ধরা যাক, বাংলাদেশের বাইরের মানুষ আপনি, বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা কম, কারণ বিশ্বের বড় বড় পত্রিকাগুলো মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়েই ব্যস্ত, কেবল হাজার কয়েক লোক মারা গেলে ভিতরের পাতায় ছোট্ট একটা খবর করে, ব্যস। এমতাবস্থায় একদিন বাংলাদেশের একজন রাজনৈতিক নেতার নাম শুনলেন, তো, তার সম্পর্কে জানতে হলে বিদেশী হিসাবে আপনি কী করবেন?
বলাই বাহুল্য, এই ক্ষেত্রে বিদেশীরা প্রথমেই ইন্টারনেটের সাহায্য নেবে। আর অবধারিত ভাবেই যে সাইটটিতে গুগল বা বিং হয়ে তারা যাবে, তা হলো উইকিপিডিয়া।
কিন্তু বিশ্বের ইতিহাসের এই বৃহত্তম বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াতে ৭১ এর কুখ্যাত সব যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে কী জানতে পারবে তারা?
দুঃখজনক হলেও সত্যি, ইংরেজি উইকিতে গোলাম আজম কিংবা মর নিজামীর সম্পর্কে তথ্য একেবারেই কম। বিশেষত তাদের ৭১ এর ভূমিকা সম্পর্কে এক দুইটি বাক্য কিংবা হালকার উপরে লেখা আছে কিছু।
জামাতে ইসলামী এবং তাদের আল বদর বাহিনীর সম্পর্কেও একই অবস্থা।
গোলামের একাত্তরের ভূমিকা সম্পর্কে যা আছে তা হলো এইটুকুই
উদ্ধৃতি
Ghulam Azam wrote all his activities of 9 months of the war in his biography Jibone Ja Dekhlam. Azam was on way to Dhaka from West Pakistan on 3 December when midway through the flight, the plane changed direction to Saudi Arabia because of the Indian declaration of war against Pakistan. A few weeks later East Pakistan emerged as newly independent country Bangladesh and Ghulam Azam along with his political party Jamaat-e-Islami was banned by new country's government and Azam's Bangladesh citizenship was cancelled.
তাহলে বিদেশী আপনি কী ধারণা পাবেন? মাসুম শ্রেণীর একটা লোক, একটু রাজনীতি টিতি করতো, ভাষা আন্দোলনের সাথেও নাকি জড়িত, তাকে একটা বদ সরকার নিজের দেশেও আসতে দেয় নাই, লড়াই করে নাগরিক হয়েছে। আহা, কী ভালো লোক গো!!
গোলাম আজমের সম্পর্কে গুগলে সার্চ করে আসা প্রথম লিংকটি থেকে যে কেউ এই ধারণাই পাবেন।
----
"উইকিতে অমুক নাই কেনো?" -- এই প্রশ্নের সম্মুখীন বহুবারই হই, এর একমাত্র জবাব হলো অমুক জিনিষটা নাই, তার কারণ "আপনি লিখে দেন নাই, তাই"। উইকিপিডিয়ার কোনো কেন্দ্রীয় লেখক বাহিনী নেই যারা বসে বসে তথ্য যোগ করে দিতে বাধ্য, বরং যে যখন তথ্য যোগ করবে সূত্র সহ, সেই তথ্যই কেবল থাকবে।
বাংলাদেশী হিসাবে আমাদের স্বভাবের সমস্যাটা এখানেই। ব্লগ থেকে শুরু করে চায়ের কাপে তুমুল ঝড় তোলায় আপত্তি নেই, কিন্তু জায়গামতো তথ্য দিতে চরম আলসেমী। অথচ বাংলা ব্লগে যুদ্ধাপরাধের তথ্যের সংকলন করে দেশের নতুন প্রজন্মকে জানানো যাবে, কিন্তু বিশ্বের অন্য সবার কাছে মোটেও তাতে উপস্থাপন করা যাবে না গোলাম আজম, মর নিজামী সহ জামাত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের কাহিনী।
আর এই সুযোগটা সুকৌশলে নিচ্ছে যুদ্ধাপরাধী এবং জামাতীরাই!!
