রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই সাপ পরস্পর পরস্পরকে লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে
স্কুলে পড়ি, তখন আমাদের ভাইবোনদের ববি আর কুরবানি দেখতে দেওয়া হয়নি। এগুলো বড়দের ছবি। ববিতে ডিম্পল আর কুরবানিতে জিনাত আমান বিকিনি পড়েছিল, ব্যস তাতেই এগুলো বড়দের ছবি হয়ে যায়।
আমার দেখা প্রথম বড়দের ছবি ব্লু লেগুন। রীতিমত আয়োজন করে দেখা।
বয়সে বড় খালাতো ভাইয়ের বন্ধুরা সবাই মিলে দেখেছিল, আমিও কেমনে যেন ঢুকে যাই সে দলে। আমাদের সময়ে বড়দের বড়দের বড়দের ছবি দেখানো হতো বেগম বাজারে, ১০টাকা টিকিট। শুরুতে ব্রুস লী, তারপর আসল ছবি। বেগম বাজারে কখনো গেছি কীনা এতোদিন পর মনে পড়তাছে না।
একবার বাসায় সবাই মিলে দেখছিলাম ম্যালোনি গ্রিফিত ও হ্যারিসন ফোর্ডের ওয়ার্কিং গার্ল।
রোমান্টিক কমেডি। সারা ছবিতে একটা মাত্র কিস আর জড়াজড়ি ছিল। দৃশ্যটা শুরু হওয়ার সাথে সাথে বেড রুম থেকে বাবা ড্রয়িং রুমে এসে হাজির। এক নজর দেখেই চলে গেলেন। আমি নিশ্চিত বাবা এটাকে বড়দের ছবিই ধরে নিয়েছিলেন।
ইংরেজি ছবিতে বড়দের দৃশ্য থাকবেই। সেরকম ছবি আমার প্রথম দেখা অ্যান অফিসার অ্যান্ড জেন্টেলম্যান। এখনো আমার খুব পছন্দের ছবি। ডেবোরা উইংগার ছিল আমার প্রথম প্রেম।
এখানে আমি একটা তালিকা দিলাম বড়দের ছবির।
ব্যক্তিগত তালিকা। সবার সাথে মিলবে না। আমার তালিকায় নিছকই বড়দের ছবি নেই। ভাল ছবি কিন্তু বড়দের এমন ছবি থেকে আমি ২০টি বেছে নিয়েছি। আমি নিশ্চিত এই তালিকার পর অনেকেই ফরাসী একাধিক ছবির কথা বলবেন।
সেরকম ছবি অভাবও নেই। কিন্তু দেখা কম, যা আছে তাকে এর মধ্যে ফেলতে পারলাম না। এই তালিকা ক্রমানুসারে না। বিশেষ করে প্রথমটা ছাড়া। বেসিক ইন্সটিংক্ট সবসমেয়ই এক নম্বের থাকবে।
১. বেসিক ইন্সটিংক্ট (Basic Instinct)-এটা নিয়ে নতুন কিছু বলার নাই। ১৯৯২ সালের ছবি। সেবার সেরা ছবির অস্কার পেয়েছিল আনফরগিভেন। এর পরিবর্তে যদি বেসিক ইন্সটিংক্টকে দিতো আমার আপত্তি থাকতো না। বড়দের ছবির তালিকায় সর্বদা এক নম্বরে থাকবে শ্যারন স্টোনের এই ইরোটিকা থ্রিলার।
২. ড্যামেজ (Damage)-এক অস্বস্থিকর সম্পর্কের ছবি। জেরেমি আয়রন ও জুলিয়েট বিনোসে। এটিও ১৯৯২ সালের ছবি। জেরেমি আয়রন একজন ব্রিটিশ এমপি, প্রেমে পড়ে ছেলের প্রেমিকার। একদমই ভিন্ন মাত্রার ছবি।
শেষটাও অন্যরকম।
৩. ইয়া তু মামা তাম্বেইন (Y tu mamá también)-মেক্সিকান ছবি। তুমুল বক্স অফিস হিট ছবি। সমালোচকদেরও পছন্দ। দু বন্ধু, তাদের জীবন, প্রেম এবং নানা ধরণের সম্পর্কের ছবি।
৪. বডি হিট (Body Heat)-উইলিয়াম হার্ট ও ক্যাথলিন টার্নারের বিখ্যাত ছবি। ১৯৮১ সালে মুক্তি পায়। হার্ট একজন আইনজীবি। ক্যাথলিন তাকে নিজের জীবনে জড়ায়। তারপর পরিকল্পনা করে কোটিপতি স্বামীকে হত্যার।
খুবই ভাল একটা ছবি।
৫. মালিনা (Malèna)-ইতালির এই ছবিটা দেখে নাই এমন দর্শক খুব কমই আছে। আর ছবি হিসেবেও এটি চমৎকার। মালিনা দেখে মনিকার প্রেমে পড়েন নাই এমন মানুষও কম আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সিসিলির মালিনার জীবন কাহিনী।
