সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
স্বাধীনতার ৬৩ বছরে এসে আপনি ভারতীয় গণতন্ত্রের উদ্দেশে কতবার পান করবেন?
(হেসে) পুরো তিনটির মধ্যে? এই স্কেলটি আবিষ্কার করেছিলেন ইএম ফ্রস্টার টু চিয়ার্স ফর ডেমোক্রেসিতে। আমার মনে হয়, আমি দুইয়ের বেশি দেব কিন্তু তিনের কম। আর ওই দৃষ্টিভঙ্গি যদি গ্রহণ করেন যে, গণতন্ত্র যতদূর পারছে করছে, তাহলে এমনকি একটিও দিতে পারি। কিন্তু দারিদ্র্য, শিক্ষাহীনতা, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বড় যুদ্ধের যে দুর্ভাগ্যের মধ্যে আমরা আছি_ পাকিস্তান যেখানে একটি অদ্ভুত ও জটিল প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশি্বক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে_ সেখানে কি আশানুরূপ কাজ আমরা করতে পেরেছি? আশা অবশ্যই বড় একটি প্রসঙ্গ।
যেমন আমি আশা করেছিলাম, অ-নাটকীয় বঞ্চনাগুলো অনেক বেশি মনোযোগ পাবে। গণতন্ত্রের আগমনের সঙ্গে দুর্ভিক্ষ চলে যাবে। আমি ভেবেছিলাম, লিঙ্গীয় বৈষম্য ও শিশুদের ব্যাপক অপুষ্টি মনোযোগ পাবে। এখানেই আশাহত হই।
যে অন্যায় ভারতকে আজ তাড়া করে ফেরে, যে বঞ্চনাগুলোর কথা আপনি বললেন, তার মধ্যে কোন ব্যাপারটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি আশাহত করে?
এর সবই উদাহরণ।
শিশুদের অপুষ্টি দূর করা ভারতে খুবই কঠিন। পৃথিবীর অনেক এলাকার চাইতে এখানে শিশুরা বেশি অপুষ্টি নিয়ে জন্মে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়েরা বঞ্চিত হন। একটি বড় বিষয় লিঙ্গীয় বৈষম্য। কিন্তু আমি বলতে চাই না এটিই শুধু গুরুত্বপূর্ণ।
আমি বরং একগুচ্ছ বঞ্চনার কথা বলি। আমাদের উচিত এর সবগুলো নিয়েই কথা বলা।
উন্নয়নের নানা বিষয়ের বাইরে আপনি নানা জাতীয় বিষয়ে কথা বলছেন। যেমন ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি। আপনার কি মনে হয় এটি ভালো চুক্তি?
এখন আমি অন রেকর্ড বলছি, আমি জানি না ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি ভালো না মন্দ।
মনমোহন সিংয়ের মতো আমার শক্ত কোনো মত নেই। তিনি মনে করেন, এটি ভালো চুক্তি। আর কমিউনিস্ট পার্টি মনে করে এটি একটি বড় বিপর্যয়।
আপনার বাম বন্ধুরা তো এখন পস্তাচ্ছেন। এটি পরিষ্কার যে, সরকার নামানোর জন্য তারা ভুল বিষয়কে সামনে এনেছিলেন।
এ বিষয়ে টেলিভিশনে আমি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছি। আগস্টে, ভোটের পরপরই।
আপনি যা বলেছিলেন তাতে তারা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। কারণ সমালোচনাটা এসেছিল একজন বন্ধুর কাছ থেকে, বিপক্ষের কারও কাছ থেকে নয়।
অবশ্যই বিপক্ষের কারও কাছ থেকে নয়।
আমি বামের বন্ধু, আমার রাজনীতির ভর বামেই। কিন্তু অনেক সময় এটি নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যে, কোনটি বাম আর কোনটি ডান। আমি কালকে লড়াই লড়ার চেয়ে আজকের লড়াইটি লড়তে বেশি পছন্দ করি। আমার মতে, এই আমেরিকা-বিরোধিতার অস্ত্র, এটাই একটা সমস্যা। (হেসে) এটাকে আবার শিরোনাম বানিয়ে ফেলবেন না।
এটা ছোট বিষয়, কিন্তু বামেরা যেসব কারণে ঠাণ্ডাযুদ্ধ থেকে বের হতে পারে না, তার একটি কারণ। কিন্তু আমি মনে করি, আমেরিকা-বিরোধিতার এই অস্ত্র বামদের পেছনের দিকে টানছে।
এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আপনার কোনো সংলাপ হয়েছে?
আমি যখনই কলকাতা যাই আলাপ হয়। তাদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দিলি্লতেও হয়।
তাদের প্রতিক্রিয়া কী?
