১। ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগ চাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী,আরেকটি পক্ষ চাচ্ছে,তাদের বাঁচাতে।
সঙ্গত কারনে প্রথম দলটি অপেক্ষাকৃত ভারী এবং পরবর্তী দলটি ছোট।
প্রথম দলটিতে আছে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ,যাদের আপনি খুব সহজে আলাদা করতে পারবেন না।
তাদের কারো মাথায় টুপি,কারো মুখে দাড়ি,কারো চুলে জট,কেউ গেরুয়া পরা,কারো পরনে স্যুট প্যান্ট। এই দলটির প্রতবাদের ভাষা, নিয়মতান্ত্রিক।
আর দ্বিতীয় দলটিকে আপনি বেশ সহজেই আলাদা করতে পারবেন। তারা একটি নির্দিষ্ট ধর্ম থেকে আগত,তাদের প্রতিবাদের ভাষা আক্রমণাত্মক,কথাবার্তা অসংযমী।
খুব স্বাভাবিক কারনেই,যেকোনো অজ্ঞাত পাঠকের সহমর্মিতা চলে যাবে,প্রথম দলটির দিকে।
আসলে ব্রহ্মাণ্ডকে সৃষ্টিই করা হয়েছে এই নিয়মে-যে কোন সুচিন্তিত,সুবিন্নিস্ত কর্মপন্থার প্রতি এর সমর্থন থাকে।
এবার আসুন একটু বিশ্লেষণ করি,দল দুটি আসলে কি চাচ্ছে। এর উত্তর পেতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে ইতিহাসের দিকে। হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে অতীত।
২।
পৃথিবীর বুকে তখন বেশ অন্ধকার। প্রগতি থেমে গেছে। ভারতবর্ষ ইউরোপ মধ্যপাচ্য-সর্বত্র এক অচল অবস্থা। ঠিক এমন সময় জন্ম নিলেন একজন মহামানব। মহাকালের বুকে যিনি মহাম্মদ নামে পরিচিত।
৪০ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাধারণের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ হয়েও তাঁর চারিত্রিক মূল্যবোধ ছিল অসাধারণ পর্যায়ের। মানুষের দুঃখ দুর্দশায় তিনি ছিলেন অগ্রসরমান। পরবর্তীতে তাঁর উপর স্রষ্টা পাঠালেন নাবুয়ত্ত। তিনি হয়ে উঠলেন সকল অন্তপ্রজ্ঞার উৎস।
গঠনতান্ত্রিক চিন্তা প্রক্রিয়া আর মানব কল্যাণের ব্রত নিয়ে তিনি জয় করলেন মানুষের হৃদয়। প্রতিষ্ঠা করলেন মানবতার ধর্ম ইসলাম। পরবর্তীতে পৃথিবীর আরও অনেক দেশের মত,এই ধর্মটি ছড়িয়ে পড়লো ভারতবর্ষে।
ভারতবর্ষের কিছু মানুষ, এই নতুন ধর্ম গ্রহন করলেও এর রীতিনীতির সাথে একত্ব হতে সময় নিয়েছিল অনেকদিন। কিছুকাল পর মোঘলরা আসলো।
ইসলাম ধর্ম পেল ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এই ধর্মটি তে মানুষ খুজে পচ্ছিল চিন্তার আস্রয়স্থল,ধর্মটি বিস্তৃত হচ্ছিল চতুর্দিকে। বাইরের কোন শত্রু,ভারতবর্ষের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায়নি সেই সময়।
এভাবে ভালই যাচ্ছিল,হঠাৎ এল সম্রাট অওরঙ্গজেবের শাসনকাল। সেই সময় থেকে শুরু হল উপমাহাদেশে ইসলামি গোঁড়ামির গোড়াপত্তন।
তিনি ভাঙ্গা শুরু করলেন হিন্দুদের মন্দির। আঘাত হানা শুরু করলেন অন্যের ধর্ম বিশ্বাসে। ইসলামকে রাখলেন না,সকল মানুষের হৃদয়ের মুক্তিলাভের অংশ। বরং একে করে ফেললেন কলুষিত। যে কোন ধর্ম যখন অন্যের জন্য জুলুমে পরিনত হয়,তখন তা থেকে সরে যায় সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ।
ভাঙন শুরু হল মহাপ্রতাপশালী মোঘল সাম্রাজ্যে। দুর্বল হয়ে যাওয়া ইসলামি চেতনার পক্ষে সম্ভব হল না ইংরেজদের আগ্রাসন ঠেকানো। চির ধরতে লাগলো,ভারতবর্ষে ইসলামের অগ্রযাত্রায়। দুইশ বছরের জন্য অস্ত গেল স্বাধীনতার সূর্য।
পরবর্তীতে ইংরেজরা যখন,দুইশ বছরের লুণ্ঠন শেষে দেখল আর টেকা যাচ্ছে না,তখন তাঁরা সেই দুর্বল ইসলামি চেতনার উপর দার করিয়ে দিয়ে গেল পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ কিন্তু সর্ব দুর্বল এক অদ্ভুত ইসলামিক দেশ,যার অবস্থান ভূগোলের দু প্রান্তে।
যে দুটি প্রান্তে মানুষে মানুষে কথা মিলে না,ব্যবহার মিলে না,কৃষ্টি মিলে না!এমনই দুটি ভূখণ্ড মিলে সৃষ্টি হল বিস্ময়কর রাষ্ট্র -পাকিস্তানের।
নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে প্রায় ২৩ বৎসর টিকে রইল রাষ্ট্রটি,যার প্রথম থেকেই ভারতবর্ষের পশ্চিম প্রান্তের ভূখণ্ডটি নিপীড়ন চালাল ,পূর্ব প্রান্তের ভূখণ্ডটির উপর।
