অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি
আগের পর্ব
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিভিন্ন কীর্তিমানদের নিয়ে অনেককালই বিতর্ক সইতে হয়েছে স্বাধীনতাত্তোর প্রজন্মকে। সরকারী নিয়ন্ত্রণের প্রচারযন্ত্র ও পাঠ্যপুস্তকে যখন যার খুশী তাকে নায়ক বানিয়েছে। তবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমেই শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ হয়েছে এই ভূমিকা। সে কারণেই চাঁদপুরের চাঁন মিয়া নিজেকে স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক বলে দাবী করলেও সেটা ধোপে টেকেনি। রেফারেন্স, দলিল, উপাত্ত এসবই নির্ধারণ করে দিয়েছে সত্যিকার ঘোষকের নাম।
সেই বিচারে সিরাজ শিকদার এবং পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনকে বঞ্চিতই বলতে হবে। পূর্ব পাকিস্তানের বৃহত্তর পরিসরে তাদের ডাকটা সেভাবে পৌঁছেনি কিংবা তা চাপা পড়ে গেছে শেখ মুজিবর রহমানের ব্যক্তিত্ব ও আওয়ামী লীগের তখনকার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কাছে। ১৯৬৮ সালে EBWM তাদের প্রথম থিসিস দেওয়ার পর থেকেই পূর্ব বাংলার বিচ্ছিন্নতা আদায়ের লড়াইয়ে নেমে পড়ে। এই লক্ষ্যেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এর কর্মীরা। গ্রামাঞ্চল এবং মফস্বল শহরগুলোতে জনভিত্তি স্থাপনে প্রচারণায় নামে।
১৯৭০ সালের ৮ জানুয়ারী সংগঠনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে স্বাধীন পূর্ব বাংলার পতাকা ওড়ানো হয়। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহে ওড়া এই পতাকায় সবুজ জমিনের মাঝে লাল সূর্য্য। বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় পতাকারই অনুরূপ! ১৯৭০ সালের ৬ জুন জহুরুল হক হলের (তখন ইকবাল হল) ১১৬ নম্বর রুমে যে পতাকার পরিকল্পনা ও ৪০১ নম্বর রুমে যার নকশা হয়েছে বলে শিবনারায়ণ দাশ দীর্ঘ বঞ্চনার পর কৃতিত্ব ফিরে পান, EBWM সেটা করে ফেলে অনেক আগেই। আর সেই নকশার মূল পরিকল্পকদের একজন ছিলেন সাইফুল্লাহ আজমী। যার পরিবার বিহার থেকে অভিবাসী হয়ে এসেছিলেন এদেশে।
বিতর্ক এড়াতে এখানে একটি কথা বলে নেওয়া ভালো, শিবনারায়ণের পতাকায় লাল সূর্য্যের মাঝে হলুদ মানচিত্র ছিলো বাংলাদেশের। গোটা মুক্তিযুদ্ধকালে উড়েছে এই পতাকাই। রূপটা বদল হয় ১৯৭২ সালে, ১৭ জানুয়ারি। পতাকার মানচিত্র দু'পাশ থেকে দু'রকম দেখায় এবং একরকম করতে গেলে জটিলতার সৃষ্টি হয় বলেই মানচিত্র বাদ দেয়া হয়।
সে বছর ৬ মে কার্লমার্ক্সের জন্মদিনে পাকিস্তান কাউন্সিলে দুটো হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় EBWM, যা নিজেই ছুড়েছিলেন বলে দাবি করেছেন কমরেড রোকন।
তার মতে পাকিস্তানের দুই অংশের যুবক যুবতীদের মধ্যে বিয়েকে উৎসাহিত করতে ৫০০ রূপী ভাতা চালু করেছিলো এই কাউন্সিল। স্মৃতিকথায় একই কাউন্সিলে দ্বিতীয়বার সিরাজের নির্দেশে আরেকজন কমরেডকে পাঠান রোকন। তার একহাত পঙ্গু ছিলো। পাকিস্তান কাউন্সিলের চারপাশে কড়া পাহারা দেখে তিনি পাশের এক ডাস্টবিনে বোমা ফেলে দেন। আর তা কুড়িয়ে পেয়ে খোলার সময় বিস্ফোরণে মারা যায় দুটো অল্পবয়সী শিশু।
অক্টোবর নাগাদ ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন, আমেরিকান ইনফরমেশান সেন্টারসহ আরো বেশ কিছু জায়গায় বোমা হামলা চালায় EBWM, যাতে হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে জাতীয় শত্রু খতম কর্মসূচী চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। পার্টির স্বার্থবিরোধী এবং পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা বিরোধীদের এই খতম তালিকায় রাখা হয়। পার্টির প্রথম খতমের শিকার হন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এক চা বাগানের সহকারী ম্যানেজার হারু বাবু। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে সংগঠিত এই হত্যাকাণ্ডই ছিলো EBWM-এর প্রথম খতম অভিযান।
(চলবে)
সূত্র : আ কেইস স্টাডি অব পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি
দ্য সান ইজ রেড
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।