পুর্ব প্রকাশিতর পর - - --
প্রথমবার প্ল্যানচেট বন্ধুর বোকামির কারণে ভেস্তে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার আসর বসানোর আর সময়ই পাই নি। কারণ তার পর ই হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষা। তাই ব্যস্ত ছিলাম পরীক্ষা নিয়েই। পরে প্ল্যানচেটের আসর বসিয়েছিলাম এবং বেশ সফল ও হয়েছিলাম। সে কথা বলার আগে আরোও কিছু ঘটনার কথা বলি -
হায়ার সেকেন্ডারী পাশ করে ভর্তি হলাম বি.কম এ।
কিন্তু আমার মন থেকে ভুত- প্ল্যানচেট তখনও আছে গভীর ভাবে গেঁথে। আর মাঝে মাঝেই কিছু না কিছু অস্বাভাবিক ঘটনাও ঘটেচলেছে আমার জীবনে। যা আমি নিজেও অবাক হয়ে যেতাম - এ কেমন করে হয়।
সেদিন ছিল বৃহঃস্পতি বার- মহালয়ের আগের দিন। বিকাল বেলা ।
আমি আমার প্রিয় সাইকেলটা নিয়ে চলেছিলাম পাকা রাস্তা দিয়ে নিজের মনে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে। মনটা ছিল বেশ প্রফুল্ল । নতুন প্রেমিকার মুখ ভেসে উঠছে মনের মধ্যে বার বার। জীবনের প্রথম প্রেম - এসেছিল আমার কলেজ লাইফে। দেখে ভালো লেগেছিল - প্রোপজ করেছিলাম - আমার ভালোবাসা স্বীকার করে ধরাদিয়েছিল আমার মনে - আমার প্রেমিকা - কৃষ্ণা ।
তার কথা ভাবতে ভাবতেই রাস্তার ধারে বিশাল এক মোটা বটগাছের তলায় সাইকেল টি কে রেখে বসে পড়লাম ছায়াসুশীতল নির্জন বটবৃক্ষের তলে। আশে পাশে ছিল মাঠভরা ধান ক্ষেত । আমার নির্জন - নিঃশব্দময় একাকী বসে বসে কাটাতে খুব ভালো লাগে । কারণ একা নির্জন-নিঃশব্দময় প্রাঙ্গনে এলে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়। আবার এক কারণ আমি বেশ কল্পনাপ্রবণ , ভাবুক ।
আমি চিত্রশিল্পে-ভাস্কর্যে খুব ই অনুরাগী। সময় পেলেই বসে যাই কিছু আঁকতে - না হয় কিছু বানাতে। যাক সে কথা।
গাছের ছায়ায় বসে আছি, হালকা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে । পকেট থেকে সিগারেট বের করে জ্বালালাম।
মনের আবেশে টান দিচ্ছি । ভাবছি কালতো মহালয় - তার সাতদিন পরই পূজো , জানি না এবার পূজো কেমন কাটবে। আরও কত কি ভাবছিলাম। নির্জন স্থানে বসে বসে ভালোই লাগছিল আমার সেদিন। আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পরন্ত বিকাল বেলার অস্তগামী সুর্যের রঙ্গিন আলোর খেলা দেখছি।
আকাশে ভাঙ্গা ভাঙ্গা মেঘের আকার দেখে বিভিন্ন ধরনের মানুষ , প্রাণী এই সব মনে হচ্ছে। এর মাঝে আমি খুঁজে নিচ্ছি আমার ছবি আঁকার থিম ও । জমা করে নিচ্ছি মাথার মধ্যে। কেঊ নেই কাছাকাছি, নিজের মধ্যে নিজেই হারিয়ে গেছি। অনেক টা বেলা পড়ে এসেছে তখন, অন্ধকার হয়নি তবে গোধুলি বেলার শেষ আলোটুকে আছে বলা যেতে পারে।
আমিও ভাবছি এবার উঠব...
