বর্ষা সাজানো
মিশুর মেয়েটা লাফঝাঁপ করে ফাটিয়ে দিয়েছিলো
বালিশ, পেট,
পেট আর তুলো বের হয়ে মেয়েটির সাথে খেলতে পেরেছিলো,
এই খেলতে পারাগুলোকে
সাজিয়ে রাখতে পেরেছিলাম একটা সময় পর্যন্ত।
মিশু, তুমি যে ধমক দিয়েছিলো মেয়েটিকে;
এই ধমকগুলোকেও সাজিয়ে রেখেছিলাম...
ভয় পেয়ে মেয়েটি যে কান্নাকাটি করেছিলো;
এই কান্নাকাটিগুলোকেও...
মন খারাপ করে মা-মেয়ে যে না খেয়ে থেকেছো সারারাত;
এই সারারাত না খেয়ে থাকাগুলোকেও
এই সারারাত মন খারাপ করে থাকাগুলোকেও
সাজিয়ে রাখতে পেরেছিলাম একটা সময় পর্যন্ত।
জানালা দরোজা দিয়ে যে-যেখান দিয়ে যে-যেমন পেরেছে
তুলোগুলো হুটোপুটি করে পালিয়ে গিয়েছিলো;
এই পালিয়ে যাওয়া হুটোপুটিগুলোকেও...
তুলোগুলো সারা আকাশ উড়ে উড়ে যে ফোঁটা ফোঁটা মধু জড়ো
করেছিলো, আর মধু জড়ো করাগুলোকেও সাজিয়ে রাখতে
পেরেছিলাম একটা সময় পর্যন্ত।
সারা আকাশ জুড়ে একজোট হওয়া এইসব সাজানোগুলো হুড়মুড়
করে ভেঙে পড়লো চুরচুর হয়ে ঝরতে লাগলো মিশু আর মা-মনির
ছাদে, কার্ণিশে আর খোলা থাকা জানালার হাত ধরে বিছানার
উপর বেশ কয়েক ছাট;
এইসব সাজানো, এই ছাট সাজানোগুলোকে
মিশু, তুমি বর্ষা সাজানো বলতে পারো না।
শাদা বকগুলো এ পাড়া সে পাড়া ক’রে পেট বাঁধিয়েছিলো,
এ কথা নিয়ে বেশ কানাঘোষা করছিলো বাতাস ও অন্যান্যরা;
কানাঘোষাগুলোকেও সাজিয়ে রেখেছিলাম...
কানাঘোষাগুলো হাততালি দিলো, হই হই ক’রে উঠলো যখন
বকগুলো কেঁদেকেটে নাকের জল চোখের জল ফেলে বিইয়ে দিলো
শাদা শাদা বরফ দানা;
এই নাকের জল চোখে জল ফেলে বিইয়ে দেয়াকে
বর্ষা সাজানো বলবি শাদা বক ?
শ্যামলী শিশুমেলার পাশে বাঘ রঙে মোড়ানো পলিথিন মোড়ানো
ফুটপাথে পড়েটড়ে ছিলো মাথা মোড়ানো, হাড়গোড়-চামড়া মোড়ানো,
ছেঁড়া ময়লা মোড়ানো, বৃষ্টির রাত মোড়ানো,
শুধু পা দুটো ভাঁজ করা, বার হয়ে ছিলো;
এই বের হওয়া পা গুলোও সাজিয়ে রেখেছিলাম...
তবুও তো পা গুলো হাঁটতে হাঁটতে হাজির হয়েছিলো ডোমের বাড়ি,
ডোমের বাড়ি শুয়ে-বসে থেকে পা গুলো ফ্যাকাশে ও শাদা শাদা হ’য়ে
গিয়েছিলো;
এই ফ্যাকাশে আর শাদা-শাদা-হওয়া সাজানোগুলোকে ব্যাটা পা তুই,
ব্যাটা তোরা বর্ষা সাজানো বলবি ?
