কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
1.
রাসেল ঢাকায় নামনের পর উপলব্ধি করলো সে বিখ্যাত ব্যক্তি হইয়া উঠছে। কিন্তু বিখ্যাত ব্যক্তি হইলে পরে কি কি করণীয় এইটা আবার তার ঠিক ঠিক জানা নাই। আসলেই কি অন্যরম কিছু করতে হয়? যদিও সুপার হিরোরা অনেক কিছু করে, অনেক সুক্ষ তাগো ম্যানারিজম সমূহ। তো রাসেল এইরম সংশয়ী মনেই ঢাকা শহরের রাস্তায় নামে। এমনেই ঢাকা শহর বহুত পালটাইয়া গ্যাছে এই কয় বছরে, তারমধ্যে আবার এমন সংশয়ী মন, কিচ্ছু তো চিনতে পারতাছে না! এখন কই যাইবো সে? তা'ও যদি একলা হইতো! লগে আবার সাধের একখান কোলের শিশু।
লাগেজ আর বাচ্চা কোনটা যে কোন কান্ধে রাখবো সেই চিন্তা করতে করতেই হঠাৎ তার সামনে এক মাস্তান টাইপ চেহারার লোক আইসা খারাইয়া হাত বাড়াইয়া দিলো। রাসেল তো ভয়েই আধমরা। ছিনতাইকারী!? কিন্তু সেই লোক কেরম গদগদ কয় - 'অটোগ্রাফ' । রাসেল তো অপ্রস্তুত। কিন্তু হাত তার ঠিকই শার্টের বুক পকেটে গেলো গা।
কলমের খাপ খুইলা সে খুবই মোলায়েম গলায় জিগাইলো, 'আপনার নাম?' সেই লোক কয়, 'এই অধমের নাম অমি রহমান পিয়াল। '
তারপর তো বাংলার ছবির মতো একে অপরকে জড়াইয়া ধইরা কান্না কাটি। রাসেলের মনে হইতে শুরু করলো এই পিয়াল তার বহুকাল আগে হারাইয়া যাওয়া বড় ভাই। কোলের শিশুটা একটু কাইন্দা উঠনে রাসেলের সম্বিত ফিরে। দেখে শিশুটা কখন তার কোল থেইকা পইরা পাশে দাঁড়াইয়া আছে আর ছোট ছোট হাতে হাত তালি!
2.
পিয়ালের মোটর বাইকেই কেমনে জানি রাসেল আর তার কোলের শিশু যে সবে হাটতে শিখা গ্যাছে, এই দুইজনের জায়গা হইয়া গেলো।
রাসেল আমেরিকা থেইকা যা যা আনছে তার বিবরণ দিতে গেলে একজন আমেরিকা ফেরত প্রবাসী বাঙালীর অপমান হইবো বিধায় এইখানে লিখনটা সম্ভ্রম সিদ্ধ নয়। পিয়ালের মোটর বাইক ঘ্যাচ কইরা থামলো সিদ্ধেশ্বরীর গলির মুখে। 'পিয়ালভাই, চলেন আম্মাজানের সাথে আপনার পরিচয়...'। পিয়াল থামায় তারে। না রাসেল এখন না, যেইদিন আমি আবার সমাজে প্রতিষ্ঠিত হইয়া উঠতে পারবো, যেইদিন আমি সেই লন্ডন শফিকের কাঁচা কলিজা মায়ের পায়ে সমর্পণ করতে পারবো, শুধু সেইদিন...শুধু সেইদিন আমি যাবো...তার আগে আমাকে তোর বাসায় যেতে বলিসনে ভাই।
' রাসেল বুঝতে পারে পিয়ালের চাকরী নাই। তার মনে হয় দিন গেলে পিয়ালেরো চাকরী হইবো। সে ফিক কইরা হাসে। সেইটা দেইখা ঋকও হাসে। 'সে এইবার কথা বলে,' ড্যাড, ওয়াই আর ইয়া লাফিং?' রাসেল তার শিশু সন্তানের মুখে এই বাক্য শুইনা গেলো ঘাবরাইয়া।
কি হইতাছে এইসব! সে চীৎকার দেয় টারজানের মতো,'কৌশিইইইইইইইইইক!'
3.
পিয়াল ভাই বলছে আজকেই সেইদিন। রাসেলের তাই গলা শুকাইয়া আসে। সে খানিক্ষণ তার ছেলের সাথে হামাগুড়ি খেলে। কিন্তু তাতে তার মন শান্ত না হইয়া আরো অস্থির হয়। পিয়াল ভাই তারে কোন দিনের কথা বলতে চায়? সে হামাগুড়ি দিতে গিয়া কয়টা বুকডনও দিয়া ফেলে মনের ভুলে।
কলিংবেল।
পিয়াল ভাইরে রাসেল গুইনা গুইনা 10 বার জিগায়, 'কই নিয়া যান আমারে পিয়াল ভাই?' পিয়াল খালি হাসে। রাসেল সামনের আয়নাতে তার হাসি দেইখা ঠিক অনুমান করবার পারে নাএই হাসি কিসের। এর অর্থ কি। পিয়ালের মোটর বাইক থামে একটা বিশাল দালানের সামনে যেইটারে তার কেরম চিনা চিনা লাগে।
প্রচুর লোক সমাগম তার সামনে। রাসেল হাত নাড়ে সবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু দেখে সবাই আগের মতোই যার যার আলাপে মত্ত থাকে। রাসেল তার উঠানো হাত দুইটারে আড়মোড়া ভাঙনের মতো কইরা নামাইয়া আনে। তারপর পিয়ালের পেছন পেছন যায়।
পিয়াল হঠাৎ রাইসু বইলা ডাক পারে কারে জানি। রাসেলের এই নাম পরিচিত ঠেকে। তার শরীর শক্ত হয়। সিক্সথ সেনস? এক এলোমেলো চুলের ফ্রেঞ্চকাট দাড়িওয়ালা তাগো সামনে দিয়া যাওনের মুখে থামে। পিয়াল সেই লোকরে বলে, 'রাইসু তুমি এই মুহুর্তে যদি রাসেলরে পাও তাইলে কি করবা?' লোকটা কয়, 'কিচ্ছু না'।
পিয়াল আবার জিগায়, রাইসু তুমি এই মুহুর্তে যদি রাসেলরে পাও তাইলে কি করবা? লোকটা আবারো কয়, 'কিচ্ছু না'। এইবার তার গলা আরো ঠান্ডা। লোকটার এইরম কিচ্ছু না শুইনা রাসেলের কেরম উদাস উদাস লাগে। সে কি তাইলে বিখ্যাত হয় নাই! রাসেল গলা ফাটাইয়া হাক দেয়, 'আমার গীটার কই!!' কে জানি তার হাতে একটা গিটার দিয়া যায়, যাওনের আগে চুপে কয়, 'এইটা আপনের না'।
4.
রাসেল গীটার বাজাইয়া গান ধরে।
তার চাইরপাশে ভীড় জইমা যায়। গোলাম আলীর গান ধরে সে। আবেগ দিতে গিয়া তার চোখ বন্ধ হইয়া আসে। গান শেষে চোখ খুইলা দেখে তার সামনে 103জন রাইসু তার দিকে তাকাইয়া হাত তালি দিতেছে। পিয়াল ভাইয়ের চেহারাটাও কেরম রাইসু হইয়া আসে।
সে জ্ঞান হারায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।