আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরান ঢাকার দিনগুলি--- (পর্ব- হীন্দুৎসব ) ।।।

"এক ষ্টেশনের টিকেট কেটে অন্য কোন স্টপেজে নেমে পড়া আমার আজন্ম স্বভাব" ইয়াহু মেসেন্জার : ahmed_wpsi@yahoo.com

আমি তখন লালবাগের হরমোহনশীল স্ট্রীটে একটা মেসে থাকি । একটা সরু গলির মুখে এসে নীচতলায় ছিল আমাদের স্বপ্নের সেই আবাসন । সেই মেসের অনেক মেস মেম্বার-ই এখন ব্যক্তিগত জীবনে অনেক প্রতিষ্ঠিত; অনেকেই এখন লসএন্জেলস বা মেলবোর্নের মত সৌখিন শহরে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। সেই সব কথা আগামী পর্ব গুলোতে লেখা যাবে । ------- ----- আমাদের মেসের পাশেই ছিল হীন্দু মহল্লা -রিসি পাড়া।

যে কোন সনাতনী উৎসবে ঐ মহল্লার মন্দিরে বিশাল আয়োজনের ধুম পড়ে যেত । আমরা মোট ১২/১৪ জন এক সাথে থাকতাম । এর মধ্যে বেশ কয়জন হীন্দু-ও ছিল। আমরা সবাই মিলে মহল্লায় একটা কোচিং সেন্টার চালাতাম । অনেক জনপ্রিয় ছিল সেই কোচিং সেন্টার ।

তার পাশেই কবি নির্মেলেন্দু গুণ থাকতেন । আমরা প্রায়-ই হুট-হাট করে উনার ঘরে চলে যেতাম বিশেষ করে কোন উৎসবের দিন হলে । মনে আছে একবার জন্মাষ্টমীর দিনে সকালে আমরা কয় বন্ধু উনার ঘরে গিয়ে ফুল সাজিয়ে রেখে এসে ছিলাম । উনি কি যে খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন-- "দ্যাখ ,, এত বড় মহামানবের জন্মদিনে আমাদের মাঝে কি নিদারূন দৈন্যতা অথচ অনেক সাধারণ মানুষের জন্মদিন-ও অনেক ঘটা করে পালন করা হয়।

তোরা যে এই দিনটিকে স্বরণ করে এসেছিস তাতে আমি অনেক খুশি। " এরকম অনেক সনাতনী উৎসবে আমাদের ভীষন আনন্দ হতো । দিনের প্রথম প্রহরে মহল্লার মন্দির ঘুরে আমরা চলে যেতাম ঢাকেশ্বরী মন্দিরে । সবাই একযোগে পরিপাটি হয়ে বের হতাম। সাজসজ্জা দেখে বোঝা যেতনা কে হীন্দু আর কে বা মুসলিম অথবা অন্য ধর্মালম্বী ।

তখন ঢাকেশ্বরী এত ছিম-ছাম ছিলনা । কিন্তু উৎসবে ছিল হৃদয়াবেগ। বিভিন্ন স্থান হতে কীর্তন করার জন্য অনেক বড় বড় শিল্পী আসতেন। কলকাতার শ্যমলীমা দাসীর নাম কীর্তন মানুষের দেহমন ছুয়ে যেত । আমরা সারারাত ধরে সেই কীর্তন দেখতাম আর প্রতিটা বাণী শুনতাম মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতার মত।

এখন-ও মনেপড়ে গভীর রাতে কীর্তনের বিচ্ছেদ পর্বে শিল্পী যখন তার যাদুকরী কন্ঠে রাধা হয়ে গাইতেন---- "সখী সে হরী কেমনে বল ?? নাম শুনে যার এত প্রেম জাগে চোখে আসে এত জল------" তখন সবার মনে রাধা সম বিরহ যেন উপচে পড়তো । আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল ঐ মহল্লার-ই ছেলে লিংকন। আমি আর ও আর ম্যাচের স্বরুপ দা, রিপন দা সবাই মিলে ঐ রাতেই ঢাকা ভার্সিটির জগন্নাথ হলে যেতাম , সেখানে আমাদের আরেকটা সার্কেল ছিল। জগন্নাথ হলের অনুষ্ঠান-ও অনেক প্রাণবন্ত ছিল । প্রকাশ দা , অখিল দা আরো অনেকে সারারাত ধরে গান গাইতো ।

