আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্রনাথ: বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান পুরুষ

বাংলাসাহিত্যের প্রধানতম কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)। বিশ্বকবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের প্রতিটি বিভাগে যিনি তার সুদক্ষ হাতের লেখনি আর উপযুক্ত শব্দের মেলবন্ধন দ্বারা সাহিত্যকে করেছেন ঋদ্ধ। বাংলা সাহিত্যের সকল শাখায় তিনি সফলভাবে বিচরণ করেছেন। তাঁর রচিত গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধগুলো এক একটি হীরকখন্ড তুল্য।

আমাদের সাহিত্য ভান্ডারে অমূল্য সম্পদরাজি তুল্য। তাঁর প্রতিটি লেখাই বাংলাভাষা ও সাহিত্যজগতকে আলোকিত করেছে; আজীবন করতে থাকবে। যা পাঠে আমরা আলোড়িত হই, পুলকিত হই, শিহরিত হই। নির্ভরতা খুঁজে পাই, খুঁজে পাই সঠিক পথের দিশা। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মগুলো আমাদের সাহিত্যাকাশের উজ্জ্বল তারকারাজি হয়ে আলোকাভা ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

’আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ নামক এমন মধুর গান তিনি রচনা করেছেন, যা বর্তমানে আামাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীতরূপে প্রতিষ্ঠিত। যা সর্বকালের সেরা সঙ্গীত হিসেবে মর্যাদার আসন নিয়ে স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকবে বাংলা সাহিত্যে তো বটে, বিশ্বসাহিত্যেও। বাঙালির চিন্তা আর বোধকে রবীন্দ্রনাথ আধুনিকতার বৈচিত্র্যর পরশ দিয়ে ধন্য করেছেন। তার রচিত বিশাল গান আমাদের সঙ্গীত অঙ্গণকে সুশোভিত করেছে। যা রবীন্দ্রসঙ্গীত হিসেবে পরিচিত।

বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষীর কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আলাদা কদর রয়েছে। তাইতো আমাদের মন খারাপ হলে আমরা তার সঙ্গীত শুনে আমাদের মনকে ভালো করে তুলি। তাঁর গানে বাংলার প্রকৃতি, নদী, মাঠ, পাখি, ফুল, ফল উঠে এসেছে। নর-নারীর মনের অন্তর্নিহিত না বলা কথাকে তিনি গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তাইতো তিনি আমাদের এতো প্রিয়, সকলের প্রিয় দাঁড়িওয়ালা দাদাভাই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কবিকে যদি শুধু আমরা একপেশে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মূল্যায়ন করি তাহলে তার স্বরূপ উদঘাটন করতে পারবো না। আমাদেরকে কবির পুরো জীবন অধ্যয়ন করতে হবে। তাহলেই কেবল কবিকে আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারবো। তার রচিত সাহিত্য ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। তিনি প্রথম বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হন।

যার অবদানের স্বীকীর্তিস্বরূপ ১৯১৩ সালে কবিকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। যা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য অনন্য সম্মান বয়ে এনেছে। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের সম্মানসূচক ’নাইট’ উপাধি লাভ করেন। তিান সারাজীবন মানুষের জয়গান গেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা হয়েছিল কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে।

তারপর ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত নর্মাল স্কুলে। সেখানেই তার বাংলা শিক্ষার ভিত মজবুত হয়। এরপর ভর্তি করানো হয় সেন্টজেভিয়ার্সে। অনিয়মিত হওয়ার কারণে সেখানে তার পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তিনি গৃহ শিক্ষকের কাছে সংস্কৃত, ইংরেজী, পদার্থবিদ্যা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোলসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন।

পাশাপাশি তিনি ড্রয়িং এবং সঙ্গীত বিষয়ও শিক্ষা করেন। ১৯৭৪ সালে রবীন্দ্রনাথের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ডে ব্যরিস্টারি পড়তে যান। কিন্তু শেষ না করেই ফিরে আসেন। ফিরে এসে রচনা করেন গীতিনাট্য ’বাল্মিীকি প্রতিভা’।

১৯৮২ সালে ’সন্ধ্যাসঙ্গীত’; এবং ১৯৮৩ সালে ’প্রভাতসঙ্গীত’ রচনা করেন। এ দুটোই কবিতাগ্রন্থ। ১৯৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ বিয়ে করেন মৃণীলিনী দেবী চৌধুরানীকে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে খুলনার বেণীমাধব রায় চৌধুরীর কন্য। একালে একজন কবির নিকট রবীন্দ্রনাথ হলেন একইসাথে ভয় ও বিস্ময়ের রাখিবন্ধন।

