নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .
আমাকে সবাই খারাপ ভাবতে পারে, খুব খারাপ; উচ্ছৃঙ্খল, অভদ্র একটা ছেলে মনে হতে পারে। এমনটা হলে ভাবাটাই স্বাভাবিক, কেন নয় ? আমি হলেও তাই ভাবতাম। আসলে আমি অনেক বদলে গিয়েছি। এই কথাটা যখন কলিগ, কলেজের বন্ধুরা, পুরনো সব সার্কেলের মানুষগুলো এবং আরো সবাই জানবে, এমন পথে আমি পা বাড়িয়েছিলাম, তখন তারা কতটাই না ঘেন্না করবে আমাকে। আর মা ! হুমম! আমার প্রতি তার বিশ্বাস ভেঙ্গে যাবার কষ্টটা কি কারো চাইতে বেশী হবে ? বাবার আগলে রাখা স্নেহ-সেটারও বিশ্বাসঘাতকতা করলাম আর ছোটটার কাছে আমার যে আদর্শ, এখন তো শুধু অতীত।
সেদিন রাতে যা ঘটল, সত্যি বলতে আমি আর ওসব এখন মনে করতে চাইনা। একদন্ডও না। এক মুহুর্তের জন্যও না। তবুও দু:সহ স্মৃতিগুলো পিছু ছাড়ছিল না। অনেক সমাধানের পথ খুজেছিলাম, কোনটাই দীর্ঘস্থায়ী মনে হচ্ছিল না।
রাত তখন আড়াইটা। মোবাইল ইনবক্সের শেষ ম্যাসেজটা একবার-দুবার করে কয়েকবারই পড়া হল। জানালা সোজা ফ্লাটটার তিন তলায় যে এপার্টমেন্টে তখন লাইট জ্বলছিল; সেটাও নিভে গেল। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছিল। যে পথ খুজছি, সেখানেই বুঝি আনন্দ, কিন্তু সে পথও তো আলো নেই।
ঘড়ির কাটায় চারটা প্রায়, তখনও ঠিক সেখানেই।
পরদিন সকালে ভোরেই জেগে গেলাম। মা তখনও ঘুমিয়ে, নামাজ পড়বার জন্য দু-একবার ডেকে চুলোয় চা বসিয়ে এলাম।
“ভোরে মা'কে নিজ হাতে চা বানিয়ে খাওয়ালাম, বাসা থেকে বেরুবার সময় মা’র দিকে তাকাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল” [June 25, 2009, 11:56 am]
“আসবার সময় বাবা’র মাথায় হাত রেখেছিলাম “বাবা, রাতে ঘুম হয়েছিল ? ” বাবা মাথা নাড়লেন, হাতটা সরিয়ে নিলেও চোখটা ফেরাতে পারিনি। ” [June 25, 2009, 01:34 pm]
“ছোটটাকে সকালে বকা দিয়ে ঘুম থেকে উঠাতে হয়, না হলে প্রতিদিন অফিস দেরী করবেই, সেদিন বকা দিতে পারলাম না .” [June 25, 2009, 04:17 pm]
অফিস শেষে রাতে যখন বাসে উঠেছি, তখনও একবার নয় বহুবার ভেবেছি।
সারাটাদিন কাউকে বুঝতে দেইনি। ভাবছি বোধহয় জিতেই গেছি। ক্রমশই নিয়ন্ত্রণ বোধটা হারিয়ে ফেলবার ভয়ও কাজ করছিল, আবার ভাবলাম এই তো প্রায় এসে গেছি, আর সময়ও বেশী নেই।
যখন পৌছলাম রাস্তার দু-ধারে প্রচুর গাড়ী দাড়িয়ে ছিল, সব ওপাড়ে যাবে। এমনিতেই কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি হয়েছিল মনে হয়, রাস্তা সব কাঁদা কাঁদা।
দু-একটা আস্ত ইটের টুকরোও রাস্তার মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, হোচটও খেলাম একবার। পকেটে হাত দিয়ে নিশ্চিত হলাম, না, সব ঠিকই আছে।
জায়গাটা অন্ধকার, ঠিক ডেকের ডান দিকে রেলিং এর কাছে। অদ্ভূত একটা সময় ছিল সেটা, খুব দ্রুত যেন পেছনে চলে যাচ্ছিলাম, একবার, মা, বাবা, ভাই অফিস সবার কথা মনে হচ্ছিল। ভাবছি.... না থাকা সে কথা ।
আমার এক শিক্ষকের কথা হঠাত মনে পড়ল, তিনি সবসময় বলতেন, সারাদিনের সব ভাল কাজ, কথাগুলো রাতে একবার ভাবতে। সেদিন তো আমার ভাল বলে কিছু ছিলনা ...
রাশিকা’র একটা কথা খুব খেয়াল হল, সেদিন সকালের ...... এক সাউটের মন্তব্যে বলেছিল ... (rasheeka June 26, 2009, 06:45 pm)
“asholei onek shahosh dorkar suicide korte...bhabteo pari na ekta manush kotokhani depressed hole nijer jibon nijer haatei shesh kore dite pare....”
