আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বাস অবিশ্বাসে ভুত ও ভৌতিক ( সপ্তম অধ্যায় )



- প্রশান্ত'র আত্মা কে প্ল্যানচেটে আনার পর থেকেই ঘরে শুরু হলো খুব উপদ্রব। রাত্রে-দুপুরে টেকা দায় হয়ে যাচ্ছিল। যখন তখন উদ্ভট উদ্ভট কান্ড ঘটে যাচ্ছিল একের পর এক। সেগুলির মধ্যে কিছু আজ বলি। উধাও বিস্কুটের কৌটো আবিষ্কারঃ- আমরা সকালে বিকালে এবং মাঝে মাঝে ঐ বাড়ীতে নিজেরাই চা তৈরী করে খেতাম।

এর জন্য স্টোভ, চা,চিনি,গুঁড়োদুধ ও বিস্কুট রাখাছিল। আলাদা আলাদা কৌটোয়। ওগুলি রাখা থাকত দেওয়াল আলমারীর মধ্যে। আর কখনো কখনো হাল্কা মুড়ি তেলেভাজাও খেতাম তার জন্য ডিশ ও বড়ো বাটী , সসপ্যান তাও রাখাছিল আলমারীর মধ্যে। দিন চার-পাঁচ হয়ে গেল আমরা প্ল্যানচেট করেছি।

মোটামুটি অনেকেই জেনে গেছেন আমাদের কান্ড। পড়াশুনার মাঝে এই সব ক্রিয়াকান্ড চলছে শুনে খুব বকা খেয়েছি পাড়ার দাদাদের কাছে। মনে মনে আমরা সবাই আহত এবং লজ্জিত। কি আর করা যাবে- যা হবার তো হয়েই গেছে। আর কি করি ।

এখন হয়েছে কি - আগেরদিন রাত্রে আমাদের এক বান্ধবীর দিদির বিয়েছিল। আমরা সবাই তাদের রিসেপশনে উপস্থিত ছিলাম সন্ধ্যা থেকে । কিছু খাটাখাটনি করে রাত্রে খাওয়া-দাওয়া আনন্দ-উৎসব করে ফিরেছি একটু বেশি রাতে। তাই ঘুমে ক্লান্ত সবাই ঘুমিয়ে গেছি গভীর ঘুমে। সকালে এমনিতে আমরা আটটার মধ্যেই উঠতাম অনান্য দিন।

সেদিন সকাল সাড়ে নয়টা হয়ে গিয়েছিল। হাঁক ডাক করে সবাই কে তুলে দিলাম আমিই। উঠে ব্রাশ করে প্রাকৃতিক নিত্য কর্ম করে গিরীশ কে বলি চায়ের আয়োজন করতে। গিরীশ চা তৈরী করতে গেল। আমরা সবাই বসে আলোচনা করছিলাম গত রাতের বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা।

চা তৈরী করতে গিয়ে গিরীশ দেখে বিস্কুটের কৌট ওখানে নেই। চা হয়ে গেছে। সবাই কে কাপ ভরে এগিয়ে দিল। বিস্কুটের কথা জিঙ্গাসা করাতে ও বলে আলমারীতে বিস্কুটের কৌটো নেই। কেউ কি বের করেছে ওখান থেকে।

কোথায় রেখেছে। গতকাল তো ওটা ওখানেই রাখাছিল বিকেলে চা বানানোর পর ওটা ওখানেই রাখা হয়েছিল। আমাদের সবার ই তাই মনে হচ্ছে। হতে পারে কেঊ খাবার জন্য নামিয়েছিল। কিন্তু কেউই তো নামায় নি।

কারণ এমনিতে কেউ বিস্কুট খেত না। একমাত্র চা'এর সময় ই আমরা বিস্কুট খেতাম। তবে ওটা ওখান থেকে সরালো কে ? হাল্কা খিদেও পেয়েছিল সবার। খোঁজ খোঁজ ! কোথায় গেল ? কে নিয়ে গেল ? কেউ কি এসেছিল এ ঘরে ? - তাও না। কেউ সাধারনতঃ আসতো না।

আর তা ছাড়া কেনই বা নেবে সামান্য কিছু বিস্কুট । অগত্যা শুধু চা ই খেয়ে নিলাম সবাই। কিন্তু আমার মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না ব্যাপার টা। কিছু একটার গন্ধ লাগছে আমার নাকে, মগজ়ে। তখনকার মতো বিষয়টি চাপা পড়ে গেলেও আমি কিন্তু ছাড়িনি হাল।

