আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন হেনা মল্লিক ও ছবি রানী



গতকাল পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা নিউজে আমার চোখ আটকে গেল। নিউজটা পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। মনের মাঝে একটা প্রশ্ন বারবার আমাকে দংশন করতে লাগলো যে আমরা এ কোন যুগে বাস করছি? আইয়ামে জাহেলিয়া? মানুষ কিভাবে এতটা বর্বর হতে পারে? নিউজটা আমি হুবহু আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম..... "নূর মোহাম্মদ মল্লিককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গরু বাঁধার দড়ি দিয়ে প্রকাশ্য রাস্তার ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এক দল টানছিল অন্য দল পেটাচ্ছিল। শিশু সোহাগ ও সাজ্জাদকে নিয়ে স্বামীর প্রাণভিক্ষার জন্য পিছু পিছু ছুটছেন হেনা মলি্লক।

ক্যাডারদের হাতে-পায়ে ধরে সব সম্পদের বিনিময়ে স্বামীকে বাঁচানোর আর্তি জানিয়ে চলেছেন তিনি। কিন্তু হেনার আর্তিতে মন গলেনি সন্ত্রাসীদের। মৃত্যুর আগে পানি খেতে চেয়েছিলেন নূর মোহাম্মদ। পানির বদলে ক্যাডাররা প্রস্রাব করে দেয় তাঁর মুখে। ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত দেহে স্ত্রী-সন্তানদের সামনেই মারা যান তিনি।

এতেও ক্ষান্ত হয়নি সন্ত্রাসীরা। তারা একপর্যায়ে হেনাকেও বিবস্ত্র করে ফেলে। ... এর পর আর বলতে পারেননি নিহত নূর মোহাম্মদের স্ত্রী। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর সহিংসতার শিকার হেনা মল্লিক গতকাল শুক্রবার বাগেরহাট সার্কিট হাউসে সেদিনের শিশু-কিশোর আজকের তরুণ দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন জবানবন্দি দিতে।

২০০১ সালের নির্বাচনের ছয় দিন পর ৭ অক্টোবর তাঁর স্বামী নূর মোহাম্মদকে হত্যা করা হয়। পুলিশ প্রথমে মামলাটি নিতে রাজি হয়নি। নির্যাতিত পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে রামপাল থানায় মামলা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সে সময়ের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক থানার সামনেই জামায়াত-বিএনপি ক্যাডারদের হামলায় লাঞ্ছিত হন। অবশেষে বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে তবে মামলা হয়। যা আজও বিচারাধীন।

আর এক আওয়ামী লীগ নেত্রী ছবি রানী তাঁর ওপর পৈশাচিক বর্বরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে শুরুতেই কান্না জুড়ে দেন। নির্যাতনের সময় জামায়াত-বিএনপি ক্যাডারদের তোলা ছবি (যা পরে পুলিশ উদ্ধার করে) ও নিজের সারা শরীরে ক্ষতের চিহ্ন দেখিয়ে সাত বছর পরেও তিনি কেবলই কাঁদতে থাকেন। বাড়ি ফেরার পথে প্রকাশ্যে বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁকে স্থানীয় বিএনপি অফিসে ধরে নিয়ে বিবস্ত্র করে মাথার চুল কেটে দিয়ে গোপনাঙ্গে লাঠি-বালি-মাটি ঢুকিয়ে দিয়ে উল্লাস আর ছবি তুলতে থাকে। একপর্যায়ে মৃত ভেবে রাস্তার ওপর তাঁকে ফেলে দিলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ২০০২ সালের ২১ আগস্টের এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা আজও চলছে।

আসামিদের প্রায় সবাই এখন জামিনে। তাদের হম্বিতম্বির মুখে নির্যাতিত ছবি রানী আজও শঙ্কিত। আর কোমরপুরের ঠাকুরবাড়ির অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতার শিকার স্বামীহারা-সম্ভ্রমহারা অনিমা ভট্টাচার্য আজও ঠিক করে কথা বলতে পারেন না। তাঁকে একটি চাকরি দেওয়ার কথা সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বললেও সাত বছর পর আজও তা হয়নি। নিদারুণ কষ্টে পঙ্গু পিতাকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

অনিমা বাগেরহাট সার্কিট হাউসে জবানবন্দি দিতে আসা শত শত মানুষের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিলেন, তাদের কথা শুনছিলেন। নিজের কোনো কথা বলতে পারেননি। মোরেলগঞ্জের বৃদ্ধ কাঠমিস্ত্রি রতিকান্তকে ওই নির্বাচনের পরদিন প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়ে হত্যার পর লাশের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করে জামায়াত-বিএনপির জয়ধ্বনি দিয়েছিল ক্যাডাররা। সে কথা বলতে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপি বলে ওঠেন, সে ঘটনার বর্ণনা করা যায় না। তিনি নিজে সংবাদ সম্মেলনে বর্বর হামলার শিকার হন।

যেখানে সাত সাংবাদিক ও পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতাও জখম হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সংঘটিত সহিংস ঘটনাগুলোর সরেজমিনে তদন্তে সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন নির্যাতিতদের জবানবন্দি শুক্রবার নিতে বাগেরহাট সার্কিট হাউসে আসেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এ সময় কমিশনের অপর দুই সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন এবং মীর শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও বাগেরহাট সদর আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা ও বাগেরহাট-৩ আসনের এমপি তালুকদার হাবিবুন নাহার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান খানসহ নির্যাতিত শত শত মানুষ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাগেরহাটের সেই ভয়াবহ নির্যাতনের কাহিনী সে সময় দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়। " হয়তো বা নিউজ টা আপনারা অনেকেই পড়ে থাকবেন। তাই রিপিটেশনের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.