আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বাস অবিশ্বাসে ভূত ও ভৌতিক - ( তৃতীয় অধ্যায় )



-------------------------------------------------------------------------------- আগেই জানিয়েছিলাম আমি প্ল্যানচেট জেনেছি। এটা আমি শিখেছিলাম আমার এক জামাইবাবুর ( শ্রী বাসুদেব দাশ ) কাছে। উনি পেশায় শিক্ষক কিন্তু জ্যোতিষ ও জানেন খুব ভালো। তিনিও শিখেছিলেন তাঁর গুরুদেবের কাছে। তাঁর কাছে মহামুল্যবান বই পড়ে আমার অনেক অজানা জানা হয়েছে।

তাঁর সংগ্রহে কত কত বই ! অসম্ভব ধৈর্য আর অধ্যবসায় নিয়ে আমি শিখেছি তাঁর কাছে অনেক কিছু। শিখেছিলাম প্ল্যানচেট। মৃত মানুষের আত্মা কে মিডিয়ামের দ্বারা তার শরীরে আনা। জানি না আজকের বিজ্ঞানের যুগে আপনাদের কাছে কতটা বিশ্বাস যোগ্য ? তবে এ অতি সত্য। আমি নিজে তা পরীক্ষালব্ধ।

ঘটনাটি গুলি আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। তখন হায়ার সেকেন্ডারী পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছি। পড়াশুনার সাথে সাথে আড়ালে আড়ালে চলছিল আমার এই সব গবেষনা ও শিক্ষা । আমার এক প্রিয় বন্ধুর সাথে এসব বিষয় নিয়ে প্রায়ই আলোচনা করতাম বিকেলে বেড়াতে বেড়িয়ে। গভীর গভীর ভাবে আলোচনা হতো তার সাথে।

দিনে দিনে সেও প্রভাবিত হয়ে পড়ছিল বেশ আমি বুঝতে পারলাম। মনে মনে আমার খুব আনন্দ হলো বেশ । কারণ এই সব তত্ত্ব মনের মতো মানুষ ছাড়া অন্য কারোর সাথে আলোচনা করতে ভালো লাগে না। সেই আমায় এনে দিয়েছিল " মাতৃ সঙ্ঘ " এর প্রতিষ্ঠাতা সাধক শ্রী সুদিন মিত্রে 'র লেখা " অবিশ্বাস্য সত্য" বইটি। যা পড়ে আমি পেয়েছি - সাধনার জন্য মনকে তৈরী ও অঢেল সাহস।

আরোও কত জ্ঞান । দেখেছি তাঁর অসম্ভব ক্রিয়া কান্ড । আপনারা এই বই টি পড়ে দেখতে পারেন। হ্যাঁ যে কথা বলছিলাম - ওই বন্ধুর সাথে পরামর্শ করে ঠিক করলাম একদিন ওকে নিয়ে প্ল্যানচেট করবো। দিন ও নির্জন স্থানও ঠিক করে ফেললাম ।

তৈরীও করেনিলাম মন কে । জীবনে প্রথম প্ল্যানচেটের আসরে বসব - অদ্ভুত এক শিহরন ঘোর খেলেবেড়াতে লাগলো শরীরও মনে। ভয়ও যে লাগছিল না তা অস্বীকার করব না। কি জানি কি হবে । যদি কিছু দুর্ঘটনা ঘটে ? যদি আমি মরে যাই বা আমার বন্ধু মারা যায় ? কি হবে তখন ? এই ভয় ই বেশি গ্রাস করেছিল আমাকে ।

জামাইবাবুর কাছে জেনে ছিলাম এই আসর ঠিক মতো পরিচালনা না করতে পারলে বিরাট কিছু ক্ষতি এমন কি মৃত্যুও ঘটতে পারে কোন দুর্ঘটনা ঘটে। তার উপর অসীম সাহসও রাখতে হবে। সম্ভাবিত দুর্ঘটনা ঘটলে উপস্থিত বুদ্ধির জোরে তা এড়াতে হবে। যাই হোক - নির্দিষ্ট দিনে শুদ্ধ হয়ে সরঞ্জান নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গেলাম উভয়েই। গরমকালের এক নিদারুন দ্বিপ্রহর।

