অকাট মূর্খ যাকে বলে আমি তাই। সুতরাং জ্ঞানীরা বেশি জ্ঞান দিলে আমি চাইয়া চাইয়া দেখা ছাড়া কিচ্ছু করতে পারিনা। পোড়া কপাল!!
যারা চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্র সমালোচনা বিষয়ে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য অসাধারন এক বই হতে পারে সত্যজিৎ রায়ের, বিষয়ঃ চলচ্চিত্র বইটি। আসুন এক নজরে জেনে নেয়া যাক বইটি সম্পর্কে আদ্যোপান্ত।
বইটিতে আলোচ্য বিষয়সমূহঃ
১. চলচ্চিত্রের ভাষাঃ সেকাল ও একাল।
২. সোভিয়েত চলচ্চিত্র।
৩. অতীতের বাংলা ছবি।
৪. বাংলা চলচ্চিত্রের আর্টের দিক।
৫. চলচ্চিত্র- রচনাঃ আঙ্গিক, ভাষা ও ভঙ্গি।
৬. ডিটেল সম্পর্কে দু'চার কথা।
৭. চলচ্চিত্রের সংলাপ প্রসঙ্গে।
৮. আবহসঙ্গীত প্রসঙ্গে।
৯. দু'টি সমস্যা
১০. পরিচালকের দৃষ্টিতে সমালোচক।
১১. অপুর সংসার প্রসঙ্গে।
১২. চারুলতা প্রসঙ্গে।
১৩. ওরফে ইন্দির ঠাকুরণ।
১৪. দুই চরত্র।
১৫. একথা সেকথা।
১৬. রঙ্গীন ছবি।
১৭. বিনোদ-দা।
১৮. শতাব্দীর সিকি ভাগ।
বইটির ভুমিকায় লেখক সত্যজিৎ রায় বলেছেনঃ
"এই সংকলনে সন্নিবিষ্ট আঠারোটি প্রবন্ধের মধ্যে কেবলমাত্র দু'টিকে স্বতঃপ্রবৃত্ত রচনা বলা চলে। দুটিই আমার ছবির বিরুদ্ধ-সমালোচনার প্রতিবাদে লেখা। অবশিষ্ট রচনাগুলির অধিকাংশই 'দেশ'-পত্রিকার বাৎসরিক উপরোধের পরিণাম।
স্বভাবতই এইসব ইতিস্ততঃ রচনা থেকে চলচ্চিত্রশিল্প সম্বন্ধে, বা চলচ্চিত্রশিল্পী হিসেবে আমার দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে বিশদ ধারনালাভ সম্ভব নয়।
সাহিত্য নাটক চিত্রকলা সঙ্গীত ইত্যাদির প্রভাব সত্ত্বেও যে চলচ্চিত্র নিজস্ব বৈশিষ্টে ভাস্বর, এবং এই শিল্পের গুনাগুন বিচারে যে এক বিশেষ ধরনের সমঝদারির প্রয়োজন, এই দু'টি মূল ধারণা এই লেখাগুলির সাহায্যে পাঠকমনে সঞ্চারিত হলেই মনে করব এই সংকলন অনেকাংশে সার্থক।
সংকলনের পরিকল্পনা প্রকাশকের। রচনাগুলি একত্র করার দায়িত্বও তাঁরাই বহন করেছেন। সুতরাং ধন্যবাদের সবটুকুই তাদের প্রাপ্য। "
- সত্যজিৎ রায়।
ছোট একটু আলোচনাঃ
সত্যজিৎ, চলচ্চিত্রের ভাষাঃ সেকাল ও একাল; লেখায় চলচ্চিত্রের সেই সাইলেন্ট বা নির্বাক যুগ থেকে শুরু করে বিশ্বচলচ্চিত্রের গঠন এবং এতে পরিচালকদের ভূমিকা সহ চলচ্চিত্রের খুঁটি নাটি তুলে ধরেছেন।
সোভিয়েত চলচ্চিত্র; লেখায় তুলে ধরেছেন তৎকালীন সময় পর্যন্ত সোভিয়েত রাশিয়ার চলচ্চিত্রের গুনগত দিক, এর নির্মাতাদের অবদান সহ নানা বিষয়ের বিশেষ করে বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব।
অতীতের বাংলা ছবি; লেখায় তিনি বাংলা চলচ্চিত্র শুরুর দিক থেকে তৎকালীন সময় পর্যন্ত ব্যবচ্ছেদ করেছেন এবং নানা দিক তুলে ধরেছেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের আর্টের দিক; লেখায় বাংলা চলচ্চিত্রে আর্টের দিক সম্পর্কে এবং এই আর্ট এর ক্ষেত্রে কার ভুমিকা কতটুকু তা তুলে ধরেছেন। এছাড়া আর্টের পরিস্ফুটন ও বিন্যাসের ক্ষেত্রে পরিচালকের ভূমিকাও তিনি সুন্দর ভাষায় বর্ণনা করেছেন।
চলচ্চিত্র রচনাঃআঙ্গিক, ভাষা ও ভঙ্গি; রচনায় তিনি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শট এবং এর প্রয়োগে চলচ্চিত্রের কাব্যময়তার বর্ণনা দিয়েছেন। উদাহরন হিসেবে "পথের পাঁচালী" তে সর্বজয়া হরিহর'কে যে দূর্গা'র মৃত্যু সংবাদ দিচ্ছে সেই শট'টি তিনি কিভাবে নিয়ে কোন ভাবে উপস্থাপন করেছেন তা চিত্রনাট্য সহকারে বিধৃত করেছেন।
