বিছানায় এপাশ ওপাশ করেই রাতটা কেটে গেলো। কখনই এমন হয়নি সুমির, আজ ই প্রথম।
গতকাল মাহবুব এর সাথে ভিশন ঝামেলা হয়েছে সুমির। মানসিক ভাবে সুমি ভেঙ্গে পড়েছে। কি হলো গতকাল,'মাহবুব আমার গায়ে হাত তুলল' সুমি বার বার বিড়বিড় করে একই কথা বলছে।
পাবলিক লাইব্রেরিতে এত গুলো লোকের সামনে, মাহবুব সুমিকে চড় মেরেছে। কি এমন করেছিলো সুমি! ভার্সিটিতে জুনিওর কয়েকটা মেয়ে মাহবুব এর সাথে মজা করেছে। সুমির মনে হয়েছে মাহবুব তাদের প্রশ্রয় দিয়েছে। মাহবুবকে এ কথাটা বলতেই ক্ষেপে গিয়ে এত গুলো লোকের সামনে....উহ। আর মনে করতে ভাল লাগছে না ।
এসব বেপারে তো মাহবুবের সাথে সুমি প্রায়ই মজা করে। কই, কখনই তো এভাবে সে রি-অ্যাক্ট করেনা। কিন্তু কাল কেন মাহবুব এমন করলো? প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না সুমি। মোবাইলটা বন্ধ করে রেখেছে কাল থেকে। যদিও ঝগড়ার বিষয়টা নতুন কিন্তু এমন ঝগড়া তো প্রায়ই হয় ওদের।
আর মোবাইলও সাথে সাথে বন্ধ থাকে।
ঘড়িতে এলার্ম বাজতে শুরু করেছে। ৭:৩০ বাজে। মানে বিছানা ছাড়তে হবে। তৈরি হয়ে অফিসে যেতে হবে।
জীবনটা খুব ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে সুমির। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর হতে চলেছে চাকরির বয়স। অফিস, পড়াশুনা, ভার্সিটি সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে সুমি। বাবা মাও মাহবুবের বেপারটা জানতে পেরে ঝামেলা শুরু করেছে। চলা ফেরায় দিয়ে দেয়া হয়েছে সীমানা।
তার মাঝে মাহবুব এর এই ব্যাবহারে জীবনটা যেন বিষিয়ে উঠেছে সুমির।
প্রস্তুতি শেষ। এবার বাসা থেকে বের হবার পালা।
অফিসের কাছাকাছি চলে এসেছে সুমি। হঠাৎ মনে হল কে যেন পেছন থেকে ডাকছে।
পেছন ফিরে তাকিয়ে খুজলো। নাঃ কাউকে দেখা গেল ন। আবার এক পা সামনে এগুতেই পেছন থেকে কে যেন দৌড়ে এল। কি ব্যাপার,কথা শোনা যাচ্ছে না? সুমি অবাক হয়ে দেখলো, মাহবুব।
সুমি : তুমি এখানে কেন?
মাহবুব: ফোন বন্ধ কেন?
সুমি: কি চাও?
মাহবুব: তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবা?
সুমি : কেন, কি করেছি?
