আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপসংহারে একা একা/দেশভাগ ও অতঃপর বাংলাদেশ/৩



৭) ভাগাভাগির সময় একশ্রেণীর চোখে লোভ, একশ্রেণীর চোখে জিঘাংসা, একশ্রেণীর চোখে শুধু জল। না রাজনীতির ক্ষেত্রে সেইসময় এমন কোনো মহত্বের প্রকাশ ঘটেনি যাতে ভাগাভাগি বাধা পায়। তবু মানুষ যেহেতু আসলে এক রক্তবীজ তাই সে তার স্বাক্ষর একটা রাখেই । ঐ গড্ডালিকা প্রবাহে তাই কেউ কেউ গা ভাসাতে অস্বীকার করে । কেউ কেউ তাই গলা টিপে ধরে লোভের, শাসন করে জিঘাংসার, প্রতিবেশী ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে--বলে 'আরে যাইতাইন কই--মরলে এইহানেই মরবাইন--বাচলে এইহানেই--সময় অইলে আফনে যাইবাইন শ্মশানে--আমি যাইয়াম কবরে।

' এই সব মানুষরা হয়তো আর নেই তবু তাদের কথাগুলো মানুষের মুখে মুখে আজও প্রসঙ্গ উঠলে শোনা যায় । ৮) আমরা ভাইবোনেরা একসময় আমার বাবার উপরে অসন্তুষ্ট ছিলাম এই কারণে যে বাবা সময়মতো সম্পত্তি বিনিময় করে দেশত্যাগ করেননি । প্রায় কপর্দকশূন্য অবস্থায় দেশত্যাগ করে আমাদের যে সীমাহীন কষ্টের দিন কাটাতে হয়েছে তা আমরা মন থেকে মেনে নিতে পারিনি । এর আর একটা বড় কারণ এটাই যে ৬০ দশকে আমরা এসে দেখতে পেলাম মধ্যমবর্গের মানুষেরা ৪৭ এর পরপর দেশ ছেড়ে এখানে এসে ততদিনে প্রায় প্রতিষ্ঠিত । পাশাপাশি আমাদের অবস্থাটা তখন বেশ চরম।

কিন্তু আমাদের এই ক্ষোভের ঘাত পরিণত বয়সে অন্ততঃ আমার মধ্যে আর টিকতে পারেনি । কারণ ততদিনে দেশভাগের বিষয়টা নিয়ে আমি ভাবতে শুরু করেছি। মনে হয়েছে বাবা এই প্রেক্ষিতে একজন ট্র্যাজিক মানুষ । ভিটে মাটি ছাড়ার প্রশ্নে বাবার যে অনীহা, তার নিহিত সুত্রগুলো যেন বার দুয়েক জন্মস্থানটা ঘুরে আমি সামান্য হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছি । যে কারণগুলোর জন্য মানুষ তখন উচ্ছেদ হয়েছে বা আতংকে নিজে নিজেই সরে পড়েছে, তার কিছু কিছু আমাদের অবস্থানেও সক্রিয় থাকা সত্বেও আজ আমার মনে হয় এ এক দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের ফল।

যার প্রতিরোধ হয়নি বা প্রতিরোধ সক্ষম অংশটিকে অনেক আগেই অকেজো করে দেয়া হয়েছিলো। হিন্দু মুসলিম দুটি প্রশ্নকেই বারবার রাজনীতির ছায়ায় বিজ্ঞাপিত করা হয়েছিলো । কোনো মৌলিক সমস্যার জন্য না হয়ে নেহাৎ ধর্মের জন্য এই ভাগকে তাই সন্দেহ হয় যে এর পেছনে যে লোভটি ছিলো তার নাম 'ক্ষমতা' । ৯) আমার প্রথমবারের জন্মস্থান ভ্রমন 'ফিরে দেখা আঁতুড় ঘর' পর্যায়ে লেখা হয়েছে। সেটা ১৯৮৭ সন ।

নিরন্তর এক অদৃশ্য টানে আমি অতি সম্প্রতি কালে অর্থাৎ জানুয়ারী ২০০৯ তে আরও একবার আমি সেই ভ্রমনটি করি । পরবর্তী কিস্তিতে সেই ভ্রমন বৃত্তান্ত দিয়ে এই লেখাটি শেষ হবে। (চলবে)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।