স্বাগতম
(আকাশ ছুয়ে দেখা)
কুয়েত সীমানায় উট নিয়ে আমার ছবি
আমরা জর্ডানের সীমান্ত শহর তাবুকের কাজ সেরে ফিরে আসার সময় সিদ্ধান্ত নিলাম আল্লার ঘড় কাবাতে গিয়ে ওমরা পালন করে তবেই আল-খুবার ফিরবো। সেই লক্ষ্যে আমরা তায়েফ নগরীর পথে রওয়ানা দিলাম। আমার ধারনা এই শহরের নাম শোনেননি এমন লোক আমাদের দেশে নেই। যাইহোক এই তায়েফ শহর পবিত্র শহর মক্কা থেকে মাত্র ৭৫ কিঃমিঃ দূরে এবং সমতল ভূমি থেকে প্রায়১৮০০ থেকে ২৫০০কিঃমিঃ উচু পাহাড়ের উপড় অবস্থিত। সাধারনত এই শহরের তাপমাত্রা গরমকালে ১৫-৩৬ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং শীতে ৩-২০ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে থাকে।
এখানকার এই নিন্ম তাপমাত্রার জন্য অর্থাৎ সৌদি আরবে তুলনামুলক ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে বলে গরমকালে সৌদি নাগরিক ছুটি কাটাতে এখানে চলে আসে। তাই ধর্মীয় স্থান বাদেও সরকার তায়েফকে গরমকালের অবকাশকালীন শহর ঘোষনা দিয়েছে। এখানে বেশ কিছু পাহাড়ের মধ্যে দুইটি পাহাড় আছে একটির নাম সিল আল সাগির অন্যটির নাম সিল আল কাবির। টূরিস্টদের এখানে জন্য কেবলকারও রয়েছে!
আমি গাড়ী চালিয়ে সমতল ভূমি থেকে যখন পাহাড়ের উপড় একেবেকে উঠছিলাম তখন ভয়ে আমার অন্তরাত্তা কাপছিল। পাশে তাকালেই মনে হচ্ছিল এই বুজি খাদে গড়িয়ে পরবে আমার গাড়ী।
তবে কিছুক্ষন পর পরই সেফ পার্কিং প্লেস দেখতে পাচ্ছিলাম। পাশের সিটে বসা মিশরী ভদ্রলোক আমাকে অভয়বানী শোনালেও তিনিও যে ভয় পাচ্ছে বুঝতে আমার বাকি ছিলনা!এভাবে কতোক্ষন ড্রাইব করেছি বলতে পাবোনা। তবে খেয়াল হলো যখন দেখলাম অনেক উপড়ে উঠার পর আকাশের মেঘগুলো আমার গাড়ী ছুয়ে যাচ্ছে। আমি কখনো এভাবে পাহাড়ে উঠিনি আর মেঘ যে ছোয়া যায় সেটা কবিদের কল্পনা বলে ভাবতাম। কিন্তু নিজের চোখে সাদাকালো পাজা পাজা মেঘ দেখা,তাও আবার আমার গাড়ীর উইন্ডস্কিনে আলতো ভাবে এসে গড়িয়ে পড়ছে!হায়রে কবি হলেতো মহা কাব্য লিখে ফেলতাম!আমি সাহস করে জানালার গ্লাস একটু নামিয়ে ফেললাম ডানহাতে স্টিয়ারিং ধরে বাম হাতটা বাইরে বের করলাম।
আহ এ যেন কেউ ঠান্ডা শুড়শড়ি দিচ্ছে !!খোলা জানালা দিয়েও মেঘপুঞ্জ গাড়ীর ভেতরে ঢূকে গেল আমি নুতন এক আলতো ছোয়ার পরশ পেয়ে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি!আমি যে সেদিন কি অনুভব করতে পেরেছিলাম তা লিখে প্রকাশ করতে পারছিনা। ক্ষমা করবেন।
তায়েফ শহরে এসে দেখি হোটেল আর হোটেল!সারা শহর সবুজের সমারোহ,আর পুরানো ঢাকার মতো ছোট বড় বানড় আর বানড়!এখানে প্রচুর সাক-সব্জি হয় তাছারা একানকার আংগুর ও ডালিম খুবই স্বাদের ।
আমরা এখান থেকেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুঘন্টার জন্য একটা রুম ভাড়া নিয়ে বিশ্রাম নিলাম। তারপর ওমরার জন্য নিয়ত করে গোছল সেরে এহরাম বেধে কাবা শরিফের দিকে রওয়ানা দিলাম।
এখান থেকে কাবার দুরত্ব ৭৫ কিঃমিঃ এবং সমতলে।
ওমরা সেরে আমাদের হেড অফিসে ফিরে এসেই শুনতে পেলাম,কুয়েত-ইরাক সীমান্তে আমরা ২০কিঃমিঃ দীর্ঘ কাটাতারের বেড়া ও সার্চলাইট নির্মানের কাজ পেয়েছি। বাংলাদেশ-ভারত কাটাতারের বেড়া নিয়ে অনেক ঝামেলার কথা আমরা জানি। তাই আমি একটু ভীত হয়ে বসকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,কুয়েতকে নাহয় বাদ দিলাম ইরাককি আমাদের বেড়া নির্মান করতে দেবে?আমার কথা শুনে তিনিতো অবাক, কেন নয়?
