আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত যে কারনে শর্ট লিস্টে নাই



কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত যে কারনে শর্ট লিস্টে নাই। [/sb খবর টা যখন পেলাম তখন কইলজাডার মধ্যে একটা মোচড় দিয়ে উঠছিলো। সুন্দরবন শর্ট লিস্টে আছে কিন্তু কক্সবাজার নাই। অবাক হলাম, বোবা হয়ে গেলাম। কেনো এমন হলো? অথচ জানেন? গতাকাল দুপুরেই এক অধ্যাপকের সাথে কথা বলতে গিয়ে কত গর্ব করেইনা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কথা বলেছিলাম, ইউটিউব থেকে তাকে ভিডিও ক্লিপও দেখিয়েছিলাম।

তাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর জন্য আমন্ত্রণও জানিয়ে ছিলাম। তিনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নামই শুনেন নাই। যখন ইউটিউবে দেখাচ্ছিলাম তখন তিনিও অবাক হলেন। বললেন এতবড় একটা সমুদ্র সৈকত অথচ আমার ছাত্ররা সেটার নাম জানবে তো দূরে থাক আমিও জানি না। তার পরে উনি জানতে চাইলেন ঐখানে যাওয়ার, থাকা খাওয়ার এবং নিরাপত্তার কি ব্যাবস্তা আছে।

বুঝেনই তো সাত পাঁচ করে বুঝ দিতে হয়েছে। উনি নিজেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তার ল্যাবের একটা মেয়ে তো বলেই ফেলছে আগামি ফেব্রুয়ারী তে সে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসবে। কারণ সে ভ্যাকেশানে কোন না কোন দেশে বেড়াতে যায়। আমার ল্যাবের মেয়েটা এ পর্যন্ত তিনটা দেশ ভ্রমণ করেছে আর এই মহুর্তে সে আছে হংকং-এ। কয়েক বছর আগে সে তাজমহল দেখে এসেছে।

অবাক হলাম, কত বড় মুখ করে বলে আসলাম আর রাতেই দেখি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সুপার ২৮ এ নাই। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। কারণ এতদিন ধরে তো লিস্টের প্রথমে-ই থাকতো। ভাবতে থাকলাম কেনো এমন হলো? যে যে বিষয়গুলো আমার বিবেচনায় এসেছে সে গুলো বলছি। আপনাদের ধারণাও শুনবো বলে আশা রাখছি।

১। প্রচারণার অভাব। উইকিপিডিয়া তে যেটুকু তথ্য আছে তা মোটেও সপ্তাশ্চর্য হওয়ার মত কিছু নয়। ২। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে দাবি করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ স্যান্ডি সমুদ্র সৈকত, কিন্তু এর পক্ষে কোন সাপোর্ট নেই।

৩। আমরা বিভিন্ন অয়েব সাইট ভিজিট করলেই বিভিন্ন ধরণের এড দেখতে পাই, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কে নিয়ে সে রকম কোন পদক্ষেপ এ যাবত কালে নেওয়া হয়েছে বলে আমার চোখে পড়ে নাই। ৪। মানুষ তাদের সামান্য কিছু দেখানোর মত থাকলেও সেটা সাজিয়ে গুছিয়ে বিদেশিদের/স্বদেশীদের সামনে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে। আর আমরা আমাদের এমন একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে মানুষের কাছে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করবো তো দূরে থাক, বরং বিশ্রি ভাবে উপস্থাপন করি, আর কাউকে বলিও না।

৫। গতকাল গিয়েছিলাম জল্লাদো এর একটা জুয়েলারী মিউজিয়াম-এ। রেলওয়ে স্টেশানে ও বাস টার্মিনালে বড় করে সাইনবোর্ড ঝুলানো আছে, “ট্যুরিস্ট ইনফরমেশান এন্ড গাইড সেন্টার। “ গেলাম সেখানে। অনেক ধরণের ম্যাপ দিয়ে, কখন কিভাবে, কোথায় কোথায় যেতে পারবো, সুন্দর ইংরেজিতে বুঝিয়ে দিলেন দায়িত্ত্বরত কর্মকর্তা।

