বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
রোমাঞ্চকর রেশম পথ
রেশম পথের আবিস্কার বানিজ্যের কারণে হয়নি-হয়েছিল প্রতিরক্ষার কারণে। ঘটনাটি বেশ মজার। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ২০০ বছর আগের কথা।
চিনে তখন হান বংশের রাজত্ব। মঙ্গোলিয়ার যাযাবরের তখন চিন রাজ্যের পশ্চিমে খুব হাঙ্গামা করত । হান বংশের রাজা য়ূদি-তিনি ভীষন চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি ঝাং কিয়ান নামে একজন রাজকীয় কর্মচারীকে মঙ্গোলিয়ার যাযাবরদের সঙ্গে সমঝোতা করতে পাঠালেন। তারপর নানা ঘটনা।
মঙ্গোলিয়ার যাযাবরের হাতে ঝাং কিয়ান বন্দি হল; তারপর পালাল। মধ্য এশিয়ায় ঘুরল ঝাং কিয়ান; পরে চিনে ফিরে এল সে। এরপর ঝাং কিয়ান বর্ণিত মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত তথ্যাদি এক বানিজ্যের সম্ভাবনার পথ খুলে দেয় । যে পথটি পরে চিন, মধ্য এশিয়া পারস্য পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপ অবধি ছড়িয়ে যায়।
রেশম পথের পূর্ব প্রান্ত ছিল আধুনিক চিনের উত্তরের রাজ্য সিয়ান।
সিয়ান থেকে যাত্রা শুরু করে গোবি মরুভূমি -গোবি মরুভূমির দক্ষিণে নান শান পাহাড়। এরপর তাকলা মাকান মরুভূমির শুরু। এর উত্তরে কুনলুন পাহাড় ও দক্ষিণে তারিম পেনডি। এরপর মরুশহর হোটান। বনিকেরা এখানেই বিশ্রাম নেয়।
এরপর পামির পাহাড়ের পাদদেশে কাশী বা কাশগর। এরপরই পশ্চিমের পারস্য।
মানচিত্রে কাশগর
বর্তমান কাশগর
বর্তমান কাশগর
বর্তমান কাশগর
এক কথায় সিল্ক রোড হল ট্রান্স-এশিয়ান প্রাচীন বানিজ্যপথ। যে পথ ধরে বানিজ্য ছাড়াও বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মগুলি ছড়িয়ে পড়েছিল-পুব থেকে পশ্চিমে-পশ্চিম থেকে পুবে। ধর্মপ্রচারক ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বৌদ্ধধর্ম, খ্রিষ্টানধর্ম, মনিবাদ (Manichaeism) এবং ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল; মিশনারিরা বানিজ্য কারাভানে যোগ দিতেন।
এশিয়ায় নতুন ধর্মের উদ্ভব ও প্রসার রেশমপথের বণিকদের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। এভাবেই ধর্মীয় ঐহিত্য ও বানিজ্য একে অন্যের ওপর নির্ভর শীল। দূরবর্তী স্থানের সঙ্গে বানিজ্যিক লেনদেনই বিশ্বধর্মগুলিকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
রেশম পথ (The Silk Road ) মধ্য ইউরেশিয়ান স্তেপের দক্ষিণ প্রান্তটি আঁকড়ে ধরে রেখেছে। ওখানে শুস্ক সমতল ভূমি মিশেছে পাহাড়িয়া পাদদেশে-জলস্রোত যেখানে পানির যোগান দেয়।
এরকম পরিবেশেই গড়ে উঠেছিল মরুশহর তথা মানববসতি-যেখানে বণিকেরা বিশ্রাম নিতে পারত যোগার করতে পারত ব্যবসা করতে পারত।
রেশম পথের পাশের সমাধি
রেশম পথ নামটির কৃতিত্ব চৈনিকদের। তারা চৈনিক রেশম নিয়ে ইউরোপে চলে যেত। যা রাজকীয় রোমে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।
চৈনিক রেশমী কাপড়
চৈনিক রেশমী কাপড়
রেশমের বিনিময়ে চিনা বণিকেরা চিনে আনত সোনা, রুপা ও উল।
খ্রিস্টের জন্মের ১০০০ বছর আগেকার মিশরের একটি সমাধিসৌধে চৈনিক রেশম পাওয়া গিয়েছে। পন্ডিতের বিশ্বাস রেশম পথটি আরও পুরনো। পারস্যের বণিকেরা সম্ভবত মিশরে রেশম নিয়ে গিসল।
রেশম পথ
প্রাচীন হিব্রুভাষীরা সম্ভবত রেশম পথে ব্যবসা বানিজ্য করত। ইহুদি ঐতিহ্যমতে ইহুদি বণিকেরা ১০০০ খ্রিঃপূঃ তে চিনের সঙ্গে ব্যবসা করত।
ঐ সময়ে ইহুদিদের শাসক ছিলেন রাজ ডেভিড বা দাউদ (আঃ)। ৭২২ খ্রিস্টপূর্বে ইহুদিরা বাস করত পারস্যের (প্রাচীন ইরানের) পূর্বপ্রান্তে) কেননা, আসিরিয় বিজেতারা তাদের সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। ঐ ইহুদিরাই চিনের সঙ্গে ব্যবসা করত।
চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বে প্রাচীন ভারতে সর্বজনীন মুক্তির বাণী নিয়ে একটি নতুন ধর্মীয় শিক্ষার উদ্ভব হয়েছিল । বৌদ্ধধর্মই পৃথিবীর প্রথম proselytizing ধর্ম।
মানে, ধর্মটি অন্যান্য ধর্মালম্বিরাও গ্রহন করতে পারত। দূরবর্তী বানিজ্যপথের ওপর ধর্মটির বিস্তার নির্ভরশীল ছিল। বাণিকদলের সঙ্গে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা চলে যেত রেশম পথে দিয়ে।
রেশম পথ
বণিকদলের সঙ্গে যাওয়াই ছিল নিরাপদ। থেরবাদী বৌদ্ধধর্মের একটি প্রচলিত বিশ্বাস এই যে- মধ্য এশিয়া থেকে দুজন বণিক ভারতে যাওয়ার পথে বুদ্ধের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
তারা বুদ্ধের বাণীতে মুগ্ধ হয়ে ব্যাকট্রিয়ায় ফিরে যায়। ব্যাকট্রিয়া জায়গাটি বর্তমান আফগানিস্তানের বলখ প্রদেশ। সেখানে তারা বৌদ্ধমন্দির নির্মান করে। এভাবে বৌদ্ধধর্মের অন্যতম কেন্দ্রে পরিনত হয় ব্যাকট্রিয়া।
আফগানিস্তানের বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি
ব্যাকট্রিয়া ও পার্থিয়ার ইরানি জনগনই প্রকৃতপক্ষে বৌদ্ধধর্ম চিনে পৌঁছে দিয়েছিল।
পার্থিয় জনগনই পারস্য ভারত ও চিনের মধ্যে বানিজ্য সেতু স্থাপন করেছিল। তারা স্থানীয় ভাষা শিখেছিল-গ্রহন করেছিল স্থানীয় সংস্কৃতি। এরাই বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল।
আর এর সবই হয়েছিল রেশম পথকে ঘিরে।
বলছিলাম রেশমপথ রোমাঞ্চকর।
যুগে যুগে শিল্পীদের আকর্ষন করেছে।
জাপানি কম্পোজার কিটারোর সিল্ক রোড
লরেনা ম্যাকেনিট এর মার্কোপোলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।