নির্জন এক ফাঁকা বাড়ীর দোতলা। বাড়ীটা ছিল বন্ধুর প্রতিবেশীর অব্যবহৃত এক বাড়ী। চারটি জানালা ছিল আর দুটি দরজা। জানালা ও দরজা বন্ধ করেদিলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘরে ঢুকেই প্রথামত গঙ্গাজল ছিটিয়ে ধুপ জ্বালিয়ে কিছুক্ষণের জন্য জানালা ও দরজা বন্ধ করেদিলাম।

এখানে উল্লেখ্য আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম কার আত্মা কে আনা হবে ধ্যান ও পদ্ধতির মাধ্যমে। সেটা হলো ঐ বন্ধুর বাবা'র আত্মা কে। এখানে যারা এই আসনে বসবে তাদের ঐ ব্যক্তিকে দেখে থাকতে হবে বা বিশেষ পরিচিত থাকতে হবে। যদি সেটা না থাকে তবে ঐ মৃত ব্যক্তির ফটো থাকতে হবে। কোন অপরিচিত বা ফটো নেই এমন ব্যক্তির আত্মা কে আনা সম্ভব নয়।

সম্ভব নয় কেন ? না তাঁকে না দেখে থাকলে বা ফটো না রাখলে তাকে স্মরণ করা সম্ভব নয়। চক্রে বসার আগে আমরা উভয়েই একটা সাদা কাগজ়েএসব ঘটনার কথা উল্লেখ করে স্বাক্ষর করলাম তাতে লিখলাম - " আমাদের কারোও মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়" যাই হোক... নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চক্রে বসে গেলাম । দরজাগুলি ছিল বন্ধ , জানালা গুলি ছিল বন্ধ শুধুমাত্র একটা জানালা হাল্কা ভেজানো ছিল। ধুপ জ্বলে, চক্র এঁকে কম্বলের আসনে বসে এক মনে ধ্যান করতে লাগলাম। এখানে একটি কথা বলি - আত্মা যখন আসে তখন তার পরিবেশ টা হয় এক অপার্থিব পরিবেশ ।

যা সাধারণতঃ দেখাই যায় না। অন্ধকার ঘরে জানালা বা দরজা হুট করে খুলে যায়। এক দমকা ঠান্ডা বাতাস এসে ঢোকে ঘরে- ঘরময় গম গম আওয়াজ আর কি রকম এক গন্ধ বাতাসে ভরে ওঠে, যে বাতাসটা ঠিক মৃতদেহ দাহ করা বা কোন পূজার হোমের ঘি পুস্প সম্মিলিত দাহ হবার গন্ধের মত। কখনো বা সুন্ধর এক ফুল বা পারফিউমের গন্ধ যা কোনকালেই পাই নি এমন গন্ধযুক্ত বাতাস । গোটা ঘর ঘোরপাক খায় ওই বাতাস আর দেওয়ালের ক্যালেন্ডার জানালার কপাট গুলি এলোমেলো হতে থাকে আবার কখনো এক অদ্ভুত অবর্ননীয় আলো এসে প্রবেশ করে।

অনেকক্ষণ হলো ধ্যানে বসে আছি। দুজনেই মনে মনে বন্ধুর স্বর্গত পিতা কে স্মরণ করে কামনা করছি... " এসো তুমি এসো " । জ্বল জ্বল করছে ঐ বন্ধুর পিতার মুখখানি। পার্থিব জগতের কোন শব্দ আসছেনা কানে। ধ্যান করেই যাচ্ছি - করেই যাচ্ছি আর কোন কিছুই মনে আসছে না তখন।

এমন সময় - উত্তরের জানালাটা ধরাম করে খুলে গেলো। ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো এক শীতল হাওয়া। নিমেষের মধ্যে গোটা ঘরটা ভরে গেলো এক অদ্ভুত আলো। যা কোন আলোর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। সে এক রোমাঞ্চময় আলো...।