অর্থনৈতিক সামাজিক শিক্ষাগত নিপীড়নের স্বীকার পূর্ব পাকিস্তান তখনো আশায় ছিল,হয়ত একদিন আসবে সুসময়। তাদের প্রতিনিধিও একদিন ক্ষমতায় আসবে,নিজেদের পায়ের তলের মাটি নিজেরা শক্ত করবে।
এল কাঙ্খিত নির্বাচন।
বিপুল ভোটে জয়লাভ করল পূর্ব পাকিস্তানের একজন জনপ্রিয় নেতা। সবাই ভাবল,এবার বুঝি এল সুদিন।
কিন্তু কি অদ্ভুত বর্বরতা!পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী সেই নেতার হাতে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের হাতে ,ক্ষমতা না দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল।
এরপর যা হবার তাই হল,পূর্ব পাকিস্তান আর ওদের সাথে না থাকার সিদ্ধান্ত নিল। নিজেরা একসাথে হয়ে বলল,আমরা আলাদা থাকতে চাই।
শুরু হল অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
যেকোনো যুদ্ধের সময় এমন কিছু লোক উদ্ভব হয় যারা স্বজাতির উপর অঅত্যাচার চালায় -বিভিন্ন প্ররোচনায়।
যেমন পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফর বেইমানী করে বসে নবাবের বিরুদ্ধে ক্ষমতার লোভে। ঠিক তেমনি বাঙ্গালীদের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল কিছু বেইমান,কোন এক অজানা প্ররোচনায়!যারা নিজ ভাইদের উপর চালাল অস্ত্র,লাঞ্ছিত করল নিজ বোনদের।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী,ঠিক সেই লোকদের এই বেইমানী কাজের জন্য বেঁচে নিয়েছিল চারিত্রিক দিক থেকে যারা ছিল চতুর, নিষ্ঠুর,ধর্মের দিক থেকে যারা ছিল আক্রমণাত্মক এবং গোঁড়া।
(লক্ষ করুন আওরঙ্গজেবের গোঁড়ামিতে ধংস হয়েছিল ভারতবর্ষে ইসলামের প্রগতি,এবং এই নরাধমদের গোঁড়ামিতে ধংস হল বাংলার বুকে মানবতা)।
আগেই বলেছিলাম প্রকৃতির একটা নিয়ম হল নিষ্ঠুর এবং গোঁড়ারা পরাজিত হয়ে যায়। ঠিক এভাবেই পরাজয় বরন করল তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্র টি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হল। কিন্তু রয়ে সেই চতুর বেইমান লোক গুলো।
এবার তাঁরা টার্গেট করল বাংলার সেইসব সহজ সরল ছেলেদের যারা তাদের অপকীর্তি নিজ চোখে দেখেনি। ধর্মের অনুভূতি বিক্রি করে ,হয়ে গেল তাদের নেতা।
ধর্মীও গোঁড়ামির সেই কালসাপ তাদের মধ্যে রয়ে গেল। সেই সহজ সরল ধর্মভিরু বাঙালি ছেলেদের মধ্যে তারা সঞ্ছালিত করল সেই গোঁড়ামির নিষ্ঠুরতা।
কিন্তু প্রকৃতির চিরন্তন নিয়মে মানুষের মধ্যে জমে থাকা অঙ্গার বেরিয়ে এল অনেক দিন পর।
এতদিন পর সেই নরাধম বেইমানদের বিচারের জন্য পুরো বাংলা একত্রিত হল। কিন্তু রয়ে গেল বাংলার সেই সহজ সরল ছেলেগুলো,যাদের মাধ্যমে আজ সঞ্ছালিত হচ্ছে অতীত গোঁড়ামির সেই ধারাবাহিকতা-তারা ভাঙচুর করলো বাস,আহত করল পুলিশ।
যারা একাজ করছে তারা নিজেও বুঝল না তারা কত বড় ভুল, ধর্মীও চেতনার- ধারাবাহিকতার একটা অংশ!
৩। ইতিহাসের কথা শেষ,আসুন এখন আমরা বর্তমানে আসি।
ইসলামের সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য যে ছেলে গুলা এসব করছে,তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়-
আসলে যে গোঁড়ামি দিয়ে উপমহাদেশে ইসলামের অগ্রজাত্রার পতন, সেই গোঁড়ামি বন্ধ করতে না পারলে সেই সুদিন ফিরিয়ে আনার চিন্তা -অচিন্তনীয়।
সুতরাং ইসলামের সেই সুদিন ফিরিয়ে আনতে হলে,হতে হবে উদার,ভেঙ্গে ফেলতে হবে গোঁড়ামির নিষ্ঠুরতা।
বিচারকার্যে এক- হয়ে যেতে হবে, সেই সমস্ত বেইমানদের বিরুদ্ধে -যারা ধর্মকে নিয়ে যায় ,আস্তাকূড়ে।
তাহলেই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য সফল হবে।
মূলত সবল মন জিহাদ করে প্রেম দিয়ে,আর দুর্বল মন জিহাদ করে ভাঙচুর করে। প্রকৃতির নিয়মে সেই দুর্বল মনের পতন অনিবার্য,যার সাক্ষী স্বয়ং ইতিহাস।
আজ আমাদের সামনে এক মঞ্চ আবির্ভূত হয়েছে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে কারা সবল সুস্থ মন নিয়ে ,অত্যাচারীর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে- এক হবে,আর কারা দুর্বল মন নিয়ে, ধর্মের চালাবে রাহাজানি এই বক ধার্মিক দের পক্ষে!
সিদ্ধান্ত আপনার। ইতিহাস সবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।