জ্বলে উঠার অপেক্ষায় নিভু নিভু প্রদীপ।
( ম্যালাদিন আগে ব্লগে মন খারাপের দুটো পোষ্ট দিয়েছিলাম। পোষ্ট দেওয়ার সাথে সবাই এসে যেভাবে কথা বলেছেন সত্যিই মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। তো যারা আমার মন খারাপের দিন সাথে ছিলেন তাদের সাথে এখন মন ভালোর সময়টা ভাগাভাগি করতেই এই পোষ্টের অবতারণা। )
গত সোমবার পরীক্ষার রেজাল্ট পেলাম।
রেজাল্টের আগেরদিন একটু নার্ভাসনেস কাজ করছিল। ওই সময়টায় কিছু ভালো লাগে না। সকাল পাঁচটার দিকে 'পাস' কিংবা 'ফেল' নিয়ে একটা মেইল আসবে সেটা ভেবে আমরা যারা পরীক্ষা দিয়েছি সবার বুকের ভিতরে দামামা বাজতে থাকে! অনেক চেষ্টা করেও এটা থেকে বের হতে পারি না।
রাত দুটোর দিকে ঘুমুতে যাবার আগে ঘড়িতে পাঁচটায় এ্যলার্ম দিয়ে রাখি। এ্যলার্ম বেজে উঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে হটমেইল এ্যকাউন্ট এ লগইন করে দেখি কোন মেইল আসেনি! রিফ্রেশ করেও যখন কনফার্ম হলাম মেইল আসেনি, ভাবলাম আরো কিছুক্ষণ ঘুম দেই।
ছয়টার দিকে উঠে লগইন করলাম। কাঙ্খিত মেইল দেখে চেষ্টা করেও হার্টবিট স্বাভাবিক রাখতে পারছিলাম না। অবশেষে মেইল খুলে দেখি বড়ো বড়ো অক্ষরে 'পাস' লেখা, পাশে নাম্বারটা ও লেখা থাকে। আমাদের কোর্সটা এমনই যে পাস'টাই মুখ্য একশোতে একশো পেলেও যা, পাসমার্ক পন্চাশ পেলেও একই। ইউনিভার্সিটির মতো কে কতো নাম্বার পেয়েছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না, পাসের হার এতো বেশি কম (৩০%, থেকে ৪৮% মতো) পাস করতে পেরেছে কিনা সেটাই বড় কথা!
যাইহোক, এটা লেখার মতো তেমন আহামরি কিছু না।
তারপর ও কেন লিখছি সেটার কারণ তো আছেই। আমি খুবই আশাবাদী মানুষ। কোনদিন মন খারাপ ছিল না তা কিন্তু না। আশাবাদী হয়ে ও মাঝে মাঝে যে হতাশা উঁকি দিয়ে যায় সেটা অস্বীকার করি কিভাবে?
গত কিছুদিন আমার মন মেজাজ খুব ভালো। বন্ধুদের নিয়ে ঘুরাঘুরি, শপিং, রেজাল্ট সব মিলিয়ে মনটা ভীষণ ভালো।
গত সেমিষ্টার শুরু হওয়ার আগে আমার অর্থনৈতিক অবস্থা এতো বাজে ছিল বলার মতো না। কিন্তু আমি বরাবরের মতো হাল ছেড়ে দেয়নি। পুরোটা সেমিস্টার আমাকে চার থেকে পাঁচদিন কাজ করতে হয়েছিল। ফুলটাইম কাজ করে ফুলটাইম পড়ালেখা করা কতটুকু কষ্টকর সেটা নিজে ভুক্তভোগি না হলে বলে বোঝানা যাবেনা। তাছাড়া বিদেশে থাকার ঝামেলা হিসেবে আরো কতো হাবিজাবি কাজ যে করতে হয় সেটার হিসেব নাই।
এতোকিছুর পর ও আমি হতাশ হয় নি। 'লিটল মিস সানশাইন' ছবির শেষের দিকে দারুণ কিছু কথা বলে। পুরোপুরি মনে নেই, অনেকটা এরকম; প্রত্যেক মানুষকেই কখনো না কখনো মানসিক চাপে পুড়তে হয়, জীবনের সাথে লড়াই্য়ে টিকে থাকতে সবাইকে যুদ্ধে শামিল হতে হয়, এসবের পরে একদিন ঠিকই সে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছায়। তবে, মজার ব্যাপার হচ্ছে মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা হচ্ছে সে সময়টাই যখন সে প্রচন্ড কষ্টের মধ্য দিয়ে যায়। কারণ, ওই সময়টাতেই আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে মূল্যবান শিক্ষা লাভ করি, সবচে বেশি জীবনকে উপলব্দি করতে শিখি, বেঁচে থাকাটা যে কতো সুন্দর সেটা বুঝতে শিখি।
আমার সুপার পসিটিভ মনোভাবের জন্য আমাকে অনেকে মিষ্টার পসিটিভ বলে ডাকে! ফারহান দাউদ এর একটি পোষ্টে কমেন্ট রেখেছিলাম, জবাবে সে বলেছিল; 'আপনে মিয়া সুপার পজিটিভ, বাড়ির উঠানে বোমা পড়লেও কইবেন যাক বিনা পয়সায় পুকুর কাটা হয়া গেল। ' ঠিকই বলেছে ফারহান।
আমি নিজে আশাবাদী বলেই হয়তো আশাবাদী মানুষদের খুবই পছন্দ করি। ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল যে কারণে আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো স্বপ্ন দেখানোর মানুষের দরকার আছে।
