সদাচারণের ক্ষেত্র বিশাল। গতকাল আমরা কথায় কিভাবে সদাচারী হওয়া যায় এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি। সদাচারণের আরকটি গুরুত্বপূর্ন ক্ষেত্র হচ্ছে আমাদের বাহ্যিক আচার ব্যবহার। চলাফেরায় , কর্মক্ষেত্রে , পোশাক প্রসাধনে, অনুষ্ঠানে আয়োজনে আমাদের প্রকাশ আমরা যেভাবে করি তা কি শিষ্টাচার বর্জিত না কি শিষ্টাচারী তা নিয়ে আমরা ভাবি কি? সাধারনত আমাদের আচার আচরনকে আমরা আমাদের স্বাভাবিক একটা প্রকাশ বলে ধরে নেই এবং এটা নিয়ে মাথা ঘামাই না। একটা সাধারন উদাহরণ ধরুন: কারো সাথে কথা বলতে বলতে আমরা যদি নাক খুটতে থাকি তাহলে আমাদের এই আচরণ অবশ্যই সদাচারণের অন্তর্ভূক্ত নয়।
এটা একটা খারাপ অভ্যাস যা আমরা বর্জন করতে পারি । আচার আচরণে অশিষ্টাচারের কয়েকটি নমুনা এরকম হতে পারে:
চলতে চলতে যেখানে সেখানে থুথু ফেলা।
কোন অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে জোরে কথা বলা।
পোশাক পরিচ্ছদে অশালীন হওয়া বা অশালীন থাকা।
মানুষের সামনে দাড়িয়ে বিচিত্র অবোধগম্য অঙ্গভঙ্গী করা।
অনুমতি ব্যতিরেকে কারো রুমে প্রবেশ করা, কারো কোন কিছু ব্যবহার করা।
অর্থাৎ কারো মধ্যে বিরক্তি উদ্রেক করার মতো কোন আচরন যা সার্বিক পরিস্থিতির স্বাভাবিকত্বকে বিনষ্ট করে , যা যৌক্তিকতাকে লঙ্ঘন করে তাকেই আমরা অশিষ্টাচারী আচরণ বা অসদাচারণ বলতে পারি। আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমরা আমাদের অসাদাচারণকে সাধারণ স্বাভাবিক আচরণ হিসাবে ধরি। কিন্তু এই অসদাচারণের কারণ কি? সেটা যদি বিশ্লেষন করি তাহলে আমরা দেখতে পাবো :
১। আমাদের সনাতন চিন্তা ভাবনার কারনে।
আমাদের বাবা মা বা মুরুব্বিদেরকে দেখেছি এই আচরণ করতে। তাই আমিও তাই করি।
২। আমাদের জিদ বা অহম বজায় রাখার স্বার্থে । আমি এরকম করবো- ব্যস, - এই মনোভাব।
৩। পুরাতন আমিকে ধরে রাখার চেষ্টা। পরিবর্তনকে আমরা ভয় পাই । তাই নিজেকে নতুনভাবে পরিবর্তন করতে হবে সেটা ভাবি না। 'আমি যা আছি তাই থাকবো' এই মনোভাব।
ভেবে দেখেন অসাদাচারণ আপনার জীবনের কতটুকু অংশকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছে। আর আমাদের এই খারাপ বা অযৌক্তিকআচরণ আমাদের নিজেদের কি কি ক্ষতি করছে। আসলে আমরা সবাই আমাদের নিজেদের আচরণকে সবসময় একটা যৌক্তিক মানদন্ডে দাড় করানেরা চেষ্টায় থাকি । যে কারনে আমরা আমাদের আচরনের নেগেটিভ প্রভাব আমাদের জীবনে কি তা অনুভব করতে পারি না। খারাপ আচরণের কারনে আমরা কত লোক প্রতিনিয়ত হেনস্থা হই তা ভেবেছেন কি? আমরা কি পাচ্ছি :
চাকরি হারাচ্ছি।
পদ হারাচ্ছি।
তিরস্কৃত হচ্ছি।
পড়াশোনার ক্ষতি করছি।
সম্ভাবনার বিনাশ ঘটাচ্ছি।
--ইত্যাদী ইত্যাদী।
আমরা যদি পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো সকল মহামানবরা অলি বুজুর্গ ব্যক্তিরা ছিলেন সদাচারী। তাদের আচার আচরণ সবসময় মানুষকে কাছে টেনেছে, প্রশান্তি দিয়েছে। আসলে আমরা নিজেদের দিকে তাকাতে ভয় পাই। নিজেদের বিশ্লেষন করার পরিবর্তে অপরকে বিশ্লেষন করি বেশী। তাই নিজেদেরকে পরিবর্তন করার কোন তাগিদ অনুভব করি না।
একটু যদি ভাবি তাহলে দেখবো একটা সুন্দর আচরন আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। শুধুমাত্র ভাইভা বোর্ডের সামনে বা আমার চেয়েক্ষমতাধরদের সামনে সুন্দর আচরন আমাকে সদাচারী হিসাবে প্রমানের জন্য যথেষ্ট নয়। আমি আমার অধিনস্থদের সাথে কি আচরন করছি তাই প্রমান করবে আমি আদৌ সদাচারী কিনা । আমরা এই সদাচারন নিয়মিত প্রাকটিস করতে পারি। কিভাবে?
