিয়মিত হন। খেয়াল করবেন কি, বাড়ির পিচ্চি কাউরে পটায়ে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা, সামনের বাসার যেই ছেলেটা ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়ে বা নিজের ভাইগ্না, ভাইস্তা? এই রহমতের মাস প্রতিবছর আসে যেন আমরা তাকওয়া বা খোদাভীরুতার দিকে আরো অগ্রসর হতে পারি।
রমজানের বুনিয়াদ এক জীবনকে বদলানোর জন্য যথেষ্ট। কোন দৌড়িবিদের জন্যও একসময় কারো আংগুল ধরে হাঁটা শিখতে হয়েছিল।
সকলকেই রমজানের শুভকামনা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।