হটাৎ গুরু গম্ভীর স্বরে " জয় ভোলানাথ " বলে কে যেন ডেকে উঠলো।
চমকে পিছন ফিরে দেখি এক ভীষণ আকারে এক সাধুবাবা। পরনে লাল থান কোমরে বাঘের চামরার আসন গোঁজা । এক হাতে বিরাট মোটা ত্রিশুল তাতে লাল সিন্দুর মাখা , ডান হাতে ছিল তাঁর কমুন্ডল । বিরাট মোটা মোটা রুদ্রাক্ষের মালা পরেছিলেন তিনি।
মাথায় বিরাট এক জটার কুন্ডলী ঘাড় বেয়ে নেমে এসেছে পেটের কাছাকাছি। মোটা ভ্রূসম্মিলিত বড়ো বড়ো লাল চোখ। সে চোখের কি ছিল দৃষ্টি উঃ বাপরে বাপ। আজও মনে পড়ে সে চোখ দুটি। সুগন্ধ মাখা হাল্কা সাদাটে ভাবের সে কি কাঠিন্য চেহারা।
আমি তো ভয়ে বাক্যহারা। এরকম ভাবে অপ্রত্যাশিত ভাবে এই সন্ধ্যাবেলায় একাকী এই ভয়াল দর্শন সাধুবাবা কে দেখব কেউ কি ভাবতে পারে ? ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলুম। ভয়ে ভয়ে জোরহাত করে নমস্কার করলাম - প্রনাম বাবাজী । পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করতে গেলাম এমন সময় খপ করে ধরে ফেললেন আমার ডান হাতটিকে। আজও মনে আছে কি মুষ্টির জোর ! আমি তো তখন কাঁদবো না কাউকে ডাকবো ভেবেই পাচ্ছি না।
স্বভাবতঃই এরকম সকলেরই হতে পারে। নিজে কেই নিজে গাল দিচ্ছিলাম ...... মরতে কেন আজ আমি এখানে এলাম ! কি হবে এখন ? কে বাঁচাবে আমায় ?
এসব ভাবতে ভাবতেই তিনি বলে উঠলেন - " আরে ভয় কি রে বেটা " আমি আছি না । । বেটা ? উনি কি আমায় চেনেন নাকি ? আমি আমতা আমতা করে বললাম - বাবা আমাকে কি আপনি চেনেন ? আমার ভয় করছে খুব। উনি হাসতে হাসতে বললেন - চিনি কি রে ! তোকে তো বেশ ভালো করেই চিনি রে।
তোর সাথে অনেক বার হয়েছে দেখা। আরো হবে দেখা । আমার সাথে কবে দেখা হলো ? কখন দেখা হলো ? আমি তো অবাক । এ কি বলেন উনি। পাগল নাকি উনি ? আমি ভাবছি এসব যে মুহুর্তে ঠিক সেই মুহুর্তেই উনি বলে উঠলেন ......... বেটা আমি পাগল ? দেখে কি তাই মনে হচ্ছে তোর ? আমি তো আর কথাই বলতে পারি নি।
আমার মৌন দেখে উনিই আবার হেসে বললেন - ভয় পাস নি ... আমি পাগলবাবা...। ভোলাবাবার পাগল বাবা। কি তার অমায়িক ব্যবহার । কি তার অভয় দান। কি তার এক রোমাঞ্চময় দৃষ্টি ।
উঃ সত্যি। কেউ না দেখলে সে দৃশ্য বিশ্বাস করবে না । আমি গড় হয়ে তাঁর পা ছুয়ে প্রনাম করলাম। তিনি মাথায় ডান হাত আর কমুন্ডল স্পর্শ করে বিরবির করে কি যেন বললেন। সে কি বললেন তা আমার কানেই এলো না স্পষ্ট করে।
চারিদিক আঁধার হয়ে আসছে। দূর দিগন্তে কালো কালো হয়ে গেছে। আমার আরোও ভ্য় করতে লাগলো। আমায় বাড়ী ফিরতে হবে। এই ভাবছি।