নিঃস্তরঙ্গ হ্রদের মত। যে বিশাল জলরাশি কোনদিন শুকোবে না। তিনি হলেন আমাদের সাহিত্যের বটবৃক্ষ। আশ্রয়ের স্থল। রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যকে এমন এক উপত্যকায় নিয়ে পৌঁছেছন যেখানে যাওয়া অন্য কোন কবি সাহিত্যিকের জন্য সম্ভব নয় কল্পণার ও বাইরে।

রবীন্দ্রনাথ সর্তহীনভাবে আমাদেরকে বিশ্বস্রষ্টার কাছে সমর্পন করতে উদ্বুদ্ব করে। গীতাঞ্জলি’র কবিতাগুলোতে আমরা তার স্বন্ধান পাই। ”আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে। সকল অহংকার হেআমার ডুবাও চোখের জলে। এখানেই রবীন্দ্র সাহিত্যের স্বার্থকতা।

বর্তমান সময়ের বাংলাসাহিত্যের প্রধানতম কবি আল মাহমুদের মতে ”আজও জীবনাচরণের বহুবিদ যন্ত্রণায় ক্লান্ত হয়ে পড়লে রবীন্দ্রকাব্যই আমার জন্য স্বান্ত্বনা। রবীন্দ্র কাব্যে আমি কি খুঁজি? খুঁজি বিশ্বাসে বিনম্র-হৃদয়”। বাংলাভাষার আধ্যাতিœক মর্মস্থলে পৌঁছতে হলে আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে রবীন্দ্রচর্চা অপরিহার্য। আমাদের কাছেই রয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁর পতিসর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ অঞ্চল। শিলাইদহকে কেন্দ্র করেই রবীন্দ্রনাথের সব ভাবনা আবর্তিত হয়েছে।

একদিকে পদ্মার জলরাশির গভীরতা, অপরদিকে গড়াই এর আবেগাশ্রিত উচ্ছ্বাস কবি মনকে বারবার নাড়া দিয়ে গেছে। পদ্মার পাড়ের অন্ধকারের পাখির ডাক, নদীর কল্লোল, আকাশের বুকে মিটিমিটি করে জ্বলা তারকারাজি কবি অনুভব করেছেন একান্ত একাকীত্বে। কেন রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহকে এমন প্রাণভরে ভালবেসেছিলেন সেটা বড়ই রহস্যময় একটা হেতু। তার কবিতা পাঠে আমরা পেতে পারি তার সদৃত্তর। একদিন জনহীন তোমার পুলিনে গোধূলী শুভলগ্নে হেমন্তের দিনে, সাক্ষী করি পশ্চিমের সূর্য অস্তমান তোমাতে সঁপিয়াছিনু আমার পরাণ ।

খুব ছেলেবেলায় দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের হাত ধরে তিনি শিলাইদহে এসেছিলেন । তখন শিলাইদহ অঞ্চল ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা। তারপর দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে দ্বিতীয়বার শিলাইদহে তাঁর আগমন ঘটে। এই দায়িত্ব পালনকালে কখনো তিনি অস্থায়ীভাবে আবার কখনো স্থায়ীভাবে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সপরিবারে বাস করেছিলেন দীর্ঘদিন এই শিলাইদহের মনোহর পরিবেশে। এ সময়ই তিনি লালন ফকিরকে জেনেছেন।

পদ্মাবেটে তাঁেক নিয়ে বেড়াবার সময় তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ লালন ফকিরের একটি পেন্সিল স্কেচ অঙ্কন করেছিলেন ১৮৮৯ সালের ৫ মে। গান, কবিতা ও ছবির মধ্যকার বৈশিষ্ট্য বা পার্থক্য বিচার করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ জাপান-যাত্রীতে বলেছেন, ”ছবি জিনিসটা হচ্ছে অবনীর, গান জিনিসটা গগনের। অসীম যেখানে সীমার মধ্যে সেখানে ছবি; অসীম যেখানে সীমাহীনতায় সেখানে গান। কবিতা উভয়চর, ছবির মধ্যে ও চলে, গানের মধ্যে ওড়ে। কেননা কবিতার উপকরণ হচ্ছে ভাষা।