মাহবুব: জানোনা কি করেছ? কাল থেকে মোবাইল বন্ধ।
তুমি জান না আমি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না।
সুমি: ঢং করবা না। এখান থেকে দূর হও।
মাহবুব: ও তুমি নিশ্চই অন্য ছেলের প্রেমে পড়ছ, এই জন্যই আমাকে অ্যাভোয়েড করছ।
সুমি : ফালতু কথা না বলে এখান থেকে যাও।
মাহবুব: যাব না।
আজ আমি তোমার অফিসে যাব। সবাইকে তোমার প্রেমের কথা বলে দেব। তোমার বাসায় যাব। আমার হাত থেকে তোমার মুক্তি নেই।
তোমার বাবা,মা সবাইকে বলব, এত দিন আমার সাথে প্রেম করে এখন আমার সাথে বেঈমানী।
সুমি : যা ইচ্ছা কর।
ঝগড়া হলেই মাহবুব এভাবে সুমিকে থ্রেট করে। এটা সুমির মুখাস্ত।
তবে মাঝে মাঝে বাংলা ছবির ডায়ালগ গুলো মাহবুবের মুখ থাকে শুনতে সুমির ভালোই লাগে।
এই যেমন মাহবুব রেগে গেলে প্রায়ই বলে অন্য কোন ছেলের কাছে চলে যাবা,এক দম খুন করে ফেলবো অথবা আমি তোমাকে না পেলে আর কেউ পাবে না। এসব শুনলে সুমি মাঝে মাঝে ঝগড়ার মাঝেও হেসে দেয়। তখন মাহবুব আরও ক্ষেপে যায়, আর আরও ডায়ালগবাজি করতে থাকে।
মাহবুব: দ্যাখ, ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
সুমি আজও মুচকি হাসছে।
যদিও এ হাসিটাতে কেমন যেন কষ্ট আর রাগ লুকানো।
সুমিরও অনেক রাগ। ভিষণ ক্ষেপাটে টাইপ মেয়।
মাহবুবের নিজের দোষটা কখনোও স্বীকার করতে চায় না। আবার রাগ করে বসেও থাকে না।
প্রানান্তর চেষ্টা সুমির রাগ ভান্ঙানোর। সুমিও একটা সময় আর রাগ ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু আজ কোন ভাবেই সুমির রাগটা ভাঙ্গছে না।
মাহবুব বলেই যাচ্ছে,তুমি কেন আমার চরিত্র নিয়ে কথা বললা। জাননা স্বামীর চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলতে নেই।
সুমি: আবার ফাজলামি করছো? তুমি আমার কোন জনমের স্বামী? তোমার মত একটা ছেলের সাথে প্রেম করে আমি ভুল করছি। আর না। তুমি যাও এখান থেকে।
মাহবুব: ওওওওওও তার মানে সত্যিই তুমি নতুন কারও সাথে প্রেম করছো।
আচ্ছা যাও মাফ করে দিলাম।
এখন ফোনটা খোল। আর কখনোও আমার চরিত্র নিয়ে কথা বোলবা না। আমার মাথা ঠিক থাকে না। তুমি কখনোও দেখেছ কোন মেয়ের দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাতে। এমন ভাবে ও কথা বলছে ওর যেন কোন দোষই নেই কিছুটা থাকলেও সেটা পুরোটাই সুমির।
এ চরিত্রটাও সুমির একেবারেই পরিচিত। ঝগড়া লাগলে সব সময়ই মাহবুব এমন করে।
ততক্ষনে সুমির চোখের কোনে এক বিন্দু জল জমা হয়েছে। সেটা আবার মাহবুবের চোখে পড়ে গেল।
আরে আরে পড়ে গেল তো, আরে গেল গেল, প্লিজ ধর।
সুমি চমকে উঠে বলল কি পড়ে গেল
ঐ যে চোখের পানিটা, বলেই মাহবুব হেসে দিল।
সুমি মনে মনে ভাবছে চড় মারার ঘটনাটা আমার জীবনে অনেক বড় একটা কষ্ট আর অপমান হয়েই হয়ত সারা জীবন পোড়াত। শুধু আমার কাছে না যে কেউ শুনলেই হয়ত বলবে কেন তোমার সাথে এখনও সম্পর্কটা রেখেছি। কিন্তু তোমার ঐ বাংলা ছবির ডায়ালগ গুলোর কাছে এই কষ্টটা এক দমই পাত্তা পায় না, এটা হয়ত বাইরে থেকে কেউই বুঝতে পারবেনা।
কারন তোমার বাংলা ছবির ডায়ালগ গুলো শুনলে মনে হয় না তুমি মিথ্যে বলছ বরং মনে হয় এ পৃথীবিতে আমাকে অনেক অনেক ভালবাসার মত একজন মানুষ আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।