আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডায়াবেটিস কি ? কেন হয়? প্রতিকার

সূত্র হতে পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন বংশ ও পরিবেশসহ নানা কারণে মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। কিন্তু কিছু নিয়মকানুন মানলে ডায়াবেটিসের হাত থেকে বাঁচা যায়, নিয়ন্ত্রণে তো রাখা যায়ই। পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। যে রোগটি ডায়াবেটিস হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত তা মূলত ডায়াবেটিস মেলাইটাস। এতে অনেক কারণে রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়।

গ্লুকোজ শরীরের কোষের মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোষের কার্যাবলি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিও উৎপন্ন হয় গ্লুকোজ থেকে। আর রক্তে এই গ্লুকোজের মাত্রা খুব সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন নামের একটি হরমোন। এই হরমোন অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াজ থেকে তৈরি হয়। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস আক্রান্ত।

আর সাধারণ মানুষের মধ্যে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি ৩০০ জনে একজন। এ ডায়াবেটিসটি সাধারণত শিশুকালে বা বয়ঃসন্ধিকালে প্রথম দেখা যায়। তাই এটি জুভেনাইল ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। তবে এটি যেকোনো বয়সেও হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার জেনেটিঙ্ এডুকেশন পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বয়স ২০ হওয়ার পর রোগটি প্রথম ধরা পড়েছে।

এ ধরনের ডায়াবেটিসের লক্ষণের মধ্যে আছে বেশি বেশি পিপাসা বোধ, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া এবং প্রস্রাবের সঙ্গে চিনি যাওয়া। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ইনসুলিন বাইরে থেকে ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হয়। কারণ এ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন উৎপাদনকারী প্যানক্রিয়াজের বিটা কোষ নষ্ট হয়। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই এই কোষগুলোকে শত্রু মনে করে নষ্ট করে দেয়। তাই রোগটি অটো ইমিউন ডিজিজ নামেও পরিচিত।

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হওয়ার প্রধান কারণ বংশগত। তবে শুধু বংশগত কারণ থাকলেই হবে তা নয়, এর সঙ্গে পরিবেশগত কারণ যখন যুক্ত হয় তখনই রোগটি দেখা দেয়। পরিবেশগত কারণ বা এনভায়রনমেন্টাল ট্রিগার না থাকলে রোগটি নাও হতে পারে। শরীরের কোষে জিন থাকে, যা নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের বৃদ্ধি ও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য রাসায়নিক উৎপাদন। যদি সেই জিনে কোনো পরিবর্তন বা মিউটেশন হয়, তবে তা আর যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না।

ক্ষতিগ্রস্ত এই জিনগুলোর মধ্যে আছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এমন জিনও। রোগ প্রতিরোধক সিস্টেমটি এইচএলএ (হিউম্যান লিউকোসাইট এন্টিজেন) নামেও পরিচিত। সহজভাবে বললে, এইচএলএ সিস্টেমে কিছু পরিবর্তনের কারণে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এই ত্রুটির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতি ৩০০ জনে একজন টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত হয়। যদি ভাইবোনের মধ্যে কেউ আক্রান্ত থাকে, তবে আক্রান্তের হার প্রতি ১৪ জনে একজন।

যদি বাবা-মায়ের কেউ একজন আক্রান্ত থাকে তখন আক্রান্তের হার প্রতি ২৫ জনে একজন। যদি ভাইবোনদের কেউ এবং একই সঙ্গে বাবা-মা কেউ একজন আক্রান্ত থাকেন তখন আক্রান্তের হার প্রতি ছয়জনে একজন। যখন যমজ ভাই বা বোন আক্রান্ত হয় তখন ঝুঁকি থাকে প্রতি তিনজনে একজন। টাইপ টু ডায়াবেটিস এটি ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। কারণ এ ক্ষেত্রে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন না নিয়ে ওরাল হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট খেয়েও রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