ভাষার একটা দিক অর্থ, আর একটা দিক সুর,এই অর্থের যোগে ছবি গড়ে ওঠে। সুরের যোগে গান। ” গীতাঞ্জলি সম্পর্কে ইয়েটসের মন্তব্য ছিল, (১৯১৩ সালে নোবেল) শুধ এর অভিনবত্বের জন্য আমরা অভিভূত হইনি, আসলে আমরা আমাদের নিজদের প্রতিচ্ছবির সন্ধান পাই। ১৯৬৮ সালে দ্বিতীয় এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল লাভকারী ইযাসুনারী কাওয়াবাতা এর অল্প কিছু দিন পর ”অস্তিত্ব এবং সৌন্দর্য আবিষ্কার” এর উপর বক্তৃতায় তিনি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেন-”আমি এখন ও সেই ঋষিতুল্য কবির শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং মুখাবয়বের কথা খুব ভালো স্বরন করতে পারি। ঝাঁকড়া চুল, দীঘল দাঁড়ি-গোঁফে সেই কবি পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন, গায়ে ঢিলেঢালা ভারতীয় পোশাক আর চোখগুলো গভীর এবং লক্ষ্যভেদী।

কপালের দু’পাশ বেয়ে নেমে এসেছে শুভ্র চুলের গুচ্ছ, খানিকটা চুলের থোকা গালের কাছে এসে দাঁড়ির সঙ্গে মিলেছে, সেই কিশোর বেলায় রবীন্দ্রনাথ দর্শন মনের ওপর এমন একটা ছাপ ফেলেছিল, মনে হয়েছিল প্রাচ্যেও জাদুকর বুঝি-বা এক্ষুনি ভেল্কিবাজি দেখাবেন। ” রবীন্দ্রনাথ ও সভ্যতার সংকট (মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান) একবার শান্তি নিকেতন থেকে মোটর গাড়িতে চেপে চৌপাহাড়ী শালবনে বেড়াতে যাচ্ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সাথে পুত্র রথীন্দ্রনাথ এবং ঠাকুরবাড়ির অন্য এক সদস্য দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পথিমধ্যে টেলিগ্রাম পেলেন কবি- তিনি লোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তারিখটা ছিল বাংলা ১৩২০ সনের ২৯ কার্তিক। ১৫ নভেম্বর ১৯১৩ সাল। -(নির্বাচিত প্রবন্ধ-মোহাম্মদ আবদুল হাই) রবীন্দ্রনাথের কাব্য প্রেরণা একটি বিশেষ কেন্দ্র থেকে উৎসারিত হয়নি, যদিও তাঁর কাব্যদর্শনে ভারতীয় হিন্দু-জীবন- দর্শনের প্রভাবই সর্বাধিক।

যে সর্বজনীন আবেদন কবিতাকে বিশ্বসাহিত্যের সামগ্রী করে তোলে রবীন্দ্র কাব্যে তার নিদর্শন প্রচুর। কারণ রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় হিন্দু জীবন -দর্শনের প্রতিভু হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কবিতায় এ দার্শনিক চিন্তাধারা এত সূক্ষè ও সংহতরূপে রূপায়িত হয়েছে যে, কবিতার সৌন্দর্য বিশেষ ব্যাহত হয়নি। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য থেকে রবীন্দ্রনাথ উপাদান সংগ্রহ করলেও তার দক্ষতা দরুন কাজ সম্ভারকে নবতর মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছে। ”সন্ধ্যাসংগীত” কাব্য গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের ভাষায় আতœপ্রকাশের আকুতিকে রূপ দিয়েছেন। এই আকুতিতে কবিসুলভ উল্লাসের চেয়ে আতœবিমুগ্ধ তন্ময়তার পকাশই ঘটেছে বেশী।

ভানু সিংহের পদাবলীতে বৈষ্ণব পদাবলীর ধ্বনি ঝঙ্কারের মধ্যে যে সাঙ্গীতিক প্রবহমানতা ছিল ”সন্ধ্যাসংগীতে” সেই সাঙ্গীতক ধারা নেই, আছে দৃষ্টির পেলব উদাসীন্য। কিন্তু সন্ধ্যাসংগীতে’ই রবীন্দ্রনাথের আতœঅবলোকন কিংবা আতœ উন্মোচনের শিহরণ বিলসিত হয়েছে। ”প্রভাত সংগীতে” রবীন্দ্রনাথের ভাষা হয়েছে অপেক্ষাকৃত গাঢ়বন্ধ, সাঙ্গীতিক কোমলকার চেয়ে ধ্বনি গাম্ভীর্যের সুষমাই এখানে লক্ষ্যনীয়। ”সন্ধ্যা-সংগীতে” কবির বৈচিত্র্যময় ইচ্ছা কবিতার ছত্রে ছত্রে বহুভঙ্গিম হয়ে উঠেছে। এ যেন ছন্নছাড়া কবি হৃদয়ের আকুল ইচ্ছার বহি: প্রকাশ।