সে আলো ছিল শান্তস্নিগ্ধ কি রকম যেন বর্ণ তার। হাওয়া টা ঘুরতে লাগলো গোটা ঘরময়। বোঁ বোঁ শব্দে - আমাদের যেন পাকদিয়ে উঠিয়ে নিতে চায় এমন। যেন কোন ঘুর্ণীঝড় এসে প্রবেশ করলো। আমি এর বেশি আর বোঝাতেও পারবো না কি রকম।

হটাৎ আমাকে আরো অবাক করে - বন্ধুটা - ভীষণ জোরে বু বু করে চিৎকার করে উঠলো...। ঘোর কেটে গেল আমার... তাকিয়ে দেখি সে ইশারায় কিছু বলতে চাইছে। লাফিয়ে উঠতে চাইছে সে। ধরতে চাইছে আমাকে। বুঝেগেলাম তার মনে প্রচন্ড ভ্য় ঢূকেছে।

প্রচন্ড ভীত হয়ে পড়েছে সে। আমি জানতাম এমন অবস্থা হলে চক্র ভেঙ্গেদিতে হয়। আত্মার সাথে কানেকশন বন্ধ করে দিতে হয় না হলেই বিপদ। আমি তাই করলাম শীঘ্র। না করে উপায় ছিল না।

এমন অবস্থায় পৌঁছেগেছিলো যে সে হার্টফেল করতেও পারতো। আসন ছেড়ে উঠে আমি তাকে গিয়ে ধরলাম। তার মুখে চোখে জল দিলাম । খুলে দিলাম দরজা জানালা- মুখে বল্লাম " যে এসেছো তুমিএই মুহুর্তেই বিদায় নাও - আমাদের অজ্ঞতার কারণে ক্ষমা করো। তারপর আমার বন্ধু সামান্য সুস্থ হতেই সোজা দাঁড় করিয়ে দিলাম।

তাকে কথা বলতে বল্লাম। সে কিছু ক্ষণ চুপ করে কথা বল্ল - " আমি ভয় পাই নি ... আমি বাবার আত্মা এসেছে এটা ভেবেই আমি থাকতে পারি নি... প্রচন্ড শিহরন এসে গেছিল আমার মনে - তাই নিজের অজান্তে চিৎকার করে উঠলাম " আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম তার কথা শুনে। রাগ এসে গেল আমার মনে... জীবনে প্রথম প্ল্যানচেট আসরে বসে - সাফল্যের মুখে এসেও ব্যর্থ হয়ে গেলাম এই ভেবে। তীব্র ভৎসর্না করেছিলাম সেদিন আমার ওই বন্ধু'কে। তখনও কিন্তু ঘরময় ছিল সেই উজ্জ্বল আলো আর ঘুর্নি হাওয়া।

আবার ঠিক সেই মুহুর্তেই হটাৎ করে হাওয়ার স্রোতটি চলে গেল খোলা দরজা দিয়ে - আলোও নিভে গেল। সাক্ষী হয়ে থাকলো আমার সেই বন্ধু। শিহরিত উচ্ছসিত ছিলাম আমি সেদিন। তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি আবার প্ল্যানচেট করবো - সাফল্য পাবো। তবে আর এই রকম আবেগ প্রবণ বা ভীতু কারোর সাথে নয়।

পরে অবশ্য সফলতা এসেছিল। দেখেছিলাম তার পুর্নাঙ্গ রূপ , ঘটেচলেছিল অদ্ভুত অদ্ভুত একের পর এক ঘটনা। আজ আর সময় নেই। পরের অংশে শোনাব সেই সব ঘটনা। কেমন লাগছে জানাবেন।

আমি আবারও বলছি - এগুলি সবই আমার জীবনের সত্য ঘটনা। ভালো থাকুন সকলে এই কামনা করি। বিঃ দ্রঃ - লেখাটি " বিশ্বাস অবিশ্বাসে ভূত ও ভৌতিক " এই শিরোনামেই চলবে। ----------------------------------নমস্কার---------------------------------------

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.