কূয়েত সীমানা বরাবর বাঙ্কার
যাক মাস দুই বাদে আমাকেই পাঠালো সেই সীমান্তে। ইরাক ও কুয়েতের কোনাকুনি সীমান্ত এটা।
কুয়েতী বর্ডার খোলা থাকলেও ইরাক বর্ডার তখন সম্পূর্ন বন্ধ। কাস্টমস কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক এলাকা ছারা এখানে বলতে গেলে কিছুই নেই। তবে অনেক বাংলাদেশী আছে যারা কাস্টমসে লোডারের ও ক্লিনারের কাজে এসেছে। তাদের জন্য টিনসেডের ক্যাম্প রয়েছে। আমি তখন এক মিশরী কলিগসহ এসেছি আমাদের লোকজনের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্থ্য করতে।
কাস্টমস ম্যানেজারের নিকট আমাদের পরিচয় দেয়ারপর তিনি একজন লোক সঙ্গে দিয়ে আমাদেরকে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের অফিসে পাঠালেন। সেখানে কর্ণেল ইব্রাহিম আমাদের সঙ্গে খুবই ভাল ব্যবহার করলেন এমনকি আমাদের লোকজন থাকার জন্য তার একটা ব্যারাকে জায়গা দিতে রাজি হলো।
কাটাতারের বেড়া তবে তখনো বারবেড ওয়ার লাগানো হয়নি
এরপর আমাদেরকে নিয়ে সাইট দেখাতে ইরাক ও কুয়েত বর্ডারের বরাবর দিয়ে পুরো ২০কিঃমিঃ এলাকা দেখালো। ৭কিঃমিঃ ইরাক এবং ১৩কিঃমিঃ কুয়েত বর্ডারে আমাদের কাজ করতে হবে। সেই সময় কুয়েতী আর্মীরা এগিয়ে এসে আমাদের সকলের সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলেছিল কিন্তু ইরাকীদের চৌকি দেখা গেলেও তারা এগিয়ে আসেনি।
যাইহোক আমরা আমাদের সাইট বুজে নেয়ার পর কর্নেলকে আমি জিজ্ঞেস করলাম ওপার থেকে আমাদেরকে গুলি করবেনাতো?তিনি হেসে বললেন তুমি যদি ১৫০মিঃ ভেতরে চলে যাও তবে তারা তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে কিন্তু গুলি করবেনা। আমি বুজলাম নো মেনস ল্যন্ড বাইরে রেখেই তারা কাটাতারের বেড়া দিচ্ছে। মনে মনে ভাবলাম এই কাটাতারের রাজনীতি ছোটকাল থেকে দেখে এসেছি আর আমি ভিনদেশে এসে সেই কাজ কত সহজে করতে যাচ্ছি!
ওয়াচ টাওয়ার বা চৌকি
আমরা দুপুরে কাস্টমস ম্যানেজারের নিকট ফিরে গিয়ে রাতে থাকার জন্য রেস্ট হাউসের কথা বলতেই তিনি ব্যবস্থা করে দিলেন। কারন সেই এলাকায় (আলরোকি) দুটো পেট্রোল পাম্প সঙ্গে ছোট খাট দোকান(বাকালা),ব্যাঙ্ক আর রেস্টূরেন্ট ছাড়া কিছুই নেই। আমরা সরকারী রেস্টহাউজে বেশ আরাম করেই ঘুম দিলাম।
মধ্যরাতে কুকুরের করুন চিল্লাচিল্লিতে ভাল করে ঘুমাতেই পারলামনা। সকালে নাস্তা করতে গিয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করতেই ওরা বললো এগূলো কাস্টমসসের ডগ। ড্রাগ ও অবৈধ মাল ধড়ার জন্য এই ডগগুলোকে ড্রাগ এডিক্টেড করা হয়। সময়মতো ড্রাগ না পেলেই এরা কান্নাকাটি শুরু করে!!!
পরদিন আমাদের সমস্ত লোকের অর্থাৎ যারা কাজ করবে এবং গাড়ীর আইডি বানিয়ে ফেললাম,সঙ্গে আমারও। আইডি পেয়েই আমি দৌড়ালাম কাস্টমস চেকিং যেখানে হয় তা দেখতে।
কুয়েত থেকে সারি সারি প্রাইভেটকার নিয়ে পেসেঞ্জার সেডে গাড়ী পার্ক করতেই কাস্টমসের কুলিরা(বাংলাদেশীই)গাড়ীর মালামাল নিচে নামিয়ে রাখছে। অফিসার এসে সেগুলো চেক করে ইশারা করতেই আবারো কুলিরা তা যথাস্থানে উঠিয়ে দিচ্ছে। কারো মাল সন্দেহ জনক মনে হলে সেই ডগ এনে শুকিয়ে দেখাচ্ছে!তারপর শরীর তল্লাশীর প্রয়োজন হলে পুরুষ-মহিলাদেরকে আলাদা নির্দিস্ট রুমে নেয়া হয়,পাসপোর্টের ছিল ছাপ্পর ইত্তাদি সব কাজ করতে গড়পরতায় ১৫ থেকে ২০মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। মনে করুন আমাদের বেনাপোল বর্ডারের কথা!একটিবার মাত্র গিয়ে সেই যে তওবা কেটেছিলাম আর ঐ পথ মারাইনি। (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।