আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।
শিল্পী আলতাফ মাহমুদঃ
১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পাক সৈন্যদের হাতে বন্দী অবস্থায় শিল্পী আলতাফ মাহমুদ নিখোঁজ হন। আলতাফ মাহমুদ (ডিসেম্বর ২৩, ১৯৩০ - সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) একজন বাংলাদেশী সুরকার, সাংস্কৃতিক কর্মী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একজন ভাষা সৈনিক এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির শহীদ দিবসে গাওয়া 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গানটির বর্তমান সুরটিও তার করা। মূলত এই গানের সুরকার হিসেবেই তিনি সমাধিক পরিচিত।
প্রারম্ভিক জীবনঃ
বরিশাল জেলার মুলাদি উপজেলার পাতারচর গ্রামে আলতাফ মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন। বরিশাল জেলা স্কুল থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাশ করে বিএম কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি চিত্রকলা শিখতে ক্যালকাটা আর্টস স্কুলে গমণ করেন। বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায়ই আলতাফ মাহমুদ গান গাইতে শুরু করেন। তিনি প্রসিদ্ধ ভায়োলিন বাদক সুরেন রায়ের কাছে প্রথম সঙ্গীতে তালিম নেন।
তিনি গণসঙ্গীত গাইতে শেখেন যা সেসময় তাকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
পেশাদার শিল্পীঃ
১৯৫০ সালে আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় আসেন এবং ধুমকেতু শিল্পী সংঘ তে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি এই সংস্থাটির 'সঙ্গীত পরিচালক' পদে আসীন হন। ১৯৫৪ সালে "ভিয়েনা শান্তি সম্মেলনে" মাহমুদ আমন্ত্রিত হন, কিন্তু করাচিতে পাকিস্তানী সরকার তার পাসপোর্ট আটকে দেয়ায় তিনি এখানে যোগ দিতে পারেননি। তিনি ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত করাচিতে ছিলেন এবং ওস্তাদ আব্দুল কাদের খাঁ-র কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিষয়ক তালিম নিয়েছিলেন।
এছাড়া তিনি নৃত্য পরিচালক ঘনশ্যাম এবং সঙ্গীত পরিচালক দেবু ভট্টাচার্য্য এর সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর মাহমুদ ১৯টি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া সহ, ক্যায়সে কাহু, কার বউ, তানহা প্রভৃতি। এছাড়া তিনি রাজনীতি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার সাথেও জড়িত ছিলেন। সঙ্গীতে প্রতিভা থাকলেও মাহমুদ ছবিও আঁকতে পারতেন।
ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধঃ
১৯৫০ সালের দিকে তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসঙ্গীত গাইতেন। গান গাওয়ার মাধ্যমে মাহমুদ এই আন্দোলনকে সর্বদাই সমর্থন যুগিয়েছেন। ১৯৬৯ সালে তিনি আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটিতে পুনরায় সুরারোপ করেন, যেটির আগের সুর করেছিলেন আব্দুল লতিফ। এই সুরটি জহির রায়হানের চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া তে ব্যবহৃত হয়।
১৯৭১ সালে আলতাফ মাহমুদ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তার বাসায় গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। কিন্তু ক্যাম্পের কথা ফাঁস হয়ে গেলে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তান বাহিনী তাকে আটক করে। তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তার বাসা থেকে আরো অনেক গেরিলা যোদ্ধা আটক হয়। [১] এদের অনেকের সাথে তিনিও চিরতরে হারিয়ে গেছেন।
[২] পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার দেশাত্ত্ববোধক গান প্রচারিত হতে থাকে যা অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রারিত করেছে।
পুরস্কারঃ
১৯৭৭ সালে আলতাফ মাহমুদকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার কারণে তাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
তথ্যসূত্রঃ
১. জাহানারা ইমাম, 'একাত্তরের দিনগুলি', সন্ধানী প্রকাশনী, pp. 187-189
২. আহমেদ, মনোয়ার, ভাষা আন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল, আগামী প্রকাশনী, pp.111
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।