তারা সবসময়ই আমার প্রতি সদয়; কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তারা আমাকে বলেন, আমেরিকা সম্পর্কে ধারণা থেকে তারা কখনোই এ চুক্তিকে গ্রহণ করতে পারেন না। এই পাঠ যা আজকের দুনিয়াকে মহামারীর মতো তাড়িয়ে ফিরছে তা হলো, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে সত্যের একটি দানা আছে; কিন্তু সত্যের সেই দানাটি আছে টনটন আরও বহু জিনিসের নিচে। আপনি কীভাবে এ বিষয়টিকে বড় করে দেখে বাকিগুলোর কথা ভুলে যাবেন? ভুলে যাবেন সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক হুমকির কথা, বিশ্বজুড়ে লতিয়ে ওঠা সাম্প্রদায়িকতার কথা, সুদানে হোক আর আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে স্বৈরতান্ত্রিক শাসক অব্যাহত থাকার বিষয়? গত কয়েক বছরে গণতন্ত্রের তেমন বিকাশ ঘটেনি। ক্ষুধা ও অপুষ্টির মতো আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর দিকে তাকাবেন না।
বামরাই তো এসব বিষয়ে জোরেশোরে স্পষ্ট কথা তোলার স্বাভাবিক দল।
আপনি কি বলছেন, বামরা পরমাণু চুক্তির বদলে অন্য বিষয়গুলোতে সরকারের বিরোধিতা করতে পারত?
তারা সরকারের অংশ ছিল। তারা যা করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করতে পারত।
প্রকাশ কারাত সম্প্রতি বলেছেন, ভারতের জন্য কিউবা হলো অনুসরণীয় মডেল। আপনি কি কথাটি খেয়াল করেছেন?
আমি তার বিবৃতি পড়িনি।
কিন্তু এক সেকেন্ডের জন্যও আমি কথাটা বিশ্বাস করি না। স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে কিউবার কাছ থেকে শেখার আছে। কিন্তু গণতন্ত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে কিছু শেখার নেই। এটি খুব বদ্ধ দেশ। আমেরিকার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, কিন্তু জনগণের জন্য চিকিৎসা সেবার ব্যাপারে তাদের কাছে শেখার কিছু নেই।
কোনো দেশই আমাদের জন্য অনুসরণীয় মডেল হতে পারে না।
আপনার নতুন বই ন্যায়বিচারের ধারণায় আপনি ন্যায় (অনুভূত ন্যায়বিচার) ও নীতির (প্রাতিষ্ঠানিক ন্যায়বিচার) পার্থক্য বিষয়ে অনেক কথা বলেছেন। আপনার কি মনে হয় ভারতে নীতি অনেক বেশি কিন্তু ন্যায় খুবই কম?
ছোট করে উত্তর হলো_ হ্যাঁ। নীতির ব্যাপক আবেদন আছে। এটি একই সঙ্গে মহান ও অমহান উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ভগবৎ গীতায় অর্জুনের অবস্থান একে গুরুত্ব দিয়েছে। আমি বলছি না যুদ্ধ করাটা তার উচিত হয়নি। কিন্তু কৃষ্ণ যেভাবে তার সংশয় দূর করেছেন, সেভাবে সেটি দূর করা যায় না। কৃষ্ণ পরিষ্কারভাবেই নীতিনিষ্ঠ। খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, গান্ধীজির মতো অহিংস ব্যক্তিত্বও গীতার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
তিনি কৃষ্ণের পক্ষ নিয়েছিলেন, যিনি অর্জুনকে যুদ্ধ করতে এবং মানুষ হত্যা করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। অথচ হত্যা ঠিক হবে কি-না, এ নিয়ে অর্জুন দ্বিধান্বিত ছিলেন। মহাভারত সফলতা দিয়ে শেষ হয়েছে। কিন্তু সঙ্গে থেকেছে মর্মবেদনা, উচ্ছিন্নতা, হারানো মানুষের জন্য বিধবাদের ক্রন্দন, হাহাকারের মধ্যে পুড়তে থাকা চিতার আগুন।
এটি কি ন্যায়যুদ্ধ ছিল?
হ্যাঁ।
আপনি একে ন্যায়যুদ্ধ বলতে পারেন। এটাই তত্ত্বের শক্তি, নীতি_ যা বলে এটাই তোমার কর্তব্য, তোমাকে এটি করতে হবে। বামপন্থার ক্ষেত্রেও নীতি বড় ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীতে জীবন নির্বাহের ঘটনাক্রমের চেয়ে তারা আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে বেশি চিন্তা করে। এটি বিভ্রান্তিকর।
একইভাবে যে বিষয়গুলো গণতন্ত্রকে সফল করতে পারে, তার চেয়ে আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে স্বস্তিতে থাকি।
ভারতে আমরা যে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি দেখি, সেটাকে কি আপনি স্বতঃসিদ্ধভাবে অন্যায় মনে করেন?
পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকে স্বতঃসিদ্ধভাবে ইতিবাচক বা নেতিবাচক বলার মত আমি ধারণ করি না। লোকগুলো কারা, তার ওপর নির্ভর করে বিষয়টি। আমি মনে করি, রুজভেল্ট পরিবারের লোক হওয়ার কারণে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের প্রেসিডেন্ট না হতে পারাটা ঠিক হতো না...
কিন্তু ভারতে গান্ধী, আবদুল্লাহ বা করুণানিধি পরিবারের সন্তানরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেতা বনে যাচ্ছেন...
এ বিষয়ে সাধারণ মনোভঙ্গি থাকতে পারে না। জওয়াহেরলাল নেহরু থেকে আলোচনা শুরু হয়; কিন্তু তিনিও কংগ্রেস সভাপতি মতিলাল নেহরুর সন্তান ছিলেন।
যদি পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির সূত্রে জওয়াহেরলাল নেহরুকে আমরা বাদ দিই, তাহলে আমরা কিছু বিষয় হারাতে বাধ্য। নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, রাহুল গান্ধী_ প্রত্যেককে আলাদাভাবে বিচার করতে হবে...
গত নির্বাচনের পর অনেক মানুষই হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। কারণ এটি মনে হয়েছে রাজনৈতিক শ্রেণীটি একটি ছোট ও অন্তহীন সম্ভ্রান্ত গণ্ডির মধ্যে সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
এটি হলো রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের প্রশ্ন। আপনি জিজ্ঞেস করতে পারতেন কংগ্রেস দলের ভেতর কি গণতন্ত্রের যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে? এটি পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির সমস্যা নয়।
পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির প্রসঙ্গ হলো, যেমন ধরুন, রাহুল কি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন? আমি বলব, এটি রাহুলের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। অবশ্যই আমাদের এখন খুব ভালো একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন, ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে না। গান্ধী পরিবার বা এর বাইরের কেউ প্রশ্ন তুলছেন না। অন্যদিক থেকে দেখলে, রাহুল কি একদিন ভালো প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? এটি খুবই সম্ভব। আমি তাকে কিছুটা চিনি।
ট্রিনিটি কলেজে আমার কাছে গেলে আমি তার সঙ্গে একটি দিন কাটিয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। এখানে আবার আমাদের তুলনা করতে হবে অন্য বিকল্পগুলোর সঙ্গে। তিনি সোনিয়া ও রাজীব গান্ধীর ছেলে_ এই বিবেচনা আমার মতকে কোনোভাবে প্রভাবিত করতে পারবে না।
রাহুল কি আপনাকে মুগ্ধ করেছেন?
আমি মনে করি তিনি খুব প্রতিভাবান। তিনি ট্রিনিটি কলেজের লোক।
আমি যখন ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার ছিলাম, তখন খাওয়ার টেবিলে তার সঙ্গে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ হয়েছিল। তিনি আমাকে বলেছিলেন, সেই সময়ে রাজনীতি তার পরিকল্পনার অংশ ছিল না। আমার মনে হয় সেগুলো ছিল তার প্রকৃত চিন্তা, পরে তিনি মনোভাব পরিবর্তন করেন। আমার কাছে এটি খুব পরিষ্কার যে, ভারতীয় উন্নয়ন বিষয়ে তিনি দায়বদ্ধ। আমি বলেছিলাম, টাকা আয় করে দুনিয়া চমকানোর উপায় তার আছে।
কিন্তু তাতে তার উৎসাহ দেখা যায়নি। আমি বলব, ঠিক একই বয়সে আমি মনমোহনকে দেখেছিলাম। দু'জনের মধ্যেই একই ধরনের দায়বদ্ধতা আমি লক্ষ্য করেছি। দু'জনেই ভারতীয়দের বঞ্চনার বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবিত এবং পরিবর্তন আনতে চান। জীবতকালটা এ বিষয়ে উৎসর্গ করতে চান।
অন্য একটি প্রসঙ্গ, আমরা ভারতের অন্যায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এর ইতিহাস, ঔপনিবেশিক ইতিহাসকে দোষারোপ করি। আমরা কি অতিরঞ্জন করি? 'আমরা কী করতে পারি, আমরা তো সেই অতীতের উত্তরাধিকার বহন করছি মাত্র...'
