নীল আকাশে ভেসে থাকতে চাই ধ্রুব তারার মতো
ইশি ও ব্লাকহোল
এলার্ট এলার্ট এলার্ট...
অভিযান ব্লাক হোল, ইটিলিয়াস চলছে ব্লাকহোলের দিকে, আবছা আলো, চারিদিকে অন্ধকার। ইটিলিয়াস হচ্ছে একটি নভোযান, বিশাল জ্বালানী নিয়ে এটি চলছে, ইটিলিয়াসের আবাসস্থল ইউরেনাস নামক গ্রহে। ইশি ঘুমিয়ে আছে তার রুমে একটি কফিনের মত বক্সে। যেটা অক্সিজেনের ঘরও বলা যায়। হঠাৎ লাল ও সবুজ বাতি জ্বলছে ও নিভছে এবং সাথে আসছে একটি ইম্পিউটার ভয়েস।
এলার্ট এলার্ট এলার্ট। কিন্তু ইশির কানে খুব জোরে শব্দ আসছে না। কারণ তার নিউরণসেলে জমা হয় কিছু স্বপ্ন, যার শুরুটা এমন, ইশি শুনেছে, পৃথিবী নামক একটি গ্রহ আছে, সেখানে হমোসেপিয়ানরা থাকে? কিন্তু ইশি বা তার মত এমন কাউকে সেখানে অভিযান করতে দেওয়ার অনুমতি নেই। এবং তারা তাদের নেতার আদেশ অমান্য করতে পারে না। ইশির কল্পনার রাজ্যে এখন পৃথিবী নামক গ্রহ, ইশি যেখানে নেমেছে সেখানে কোন জন-মানব নেই, এখনো তার সাথে কোন প্রাণীর দেখা মেলেনি।
ইটিলিয়াস থেকে ছোট একটি যান নিয়ে ইশি পৃথিবীতে উড়ে ভেড়াচ্ছে। এক সময় তার সাথে একটি মেয়ের দেখা হয়। ইশি ভূমিতে নামে, ইশি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে তোমার নাম কি? মেয়েটির জবাব দেয় আমার নাম ইনি। ইনি ! ইশি অবাক হয়, ইশির মনে হয় সে এই নামটি আগেও কোথাও শুনেছে। কিন্তু সে এটা ধরতে পারছেনা, স্বপ্নে অনেক সহজ কিছু অনেকে ধরতে পারে না।
ইশির বেলাও সেরকম ঘটেছে। ইশির মনে হচ্ছে সে এই মেয়েটির চেহারাটা কোথাও দেখেছে মনে করতে পারছেনা।
খ.
এলার্ট এলার্ট এলার্ট... আওয়াজটা খুব জোরে হচ্ছে, ইশির ঘুম ভেঙ্গে যায়, নিউরণসেল থেকে ইনি ও পৃথিবী চলে যায়। ইশি জেগে ওঠে। লাল ও সবুজ বাতি দ্রুত জ্বলছে ও নিভছে।
ইশিকে সংকেত পাঠানো হচ্ছে এটা বুঝে যায় ইশি, ইশি ইম্পিউটারে কাছে গিয়ে একটি বাটনে চাপ দেয়, ভেসে উঠে ইনির ছবি। ইনির চেহারা দেখার সাথে সাথে ইশির মনে পড়ে কিছুণ আগে তার স্বপ্নে দেখা মেয়েটির চেহারার মত। ইশি প্রশ্ন করে কী হয়েছে? আমাকে ডাকছো কেন ? আমাদের যানের কিছু সমস্যা হয়েছে আমরা কি আমাদের অভিযান স্থগিত করে দিব। না, ইশির জবাব। আমাদেরকে এরকম কোন সিগন্যাল দেওয়া হয় নাই।
আমি মহামান্য ইকার সাথে যোগাযোগ করে নিই, তারপর আমি তোমাকে সিগন্যাল পাঠাবো। মহামান্য ইকা হচ্ছো ইউরেনাসের লর্ড তাকে সবাই মেনে চলে তার কথায় সমস্ত অভিযান পাঠানো হয়। আমরা শতবর্ষ ধরে এই অভিযানে আছি, আমাদের গন্তব্য ব্লাকহোলের ভিতরের রহস্য উদ্ঘাটন করা। আমি মহামান্য ইকার সাথে যোগাযোগ করি সে আমাকে বলে ইটিলিয়াসের গতি কমিয়ে এর সমস্যা খুঁজে বের করতে এবং সাথে সে আর একটি বিপদ সংকেত জানিয়ে দেয়, ইউরেনাস ও ইটিলিয়াসের মধ্যেকার যোগাযোগ সিগন্যাল মাত্র দুই আলোকবর্ষ পর্যন্ত থাকবে এরপর ইটিলিয়াস আর ইউরেনাসের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেনা।
গ.
