আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শবেবরাতের পূর্ণিমা এবং প্রার্থনা..........


মনটা এই ভালো থাকে। এই খারাপ............এই পরবাসী জীবনের কষ্ট টা এটাই। বিকাল বেলা ও বললো চলো তোমাকে একটা জিনিস দেখিয়ে নিয়ে আসি........সন্ধ্যা হবার বেশী দেরী নেই। শবেবরাতের রাত। ছোটবেলা থেকে আমাদের দেশে এই রাতটাকে এমন করে পালন করেছি.......ঈদ এর আনন্দের চেয়ে কোন অংশে কম মনে হয়নি কখনো।

মা ছোটবেলায় জামাও বানিয়ে দিতেন। বোনের দারুণ সব জর্জেটর ওড়নাগুলো....সেদিন চাইলেই পড়তে দিতো। হলুদের মাঝে কালো বল প্রিন্ট অথবা লাল ওড়না.....আহা কিযে আনন্দ লাগতো। বিকালবেলা বাড়ী বাড়ী ঘুরে ঘুরে হালুয়া দিয়ে আসা... সন্ধ্যাবেলা তারাবাতি উৎসব হতো। মা চালের আটার রুটি বানাতেন।

তখন খেতে একদম ভালো লাগতো না আমার। এখন মনে পড়লে মাথা নষ্ট। ও বললো বেশীক্ষন না......এসে পড়বো। আমরা দুজন শুধু। হাইওয়ে দিয়ে গাড়ী যাচ্ছে।

আমি তো অবাক । কোথায় যাচ্ছি। ও বললো চলো আর কিছুক্ষন পরেই দেখতে পাবে। শবেবরাতের গল্প করলাম দুজনে। ও বললো ও খুব হালুয়া ভালোবাসতো।

ওর মা বানাতেন। ও মায়ের কথা বললে চুপ করে শুনি। কতদিন মা নেই অথচ ও এমন করে গল্প করে । আসলে সব ছেলেমেয়েদের মনেই বাবা আর মা এমন একটা জায়গায় থাকে..এমন সব স্মৃতি থাকে। যা কখনো পুরানো হয়না.....ইচ্ছা করলেই সেইসব স্মৃতি ফিরে আসে....ন্যাপথোলিন এর গন্ধের মত।

মা যে ওর জীবনে কি! আমি জানি। আর তাই মায়ের গল্প যখন করে চুপ করে শুনি। ও আমাকে বারবার ধন্যবাদ দেয় । মনে করে আজ বুটের হালুয়া ,সুজির হালুয়া বানাবার জন্য। এখানে তো আর দেশের মত না।

আর আমরা যেখানে থাকি শবেবরাত আসলে কেউ পালন ও করেনা... মধ্যেপ্রাচ্যের কিছু মুসলমান থাকে এখানে যারা এটা পালন করেনা। সারারাত ভরে নামাজ ও পড়েনা। সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই আকাশ। হঠাৎ ডানদিকে তাকিয়ে দেখি চাঁদ উকি দিচ্ছে....... বুঝে ফেললাম। এই জন্যই আজ বেড়িয়ে পড়া....বলতেই হাসতে থাকলো।

এত সুন্দর আকাশ। দারুণ এক সন্ধ্যা....আজ পূর্ণিমায় ঘরে বসে থাকবো তা কি করে হয়? সবসময়ই এমন অবাক করে দেয় ও। কি ভালো যে লাগলো। যদিও আমি আজ বের হতে চাইনি। কিন্তু এত ভালো লাগলো।

ছবি তুলতে শুরু করলাম। হাইওয়ের পাশে ইমারজেন্সী দিয়ে হঠাৎ ও গাড়ি থামালো। ছবি তুললাম বেশ কয়েকটা। আকাশটা তখনো আলোয়ভরা তাই চাঁদটাকে দুর থেকে দেখতে সূর্য্যের মত লাগছিলো...... ও বললো শুধুতো রবীন্দ্রনাথ নিয়ে থাকো। বলো কে তোমাকে পূর্ণিমা দেখালো? হাসলাম.........এই একজনকে কেনো যে তার এত হিংসা।

গানে গানে উত্তর দিলাম.... "যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিলো গগনে দেখা হয়েছিলো তোমাতে আমাতে কি জানি কি মহালগনে। " বললাম বলো এই কথা কবি গুরু ছাড়া আর কেইবা বলতে পারতেন ,এভাবে? নদীর উপরের চাঁদটুকু চোখে নিয়ে এলাম....(ছবিতে দেখি চাঁদটা দেখতে হৃৎপিন্দের মত লাগছে)। খুব ভালো লাগলো এই ব্যাপারটা। আমার অবাক হওয়া। আমাদের হাসি আনন্দ এভাবেই চাঁদের সাথে জুড়ে রইলো।

এমন আনন্দঘন সময়ের জন্যই সার্থক হয়ে বেঁচে থাকা....... ফিরছিলাম যখন আকাশ মেঘে ঢেকে গেছিলো। হাইওয়ে দিয়ে গাড়ীর ছুটেচলা। আমাদের সাংসারিক কথোপকথন। মাঝে মাঝে চাঁদটার উকি দেয়া......... ও বললো জানো আমার মা ও চাঁদ খুব ভালোবাসতেন। পূর্ণিমা হলেই বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে থাকতেন।

কি অদ্ভুত যে লাগলো। আমার ছেলেরাও কি এভাবে আমাদের মনে করবে একদিন? বলবে পূর্ণিমা হলেই আমার বাবা আমার মাকে নিয়ে অনেক দুরে যেতেন শুধু চাঁদ দেখতে? আমি তো চাই উত্তরাধিকার এভাবেই বয়ে চলুক প্রজন্মের পর প্রজন্ম। পূর্ণিমায় আলোয় ভাসতে ভাসতে আমরা ঘরে ফিরে এলাম.......... প্রার্থনা জুড়ে রইলো সবার মঙ্গলকামনা।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.