”আমি ঢালিব করূণা-ধারা, আমি ভাঙিব পাষাণকারা, আমি জগৎ প্লাবিয়া বেড়াব গাহিয়া আকুল পাগল-পারা। কেশ এলাইয়া, ফুল কুড়াইয়া, রামধনু-আঁকা পাখা উড়াইয়া, রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরান ঢালি। ” রবীন্দ্র কবি মানস সদা-সর্বদাই দ্বৈত আকর্ষণে পীড়িত হয়েছে; একদিকে সৌন্দর্যলোকের আকর্ষণ অন্যদিকে মর্ত্যে মানুষের ইশারা। কিন্তু রবীন্দ্র-কবি মানস ও ইশারায় সাড়া দিলেও প্রকৃত অর্থে রূপ সৌন্দর্যেও পিপাসাকে ভুলে থাকতে পারেনি। তাই ’সোনার তরী’র ’মানসসুন্দরী’ কবিতায় কবি পুনরায় বলেছেন: ”আজ কোন কাজ নয়।

সব ফেলে দিয়ে ছন্দোবন্ধগীত, এসো তুমি প্রিয়ে, আজন্মসাধনধন সুন্দরী আমার, ”সোনর তরী” তে রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক চিন্তা রূপবৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে: ”ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোটো সে তরী আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি। শ্রাবণগগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে, শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি- যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী ॥” ’কণিকা’ কাব্য গ্রন্থের মধ্য দিয়ে ও তিনি জীবনের নানা সত্যকে তুলে ধরেছেন। ’উপকারদম্ভ’ কবিতায়: ”শৈবাল দিঘীরে কহে উচ্চ করি শির, লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির ॥” ’মোহ’ কবিতায়: ”নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ও পারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। নদীর ও পার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে- কহে, যাহা-কিছু সুখ সকলই ওপারে ॥” রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে। জমিদারি দেখার জন্য তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন বহুবার।

পদ্মার বোটে করে ঘুরতে ঘুরতে বাংলার অপরূপ সবুজ প্রকৃতি তাকে বড় ব্যাকুল করে তোলে। একদা সাদা আকাশের নিচ দিয়ে কবি বোটে করে তাঁর কর্মস্থলে যাচ্ছেন। পদ্মার নীল জল এসে বোটের সাথে আঁচড়ে পড়তে থাকে। পাখিরা দলবেঁধে আকাশে উড়ে যাচ্ছে; সাথে সাথে কবির হৃদয় মন ও দুলতে থাকে। কবি পরিচিত হতে লাগলেন নতুন এক পরিবেশ আর মানুষের সাথে।

আবিষ্কার করলেন নতুন এক পৃথিবী। যার ফলে তিনি একে একে লিখলেন তাঁর বিখ্যাত ছোটগল্প গুলো ”পোষ্ট্মাষ্টার, কঙ্কাল, একরাত্রি, জীবিত ও মৃত, কাবুলিওয়ালা, মধ্যবর্তিনী, শাস্তি, সমাপ্তি, ক্ষুধিত পাষাণ, দুরাশা, নষ্টনীড় ও স্ত্রীর পত্র” ইত্যাদি বিখ্যাত ছোটগল্প গুলো। কবি হয়ে গেলেন বাংলা ছোটগল্পের জনক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আশ্চর্য রকমের প্রতিভা দিনে বাংলা সাহিত্য ভূবণে আবির্ভুত হয়েছেন। এমন কোন শাখা নেই, ক্ষেত্র নেই যা তার হাতে পরিপুষ্টতা সাধন করেনি।

তাইতো আমাদেরকে বারবার রবীন্দ্রনাথের কাছেই ধর্ণা দিতে হয়, আজীবন যেতে হবে তার কাছে। জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেমিক-প্রেমিকার মান অভিমান, মা-বাবার ভালবাসা সকল কিছুই যেন রবীন্দ্র সাহিত্যের ছোঁয়ায় পবিত্র হয়ে উঠে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যতদিন থাকবে ততদিন রবীন্দ্র আবেদন কখনো ম্লান হবে না। রবীন্দ্র সাহিত্য চির তরুণ, চির যুবা হয়ে আমাদের মাঝে চির জাগরুক থাকবে আজীবন অনন্তকাল পর্যন্ত। আমাদের দেশের আলো বাতাস, নদী, সবুজ প্রকৃতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে তিনি মিশে আছেন।

আমরা তাকে ভুলি কেমনে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.