ব্যাবহারে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। কোরিয়ানদের প্রত্যেকটা ট্যুরিস্ট স্পটে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত এবং স্বল্প খরচের যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। যায়গাটা খুব যে সুন্দর তা কিন্তু নয়, তবে খুব সুন্দর করে সাজানো গুছানো। আর তাই খুব ভলো লেগেছে জায়গাটা। আচ্ছা, আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কেউ বেড়াতে গেলে তাকে কতটা কষ্ট করতে হবে অনুমান করতে পারেন? ৬।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত যে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বালিময় সমুদ্র সৈকত, এ কথা কে বলেছে? আজ পর্যন্ত কেউ কি এই দাবির কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে পেরেছেন বা চেস্টা করেছেন? ৭। কক্সবাজার সম্পর্কে ইন্টারনেটে বা আন্তর্জাতিক ভাবে তেমন কোন তথ্য-উপাত্ত না থাকলে তবে জুরি বোর্ড কেনো সেটাকে সিলেক্ট করবে? ৮। আন্তর্জতিক অঙ্গনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরিচিত কেমন এবং পরিচিত করার চেস্টা কি কেউ কখনো করেছেন? ৯। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দো ২৮ এ আছে। গতরাতেও অনেক হিসাব মিলালাম।

সবচেয়ে বড় যে কারণ পেলাম, সেটা হচ্ছে অদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো অরা জেজুদো তে করে। পাবলিক পয়সা দিয়েই ঐখানে যায় কিন্তু অদের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দ্বীপটা দেখেও আসে। যদিও সেখানে দেখার মত অনেক কিছু আছে আর যাবতীয় সুব্যবস্থা আছে। আগামী নভেম্বরে আমারও পা পড়তে পারে জেজু দো তে। ১০।

গেলো কয়টা দিন ধরে টই টই করে কোরিয়ার বিভিন্ন সিটিতে ঘুরছি। বাস/ট্রেন থেকে নেমেই একটা ম্যাপ নেই। এর পরে হারানো বা ছিনতাই হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কোন সুযোগ নাই। জায়গামত ঠিকই গিয়ে পৌঁছি। কেনো এই আত্মসমালোচনাঃ শর্ট লিস্ট ২৮ থেকে ছিটকে পড়েছে আমাদের কক্স বাজার।

কিন্তু এটাই কি শেষ? সপ্তাশ্চর্যে না থাকলেও কোন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কাড়তে পারে না? আমাদের ঘুম কি এখনো ভাঙ্গবে না? আমরা কি পারি না আমাদের পর্যটন শিল্পটাকে আরো দায়িত্ত্বশীল ভুমিকায় দাড় করাতে? ঠিক মত প্রচারণা, যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, থাকা খাওয়ার সুব্যাবস্থা, সার্বিক নিরাপত্তা, সুন্দর ভাবে উপস্থাপন, দায়িত্ত্বশীল নজরদারী, পর্যটকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা, আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, সর্বোপরি যা যা করা দরকার তা যদি আমরা দ্বায়িত্ত্ব নিয়ে এবং আন্তরিকতার সহিত করি, তবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটক তথা বিশ্ববাসীর নজর কাড়বেই। আর পাশাপাশি আমাদের দেশের সুনাম যেমন বাড়বে তেমনি জাতীয় আয়ে এক বড় ভুমিকা পালন করবে। মাঝে মাঝে ভাবি এমন একটা সমুদ্র সৈকত যদি নব্য ভদ্রলোক দক্ষিণ কোরিয়ার থাকতো তবে এটা দিয়েই ওরা জাতীয় আয়ের অনেকটা করে নিতো। লেখাটির লিংক-http://www.amarblog.com/Geducacha/71081

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।