বয়সে ছোট এক ছেলে বা কিশোরের দৃষ্টি দিয়ে দেখা।
৬. নাইন অ্যান্ড হাফ উইকস (9½ Weeks)-অল্পের জন্য মিকি রোউকির কাছ থেকে অস্কার ফস্কে গেছে। এক সময়ে অনেক বিখ্যাত ইরোটিক ছবিতে থাকতেন এই অভিনেতা। এর মধ্যে সেরা ছবি এটি। আমার কাছে ছবি হিসেবেও খুব পছন্দের ছবি এটি।
সাথে আছে হট কিম বেসিংগার।
৭. নোটস অন এ স্ক্যান্ডাল (Notes on a Scandal)- এটাকে পুরোপুরি ইরোটিক মুভি বলা যাবে না। বলা যায় সাইকোলজিকাল ড্রামা। কেট ব্লেনচেট আর জুডি ডেন্স। চমৎকার এক ছবি।
অভিনয়ও অসাধারণ। এটিও এক অস্বস্থিকর সম্পর্কের ছবি। স্কুল টিচার কেট সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারই ১৩ বছরের এক ছাত্রের সঙ্গে। আর পুরো বিষয়টি জেনে যায় সিনিয়র টিচার জুডি। অসম্ভব পছন্দের এক ছবি।
মুক্তি চায় ২০০৬ সালে।
৮. কোজার (Closer)-২০০৪ সালের এই ছবির পরিচালক মাইক নিকোলস। এটিকে পুরোপুরি ইরোটিক মুভি বলা যাবে না। ঐ রকম দৃশ্যও তেমন নেই। তারপরেও আমি তালিকায় রাখবো থিমের জন্য।
মানুষের সাথে সম্পর্ক, প্রেম আর প্রতারণার ছবি। অভিনয় শিল্পীদের নামগুলো বলি-জুলিয়া রবার্টস, নাতালি পোর্টম্যান, জুড ল আর কাইভ ওয়েন।
৯. কিলিং মি সফটলি (Killing Me Softly)-হিদার গ্রহাম আর জোসেফ ফিনেসের এই ছবি ২০০২ সালের। এটি আরিক অর্থেই ইরোটিক ফিল্ম। তবে গতানুগতিক ধারার না।
তাই এটি আমার তালিকায় থাকছে। এক অচেনা মানুষের প্রেম ও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে হিদার। তারপর বাড়তে থাকে জটিলতা।
১০. আনফেইথফুল (Unfaithful)-আড্রিয়ান লীনের আরেক বিখ্যাত ছবি। এই ছবির অনুকরণে যে কত ছবি হয়েছে তার হিসেব নেই।
রিচার্ড গিয়ার ও ডায়ানা লেন। ডায়ানা স্বামীকে লুকিয়ে সম্পর্কে জড়ায় এক রহস্যময় বই বিক্রেতার সাথে। একদিন খুন হয় সেই প্রেমিকটি। এটিও ২০০২ সালের ছবি।
১১. আইজ ওয়াইড শাট (Eyes Wide Shut)-স্ট্যানলি কুবরিক সেরা পরিচালকের একজন।
তার শেষ ছবি। টম ক্রুজ ও নিকোল কিডম্যান। আমার খুবই পছন্দের ছবি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমনকি শেষ সংলাপটি উপভোগ্য। টম ক্রুজ একজন চিকিৎসক।
স্ত্রী নিকোল জানায় এক বছর আগে জড়িয়ে পড়া এক সম্পর্কের কথা। রুগী দেখতে গিয়ে সেও জড়িয়ে পরে নানা ধরণের ইরোটিক অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে।
১২. আমেরিকান পাই (American Pie)- এটা একটা গতানুগতিক আমেরিকান ছবি। কমেডি ও ইরোটিকার মিশেল। হাই স্কুল গ্রাজুয়েশনের ঠিক আগে ৪ বন্ধুর অ্যাডভেঞ্চারের ছবি।
গতানুগতিক ছবি হলেও এই ধারার ছবির মধ্যে এটাই আমার কাছে সেরা মনে হয়।
১৩. কামসূত্র (Kama Sutra: A Tale of Love)-মিরা নায়ারের এই ছবিটি আমার পছন্দ এর প্রথম ১৫ মিনিটের জন্য। এই ১৫ মিনিট নিয়েই একটা ভাল ছবি হতে পারতো। মায়া ও তারা একই সাথে বড় হয়েছে। মায়া গরীব দাসী।
তারা রাজকুমারী। মায়া বড় হয়েছে তারার উচ্ছিষ্ট খাবার আর ফেলে দেওয়া কাপড় পরে। তারার বিয়ে। রাজপুত্র এসেছে বিয়ে করতে। এর মধ্যেই রাজপুত্রের চোখে পড়ে যায় মায়া, সম্পর্কও হয়।