তোমরা তো বৃষ্টিকে খুব কাছ থেকে চেনো,
একসাথে ই¯কুল কলেজে পড়েছো
এক সাথে জলে কাদায় খেলেছো
কোথাও আটকে পড়েছো ঘন্টার পর ঘন্টা, গাড়ি রিকশা পাওনি,
রাস্তায় কোথাও একটা গাছ উপড়ে পড়ে আছে,
খেয়া, সাঁতার, তোড় ভেসে গ্যাছে,
ভিজতে ভিজতে হাঁটুজল কোমরজল বাড়ি ফিরেছো;
বাড়ি ফিরে দ্যাখো বন্ধুরা সব ২৯ তাস-পাশার বাড়ি,
খেজুর মাদুর বিছিয়ে ঝালমুড়ি চিবোতে চিবোতে লর্ডসের মাঠে
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ম্যাচ
পুনঃপ্রচার দেখতে মুড়িঝাল চিবোতে বসে গ্যাছো, হাততালি মারো!
মারো হাততালি, আরো হাততালি, আরো হাততালি...
এই হাততালি মারা হাতই পারে বর্ষা সাজাতে,
দাদা গো দিদি গো, আমার দিয়ে নয় এই কম্মটি, এই বর্ষা সাজানো!
যুবকের বাঁশি
ডালিম ফুলে যখন বৃষ্টিরা পড়ছে
পাহাড় চূড়োয় বৃষ্টি পড়ছে যখন
বৃষ্টি পড়ছে তখন তোমার উঠোনে
ব্যাঙেরা তখন নামে তোমার উঠোনে
পাহাড় থেকে নামছে তোমার উঠোনে
সাগর ধেয়ে নামছে রাখাল যুবক
যুবকের বাঁশি ওড়ে বৃষ্টির ভেতর
পাখিদের নীড়ে নীড়ে বৃষ্টি জেগে থাকে
বৃষ্টি নামলেই ঘুড়ি তোমার উঠোন
বৃষ্টি নামলেই তবে পাহাড়ের চূড়ো
পাহাড়ের চূড়ো চলে জলকে তখন
ব্যাঙের পিঠে লাফায় সুখি সুখি রাত
প্রেয়সীর স্তনগুলো রাত জেগে থাকে
শৈশব সাঁতার কাটে মাছেদের পিঠে
দুপুরের পিঠে আজ পড়ছে চাবুক
বৃষ্টিকে একাকী পেয়ে ফোঁপাচ্ছে সাগর
কষ্টেরা বুনছে তাঁত নিরালা বৃষ্টিতে
রাতের পাতায় সিঁড়ি উঠছে স্বপ্নেরা
০৯.০৫.২০০৯, ঢাকা।
স্নান
মেঘের উপর এক দীঘি জল
দীঘির উপর আকাশ উচ্ছ্বল
আকাশের নিচে উড়িতেছে রৌদ্র
মধ্যভাগে এর পাখিরাই ক্ষুদ্র
পাখিরা উড়ছে পাখিরা ডাকছে
দীঘির জলে রূপসীরা নামছে
দীঘির উপর আকাশ উচ্ছ্বল
মেঘের উপর এক দীঘি জল
রূপসীরা আছিলো পাশের ফ্যাটে
সুনামও ছিলো তাহার তল্লাটে
দীঘি জলে আজ যখন মেয়েরা
নায়ছে খেলছেÑ গড়াচ্ছে জলেরা
গড়াচ্ছে জলেরা নামছে জলেরা
গাছে-ছাদে নাচ্ছে বৃষ্টির ফোঁটারা
নায়ছে খেলছে গড়াচ্ছে মেয়েরা
নাচ্ছে গাছে-ছাদে বৃষ্টির ফোঁটারা
মেয়েরা যখন ভাসছে দীঘিতে
বৃষ্টিরা বইছে মাঠ ও নদীতে
মেঘেতে বইছে যবে রূপসীরা
সারা অঙ্গে মোর বাদলের ধারা
সারা অঙ্গে মোর বাদলের ধারা
মেঘেতে নায়ছে তবে রূপসীরা
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।