প্রতিবছর রোজা আসলেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের বাজার এবং জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। ফলে সব ধরনের জিনিস চলে যায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এটা কোন নতুন ঘটনা নয়, এই অবস্থা চলে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। কিন্তু কেন বাজারের এই লাগামহীন উর্দ্ধগতি? রোজা তো আর না বলে হুট কওে চলে আসেনা। এটা প্রাকৃতিক দূর্যোগ কোন দৈব দুরর্ঘনা নয় যে হঠাৎ কওে ঘটে গেছে কারও কিছু করার ছিলনা।
প্রতি বছর রোজা আসবেই এটা প্রকৃতির নিয়ম। আর আরবি মাস যেহেতু চাঁদের ্ওপর নির্ভর করে তাই রোজা বছরের বিভিন্ন সময়ে ঘুরে ফিরে আসে। তখন হয়ত প্রকৃতিতে উৎপাদন না থাকায় কারণে দুই একটা জিনিসের দাম বাড়তে পারে। আবার যে সব পন্যেও উৎপাদন বেশী সেগুলোর দাম কম থাকার কথা। কিন্তু তা না হয়ে হয় এর টিক উল্টোটা।
সংযমের মাসে অসংযমী হয়ে যায় বেশীরভাগ জিনিসপত্রের। আর একবার দাম বেড়ে গেলে সেই পণ্যেও দাম সারাবছর আর কমেনা। রোজা আসলেই কিছু কিছু জিনিসপত্রের দাম বাড়া যেন এক অমোঘ নিয়মে এসে দাঁড়িয়েছে।
এটা বুজতে অসুবিধা হবার কথা নয় য়ে এই সমস্যা কৃত্রিমভাবে তৈরী। কাঁচাবাজারের বিক্রেতা দোষ দেয় পাইকারদের আর পাইকাররা জোগানের অভাব, চাঁদাবাজি, বিশ্ব বাজার ইত্যাদি কারণ দেখায়।
আসল কারণ যাই হোক না কেন ব্যবসায়ীদেও মুল লক্ষ্য হল রমজান মাসে অধিক মুনাফা অর্জন করা। আর তার জন্য রোজার শুরু থেকেই শুরু হয় তাদের অপতৎপরতা। শুধু তারা দাম বাড়িয়েই তারা ক্ষ্যান্ত হয়না। সেই সাথে চলে নিন্মমানের পণ্য, পণ্যে ভেজাল মেশানো এবং ওজনে কম দেওয়ার অপতৎপরতা । তবে কেন কোন সরকারই এই সমস্যা দুর করতে পারছে না।
অনেকদিন থেকেই বাজার সিন্ডিকেটের কথাশোনা যাচ্ছে। এক শ্রেনীর সিন্ডিকেট নাকি বাজার নিয়ন্ত্রন করে। বাজারের জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো বা কমানো নির্ভর করে ঐ সিন্ডিকেটের উপর। কয়েকদিন আগে বিএনপি দলীয় সায়সদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেছেন- সেই সাতজনের সিন্ডিকেট এখনও বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। চার দলীয় জোট যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তাঁরা সিন্ডিকেটের বিষয়টি কখনোই স্বীকার করেন নি।
সিন্ডিকেটের বিষয়টি তিনি যদি জেনেই থাকেন তবে এত দিন পরে তিনি মুখ খুলছেনকেন ? এখন সাধারণ মানুসের প্রশ্ন কোন সেই সাত জন, কোন সরকারই তাদেও নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না? ইা কি কোন সরকারই এটাকে নিয়ন্ত্রন করতে চাইছে না?
কৃষিমন্ত্রী দায়িত্ব নেবার পর কৃষিতে উৎপাদন বাড়িয়েছেন কিন্তু ভোক্তা এর সঠিক সুফল পাচ্ছেনা। আমরা জানি উৎপাদন বাড়লেই বাজারে পণ্যের দাম কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো। তাহলে এই ব্যর্থতা কার ? খাদ্য মন্ত্রীর নাকি বাণিজ্য মন্ত্রীর ? গত কয়েকদিন আগে খাদ্য মন্ত্রী দ্রব্যমূলের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে পরিবহন খাতের ব্যাপক চাঁদাবাজির কথা বলেছেন। কোন এলাকায় কত টাকা চাঁদা দিতে হয় তার পরিমানও তিনি উল্লেখ করেছেন।
তাহলে এই চাঁদাবাজি কেন তাঁরা বন্ধ করতে পারছেন না? এটা কি আন্তমন্ত্রনালয় সমন্নয়ের অভাব নাকি চাঁদাবাজি ও আইন শৃ্খংলা নিয়ন্ত্রনে সরকারের ব্যর্থ। দেশে এখন নির্বাচিত সরকার এসেছে। তাই সরকার কোনভাবেই তাদের দায় এড়াতে পারেন না। সরকারের উচিৎ প্রতিটা বিষয়ে জনহনের কাছে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
বাণিজ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন- রমজান মাসে কোন পন্যের দাম বাড়বে না ।
জনগন আশাবাদী হয়েছিল তার কথায়। ভেবেছিলো এইবছর হয়তো জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। কিন্তু তার সেই কথা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি। যথারীতি বেড়েছে বাজারে জিনিসপত্রের দাম। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাজারের প্রতি সরকারের কোন নিয়ন্ত্রন নেই।
এখন তিনি সরকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অদক্ষতার কথা বলেছেন। টিসিবি যদি অদক্ষ হয় তাহলে সেই টিসিবি রাখার দরকার কি?
২০ আগষ্ট ২০০৯ প্রথম আলোতে মনজুর রশীদ খান লিখেছেন- বেশী খাবার, মজাদার খাবার কেলে স্বাস্থ্য রক্ষা নয়, স্বাস্থ্যহানির কথাই পুষ্টিবিশারদেরা বলে আসছেন। খুবই সত্য কথা। বাজার নিয়ন্ত্রনে জনগনও একটা বড় ভুমকিা রাখতে পারে। ব্যবসায়ীরা যেমন একজোট হয়ে বাজার নিয়ন্ত্রন করছে তেমনি জনগনের উচিৎ সাময়িকভাবে কিছু পণ্য বর্জন করা।
বোজার সময় ভাজা পোড়া কম খাওয়া। ফুটপাত, খোলা নোংড়া জায়গার অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করা। এতে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ভালো থাকবে অন্যদিকে কিছু পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। ডাক্তাররা সব সময়ই বলেন- অভুক্ত পাকস্থলী জন্য ভাজা পোড়া খাবার অত্যন্ত ক্ষতিকর। সারা দিন রোজা থাকার পর আমাদের উচিত নরম এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া।
(লেখাটি ২৬ আগষ্ট ২০০৯ প্রথম আলোয় প্রকাশিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।