ডায়াবেটিস বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত স¤প্রসারণশীল দীর্ঘস্থায়ী একটি রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে এ মূহুর্ত্যে পৃথিবীর প্রায় ১৫ কোটি লোক ডায়াবেটিসে ভূগছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যঅ দাঁড়াবে প্রায় দ্বিগুন অর্থাৎ ৩০ কোটি।
ডায়াবেটিস কী
আমরা প্রতিদিন যেসব খাদ্য গ্রহণ করি, তার শর্করা জাতীয় অংশ পরিপাকের পথে সিংহভাগ গ্লুকোজ হিসেবে রক্তে প্রবেশ করে। আর দেহ কোষগুলি প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের জন্য রক্ত থেকে গ্লুকোজ গ্রহণ করে। অধিকাংশ দেহকোষই এই গ্লুকোজ গ্রহণের জন্য ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের উপর নির্ভরশীল।
ইনসুলিন কম বা অকার্যকর হলে দেহের অধিকাংশ কোষে গ্লুকোজের অভাব ও রকোত গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যায়। আর এই সাময়িক অবস্থাই হচ্ছে ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস রোগের ইমার্জেন্সি বা জরুরি অবস্থা প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১. হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজের আধিক্য)
২. হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা)
১. হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা ডায়াবেটিক কোমা
ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগীদেরই সাধারনত ডায়াবেটিক কোমা হয়ে থাকে। অপর্যাপ্ত ইনসুলিন নিলে বা ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগী ইনসুলিন একেবারেও না নিলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে গিয়ে বিপর্যয় দেখা দেয়।
ইনসুলিনের অভাবে রক্তের গ্লুকোজ শরীরের কাজে লাগাতে পারে না। তখন তাপ শক্তির জন্য দেহের সঞ্চিত চর্বি ব্যবহার হতে থাকে। অতিরিক্ত চর্বি ভাঙ্গার ফলে রক্তে কিছু ক্ষতিকর পদার্থ বেড়ে গিয়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। এই অবস্থাকে ডায়াবেটিক কোমা বলে। হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণসমূহ হচ্ছে :
০ খুব বেশি পিপাসা লাগা
০ ঘন ঘন প্রশ্রাব হওয়া
০ চামড়া শুকিয়ে আসা
০ খুব বেশি ক্ষুধা লাগা
০ চোখে ঝাপসা দেখা
০ বমি ভাব হওয়া
০ শাসকষ্ট ও দ্রুত শ্বাস নেয়া
০ দূর্বলতা বোধ হওয়া
০ ঝিমানো বা নিস্তেজ বোধ হওয়া
০ শ্বাসে এসিটোনের গন্ধ বের হওয়া
হাইপারগ্লাইসেমিয়ায় করনীয়
০ পানি স্বল্পতার জন্য বেশি করে লবন মিশ্রিত পানি পান করতে হবে
০ ইনসুলিনের পরিমান বাড়িয়ে দিতে হবে
০ যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
০ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে
২. হাইপোগ্লাইসেমিয়া
বেশি ট্যাবলেট খাওয়া বা ইনসুলিন নেয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি অতিরিক্ত কমে যায় অর্থাৎ ২.৫ মিলিমোলের কম হয় তাহলে শরীরে প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলি নিুরুপ:
০ অসুস্থ বোধ করা
০ খুব বেশি খিদে পাওয়া
০ বুক ধড়ফড় করা
০ বেশি ঘাম হওয়া
০ শরীর কাঁপতে থাকা
০ ঝিমানো ও নিস্তেজ বোধ হওয়া
০ শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
০ অস্বাভাবিক আচরন করা
০ মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরানো
০ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
কেনো এবং কখন এই সব লক্ষণ দেখা যায় :
০ ওষুধের (ট্যাবলেট বা ইনসুলিন) পরিমান প্রয়োজন তুলনায় বেশি হলে
০ বরাদ্ধের চেয়ে খুব কম খাবার খেলে বা খেতে ভুলে গেলে
০ ইনসুলিন নেবার পর খুব দেরি করে খাবার খেলে
০ হঠাৎ বেশি ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম করলে
০ বমি বা পাতলা পায়খানাজনিত কারণে শর্করা অন্ত্রনালী হতে শোষন না হলে
কী করা উচিত
প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া মাত্রই রোগী চা চামচের ৪ থেকে ৮ চামচ গ্লুকোজ বা চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলে খেয়ে নেবেন বা তাকে খাইয়ে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে মুখে কিছু খাবারের চেষ্টা না করে গ্লুকোজ ইঞ্জেকশন দিতে হবে বা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।