কাজ আমাদের জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। আমরা আসলে সবসময়ই কোন না কোন কাজ করি। এই যে আপনি কম্পিউটারের সামনে বসে লিখছেন বা পড়ছেন এটাও তো কাজ। কাজ ভালো হতে পারে বা মন্দ হতে পারে। এখন আপনি যদি আপনার লেখায় কাউকে অহেতুক গালিগালাজ করেন , তাহলে সেটা নি:সন্দেহে মন্দ কাজ মানে কর্মক্ষেত্রে আপনি অসদাচারণ করলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে কাজ ছাড়া কি মানুষ থাকে ? না। আপনি ঘুমান বা বিশ্রাম নেন তাও কাজ। এবং এই কাজ শুধুমাত্র দুই প্রকার। ভালো কাজ বা মন্দ কাজ। আপনি বলবেন আমি কোনটাই করছি না।
সেটা হবে না। কোন গঠনমূলক কাজ না করে বৃথা শুয়ে বসে সময় নষ্ট করা কিন্তু ভালো কাজের মধ্যে পরছে না ।
সুতারং দেখা যাচ্ছে আমরা কাজ না করে থাকতে পারছি না । তাহলে এই কাজের মধ্যে আবার সদাচারণের ব্যপারটা কি করে আসে? খুব সহজ। আপনি চাকুরী ক্ষেত্রে আপনার বসের আদেশ নিষেধ খুব সুন্দর ভাবে মেনে চললেন এটা হচ্ছে সদাচারণ ।
আর আপনার বসের অবর্তমানে আপনি কাজে গাফিলতি দেখালেন এটা হচ্ছে কাজে অসদাচারণ। কেউ দেখলো না ঠিকই কিন্তু আপনি কাজে অসদাচারণ করলেন। সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেদেরক সবসময়ই সঠিক ভাবতে ভালোবাসি।
তাহলে কাজে অসদাচারণ বলতে আমরা আপনার প্রতি আপনার কাজের যে দাবি চেতন বা অবচেতনভাবে তা পূরণ না করাকেই বুঝতে পারি। আসুন দেখা যাক কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা কাজে অসদাচারণ করি :
১।
পড়াশোনার ক্ষেত্রে ফাকি দেয়া। যেহেতু পড়াশোনা একটি গুরুত্বপূর্ন কাজ।
২। অফিসে কাজে ফাকি দেয়া । যেটা আগেই উল্লেখ করেছি।
অফিসে আমরা কতভাবে আমরা ফাকি দিতে পারি একটু দেখুন।
অফিসে দেরীতে উপস্থিত হওয়া
সময়ের আগেই অফিস হতে বেরিয়ে যাওয়া
আজকের কাজ ইচ্ছকৃতভাবে ফেলে রেখে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করা।
ঈর্ষা বশে অফিসের বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করা।
..ইত্যাদী সকল কাজই অসদাচারনের আওতায় পরে।
৩।
ইচ্ছাকৃত ভাবে অফিস সহকর্মীদের সাথে ঝগড়া ফ্যাসাদে লিপ্ত হওয়া।
৪। অফিস আদালতে ঘুষ লেনদেন বা উপরির ব্যাপারটা তো আমরা সবাই জানি।
৫। কোন কাজকে ছোট মনে করে অবহেলা করা বা ঘৃনা করে প্রত্যাখ্যান করা।
অর্থ্যাৎ আমরা আমাদের দায়িত্বকে অবহেলা করে যখন কাজ করি তখন সেটা অসদাচারণের আওতায় পরে। কেন আমরা এমন করি? আসলে আমরা রাগ ক্ষোভ ঈর্ষা আলস্য লোভ ইত্যাদী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কাজে কর্মে অসদাচারণের আশ্রয় নেই। যেমন ধরুন, রাগ । আপনি অফিসের বসের ব্যপারে রাগান্বিত। সুতারং আপনি চেষ্টা করলেন বস যে কাজ দিয়েছে সে কাজটি ঠিকভাবে না করা।
আমরা এটাকে স্বাভাবিক ব্যাপার হিসাবে গ্রহন করি এবং এতে অভ্যস্ত হয়ে যাই। কিন্তু প্রতিটা কাজের যেমন হিসাব দিতে হয় , তেমনি আপনার কাজে অবহেলা বা অসদাচারণেরও হিসাব চুকাতে হবে। এমনকি প্রতিদিন হয়ত তা করতেও হচ্ছে , আপনি বুঝতেও পারছেন না।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে বলেছেন:
--আল্লাহ প্রত্যেককে কর্মফল দেন , আল্লাহ হিসাবে তৎপর। -সূরা ইবরাহীম:৫১।
কাজে অসদাচারণ আমাদের কি ফল দেয় :
১। আমাদের কর্মক্ষমতা হ্রাসপ্রাপ্ত হয় যা আমরা বুঝতে পারি না।
২। আমাদের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়।
৩।
স্বাভাবিক প্রতিফল হিসাবে আমরা অশান্তিতে পতিত হই।
৪। আমাদের মেধা ও যোগ্যতার বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়।
৫। মানুষ হিসাবে আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠত্বকে হারিয়ে ফেলি।
তাহলে আমাদের করণীয় কি? আমরা আমাদের বিশাল সম্ভাবনাকে যদি অনুভব করতে শিখি তাহলে আমরা যে কোন কাজকে আমাদের সম্ভাবনা বিকাশের একটা মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। তাই কাজকে ভালোবাসতে শিখতে হবে । আসুন আমরা যা করতে পারি :
১। কাজের ক্ষেত্রে আমাদের ফাকিগুলোর একটা লিস্ট তৈরী করি।
২।
একসাথে না হলেও একটা একটা করে ফাকি থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করি।
৩। সুন্দরভাবে সদাচারণের সাথে কাজ করতে পারার জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করি।
৪। কাজে অসাদাচারণ করার জন্য নিজেদেরকে তিরস্কৃত করার বা শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করি।
৫। আপনি যার অধীন তা শিক্ষাক্ষেত্রে হোক কি অফিসে, তাকে হুবহু মান্য করুন। মনে রাখবেন তিনি যোগ্যতাবলেই আপনার উপরে আছেন।
কাজকে ভালোবাসাটাই আসলে মূল কথা। আর ভালোবাসবেনই না কেন- কাজ ছাড়া জীবনে উন্নতি বা পূর্ণতাপ্রাপ্তির তো অন্য কোন পথই নেই।
আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরানে বলেছেন:
--আমি মানুষকে কর্মমুখী করিয়া সৃষ্টি করিয়াছি। সে কি মনে করে তাহার উপর কেহ ক্ষমতাশীল হইবে না? -সূরা বালাদ:৪-৫
আপনি নিজে ভালোভাবে সদাচারণের সাথে কাজ করবেন আর অন্যকেও সেভাবে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করবেন। এই রমজানে এই প্রচেষ্টা আমাদের সাথী হোক আর আমরা মানুষ হিসাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত করে তুলি ।
ধন্যবাদ । এর পরে আমরা নিজের প্রতি কিভাবে সদাচারণ করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।