ইশি দ্রুত ইনির সাথে যোগাযোগ করে, যেন নভোযানের গতি কমিয়ে দেয়।
ইশি চলে যায় ইঞ্জিন রুমে ইম্পিউটার দিয়ে ইশি ও তার সহকারীরা ইঞ্জিনের সমস্ত সমস্যা চেক করে। চেক করে দেখে নিউকিয়ারের একটি টিউব ফেটে গেছে, এজন্যই ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ত্র“টি শুরু হয়। টিউব ঠিক করে ইশি, ইনির সাথে দেখার করার জন্য চালক রুমে চলে যায়। ইনিকে দেখার পর ইশির পৃথিবী নামক অজানা গ্রহে থাকা মেয়েটির কথা মনে পড়ে যায়, যার চেহারা ইনির মত দেখতে। ইনি একজন অভিযাত্রী ও ইটিলিয়াসের চালক।
গুড মনিং ইনি, গুড মনিং ইশি, ইশি প্রথমে ইনিকে জিজ্ঞেস করে, কেমন আছ ইনি, এখন একটু ভাল, যা ভয় পেয়েছিলাম, ইশি বলে, মহামান্য ইকা বলেছে... ইশির কথা শেষ না হতেই ইনি জিজ্ঞেস করল মহামান্য ইকা কি বলেছে? মহামান্য ইকা বলেছে আমাদের নভোযানের সাথে ইউরেনাসের মাত্র দুই আলোকবর্ষ পর্যন্ত সিগন্যাল থাকবে। এরপর আমাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ থাকবে না। আমরা আমাদের দেওয়া ডিরেকশনের মাধ্যমে চলব। সিগন্যাল শেষ হওয়ার আগে ইকা আমাদের মধ্য থেকে যে কোন একজনকে নভোযান পরিচালনার দায়িত্ব দিবেন। ভাল কথা ইনির জবাব।
ইশি, ইনিকে প্রশ্ন করে, ব্লাকহোল থেকে আমরা কত আলোকবর্ষ দূরে আছি। ইনি, ইশিকে বলে এখনো পাঁচশত আলোকবর্ষ দূরে আছি। ইটিলিয়াস আবার তার পুরো গতিতে চলছে। এরই মধ্যে ইশিকে ইটিলিয়াসের চিফ আব কমান্ড নিয়োগ করা হয়েছে।
ঘ.
ইশির মনে আবেগের সৃষ্টি হয়েছে, সে তার রুমে বসে আছে।
ইশি এখন ইনিকে নিয়ে ভাবে, কিন্তু ইউরেনাসের অধিবাসীদের কেউ কখনো প্রেমে পড়েনি। তাদের প্রেমে পড়ার কোন নিয়ম নেই। তারা এমন এক প্রকার প্রাণী তাদের ঘুম আছে, তারা আলো ও অক্সিজেন খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু তাদের মনে আবেগের সৃষ্টি হয়না। কিন্তু ইশির মনে ব্যতিক্রম ঘটেছে, ইশি নিজেই ইনির প্রেমের পড়ল।
ইশির ভাবনায় আবারো ব্যাঘাত ঘটল, ইটিলিয়াস খুব জোরে ধাক্কা খেল, নড়ে উঠলো সবকিছু। আবার আগের মত লাল ও সবুজ বাতি খুব দ্রুত জ্বলছে ও নিভছে। ইম্পিউটারে ইনি সংকেত পাঠালো ইটিলিয়াস আটকা পড়েছে কেউ তাদের নভোযানকে চুম্বকীয় আবেশে আটকে ফেলেছে, তাদের নভোযান এখন ঝুঁকির সমুখীন, ইটিলিয়াস লেমুনাস নামক একপ্রকার বায়ুদস্যু দ্বারা আক্রান্ত। তারা বায়ুমন্ডলে ভেসে বেড়ায়। তাদের গল্প, মহামান্য ইকা কোন একসময় বলেছে।
ইটিলিয়াসে লেমুনাসরা আক্রমন করেছে, এখন তাদের সাথে ইশি ও ইটিলিয়াসের সকল অভিযাত্রীকে যুদ্ধ করতে হবে। তারা জানেনা এর ফলাফল কি হবে। যুদ্ধ শুরু।
ঙ.
যুদ্ধ শেষ। যুদ্ধে ইশি ও ইটিলিয়াসের জয় হয় তারা লেমুনাসের দস্যুদের তাড়িয়ে দেয়।
লেমুনাসের দস্যুরা ইটিলিয়াসকে ছাড়তে বাধ্য হয়। ইটিলিয়াসের অনেক কর্মী মারা পড়েছে তাদের কে বাতাসে ভাঁসিয়ে দাফন করা হয়। ইশি মনে করে তাদের আত্মা তাদের কাছে আবার পুনরায় ফিরে আসবে। ইটিলিয়াস তার গন্তব্যের কাছাকাছি চলে এসেছে আর এক আলোকবর্ষ চলার পর ইটিলিয়াস ব্লাকহোলের ভিতরে ঢুকে যাবে কিন্তু কেউ জানেনা কি হবে ব্লাকহোলে ভিতরে। ইশি, ইনিকে এর মধ্যে ভালোবেসে ফেলেছে।
কিন্তু ইনিকে তা বলতে পারেনি ইশি। ব্লাকহোলের রহস্য উদঘাটন করার জন্য ব্লাকহোলের ভিতরে হারিয়ে যায় ইটিলিয়াস। হারিয়ে যায় ইশি ও ইনির জীবন, কেউ জানেনা কোথায় ইশি, ইনি ও ইটিলিয়াস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।