কিছু করার ছুতো নিয়ে বাইরে এখানে ওখানে সিঁড়ির তলা, পাশের রুমে, খাটের তলা , বাথরুম, টয়লেট সব আঁতি পাঁতি করে দেখে এলাম। কোথায় কিছু নজরে এল না। হতাশা নিয়ে এসে বসে আছি। পড়ায় মন নেই। বাকি সব মজে গেছে ইকনমিসে।

তবুও বসে গেলুম ওদের কাছেই। মাথায় ঘুরছে বিস্কুটের কৌটো। গিরীশ কে জিঙ্গাসা করলাম তুই যখন আলমারী থেকে চা-চিনি বের করলি তখন কি আলমারী খোলা ছিল ? গিরীশ বলল হ্যাঁ পাল্লাটা একটা বন্ধও একটা খোলা ছিল। আর দুধের কৌট ছিল উলটানো। আর বাকি সব ঠিক ই ছিল।

আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম ঘরে তালা লাগিয়ে । কি বাইরে কি ভিতরে। সুতরাং কারো প্রবেশ সম্ভব নয়। আমি উঠে গেলাম ওদের কাছথেকে। আবার বাইরে এসে ভাবতে লাগলাম এবং খুঁজতে লাগলাম কি হলো ।

কোথায় গেল কৌটো টি। হটাৎ দেখি ছাদের উপর কয়েক টা কাক চিৎকার ও লাফালাফি করছে নীচে থেকে মনে হচ্ছে ওরা কিছু একটা খাচ্ছে। সে টা কি ? মনে সাধ হলো দেখার। কি ব্যাপার টা। সিঁড়ি বেয়ে উপরে গেলুম লোহার গেট ও লোহার খিল ও হুরকো খুলে ।

ওমা ছাদে গিয়ে দেখলাম তা চক্ষূ চড়কগাছ !! দেখি বিস্কুটের কোটো ছাদে গড়াগড়ি খাচ্ছে প্রায় সমস্ত বিস্কুট পড়ে আছে কাকে ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে । আরে - তন্ময় , সোনা , গিরীশ , দেব ছুটে আয় ......... শিঘগির দেখে যা... কান্ড । ওরা সবাই ছুটে এল ছাদে । দেখে এই অবস্থা। কে নিয়ে এসে ফেলল বিস্কুটের কৌটো।

না আমি - না- গিরীশ - না তন্ময় না সোনাতন -না দেব । কেউই আসে নি আমাদের কাছে সেদিন। আর আমরা সারাদিন ই ছিলাম। যদি কখন বাইরে যেতাম তো তালা বাইরে ভিতরে অবশ্যই লাগাতাম। বিয়েবাড়ী গিয়েছিলাম তো তালা লাগিয়েই।

নিশ্চয়ই কাকে, বিড়াল বা ইদুঁরেও নিয়ে যায় নি। বিড়াল তো ওখানে থাকেই না আমাদের আদরের ভুলোর জ্বালায় । বড়ো বিষ্ময় লেগে আছে আজও এই ঘটনা টায়। তার ব্যাখা কি হতে পারে আমি জানি না। ঠিক ঐ একই ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছিল সোনাতনের বাড়ী থেকে আনা এক বাটি তালফুলুরি আর পায়েসের বাটি তে ছিল কোন মানুষ বা জন্তুর খাবলে খাওয়ার চিহ্ন ।

যা রাখাছিল আলমারীতে এবং আলমারীর ছিটকানি লাগানো। সেবার তালফুলুরির বাটি টি উদ্ধার করেছিলাম বাথরুমের ছাদ থেকে। গভীর রাতে আমাদের ঘুমের সময় প্রতিদিন ই তাক থেকে পড়ে যেত ডিশ,বাটী,গ্লাস,চামচ। বাথরুমের নল খুলে দিত কে। সারাবাথ রুম নোংরা করে সাবান-তেল উল্টে ফেলেরেখে যেত কে।

আরোও কত কি । আজ এই পর্যন্তই থাক। পরের লেখায় জানাবো অনান্য অদ্ভুত অদ্ভুত আরো ঘটনা। ---- ভালো থাকুন সকলে। এই লেখাটি চলবে - " বিশ্বাস অবিশ্বাসে ভুত ও ভৌতিক " এই শিরোনামে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.