এ ধরনের ডায়াবেটিসের হার দেশ ও জাতিভেদে বিভিন্ন রকম। যেমন_অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ৫ শতাংশের মতো আক্রান্ত, এশিয়ার দেশগুলোতে এ হার ১০ শতাংশে বেশি। আমেরিকার সাউথ ও প্যাসিফিক সাগরের কিছু দ্বীপে আক্রান্তের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। আফ্রিকায় মাত্র ২ শতাংশ। বাংলাদেশে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও মনে করা হয়, অন্তত ১০ শতাংশ মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত।

টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর শরীরে ইনসুলিন হরমোন তৈরি হয়। বেশির ভাগ সময় ইনসুলিন তৈরি হয় কম, কখনো তা যথা মাত্রায়ও তৈরি হয়। তবে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরূপ আচরণের (অটো ইমিউন) কারণে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলিন প্রতিরোধী তৈরি হয়। এ কারণে হরমোনটি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর রোগটি দেখা দেয়।

এ ডায়াবেটিস যখন অল্প বয়সে দেখা দেয় তখন তাকে অল্প বয়সীদের ডায়াবেটিস বা ম্যাচুরিটি অনসেট ডায়াবেটিস অব দ্য ইয়ং বলা হয়। টাইপ ওয়ানের চেয়ে বংশগত কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। টাইপ টু ডায়াবেটিসে ইনসুলিন প্রতিরোধী তৈরি হয়, ইনসুলিন তৈরিকারী কোষের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটে; তাই উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। বংশগত কারণে কার ডায়াবেটিস টাইপ টু হওয়ার ঝুঁকি কতখানি তা সহজভাবে বললে, যদি কারো ভাইবোন বা বাবা-মা আক্রান্ত হন, তবে তার আক্রান্তের ঝুঁকি ১০ শতাংশ, যদি বাবা-মা এবং ভাইবোনদের মধ্যে কেউ আক্রান্ত থাকেন সে ক্ষেত্রে আক্রান্তের ঝুঁকি ২০ শতাংশ, যদি যমজ ভাই বা বোন আক্রান্ত থাকেন, তবে আক্রান্তের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ। বংশে থাকলেই ডায়াবেটিস হবে? আগেই দেখানো হয়েছে বংশে ডায়াবেটিস থাকলে ডায়াবেটিস আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে_এটি ঠিক।

তবে বংশে থাকলেই ডায়াবেটিস হবে, তা ঠিক নয়। বংশগত কারণ থাকলেও ডায়াবেটিস থেকে নিজেকে বাঁচানো যায় বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া দীর্ঘদিন ঠেকিয়ে রাখা যায়। বংশগত কারণ ছাড়াও কিছু পরিবেশগত কারণ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া ত্বরান্বিত করে। এ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে_ * অতিরিক্ত ওজন * নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম না করা * চর্বি বা তেলযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া * ২৪ ঘণ্টায় অন্তত পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুমানো * বয়স চলি্লশের বেশি হওয়া * ধূমপান করা (ধূমপায়ীদের শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধী তৈরি হয়)। মিষ্টি খেলেই ডায়াবেটিস? যদি কোনো মানুষের অগ্ন্যাশয় সুস্থ থাকে, অগ্ন্যাশয় থেকে সঠিক মাত্রায় ইনসুলিন তৈরি হয় এবং শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধী অবস্থা বিরাজ না করে, তবে তিনি যত মিষ্টিই খান না কেন তার রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে।

তিনি ডায়াবেটিস আক্রান্ত হবেন না। তবে মনে রাখতে হবে, মিষ্টি বেশি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর মুটিয়ে গেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বাড়ে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বহু নারী গর্ভধারণকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুর জন্মদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই এ ডায়াবেটিস সেরে যায়।