--------
উইকিতে শকুনের আনাগোনা
উইকিতে গোলাম আজম ও মর নিজামীর জীবনী দুটো থেকে প্রায়ই ৭১ এর কথা বেমালুম সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে। ঢাকার কিছু আইপি থেকে শুরুতে এই কাজ করতো।
তারা শিবিরের নিবন্ধটাকে গোলাপজলের গন্ধমাখা আতর দিয়ে ধোয়ার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু কয়েকবার দৌড়ানি দেয়ার পর কেটে পড়েছে।
কিন্তু এখন? কয়েক মাস ধরে লক্ষ্য করছি, বেশ আঁট ঘাট বেঁধে নেমেছে তারা। কাজের চাপে আমি মাস কয়েক খেয়াল রাখতে পারিনি, এই ফাঁকে দেখি এক এক করে সরানো হয়েছে ৭১এ গোলাম আজমের ভূমিকার তথ্য। এখন ভাবখানা দেখে মনে হবে, গো-আ ছিলো মাঝারি গোছের নেতা, বরং বাংলাদেশ সরকারই তার উপরে যুলুম করেছে অনেক দিন।
আর এই কাজটা করেছে কে?
যে করেছে, ইউজার নাম দেখে শুরুতে বুঝিনি। কিন্তু গত সপ্তাহে যখন পোস্ট করলো গোলাম আজমের ব্যক্তিগত বৈঠকখানায় বসা তার চকচকে সেই চেহারার ছবি, তখন ছবি দাতারা পুরো নাম দেখে এক নিমেষে সব পরিষ্কার হয়ে গেলো। গোলাম আজমের পুত্র (কিংবা নাতি) এখন বসে বসে সাফাই করে চলেছে পূর্বপুরুষের কীর্তিকলাপ। আর আমরা? বসে আছি চায়ের কাপেই, বা বিভিন্ন ফোরামে, পুরো দুনিয়ার কাছে অবাঙালিদের সেগুলো বোঝার উপায় নেই।
গোলাম আজমের নিবন্ধ থেকে তার ৭১ এর যুদ্ধাপরাধ জাতীয় সব তথ্য তার পুত্র আস্তে আস্তে সরিয়ে দিয়েছে।
আর আমরা সবাই সব তথ্য জেনেও নিজেদের মাথায় রেখে দিয়েছি, পুরো বিশ্বের মানুষ যেখান থেকে তথ্য পড়বে, তার দিকে খেয়াল রাখিনি।
আরেকজন রাজাকারনন্দন এক সময় (আমরা কাজ শুরুর আগে) বাংলা উইকিতেও ছিলো, এখন অবশ্য বছর চারেক ধরে নাই। কিন্তু আমরা যতদিন আলসেমি করে অন্য কারো ফরজে-কেফায়ার (* কমুনিটির একজনে করলে সবার কাজ হয়ে যায়) জন্য অপেক্ষা করবো, ততোদিন ইতিহাস বিকৃতিকারী এদের জয়যাত্রাই অব্যাহত থাকবে।
করার কী আছে?
একাত্তরে জামাত ও গোলাম আজম, নিজামী সহ অন্যান্যদের কার্যকলাপের প্রচুর তথ্য ও সূত্র তো আছে, তাই না? (এই ব্লগেও প্রচুর সিরিজ দেখেছি)। সেই তথ্যগুলো এদের নিবন্ধগুলাতে যোগ করে দেন।
উইকিতে রেজিস্টার করতে লাগে ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড, তার পরে ঐসব ভুক্তি খুলে উপরে এডিট বাটনে ক্লিক করেন। যথাস্থানে তথ্য দেন। তার পরেই রেফারেন্সটি দেন এইভাবে (সূত্রের বিবরণ (যেমন দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ই আগস্ট, ১৯৭১)। সূত্র হিসাবে বই অথবা পত্রিকা ভালো। ব্লগের সূত্র ব্যবহার করা যাবে না।
বইয়ের পাতা নং উল্লেখ করতে পারলে ভালো।
আর যাদের অভ্যাস আছে উইকিতে লেখার, প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে খেয়াল রাখুন।
মনে রাখবেন, বাংলাতে হাজারো তথ্যপ্রমাণ হাজির করে বসে থাকলেও বিশ্ববাসীর কাছে কিন্তু সেই বাংলাতে লেখা তথ্য যাচ্ছে না, বরং তারা ইংরেজিতে লেখা উইকির ভুক্তিটাই পড়বে।
---
যুদ্ধাপরাধীরা ২৪/৭ তৎপর আছে। সারাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে জোয়ার এসেছে, সুকৌশলে সারা বিশ্বের মনোভাব পাল্টানোর জন্য তারা এখন তৎপর।
গানের কথায় বলি,
উদ্ধৃতি
"বসে থাকলে চলবেনা ভাই, আমাদের বসে থাকলে চলবে না ভাই"
(সংগৃহীত)
- মূল লেখক : রাগিব (তারিখ: শনি, ২০০৯-০৯-১২ ০৫:০৮)
http://www.sachalayatan.com/ragib/27130
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।