আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুদাই

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে আকাশে শান্তির নীড় গড়ে পৃথিবীকে ছোটো করে ফেললো প্রযুক্তি। পৃথিবী তাও সামান্য বড় ছিলো এত দিন, এই ইন্টারনেট প্রযুক্তির ফাঁপড়ে পড়ে সেই পৃথিবী আরও সংকুচিত হয়ে গেছে। এখন পৃথিবী ইন্টারনেটের কল্যানে কারো টেবিলের উপরে পড়ে আছে সাজানো গ্লোবের মতো। কেউ কেউ কোলে পৃথিবী নিয়ে ঘুরছে শহরে। আমি প্রযুক্তির সাথে তেমন সম্পর্কিত নই বলেই সম্ভবত এখনও কোলে কিংবা হাতের মুঠোয় বিশ্ব লুকিয়ে ঘুরতে পারি না।

আমার যেখানে যাওয়ার ঢাকা শহরের জ্যামের কল্যানে এখনও হেঁটেই যেতে হয়। বাসে যাবো সে উপায়ও নেই। রাস্তায় নামলে যতদুর চোখ যায় শুধু যন্ত্র শকটের নিস্প্রাণ ছাউনি। ভেতরে মানুষ বসে আছে অর্থহীন , কোলকাতায় গিয়ে ট্রাম দেখে মনে হয়েছিলো, মানুষ কেনো ট্রামে চড়বে- যারা শহরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যায়, তারা টুপ করে ট্রামে চড়ে বসে, তার পর জিড়িয়ে নিয়ে আবার রাস্তায় নেমে যায়। এখন ঢাকার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমি নিজেই বাসের ছাদের নীচে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চলা শুরু করি।

এভাবেই মানিয়ে নিচ্ছি কিংবা মানিয়ে নিতে হচ্ছে। কাজের ধকল বেড়েছে কিন্তু কাজে যাওয়ার ধকল বেড়েছে আরও বেশী। কাজ করে যতটা না ক্লান্ত হই, তার চেয়ে বেশী ক্লান্ত হই রাস্তায় কাজে গিয়ে এবং কাজ থেকে ফেরার পথে। আজ এক বন্ধুর সাথে দেখা হলো, অনেক অনেক দিন পরে, তোদের ঢাকা শহরে তো হাঁটাই ভালো, এত জ্যাম। আমি মেনে নিলাম কথাটা।

তখন মিরপুর রোড বন্ধ, ঈদের শপিং এ আসবে মানুষ, তারা সবাই সেজেগুঁজে রাস্তায় নামে ১২টার পর, রোজার সময়, দুপুরে খাওয়ার ঝক্কি নেই, তাই রাস্তার দুইপাশে ব্যাংএর ছাতার মতো বেড়ে ওঠা শপিংমলগুলোতে ঘুরতে থাকে, গাড়ি নিয়ে চলে আসে, আসে রিকশায়, আর সব মানুষ রাস্তায় নেমে আসলে আমাদের মতো অভাগা, যাদের এখনও বাসের সীটের জন্য কানুইবাজি করতে হয়, তারা অপেক্ষা করতে থাকে জ্যামে। তো কি আর করার বাস থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম, এসে দেখি তখনও বাসটা পৌঁছায় নি এখানে। লাভই হইলো কি বলিস? আমি গত ১ মাস এভাবেই চলছি, বাসে উঠি না, বাসে বাসায় পৌঁছাতে লাগে ১ ঘন্টা হেঁটে পৌঁছাতে লাগে ৪৫ মিনিট। নিজের এবং পকের স্বাস্থ্য রক্ষা হচ্ছে ভালোমতোই। তো কি করবি তুই।

ঢাকায় আসতে হবে, কিন্তু এখানে এসে অফিস করবো ভাবলেই মাথাটা গরম হয়ে যায়। একটাই উপায় আছে বন্ধু, আমি তাকে সান্তনা দেই, অফিসের উপর তলায় বাসা নিয়ে নিবি,সকাল বেলা দাঁত ব্রাশ করতে করতে অফিসে ঢুকে পড়বি আর কাজ শেষ করে প্যান্টের চেন খুলতে খুলতে বাসায় ঢুকবি, কোনো সমস্যা নাই। পৃথিবী আমার হাতের মুঠোয় তবুও আমার বাসা থেকে অফিসের দুরত্ব কমে না। আমি যতটা সহজে বিদেশের সংবাদ পেয়ে যাই, ঠিক ততটা সহজে নিজের উপস্থিতি বুঝাতে পারি না অফিসে। সুতরাং টেবিলের উপরে গ্লোবটা রেখে আমি জ্যাম ঠেলতে রাস্তায় নামি প্রতিদিনই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।