বিয়ে শেষ। তারা যখন চলে যাচ্ছে মায়া বলে, আজীবন তোমার এঁটো খেয়ে ও ব্যবহার করে বড় হয়েছি। আজ আমার এঁটো তোমাকে দিয়ে দিলাম।
১৪. ওয়াইল্ড অ্যাট হার্ট (Wild at Heart)-ডেভিড লিঞ্চের এই ছবি কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার পাওয়া। লরা ডার্ন ও নিকোলাস কেইজ অর্থাৎ সেইলর ও লুলার জীবন নিয়ে ছবি।
এটাও অনেকের ভাল লাগতে পারে। ।
১৫. বিটার মুন (Bitter Moon)-পরিচালক হিসেবে রোমান পোলানস্কি আমাকে সবসময় আকর্ষন করে। এটিও তার বিখ্যাত ছবির একটি। হিউ গ্রান্ট ও ক্রিষ্টিন স্কট থমাস-ঘুরতে বের হয়েছে, সমুদ্রে।
জাহাজে পরিচয় আরেক দম্পতির সাথে। মেয়েটি ফরাসী আর ছেলেটি আমেরিকান। জড়িয়ে যায় এই দুই দম্পতি।
১৬. দি আনবিয়ারাবল লাইটসেন অব বিয়িং (the Unbearable Lightness of Being)- মিলন কুন্ডেরার উপন্যাস নিয়ে ছবি। পরিচালকও বিখ্যাত ফিলিপ কফম্যান।
দুইবার অস্কার পাওয়া ড্যানিয়েল যে লুইস আর ফরাসী জুলিয়েট বিনোসে আছে এই ছবিতে। মেয়ে পটানোতে ওস্তাদ এক ডাক্তারের কাহিনী।
১৭. দি পোস্টম্যান অলওয়েজ রিংগস টোয়াইস: (The Postman Always Rings Twice)- ১৯৮১ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি পুরোপুরি এরোটিক না। তারপরেও তালিকায় রাখছি একটি দৃশ্যের জন্য। জ্যাক নিকলসন কাজ নিয়ে আসার পর প্রথম দেখা হয় মালিকের বউ জেসিকা ল্যাঙ্গের সাথে।
প্রথম দুজনের সেই দেখা হওয়ার দৃশ্যটাই এটিকে ইরোটিক ছবির তালিকায় রেখে দিচ্ছে। ছবিটা খুব ভাল। একই উপন্যাস নিয়ে ১৯৪৬ সালেও এই নামে আরেকটি ছবি হয়েছিল। সেটিকেই অবশ্য বেশি বিখ্যাত বলা হয়।
১৮. আমেরিকান গিগোলো (American Gigolo)- ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া রিচার্ড গিয়ারের এই ছবিটি একটি থ্রিলার।
মেল প্রস গিয়ার এক খুণের ঘটনায় জড়িয়ে যায়। তারই এক মক্কেল খুন হয়। অথচ সে সময় গিয়ার ছিল আরেকজনের সাথে। সেই মেয়ে তার স্বামী ও নিজেকে রা করতে সাী হতে অস্বীকার করে। তারপর ঘটনা ঘটতে থাকে।
১৯. লাস্ট ট্যাঙ্গো ই প্যারিস (Last Tango in Paris)-এটি কাসিক হিসেবে মর্যাদা পাওয়া ছবি। ইতালির পরিচালক বার্নানদো বাতিলুচ্চির ছবি। মূল অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো। এ নিয়ে এতো বেশি লেখা হয়েছে যে নতুন করে কিছু বলার নেই। আমেরিকান মধ্য বয়স্ক ব্রান্ডো আর ফরাসী তরুনী মারিয়ার সম্পর্ক নিয়ে ছবি।
২০.দি গ্রাজুয়েট (The Graduate)-১৯৬৭ সালের এই ছবি অবশ্যই একটি ইরোটিক ছবি না। তারপরেও রাখা যায়। ডাস্টিন হফম্যানের সেরা ছবির একটি। পরিচালক মাইক নিকোলস। সদ্য গ্রাজুয়েট হওয়া হফম্যান একজন বয়স্ক রমনী মিসেস রবিনসনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়।
সেখান থেকে বের হয়ে আসে একদিন। তারপর প্রেমে পড়ে সুন্দরী আরেক রবিনসনের। ধাক্কা খায় তখনি জানতে পারে এই রবিনসন মিসেন রবিনসনেরই মেয়ে। ছবির শেষ দৃশ্য তো অসাধারণ। আর আছে সায়মন ও গারফুনকেলের বিখ্যাত গানগুলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।