পূর্ব প্রকাশিতর পর -
যা বলছিলাম দিনের পর দিন মাত্রাছাড়া উৎপাত শুরু হয়েছিল। সমস্যা হচ্ছিল আমাদের ঐ ঘরে পড়াশুনা করা। বি.কমের পরীক্ষাও আর বেশি দিন নেই । রাতে দিনে দুপুরে ভৌতিক কান্ডে তখন আমরা দারুন জেরবার। ভর্তি দুপুর বেলায় ছাদে কেউ লাফাত।
রাতের পড়বার সময় খুব দুমদাম করে লাফাত। একদিন ঐ রকম এক সন্ধ্যার সময় আমরা পড়ছি।
কানে এল ছাদে কেউ দুমদাম করে লাফাচ্ছে বা পায়চারী করছে আর লোহার গেটটা খোলার ক্যাঁচ কোঁচ শব্দ । বেশ ভারী শব্দ। আমরা গুরুত্ব না দিয়ে পড়ায় মন দিলাম।
কিন্তু শব্দ ভায়া আমাদের কানে এসে ঢুকছে। বেশ অসস্তিও লাগছে। কান খাড়া করে সবাই শুনছি। পড়াশুনা গেল উলটিয়ে । সবাই ঠিক করলাম চলতো গিয়ে দেখে আসি।
সেই সময় আবার লোডশেডিং ছিল। হ্যারিকেন নিয়েই পড়ছিলাম। সোনাতন হ্যারিকেন টা নিয়ে উঠে দাঁড়াল, তন্ময় ও দেব দুজনে একটা করে লাঠি ও গিরিশ নিল একটা লোহার রড। আমি খালি হাতেই ছিলাম। আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠছি।
খুব সন্তর্পনে । ছাদের গেটটা ছিল লোহার পাতের। ভিতরের দিকে ছিল লোহার টানা ছিটকানি। সিঁড়ির শেষ প্রান্তে গিয়ে আমাদের চক্ষু ছানাবড়া । দেখি কি আমাদের ভিতরের দিকে লোহার ছিটকানি টা একবার উপর দিকে উঠছে আর একবার নিচের দিকে নামচে।
যেন অদৃশ্য কারো হাতের সাহায্যে কেউ নামাচ্ছে আর ঊঠাচ্ছে । আর ও দিকে ছাদে চলছে সেই দুম দুম লাফিয়ে চলার শব্দ। সোনাতন হ্যারিকেন তুলে ভালো করে দেখে ভয়ে পিছিয়ে এল। আমি তৎক্ষণাৎ আগে গিয়ে খপ করে ছিটকানি টি ধরে খুব দ্রুত গেট টা খুলে সবাই একসঙ্গে ছাদে এলাম। কিছুই দেখতে পাই নি।
এ দিক ওদিক ভালো করে দেখলাম । ছাদের নীচে ও খুব ভালো করে দেখলাম আমাদের পাঁচ জোড়া চোখ দিয়ে , কিছুই দেখা গেল না। নীচে লাফিয়ে পালিয়েও যাওয়া সম্ভব নয়। কারন ছাদ টা ছিল মাটী থেকে বেশ উঁচু। ওখান থেকে কেউ অপ্রস্তুত ভাবে লাফিয়ে পড়লে তার পা, হাত বা দেহে ভালো রকম আঘাত লাগবেই।
তাকে আর উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। কি আশ্চর্য ব্যাপার । কে কেন এই ভাবে লাফাচ্ছিল আর লোহার গেট খুলছিল বোধগম্য হল না। সবাই খুব অবাক হয়ে ছিলাম। আমার তৃতীয় নয়ন কিন্তু সমানে সংকেত দিচ্ছিল ভৌতিক কোন রহস্যের ।
দিনে দুপুরে - রাতে এই লাফালাফি টা প্রায় প্রতিদিন ই চলছিল। যা ছিল আমাদের কাছে অসহ্য । তার পর পরীক্ষাও চলে এল । দেব ও তন্ময় চলে গেল নিজেদের বাড়ী । আমিও চলে এলাম নিজের বাড়ী ।
সোনাতন ও গিরীশ ও নিজেদের নিজেদের বাড়ী চলে গেল। তবে বিকেলে আমি, সোনাতন, গিরীশ ও অনান্য গ্রামের বন্ধুরা বেড়াতে আসতাম এই ঘরে কখনও কখনও । ঘরটির মায়া আমরা সহজ়ে ত্যাগ করতে পারি নি। ওই ঘরটি ছিল আমাদের বেশ আকর্ষনের ।