কেন? আমাদের দেশে নেতিবাচক কথাবলার মানুষের অভাব নেই, আপনি যেকোন কিছুই করতে যান; কেউ না কেউ এসে আপনাকে আটকে দিতে চাইবে। আমাকে আরেকজন মানুষ খুব স্বপ্ন দেখান। স্যার রিচার্ড ব্রানসন(ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ); যাকে আমি গুরু মানি। এই মানুষটার মধ্যে স্পেশাল কিছু আছে। ওনার লেখা বইগুলো বিভিন্নদেশে কেন এতো জনপ্রিয় সেটা নিজে পড়ে বুঝতে পেরেছি।
উনাকে দেখে আমার মতো অনেকেই উৎসাহিত হয়েছে। বিশ্বাস করুন উনার লেখা 'Screw it, let's do it' বইটা পড়ে আমি এতোটাই অনুপ্রাণিত হয়েছি, আমার কাছে অসম্ভব বলে কোন কিছু মনে হয় না। আমি জীবনকে নতুন করে দেখতে শুরু করেছি। আমার এখনকার এই ভালো থাকার পেছনে এই মানুষটার অবদান সবচে বেশি(বইটাতে এমন কি আছে সেটা নিয়ে একটা পোষ্ট লেখার ইচ্ছে আছে)। ঠিক একইভাবে আমি বিশ্বাস করি ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা পড়ে আমাদের দেশের অনেক তরুণ অনুপ্রাণিত হবে।
কোল্ডপ্লে আমার অসম্ভব প্রিয় ব্যান্ড। ওদের একটি গান আছে 'লস্ট', মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে এই গানটি শুনে উৎসাহ খুঁজি। গানটির কথাগুলো খুবই সহজ কিন্তু জটিল, বিশ্বাস না হলে একবার শুনে দেখুন।
আমি কারো মন খারাপ দেখতে পারি না। হতাশা থেকে কাউকে উদ্বার করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করি।
ব্লগের ভাঙা চাঁদকে মনে আছে? এই ছেলেটার প্রতিটি লেখায় হাহাকার বিরাজ করতো। অনেকেই হয়তো ওর মানসিক কষ্টের কারণ বুঝতে পেরেছিলেন! আমি ওকে মেসেন্জারে এ্যড করেছিলাম, এরপর থেকে অনলাইনে দেখলে ওর সাথে কথা বলতাম। ছেলেটাকে কখনো হাসতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম পড়ালেখাটা যাতে ঠিকভাবে চালিয়ে যায়। তারপর একদিন হঠাৎ করে সে ব্লগ থেকে উধাও হয়ে গেছে, অনলাইনে ও ওকে আর দেখি না।
যতটুকু বুঝতে পেরেছি ছেলেটির কথা বলার মতো কোন বন্ধু নেই।
জীবনটা অনেক ছোট। অনেকের জন্য খুবই অল্প সময়, কারো কারো জন্য একটু বেশি এই যা! Behrangi নামের একজন ইরানী লেখক বলেছিলেন; 'Death could very easily come now, but I shouldnt be the one to seek it, if I should meet it and that is inevitable, it would not matter, what matter is whether my living or dying has had any effect on the lives of others' ঠিক। বেঁচে থাকার আনন্দটা উপভোগ করুন, অন্যকেও উপভোগ করতে সাহায্য করুন, মানুষের উপকার করুন। মানুষের উপকার করার মধ্যে আনন্দ আছে।
সেটা অর্থনৈতিক ও হতে পারে আবার ভালো কোন উপদেশ দিয়েও হতে পারে! আমি চেষ্টা করি যতটুকু পারি মানুষের উপকার করতে। বেশ কিছুদিন পূর্বে দেশের একটি পরিবারকে সাহায্য করতে বন্ধুদের কাছে হাত পেতেছিলাম, দুএকজন বাদে কেউ তেমন একটা এগিয়ে আসেনি। পরে আমি একা যতটুকু পেরেছি চেষ্টা করেছি ; অথচ তখন আমি নিজেই অর্থনৈতিক চাপে ছিলাম। তবে, ম্যানেজ করতে পেরেছি। সে পরিবারটিতে এখন হাসিখুশি আছে, যেটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়।
ব্লগে মনজুরুল হক ভাইকে অনেক সম্মান করি এই একটি কারণে। প্রতু, জ্বিনের বাদশা, আব্দুর রাজ্জাক শিপন ভাই, একরামুল হক শিপন যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। এর বাইরে অনেকে আছেন যারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্যালুট আপনাদের।
ভোর হয়নি, আজ হলো না, কাল হবে কিনা তা ও জানা নেই, পরশু ভোর ঠিকই আসবে এই আশাবাদ তুমি ভুলো না।
মাহমুদুজ্জামান বাবুর একটি গানের কথা। যারা জীবনকে নিয়ে হতাশ তাদেরকে বলছি জীবনকে তুচ্ছ ভাববেন না। সামনে দেখুন, চ্যালেন্জ মোকাবেলা করুন, ভোর ঠিকই আসবে। বেঁচে থাকার মধ্যে আনন্দ আছে, সেটা উপভোগ করুন।
(লেখাটি সম্পুর্ণ নিজের অভিগ্গতা থেকে।
কারো প্রতি কোন উপদেশ নয়, অনুরোধ হিসেবে নিতে পারেন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।