আমরা কিছু ভয়াবহ, কিছু ভালো বিষয়ের উত্তরাধিকার বহন করছি। ব্রিটিশরাজের কাছ থেকে অবশ্যই আমরা নিম্নসাক্ষরতা, স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সীমিত মনোযোগ, কল্যাণ ও জনতার স্বাধীনতা বিষয়ে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছি। কিছু ভালো বিষয়ও পেয়েছি। তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তর্কপ্রিয়তার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে ভারতের, ব্রিটিশ শাসন এটিকে উৎসাহিত করেছে। (এ বিষয়ে আমি একটি বই লিখেছি। ) গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ব্রিটিশ অবদান। তৃতীয় বিষয়টি অনেকেই খেয়াল করেন না, যা ব্রিটেন ও ভারতে একই রকম সেটি হলো : খামখেয়ালিপনার প্রতি সহনশীল মনোভাব। আপনি আমাদের কিছু মহান লেখকের কথা চিন্তা করুন, যাদের প্রতি আমরা সহনশীলতা প্রদর্শন করি।
নীরোদ চৌধুরী, পুরোপুরি একজন খামখেয়ালি লেখক, অনেক দিক বিবেচনায় ক্ষ্যাপাটে একজন লেখক হলেও প্রতিভাধর। আমি ট্রিনিটির মাস্টার হওয়ার পর আমার ইংলিশ এক সহকর্মী জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি নীরোদ চৌধুরীকে পছন্দ করেন? আমি বললাম, তার সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে; তারপরও আমি তাকে পছন্দ করি। আমি তার কিছু বই পছন্দ করি না, যেমন প্যাসেজ টু ইংল্যান্ড, এটি একটি বোকা বই। আমার সহকর্মী তখন বললেন, অধিকাংশ ভারতীয়ই তাকে পছন্দ করেন না; কারণ তিনি অতিমাত্রায় ব্রিটিশপন্থি ও ভারতবিরোধী। আমি বললাম, জানেন আমাকে ট্রিনিটির মাস্টার নিয়োগ দেওয়ার পর তিনি কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, এটি ভয়াবহ নিয়োগ, এটি ব্রিটিশ সংস্কৃতির বিপক্ষে।
তারপর তিনি বলেছিলেন, 'নিজের জাতগর্ব ছাড়া ব্রিটিশ সংস্কৃতি আর কিছুই নয়। '
আকবর, অশোক ও গৌতম বুদ্ধ আপনার তিন নায়ক। আপনি আবার আপনার বইয়ের মাধ্যমে তাদের কাছে ফিরে এসেছেন।
আমার নায়ক অনেক! কিন্তু যে তিনজনের কথা বললেন তারা বিশিষ্ট। আকবর একটু বেশি; কারণ তার সহযোগী ছিলেন এমন একজন মানুষ যার নাম আবুল ফজল।
অশোক তার দৃষ্টিভঙ্গিতে স্পষ্ট ছিলেন যা জানা যায় দেশজুড়ে ছড়ানো তার পাথরের লিপিগুলোতে। বুদ্ধ দারুণ কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। আমার শৈশবে তিনি আমার নায়ক ছিলেন। তিনি যন্ত্রণাকাতর হয়েছেন, তিনি তার মন পরিবর্তন করেছেন, তিনি কারণ অনুসন্ধান করেছেন, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তির মাধ্যমে। একটি স্মরণীয় মুহূর্ত হলো তখন-যখন তিনি দুই বছর শরীরকে অভুক্ত রেখে বেরিয়ে এসেছেন।
তিনি বললেন, 'তুমি শরীরকে অভুক্ত রেখে মনে উন্নয়ন ঘটাতে পারবে না। ' আমার বইয়ে দেখবেন আমি যিশুকেও উদ্ধৃত করেছি।
কয়েক বছর আগে আউটলুকে ছাপা হওয়া আপনার সাক্ষাৎকার দেখে বিজেপি খুব হতাশ হয়েছিল, আপনি সেখানে আকবর ও অশোককে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
সেটি হয়েছিল আপনাদের বিশাল শিরোনামের কারণে। ভারতের দুই মহান সম্রাট যাদের কেউই হিন্দু ছিলেন না।
কিন্তু তারা হিন্দু হলেও আমার যুক্তি ঠিক থাকত। কারণ মহান ভারতীয়রা দেশের সব প্রান্ত থেকেই এসেছেন। ভারত খুব ইতিহাসভিত্তিক দেশ নয়। আমরা জানি না কে কখন কাকে কী বলেছেন। কিন্তু আকবর, অশোক ও বুদ্ধ খুব চমৎকারভাবে গ্রন্থিত হয়েছেন।
তাদের ছবি আঁকা সহজ।
ভাষান্তর : মাহবুব মোর্শেদ
source: outlook
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।