ডিটেল সম্পর্কে দু'চার কথা; রচলায় তিনি বাংলা সাহিত্যের ডিটেল এবং চলচ্চিত্রে ডিটেলের ভূমিকার প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন।
চলচ্চিত্রের সংলাপ প্রসঙ্গে; রচনায় তিনি চলচ্চিত্র রচনায় সংলাপ এর ভুমিকা এবং চলচ্চিত্রের কথা ও ছবির মাঝে সমন্বয়সাধন, এদের পার্থক্য এবং প্রয়োগ আলোচনা করেছেন।
আবহসঙ্গীত প্রসঙ্গে; রচনায় তিনি চলচ্চিত্রে আবহসঙ্গীতের ব্যবহার, কারন, প্রভাব ইত্যাদি আলোচনা করেছেন।
এছাড়া তিনি নিজের কয়েকটি উদাহরনও এতে দিয়েছেন।
দু'টি সমস্যা প্রসঙ্গে; অংশে তিনি চলচ্চিত্র এবং থিয়েটারের মধ্যে পার্থক্য এবং এর আলোকে ভালো অভিনয় শিল্পীর অভাবের কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ছবি বিশ্বাস এবং তুলসী চক্রবর্তীর কথা আলোচনা করেছেন। এছাড়া তিনি তার বিরুদ্ধে একটি মতবাদের কথা উল্লেখ করে স্টুডিওর বাইরে শুটিং এর ক্ষেত্রে আমাদের দেশের সমস্যার কথা এবং বিশেষ করে তিনি নিজে যেসব সমস্যার মুখে পড়েছেন সেকথা আলোচনা করেছেন।
পরিচালকের দৃষ্টিতে সমালোচক; রচনায় তিনি পরিচালক এবং সমালোচকের কাজের ধারা এবং রূপরেখা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
এছাড়া সমালোচনা কেমন হওয়া উচিত এবং সমালোচকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত সে আলোচনা করেছেন।
"অপুর সংসার" প্রসঙ্গে' রচনায় তিনি 'দেশ' পত্রিকায় চলচ্চিত্রটি নিয়ে একটি সমালোচনা এবং এর প্রক্ষিতে তার অবস্থান বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
"চারুলতা" প্রসঙ্গে; রচনায় তিনি উক্ত "চারুলতা" চলচ্চিত্র সম্পর্কে একটি সমালোচনার বিশদ জবাব দিয়েছেন।
ওরফে ইন্দির ঠাকুরণ; রচনায় তিনি "পথের পাঁচালী"তে ইন্দির ঠাকুরণ চরিত্রে অভিনেত্রী চুনিবালা দেবীর প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি চুনিবালা দেবীকে কিভাবে নির্বাচন করেছেন সে থেকে শুরু করে অনেক না জানা বিষয়ে লিখেছেন এই মেধাবী অভিনেত্রীর কথা।
দুই চরিত্র; রচনায় তিনি বোড়াল গ্রামের সুবোধ'দা এবং কাশীর রমনীরঞ্জন সেন এর প্রসঙ্গে স্মৃতিচারন করেছেন।
একথা সেকথা; লেখায় তিনি তার চলচ্চিত্রে অভিনয় করা কিছু মানষের কথা আলোচনা করেছেন।
রঙ্গীন ছবি; রচনায় তিনি বিশ্ব এবং বাংলা চলচ্চিত্রে রঙের প্রভাব আলোচনা করেছেন। এছাড়া তিনি চলচ্চিত্রে রঙের উপযোগীতা এবং ব্যাবহার নিয়েও আলোচনা করেছেন।
বিনোদ'দা; রচনায় তিনি বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের সাথে তার আলাপ এবং সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করেছেন।
শতাব্দীর সিকিভাগ; রচনায় তিনি নিজের চলচ্চিত্র জীবন এবং এর উপর পারিপার্শিকতার অবদান এবং ভূমিকা আলোচনা করেছেন।
শেষ কথাঃ বইটি চলচ্চিত্র সম্পর্কে অত্যন্ত উঁচুমানের লেখায় ভরা। যারা চলচ্চিত্র ভালোবাসেন এবং চলচ্চিত্রের বিষয়ে পড়াশোনা করতে চান বা জানতে চান তাদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য বই এটি। বইটি আজিজ সুপার মার্কেট সহ অনেক অভিজাত পুস্তক বিপনীতে পাওয়া যায়। বইটির মূল্য ১৫০ টাকার মত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।