তবে অনেকের ক্ষেত্রে তা আর সারে না। যেসব মা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন কিন্তু প্রসবের পর ডায়াবেটিস সেরে যায়, তাঁদের পরবর্তী ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এমনকি ওই শিশুটিরও বড় হলে ডায়াবেটিস আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাই এ ধরনের মা ও সন্তানকে ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। কী দেখে বোঝা যায় ডায়াবেটিস? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো লক্ষণ ছাড়াই একজনের শরীরে ডায়াবেটিস হতে পারে।

সাধারণত ডায়াবেটিস হয়ে যখন অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগস্ত হতে শুরু করে তখন লক্ষণ দেখা দেয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো ডায়াবেটিসের শুরুতেও দেখা যেতে পারে। * বারবার পানি পিপাসা লাগা * ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া * ওজন হঠাৎ কমে যাওয়া * চোখে ঝাপসা দেখা * কোথাও কেটে গেলে বা ঘা হলে সারতে দেরি হওয়া। ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ রক্তে চিনির মাত্রা পরিমাপ করে ডায়াবেটিস শনাক্ত করা যায়। ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষা করে ও ঘরে বসে গ্লুকোমিটার ব্যবহার করে নির্ণয় করা যায়।

রাতে স্বাভাবিক খাবার খেয়ে সকালে খালি পেটে রক্তে চিনির মাত্রা ৫.৮ মিলিমোলের চেয়ে কম থাকলে ডায়াবেটিস নেই বলে ধরে নেওয়া যায়। যদি চিনির মাত্রা ৫.৮ এর বেশি; কিন্তু ৭.৮ মিলিমোলের কম হয়, তবে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আছে বা বর্ডার লাইন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া যায়। যদি চিনির মাত্রা ৭.৮ মিলিমোলের বেশি হয়, তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে মনে করা যায়। তবে শুধু খালিপেটে পরীক্ষাটিই ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। খালিপেটে নির্ণয়ের পর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ পানিতে গুলে খেয়ে দুই ঘণ্টা পর রক্তে আবার চিনির মাত্রা পরীক্ষা করা দরকার।

এ ক্ষেত্রে যদি চিনির মাত্রা ৭.৮ মিলিমোল বা তার থেকে কম হয়, তবে ডায়াবেটিস নেই। যদি ৭.৮ এর বেশি, কিন্তু ১১ মিলিমোল বা তার চেয়ে কম হয়, তবে বর্ডার লাইন ডায়াবেটিস বলে ধরে নেওয়া যায়। আর যদি চিনির মাত্রা ১১ মিলিমোলের বেশি হয়, তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত বলে ধরে নিতে হয়। ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে * প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। হাঁটার ক্ষেত্রে টানা ৪০ মিনিট একটানা হাঁটলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

* এমন ব্যায়াম বা পরিশ্রম করতে হবে যাতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে। * হঠাৎ খুব কঠিন ব্যায়াম শুরু না করে প্রথমে ওয়ার্ম আপ বা হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে হবে। ধীরে ধীরে গতি বাড়াতে হবে। * দেহের ওজন বাড়তে দেওয়া যাবে না। যাদের ইতিমধ্যেই ওজন বেড়ে গেছে তারা ওজন কমাতে ব্যবস্থা নিন (যেমন_খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম, দৌড়ানো, হাঁটা ইত্যাদি)।

* প্রতিদিনই শাকসবজি রাখুন খাদ্যতালিকায়। আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান। * কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন ভাত, আলু ইত্যাদি কম খান। * অধিক পরিমাণ গরু বা ছাগলের মাংস খাবেন না। * আইসক্রিম, পনির, ফাস্টফুড, কোল্ড ড্রিংকস, কৃত্রিম জুস এড়িয়ে চলুন।

* ঘি বা মাখন কম খান বা বাদ দিন। * দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। * ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ছয় ঘণ্টা ঘুমান। * টেনশন কমাতে হবে। লেখক- ডা. দিবাকর সরকার ও ডা. সাবরিনা শারমিন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.