~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
অনেকদিন পর আজকে আবদুল্লার কথা মনে হয়ে গেল। রাজশাহীতে অনার্সে ভর্তি হয়ে যে কয়টা ছেলে মেয়ের সাথে আমার প্রথম বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, আবদুল্লাহ তাদের মধ্যে অন্যতম। আকার আকৃতি ছোট খাটো, কথা কম বলে, মুচকি হাসি ছাড়া কথা বলতে পারেনা, শান্তশিষ্ট (অবস্যই লেজ আছে, না হলে আমার বন্ধু হয় কেম্নে ) ছেলেটা কেমন করে যেন আমাদের বান্দর গ্রুপে ঢুকে পরে। এক সময় আমি ওর রুমেই গেষ্ট হয়ে উঠি, সেই সুবাদে ওকে নিয়ে প্রচুর মজা করা হতো প্রতিদিন। নমুনা শুনবেন?
** সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজেদের টুথপেষ্ট থাকা সত্বেও আমরা ওর টুথপেষ্ট ব্যবহার করবো, মাঝে মাঝে সে টুথপেষ্ট লুকিয়ে রাখতো, আমরা খুঁজে বের করতাম
** গোসল করতে পুকুরে যাবার সময় ওর সাবান, শ্যাম্পো, মাঝে মাঝে ওর টাওয়েলটাও নিয়ে যেতাম
** আমাদের গ্রুপের কেউ ওকে টয়লেটে পেলে সাথে সাথে বাহির থেকে ছিটকিনি আটকে দিতো আমাদের ভয়ে ও মাঝ রাতে উঠে প্রাতকর্ম সেরে নিতো
** ক্লাসে যাবার আগে যদি দেখতাম আবদুল্লাহ নতুন কোন শার্ট বের করেছে, তাহলে সেটা আমি না হয় ফারুক গায়ে দিয়ে যাব প্রথমবার
** দুপুরে খাবার সময় মাঝে মাঝে আবদুল্লার তরকারীর বাটিতে হামলা চালানোটা খুব স্বাভাবিক ছিল
** বিকেলে আমরা ঘুরতে বের হয়ে রাত করে ঘরে ফিরে দেখবো আবদুল্লাহ পড়ার টেবিলে, কাজেই ওকে চেয়ারের সাথে গামছা দিয়ে বেঁধে না রাখলে আমাদের শান্তি হোত না
** আবদুল্লাহর ছোট্ট খাটে কোন ভাবেই দুই জনের যায়গা হোত না, কিন্তু সে শোওয়া মাত্র ফারুক ওকে ঠেলে ঠুলে ওই খাটে শুয়ে পরতো, যদিও ফারুকের ডাবল বেড ফাকাই থাকতো
** একদিন আমি দোকান থেকে হেটে আসছি হলে, দেখলাম আবদুল্লাহ দোকানে যাচ্ছে, দিলাম ওকে এক ঝাড়ী "ওই ব্যাটা চাপাই, রাস্তা থিকা সর"।
ঝাড়ী খেয়ে আবদুল্লাহ রাস্তা থেকে ঘাসের উপর নেমে গেলো
** ক্লাসে রোল কলের সময় ওর মুখ পেছন থেকে চেঁপে ধরে রাখায় অনেকদিন সে প্রেজেন্ট দিতে পারেনি
** ক্লাসে স্যার যদি বলতেন যে ওটা কে পারো বল, আর কেউ হাত না তুললেও আবদুল্লার হাত তার ইচ্ছা অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করেই তুলে ধরা হোত
** অনেকবার ওকে পুকুরে চুবানো হয়েছে কয়েকবার সার্ট প্যান্ট জুতা পরা অবস্থাতেই
** আবদুল্লাহ মাসে ২/১ দিন ওর নিজের বাই সাইকেলটা চালানোর সুযোগ পেত
** আমার বা ফারুকের কাছে টাকা না থাকলেই আমরা আবদুল্লাহর নামে বাকি করে সিগারেট কিনে আনতাম
** কোন মেয়ে আবদুল্লার সাথে কথা বললেই ওকে ধরে নিয়ে যাওয়া হোত দোকানে
** আবদুল্লাহ সিগারেট খেতে পারতোনা দেখে ওকে দিয়ে জোর করে সিগারেট খাওয়ানো ও ধোঁয়া গিলতে বাধ্য করা হোত
** কয়েকবার ওকে ওর খাট সহ গভীর রাতে মাঠের মধ্যে রেখে আসা হয়েছিল
আরও অনেক অনেক কাহিনী আছে ওকে নিয়ে ... বলে শেষ করা যাবেনা বছর খানেক এভাবে ওকে জ্বালানোর পর আমি আর ফারুক দোতলায় আলাদা রুমে চলে গেলাম। তখন ঘটেছিলো আরেক মজার ঘটনা। এক বছরে আমাদের সাথে থেকে থেকে আবদুল্লাহর অভ্যাস হয়ে গেছিলো এসবে। আমরা চলে যেতেই ওকে জ্বালানোর কেউ ছিলনা, সে জন্য ওর ভাল লাগতোনা একা একা, তাই সে আমাদের খোঁচাতো, আমরা কিছু একটা না করা পর্যন্ত সে পড়তে বসতে বা ঘুমাতে পারতোনা
আবদুল্লাহ এখন কোথায় আছে, কেমন আছে যানিনা। বিয়ে সাদি করে সংসারী হয়েছে নিশ্চই এতদিনে।
যেখানেই থাকুক, ভাল থাকুক ছেলেটা। আল্লাহ ওকে অনেক ভাল রাখুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।