আমি কইলাম মরিনাই; বুকের আগুনও নেভে নাই, কসম ক্ষুধিরামের। খালি কয়দিন ধইরা কর্পোরেট ভন্ডামিতে ডুইবা আছি আপাদমস্তক! কমরেড, মিছিল আইলে একটা টোকা দিয়া যাইয়েন।
হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত হলো বাইরে যাবো। সাধারণত আমার বাইরে যাওয়া মানেই সমুদ্র গমন, কিন্তু এবার মত পাল্টালাম, পাহাড় দেখা হয়না অনেকদিন। তো বরাবরের মতই ছোটভাই/ফ্রেন্ড/এসিসটেন্ট বাকি'র ওপর দায়িত্ব পরল বাসের টিকেট, হোটেল আর আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যাপার গুলোর জোগাড়যন্ত্র করার।
বাইরে যাবার আগে অবশ্য আমি গুগল মামার দোকানে ঢু মেরে নেই খানিকটা, চেষ্টা করি ফাটাফাটি কিছু ছবি জোগাড় করার। নিজেকে ওয়ার্মআপ করার প্রয়াস আর কি। গুগলে বান্দরবানের ছবি দেইখা মনে হলো ঐ মুহুর্তেই দৌড় দেই।
খোঁজ নিয়া বাকি জানালো এস.আলমের বাস নাই, যাইতে হবে অন্যকিছুতে কৈরা। তাও সই, যাওয়া তো হোক।
রাত ১১টার সময় কলাবাগানের মোড়ে আমি, বাকি আর তার সাথে আরেকজন কলিগ এসে উপস্থিত। "মরা" সুমন সব সময়েই দেরি করে, বেটারে বার কয়েক ফোন দিয়া একই কথা শুনি, এইতো পাশের মোড়েই আটকায়া আছি, জ্যাম ছুটলে ১ মিনিটও লাগবোনা। জ্যাম ছোটার পরেও ১৫ মিনিট কাটাইয়া মরার ১ মিনিট শেষ হৈলো। এক দৌড়ে বাসে উঠলাম।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বান্দরবান শহরের বাঁকে আইসা বাসের ব্রেক ফেল হয়, ভাগ্য এইবারো ভাল, বাসের মুখ পাহাড়ের দিকে ছিল।
সবার মতন আমরাও নাইমা পরলাম বাস থিকা। লোকজন কৈলো ৫ মিনিট হাটলেই বাজার পরবো সামনে, কিন্তু হালার স্কুটার অলায় চাইলো ৮০ টাকা। গাট্টি বোচকা মাথায় নিয়া হাঁটা শুরু করলাম।
মাঝ পথে সেলিম নামের এক রিকশাওলা বহুত হ্যানত্যান ভালবাসার কথা শুনাইতে শুনাইতে হাঁটা শুরু করলো। বাকির এক পরিচিত মানুষ ছিল বান্দরবানে, মোটামুটি মানের একটা গেষ্ট হাউজ ম্যানেজ করে দিলেন উনি।
খাওয়াদাওয়া শেষ কৈরা গায়ে একটু পানি ঢেলেই সোজা বিছানায়।
বাকির কাকা বলে দিয়েছিল দুপুরে খাওয়ার আগে তার সাথে দেখা করতে। শুধু শুধু তাকে বিরক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেরাই হোটেল খুঁজতে বের হই। সাথে আবার জুটে যায় সকালের সেই সেলিম রিকশাওয়ালা। খাওয়ার পর শঙ্খ নদী দেখার জন্য সেলিমের পিছু পিছু নদী ঘাঁটে গেলাম।
দাম দস্তুর করে উঠে পরি নৌকোয়। হালকা বাতাস, দু পারে পাহাড়ের সাড়ি, নদী যেন হাতে আঁকা। সেই অবিশ্বাস্য পাহাড়ী সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার অন্তত আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
মাঝি আর সেলিমের টুকটাক কথোপকথন শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে তন্দ্রার মত লেগে আসছিল, হঠাৎ ঠিক করলাম পাহাড়ী মদ খাবো, হাতে বানানো ভয়ংকর তরল। যারা না খেয়েছে তাদের কাছে এর গল্প করার কোন মানে নেই!!
প্রকৃতির অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের ভেতর নদী ভেঙ্গে ভেঙ্গে নৌকো এগোচ্ছে, দূরের অস্পষ্ট পাহাড়ের নীলাভ ছায়া আর দু পাশের ঘন সবুজ তামাক ক্ষেতের এলোমেলো নাচ দেখতে দেখতে থামলাম মগ পাড়ায় কাছে।
পাহাড়ের বাঁক ধরে খানিক হেঁটে পৌঁছে গেলাম শান্ত স্থির মগ পাড়ায়। মাঝি আর সেলিমের আয়োজনে সাথে সাথেই চলে এলো সেই আগুন পানীয়। জীবনে অনেকবারই ড্রিংক করেছি, কিন্তু সত্যিকারের বিদঘুটে গন্ধময় আগুন গেলার অভিজ্ঞতা সেই প্রথম।
মাতাল হইনি, তবে প্রতিটা ঢেকুর ওঠার সময় পচে যাওয়া চালের গন্ধে পুরো বান্দরবান জেলা যে কেঁপে কেঁপে উঠছিল সেটা টের পেতে সমস্যা হয়নি মোটেই।
সেলিমের আসল চেহারা টের পাই ফেরার পথে।
আমাদের বারবার করে স্মার্ট বান্ধবীর লোভ দেখাচ্ছিল। আমরা চাইলেই সেই অপার্থিব তরুনিদের সঙ্গ বগালেক পর্যন্ত পেতে পারি আর তাদের কমনীয়তার বর্ণনা শুনলে বেহেশতের হুর পরিরা পর্যন্ত শরম পাবে।
কোনমতে আবার নদীঘাটে ফিরলাম। সেল ফোনে নেটওয়ার্ক পেতেই ফোন আসলো, আরো ২ জন কলিগ রেস্ট হাউজে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
রাতের খাবার খেতে গিয়ে সবাই সাবধান, শুনে এসেছি এখানকার মানুষ চলতে ফিরতে পারে এমন সবকিছুকেই খাবার বলে মনে করে।
গরুর মাংস নেইনি ভয়ে, নিছক আলু ভর্তা ডাল আর ভাত দিয়ে অভক্তি করে খেলাম।
চাঁদের আলো যেন চরাচর গ্রাস করে ফেলবে, নতুন ব্রীজের ওপর দাঁড়িয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম চাদের আলোয় একেবেকে চলা শঙ্খ নদীর রূপ। গেষ্টহাউজে ফিরতে ইচ্ছে করছিল না। তবু ফিরতে হলো, কাল খুব ভোরে উঠেই রওনা হতে হবে বগালেকের উদ্দেশ্যে....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।