পরীক্ষা হয়ে যাবার পর - আমি এই সব বিষয়ে আবার শুরু করলাম পড়াশুনা ।
অনেক অনেক তাত্ত্বিক বই, পেতাত্মা ও ভুত সম্পর্কিত বই জোগাড় করলাম । শুরু করেদিলাম নিবিড় গবেষণা । তিন চার জন তান্ত্রিকের ঠিকানা সংগ্রহ করে দেখা করেছিলাম। আমি অবশ্য তন্ত্র সাধনা শিখতে যাই নি তাঁদের কাছে। জানতে গিয়েছিলাম এই সম্পর্কে ।
অদ্ভুত অদ্ভুত তথ্য পেলাম তাঁদের কাছে । কি বিচিত্র তাদের কান্ড ! কি বিচিত্র তাদের ক্রিয়াকর্ম । উঃ দেখলে না শুনলে বোঝানো যাবে না। আমি নিজে তা শুনেছি ও দেখেছি। আমি তাদের কাছে জেনেছি অনেক ।
কত দিন এরজন্য আমায় বাড়ীছাড়া হয়ে থাকতে হয়েছিল । কত কত রাত তাঁদের সঙ্গে ছিলাম কত কঠিন ঘটনার সাক্ষী ও প্রতক্ষ্যদর্শী । সেই সময়কার কিছু ঘটনা আমি অবশ্যই শোনাব । শোনাব তাদের কথা যারা অলক্ষ্যে থেকে অদৃশ্য থেকে কত বিচিত্র কান্ড করে চলে যার স্থির বুদ্ধিতে সাধারণ মানুষের কাছে না হয় কোন ব্যাখা না হয় বোধগম্য না আসে চর্মচক্ষুর নজরে। যার কারনেই বেশির ভাগ লোকই ঠাট্টা ও রসিকতার ছলে , বাকচাতুরির প্রাবল্যে অযৌক্তিক মনে করে উড়িয়ে দেন।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি - "যার বিশ্বাস যেখানে তাঁকে সেখানেই রাখা ভালো - জোড় করে কারোর মনে বিশ্বাস আনা যায় না - আর তা না আনাই ভালো। আমি এখানে এই সব ঘটনার কথা লিখছি কেন ? তার কারন সত্ত্যি করে আমি এই সব ঘটনা দেখে আমি বিস্মিত । এ সব এক আজিব ঘটনা । যে ঘটনা আর পাঁচ সাত টা ঘটনার মত নয়। সেই সব ঘটনার কথা আমি কাউকে শুনিয়ে যেতে চাই।
আর না শুনিয়েও থাকা যায় না। অন্ততঃ না হয় কেউ শুনুক জানুক এই মহাজাগতিক আলৌকিক মহা বিস্ময় । সেই এই সব ঘটনার কথা উপলব্ধি করতে পারবে তাঁরাই যাদের নিজের জীবনে ঘটে গেছে আশ্চর্য আশ্চর্য ঘটনা । আমি খুবই সংবেদনশীল । আমার সেন্সেটিভ নার্ভ খুব ই প্রবল।
এ সব খুব সহজেই আমার মনের মধ্যে ধরা পরে আমার দৃষ্টি গোচর হয়। এটা আমার জন্মগত "ঈশ্বরের দান" আর কিছুটা সাধনার ফল। তাই তো এক তান্ত্রিক আমায় বলেছিলেন - তোর যেটা জন্মলব্ধ আমাদের সেটা সাধনা করে অর্জন করেছি। তাঁর কথা টা আমি শুনে লজ্জা পেলেও ভিতরে আমার ভালোই উচ্ছ্বাস ছিল । এটা মায়ের দান।
হয়তো পুর্বজন্মের কোন ভালোকাজের ফল ।
আমি তাই বিশ্বাস করি - ভুত-প্রেত-আত্মা , বিশ্বাস করি 'জন্মান্তর বাদ'
বিশ্বাস করি পারলৌকিক জগতের অস্তিত্ব । পরের লেখায় সেটাই জানাবো আপনাদের। আজ এখানেই শেষ করি।
খুব ভালো থাকুন আপনারা।
এই লেখাটি চলবে - " বিশ্বাস অবিশ্বাসে ভুত ও ভৌতিক " এই শিরোনামে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।