তাইত আমি কতট ডিপ্রেসড! কতটুকু ডিপ্রেস তা মাপার যন্ত্র থাকলে হয়ত মেপে ক্যালকুলেশন করে ফেলতাম, আর কতটা ডিপ্রেসড্ থাকলে মানুষের এ পথে আসা উচিত..
হাসান ভাইয়ের শেষ মন্তব্যটি ...... (hasan June 25, 2009, 08:14 pm)
“কেনরে ভাই আপনার সমস্যাটি কি ? কি নিয়ে চিন্তিত ? যখন আমার নিজের প্রতি রাগ হয় তখন আমি ঘুমাই ব্রেন শান্ত থাকলে সব ঠিক হয়ে যায় আমার সাজেশন থাকবে পারলে একটু ঘুম দেন আমি জানি আপনে সব চেয়ে সফল মানুষ, নিজেকে জানুন বিশ্বাস করুন আর ভালবাসুন মানুষ কে ”
আমি নাকি একজন সফল মানুষ, এটাতে খুব উৎসাহ পেয়েছিলাম, কে বলল ওনাকে, কোত্থেকে পেল এ কথা, কি জানি, না কি গাজাখুরি গল্প জুড়ে দিয়েছিলেন ......
মোবাইলটা অন করতেই ইনকামিং ম্যাসেজ, ছোটটার নন্বর থেকে “ভাইয়া, তুই কোথায়” ম্যাসেজটা পাঠিয়ে ছিল অনেক আগেই।
কিছুন বাদেই বাসার নম্বরের কল, ফোনটা রিসিভ করতেই ......
এবার মা
“বাবা, তুই কোথায়”
অনেকন কোন কথা নেই, মা কিছু বলতে পারছিলেন না, শুধু কান্নার শব্দ পাচ্ছিলাম, আমি তখনও নিশ্চুপ।
বাবা বোধহয় ততনে ঘুমিয়ে পড়েছেন অথবা ছোটটা জোড় করে ঘুমিয়ে দিয়েছে না হলে ...
অফিসের জিএম স্যারের ফোন
“এই তুমি কোথায়, তোমার বাসায় সবাই টেনশন করছে, তোমার কি হইছে বলতো ..... স্যার হ্যালো হ্যালো করতে থাকেন... আমি ফোনটা রেখে দিই
একটাই বন্ধু, “হ্যালো দোস্ত, কোথায় তুমি.. এত রাত হইছে .. সবাই খোজাখুজি করতেছে ..”
ওর লাইনটাও কেটে দিলাম
মোবাইলের চার্জ প্রায় শেষ তখন
প্যথিড্রিনের সিরিঞ্জ দুটি তখনও আমার হাতে। থর থর করে শরীরটা কাঁপছিল, অনেক শব্দ করে কাদঁছিলাম।
একটা মানুষও তখন পাশে ছিলনা।
পারিনি সেদিন নিজেকে হত্যা করতে, ফিরে এসেছিলাম।
....................................................................................................................
- নেওনা তোমার চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো !
= ভাইয়া এক গ্লাস পানি হবে ?
- তারপর, তোমার বাবা-মা তোমাকে কিছু বলেনি ?
- ছোট ভাই-টা, অফিস, অন্য সবাই
= না, ভাইয়া কেউ কিছু বলেনি
- ভাল
- নেপোলিয়ান সাহেব কি বলেছিল জান ?
= নেপোলিয়ান কে ভাইয়া ?
- আরে নেপোলিয়ান কে চেন না !
= ও, আচ্ছা
= কি বলেছিলেন ?
- তিনি বলেছিলেন, “আত্মহত্যা যে করে সে একটা কাপুরুষ”
(ছেলেটি এই প্রথম হাসছে, অনেকক্ষন ধরে হাসছে)
= ভাইয়া,
= আমি কাপুরুষ না !
........................................................................................................................
এই সেই ছেলে, যে আত্মহত্যা করবার পথে পা বাড়িয়েছিল, আর সেই পথের মাঝে দেখা হয়েছিল আমার সাথে কিছুক্ষনের জন্য। এক বাসের যাত্রায়। নামবার আগে বিজনেস কার্ডটা দিয়েছিলাম, ঘটনা বেশীদিনের না, আজই অফিসে এসেছিল।
ছেলেটিই এতক্ষন সব বলল, শুরু থেকে শেষ অবধি। কিন্তু, ছেলেটি বলেনি কি সেই কারণ, যে কারণে আত্মহত্যার মত পথ বেছে নিয়েছিল ...
........................................................................................................................
একটা অনুরোধ করেছিল ও, এ পোষ্টটা রাশিকা আর হাসান ভাই-এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করবার জন্য। তাইত ! করাই উচিত, যাদের কারণেই হোক আর যে ভাবেই ফিরে যে এসেছে তার অনুরোধটা রাখতেই হবে ..
উৎসর্গ : rasheeka ও hasan
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।