সেই ছোট্ট বেলায় পড়েছিলাম এক জলপরীর গল্প। গল্পটা পড়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছিলাম। এত কান্নাই কেঁদেছিলাম সেই জলপরীটার দুঃখে যে আরেকটু হলে মনে হয় নিজেই আমি চোখের জলে সাগর বানিয়ে সেই সাগরে জলপরী হয়ে ভেসে যেতাম।
হ্যা আমি হ্যান্স ক্রিশ্চিয়নের সেই লিটল মারমেইডের কথাই বলছি। ছোট্ট সেই মৎস্যকন্যা যে সাগরের জলে খেলে বেড়াতো, ঢেউ এর তালে তালে নাচতো আর গাইতো আর তার গানের সূরে,নাচের তালে মুগ্ধ হয়ে মাছেরাও তাল মিলাতো তারি সাথে।
সমুদ্রের শঙ্খ তুলে যে বাজাতো সেই মন মাতানো সূর।
একদিন এক জাহাজ ডুবিতে রাজকুমার অথই জলে যখন হাবুডুবু খাচ্ছিলো মৎস্যকন্যা তাকে উদ্ধার করে তার জীবন বাঁচালো। রাজকুমারের চেতন ফিরে আসবার আগেই লুকিয়ে গেলো আড়ালে সে। রাজকুমার যদি তার মাছের লেজ দেখে ভয় পায় ! যদি ঘেন্না করে তাকে! কি করে সইবে সে সেই কষ্ট।
রাজার লোকজনেরা অচেতন রাজকুমারকে খুঁজে পেয়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো রাজপ্রাসাদে আর মৎস্য কন্যা আড়াল থেকে শুধুই চেয়ে রইলো।
মুক মৎস্যকন্যার তো মানুষের ভাষা জানা নেই। তার নেই মানুষের মত ডাঙ্গায় চলবার জন্য দুটি পা।
মৎস্য কন্যার দিন কাঁটেনা, রাত ফুরোয় না। সারাটাক্ষন পুরোটা মন জুড়েই রাজকুমারের ছবি। সাগরের তলদেশের এক যাদুকরী ডাইনী জটিবুড়িমার তন্ত্র মন্ত্রে সে বানিয়ে নিলো মানুষের মত দুটি পা।
চিরতরে হারালো তার ঝলমলে রুপোলী মৎস্যকুমারী লেজ।
একদিন পাড়ী জমালো ডাঙার সেই রাজকুমারের রাজপ্রাসাদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার অপরুপ নিস্পাপ চোখের চাউনী দেখে রাজকুমারের মনে দয়ার উদ্রেক হলেও সে তার বাগদত্তা মনুষ্য রাজকুমারীর প্রেমে যে মগন সে বুঝতে আর বাকী রইলোনা মৎস্যকন্যার।
গভীর রাতে চুপি চুপি ফিরে গেলো সে সমুদ্র তীরে। ঝাঁপিয়ে পড়লো সমুদ্রের জলে।
লেজবিহীন মৎস্যকন্যা প্রতিগ্গাবদ্ধ সমুদ্ররাজের কাছে। মনুষ্য পদযুগল গ্রহন করবার পরে তার আর সাগরের দেশে ফিরে যাবার অনুমতি নেই। মৎস্যকন্যার দেহটা ধীরে ধীরে মিশে গেলো সমুদ্রের ফেনায় ফেনায়।
আজো মনটা ভীষন খারাপ হয়ে যায় যখন ভাবি সেই মৎস্যকন্যা- জলপরীটার কথা। যার অবুঝ ভালোবাসার কোনো স্থান হয়নি রাজকুমারের মনে।
তবে ছেলেবেলা থেকেই আমার হৃদয়ের কোনো একটা কোনে ছোট্ট হলেও খুব পাকাপোক্ত একটা আসন করে নিয়েছে সে। আজো যখনি বাচচাদের কোনো রুপকথার বইএ মৎস্যকন্যার ছবি দেখি বা দেখি দোকানে সাজানো কোনো মারমেইড পুতুল সাথে সাথেই আমার হৃদয়পটে সেই মৎস্যকন্যাই উঁকি দিয়ে যায়।
আমার অতি প্রিয় সেই মৎস্যকন্যাকে নিয়ে তাই বানালাম ছোট্ট একটা সমুদ্র আর তাতে সাজিয়ে দিলাম ছোট্ট এক মৎস্য কন্যা।
একটা খালি গোল মধুর বোতলের মুখটার ভেতরের দিকটায় মারমেইড কি-রিংটার উপরের অংশটা গ্লু ট্যাগ দিয়ে আটকে দিয়েছি। তারপর বোতলে পানি ঢেলে দিলাম আর তাতে ছেড়ে দিলাম মনিমুক্তা চূণীপান্না।
এইবার বোতলের মুখটা যেন বোঝা না যায় তাই তাতে উপরের দিকটায় আটকে দিয়েছি লাল নীল রঙিন কাগজের ছোট ছোট বলগুলো, আইকা দিয়ে।
এখন আমার ছোট্ট জলপরীটা আমার সাথেই থাকবে সারাটাক্ষন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।