তার পর তিনি বললেন - নাঃ আজ চলি রে বেটা... আবার তোর সাথে দেখা হবে। এই নে বলে একটি কি যেন দিতে হাত বাড়ালেন। আমি দুই হাতে নিতে গেলুম ... দেখি একটা হরিতকী। আমি বাবাকে জিঙ্গাসা করলাম - বাবা এটা কি ? আমায় কেন দিলেন ? উনি বললেন এটা তোর কাছে রাখিস। তোর ভালো হবে।
আমি সেটা নিয়ে দেখতে লাগলাম। কপালে ছুঁইয়ে হাতে ধরে রেখেই আবার প্রনাম জানালাম তাঁকে। আমি শিহরিত, বাক্যহারা- যেন বোবা তখন। এর পর বাবাজী বললেন আমায় এখন যেতে হবে। আবার দেখা হবে তোর সাথে ।
এই বলেই " জয় ভোলানাথ " বলে অন্ধকারে মাঠের আল ধরে হাঁটা দিলেন। ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে অন্ধকারে মিশে গেলেন বাবাজী। কি ভীষণ নিঃস্তব্ধতা বিরাজ করছিল তখন।
ইনি কে? কেনই বা উনি আমার সাথে এই ভাবে দেখা করে চলে গেলেন? উনি আবার কোথায় গেলেন ? ইনি থাকেন কোথায় ? কিছুই জানি না আমি । আমি এসবই ভাবছিলাম তখন।
মনে পড়ে গেল বাড়ীর কথা । সাইকেলটি নিয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাড়ীতে এসে সবাই কে ঘটনাটি খুলে বললাম। সবাই শুনে তো স্বাভাবিক ভাবেই অবাক। বাবাজীর দেওয়া হরিতকী টিও দেখালাম।
আজও আমার কাছে তা সযত্নে রাখা আছে। এরই জন্য আমি কোন দিন কোন খানে বিপদে পড়িনি। বা পড়লেও উদ্ধার পেয়ে যাই আশ্চর্য ভাবে। একবার বিশাল উঁচু পাঁচিল থেকে পড়েগিয়েছিলাম। যেখান থেকে পড়লে হাত বা পা ভাংবেই অবধারিত বা শরীরে গভীর চোট লাগবে সেখান থেকে পড়েও বিন্দু মাত্র লাগেনি।
অবাক ব্যাপার। সত্যি ! বাঁধের উঁচু পাড় থেকে সাইকেল নিয়ে পড়ে গেছি । সেখানে অনেক কাটা কাটা গাছের গুঁড়ি ছিল - সেদিন ও লাগে নি আমার। আরো ও কত কি । কতো বার গেছি সেই বটতলায় ।
কতবার একা একা বসে থেকেছি সেখানে। আজও আছে সেই বট গাছটি। শুধু পড়ে আছে স্মৃতি। আমি আবার এখানে দেখতে চাই বাবাজী কে। আমি প্রতীক্ষা করে থাকব যতদিন বাঁচব।
বিশ্বাস করি আবার কোন না কোন দিন দেখা হবে নিশ্চয়ই। দেখা হবে -ই।
আমি আজও ভুলিনি বাবাজী কে। অবশ্য দেখাও হয়নি আর। জানি না দেখা কবে হবে।
কি ভাবে। তবে বাবাজীর দেওয়া আমি গুরু মন্ত্র পেয়েছি স্বপ্নে। তাও অপ্রত্যাশিত ভাবে। সেই থেকেই ঐ বাবাজীকে আমি গুরু বলে মানি। অনেক দিন ধরেই আমার ইচ্ছা ছিল গুরুমন্ত্র নেওয়া ।
তাও বাবাজী কেমন করে জানতে পেয়ে সেটাও পুরণ করলেন আশ্চর্য ভাবে। সেই এক ই কন্ঠ - সেই গম গম আওয়াজএ আমার কানে ভরে দিলেন গুরু নাম। এই তো বছর দেড় হলো। আজ আমি বাবাজীর দেওয়া মন্ত্র ইষ্ট নাম দিনে দুইবার জপি ।
আজ আর সময় নেই।
পরের লেখায় আরো আমার ভুত ও ভৌতিক কাহিনী শোনাব। শোনাব সেই প্ল্যানচেটের কথা।
খুব ভালো থাকবেন সকলে।
লেখাটি চলবে -" বিশ্বাস অবিশ্বাসে ভূত ও ভৌতিক " এই শিরোনামে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।