১।
আসুন জীবনের সকল ক্ষেত্রেআমাদের খারাপ আচরনগুলো লিখে ফেলি ।
২। যাদের সাথে পারতপক্ষে আমরা সদাচারণ করতে পারি না তাদের সাথে সদাচারণ করতে চ্ষ্টো করি। যেমন: রিকশাওয়ালা, বাস কন্ডাক্টর, যাদেরকে আমরা হরহামেশা গালিগালাজ করি, ঝগড়াঝাটি করি। অন্তত রমজানে আমরা সদাচারণেরএই কাজটি করতে পারি।
প্রয়োজনে হেটে চলবো তাও রিকশাওয়ালার সাথে খারাপ আচরণ করবো না, এই অঙ্গীকার করতে পারি।
৩। ঘরে সবার সাথে বিশেষ করে মা-বাবার সাথে ( যাদের সাথে খারাপ আচরণ করাকে আমরা স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করি) এই মাসে ভালো আচরনের প্রাকটিস করতে পারি।
৪। একটি বড় আয়নার সামনে দাড়িয়েনিজেকে দেখুন - আপনার অসীম সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করুন, নিয়মিত নিজেকে উদ্বুদ্ধ করুন সর্বক্ষেত্রে ভালো আচরণ করার জন্য ।
৫। ভালো আচরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের কি পরিবর্তন করতে চাই, কি অর্জন করতে চাই বা অর্জন করতে পারি তার একটা লিস্ট তৈরী করুন। মাঝে মধ্যেই সেই লিস্টটির ওপর চোখ বুলান।
আসলে আমরা সবাই ভালো মানুষ হতে চাই। কিন্তু তার জন্য যে চেষ্টা করা প্রয়োজন তা করতে আমরা ততটা আগ্রহ দেখাই না।
আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরানে বলেছেন :
--আল্লাহর ইবাদত করো, তার সহিত শরীক করিও না, মাতা পিতা আত্মীয়স্বজন ইয়াতীম, গরীব, নিকটবর্তী প্রতিবেশী , দূরবর্তী প্রতিবেশী, নিকট সঙ্গী, পথিক, ও অধিকারভূক্তদের সহিত সদ্ব্যবহার কর। অহঙ্কারী দাম্ভিকদের আল্লাহ ভালোবাসেন না। - সূরা নিসা:৩৬
তিনি আরো বলেন:
--চালচলনে সুশীল হও , মোলায়েম কন্ঠে কথা বল , কন্ঠস্বরকে গাধার মত কর্কশ করো না। -- সূরা লোকমান:১৯
আসুন আমরা এই পবিত্র রমজান মাসকে আমাদের আচরণকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করি। তাহলে আমরা আমাদের জীবনে ভালো মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সম্ভাবনাকে জাগ্রত করতে পারবো।
ধন্যবাদ সবাইকে । এরপরে আমরা কাজে কর্মে কিভাবে সদাচারী থাকা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।