হলের পুকুর ঘাটে বাধানো সিড়িতে আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিতাম । কোন কোন সময় ভোর পর্যন্ত চলতো সেই আড্ডা। কত জন যে আসতো তাদের মধ্যে কেউ কেউ আজ ষ্টার [ আশুতোষ সুজন (অভিনেতা), বিপ্লব দা, প্রকাশ দা (ধ্রুপদী শিল্পী ), খোকা ভাই (কবি)], কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন আবার কত মুখ আর মনেই পড়েনা । এক বছর জন্মাষ্টমীর দিনে প্লান করলাম সবাই মিলে বুড়িগঙগায় গোসল করবো যে কথা সেই কাজ । রাত ১ টার দিকে গোসল শেষে আমরা সবাই ভেজা শরীরে ম্যাচে ফিরলাম ।

আরেকবার ষরসতী পূজার দিন সবাই সারা রাত শাখারী বাজারে রাস্তার উপর গান গেয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম । একবার দুর্গাপূজায় ঝামেলা হয়ে গেল । । পূজার ১ দিন পড়েই আমার আই,সি,এম,এ পরীক্ষা ; স্বরুপ দা তখন কোন একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে ট্রেনিং করছে কোন ছুটি নেই, বিকাশ-ও যেন কি নিয়ে ব্যস্ত অর্থাৎ পুজায় কারো বাড়ী যাওয়া হবেনা । বিকাশের মন খারাপ হয়ে গেল কিন্তু স্বরূপ দা বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফেল্রেন।

বল্রেন এবারের পূজা হবে আমাদের জীবনের সেরা পূজা । মেসেই সমস্ত আয়োজন হলো। সবাইকে নিমন্ত্রন করা হলো । চিপা চিপা ৪ রূমে প্রায় ৫০ জনের আগমন। এর মধ্যেও চল্রো গান বাজনা ।

মনে পড়ে,,, ৫ কেজি ময়দার লুচি বানাতে গিয়ে বিকাশ কি বিপদেই না পড়েছিল । ওর জানা ছিল না ৫ কেজি ময়দার এত লুচি হয় । খাসির মাংস কষাতে গিয়ে গেল পুড়ে। শেষে আরিফ ভাই-এর পরামর্শ মোতাবেক আমরা যে সব ছাত্রীদের পড়াতাম তাদের খবর দিয়ে শেষ রক্ষা হয়। তারপর-ও খাসীর মাংস দিয়ে সেই লুচির স্বাদ এখনো সবার মুখে লেগে আছে।

কিছুদিন আগে আমার এক ছাত্রী ইতালী থেকে (স্বামী সহ ইতালি থাকে) মেইল করেছে--- ' sir, Today we eaten luchee with mutton bt cant get that test... My husbend "protul" said ,, ‍ for getting that teste u comeback teenage..‍ ha ha ha.. ------ সময়ের সিড়ি বেয়ে আজ সব কিছু আলাদা । এরকম একটি দিনে আজ আমি অফিসের ঘানি টানছি। লিংকন দেশের বাইরে। মেহেদী আমেরিকায়। স্বরুপ দা গ্রামে এক কলেজে পড়ায়।

বিকাশের সাথে যোগাযোগ নেই অনেকদিন। দেবু দা বেচে আছে কিনা তাও জানি না । তবুও মনে উকি দেয় ফিকে হয়ে আসা সেইসব স্মৃতি হঠাৎ কানে বেজে ওঠে শংখধ্বনীর সাথে নষ্ট্রালজিক সেই সুর-------- ----- --- "গাহ নাম অবিরাম---- ---- কৃষ্ণ নাম,,কৃষ্ণ নাম,কৃষ্ণ নাম, মহাকাল যে কালের করে প্রণাম --- যে নামের গুণে কংস কারার খোলে দ্বার-- বসুধা যে নামের যমুনা হলো পার কৃষ্ণ নাম,কৃষ্ণ নাম,কৃষ্ণ নাম। । ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।