পূর্বকথা:
২০০৬ এর মার্চের বরফ ঢাকা সাদা-কালো সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে যখন নামলাম তখন সকাল হয়ে গেছে। সাদাকালো সুইডেন বললাম দেশ জোড়া সাদা বরফ-সাগর আর কালো গাছ-পাহাড় এর কারনে, প্লেন থেকে এতটুকু সবুজের চিহ্ন দেখি নি। স্টকহোম এয়ারপোর্টও নজর কাড়তে পারলো না। সাদামাটা ছোটখাটো। তবে কাস্টমস চেকিংএর পথে যেতে যেতে মন জুড়িয়ে গেল।
করিডোরের দু'পাশেই পুরো দেয়াল জুড়ে সুইডিশ কিংবা সুইডিশ বংশোদ্ভূত বিশ্বখ্যাত ব্যাক্তিদের বিশাল বিশাল পোস্টার সাঁটা। মনে হলো মাত্র ৯০ লাখ লোকের দেশ সুইডেন আমাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলছে, দেখেছো আমি কেমন রত্নগর্ভা! সেখানে লাস্যময়ী হলিউড তারকা গ্রেটা গার্বো যেমন ছিলেন, নোবেল পুরস্কারের প্রবক্তা আলফ্রেড নোবেলের পোস্টার ও ছিলো। টেনিস তারকা বিয়র্ণ বোর্গ, সংগীত দল এ্যাবা সহ আরো কয়েকজন সুইডিশ কৃতী ব্যক্তিত্বের আলাদা আলাদা হাসি মুখের পোস্টার শোভা পাচ্ছিলো তাদের রাজা রানীর পাশাপাশি।
শহরে যেতে যেতে আমাদের ১৫ কোটি মানুষের বাংলা মায়ের কৃতি সন্তানদের কথা মনে পড়লো, যাঁদের অনেকেই বিশ্বখ্যাত। অথচ তাঁদের প্রতিভা বিদেশীদের কাছে তুলে ধরা তো দূরের কথা, তাঁদের প্রতি আমাদের নির্মম অবহেলা, অবজ্ঞার কথা চিন্তা করলে আঁতকে উঠতে হয়।
আসলে বিতর্কের উর্ধে্ব কে?
কার আছে সর্বগ্রহনযোগ্যতা এ জগতে ?- হোক সে সাধারন কিংবা জনপ্রিয় মানুষ- কেউ নয়- প্রতিভাবানরাও নয়।
তাই বেশির ভাগ দেশই তাদের দেশের কৃতিমানদের বিতর্কগুলো এড়িয়ে তাঁদের কীর্তি বা অবদানকে কত আগ্রহের সাথেই না জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করে তুলে ধরতে স্বচেষ্ট রয়েছে।
অথচ বাংলাদেশের গুণী মানুষদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কি তা আমরা মনে রাখি।
আমাদের দেশে কোন কীর্তিমান যদি বিপুল জনপ্রিয় হয় এবং পরবর্তী সময়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েন, তখন আমাদের প্রতিক্রিয়া কি রূপ হয় তা তুলে ধরাই এ্ই লেখার বিষয়বস্তু।
তাই এই লেখায় বাংলাদেশী বা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন করে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, সেনাপতি ও কূটনীতিবিদের উদাহরন টানলাম, যারা নিজ নিজ কর্মবলয়ে একাধারে যেমন কীর্তিমান ও সফলতম তেমনি স্বক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে এই দেশে তারা জনপ্রিয়তমও ছিলেন বটে।
জানি আমার এই বাছাই বা মতামতের সাথে অনেকেই একমত হবেন না, সেটা আবশ্যক কিংবা বান্ছনীয়ও নয়। আমার উদ্দেশ্য আমাদের বাংলাদেশের গুণী জনপ্রিয় ব্যাক্তিত্বের ব্যাপারে সাধারণ বাংলাদেশীদের দৃষ্টিভঙ্গী - সে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক ভাবেই হোক না কেন - তা একটু ফিরে দেখা - কারন বিশ্লেষণ নয়!
তবে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ লেখাটি পাঠের সময় দলীয় রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ঝেড়ে একজন সাধারন বাংলাদেশী হিসেবে পাঠ করুন। তাহলে লেখাটির উদ্দেশ্য বোঝা সহজ হবে ও আমার অনুভূতি ব্লগে শেয়ার করা সার্থক হবে।
রাজনীতিবিদ:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
এককালের জনপ্রিয়তম এই রাজনীতিবিদ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রনায়ক বিবিসির জরীপ অনুযায়ী সর্বকালের সেরা বাঙ্গালীও বটে। মূলতঃ তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্বেই এতদঅন্চলের বাঙালীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ভূখন্ড ও সর্বাধিক জনসংখ্যা নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভূদ্যয় ঘটে।
কিন্তু বাংলাদেশীদের এই অসম্ভব জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের চূড়ান্ত পরিনতি সাত বছরের শিশু সন্তানসহ সপরিবারে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এমনকি তাঁর হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়াকে এই বাংলাদেশেই আইন করে বন্ধ করা হয়। বলাবাহূল্য তাঁর সেই হত্যাকান্ডের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশীরা ছিল আশ্চর্য রকমের নীরব। প্রায় দু'দশক পর তাঁর মৃত্যুদিনে সহসা পালিত হতে থাকে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রী, বিশ্বের প্রথম মুসলিম মহিলা প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। বাংলাদেশীরা সেই সময়েও খুব সরব হয়ে উঠেছিলো তাও বলা যাবে না।
অর্থনীতিবিদ:
ড. মুহম্মদ ইউনুস
শান্তিতে নোবেল জয়ী একমাত্র বাংলাদেশী এই অর্থনীতিবিদকে বলা হয় মাইক্রোক্রেডিটের জনক। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর তিনি একরকম জাতীয় আইকনে পরিনত হন। প্রায় মাসাধিককাল যাবৎ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ার শিরোনাম সহ দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে তাঁর জয়গানে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। তাঁর নোবেল পুরষ্কার লাভকে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে আখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যখন তিনি রাজনৈতিক দল করার ঘোষনা দেন তখনই প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়।
সূধী সমাজের একাংশ ও বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁর সমালোচনায় মেতে ওঠেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখন প্রকারান্তরে তাঁকে "সুদখোর" আখ্যা দেন। বহির্বিশ্বে পরিচিত "গরীবের ব্যাংকার" স্বদেশে পরিনত হন অজনপ্রিয় সুদখোর মহাজনে। অবস্থা প্রতিকূল দেখে ৬৭ বছর বয়সী ড. ইউনুস রাজনৈতিক দল "নাগরিক শক্তি" গঠনের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেন। এবং নেলসন মান্দেলা, ডেসমন্ড টুটু, গ্রেস মাশেল প্রমূখ খ্যাতিমান নোবেল লরেটদের নিয়ে গঠিত "Elder's Group" সহ অরাজনৈতিক অন্যান্য আন্তর্জাতিক\ আভ্যন্তরীন কর্মপরিধিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
ছবিসূত্র: ইন্টারনেট
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট ও পত্রপত্রিকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।