আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুকিয়ে মারা আর ডুবিয়ে মারা

"" It is a difficult thing to tell the story of a life;and yet more difficult when that life is one's own. ""

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে , মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিকভাবে সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং প্রভাবান্বিত করেছে। আর তাই বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক আলোচনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়। এ নিয়ে ধারাবাহিক পর্যালোচনার চতুর্থ পর্ব প্রকাশ করছি, লেখাটা নিয়েছি Asfak Hossain Sweet এর এই নোট থেকে। ==================================================== ছবিটা পদ্মা নদীর। বেশ সুন্দর লাগছে, তাই না? যে প্রমত্তা পদ্মার তলদেশ কেউ কখনও দেখে নি, যেই পদ্মা দিয়ে শত শত জাহাজ বজরা বাণিজ্য বেসাতি করত, এখন সেই পদ্মা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে বালির ট্রাক কসরত করে যাতায়ত করে।

এই কৃতিত্বের অবদান ভারতের। ভারত বছরে একবার আমাদের শুকিয়ে মারতে চায়, আর একবার চায় ডুবিয়ে মারতে। পদ্মা তিস্তা বরাক নদী নিয়ে আমাদের সাথে যা করছে তাতে আমাদের দেশে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে খেত খামার শুকিয়ে যাচ্ছে। কেবল কি এই তিনটি নদী? না, ভারতের সাথে আমাদের অভিন্ন ৫৪ টি নদী তে ভারত ছোট বড় প্রায় শতাধিক বাঁধ বসিয়েছে। ফলে সবুজ সুফলা বাংলাদেশের ফলন যাচ্ছে অনেকাংশে কমে।

আবার ভরা মৌসুমে উজানের পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের বিস্তর এলাকা হঠাৎ প্লাবনে প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যপক ক্ষতিসাধন করছে। এ নিয়ে স্বাধীনতার পর ভারতের সাথে আমাদের কম দর কষাকষি হয় নি। কিন্তু এই দেশের উপর প্রাকশ্য রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখার জন্য ভারত পানি সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। ভারতের সাথে আমাদের পানি নিয়ে সমস্যা এই আলোচনা প্রধানত তিনটি যায়গায় সময় সাপেক্ষে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। পদ্মার ফারাক্কা, বরাক নদীর টিপাইমুখ, আর তিস্তা চুক্তি নিয়ে।

আমরা ধারাবাহিক ভাবে এই তিনটি সমস্যা, এদেশে এদের কুপ্রভাব, আর সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করব। ফারাক্কার ইতিহাস : আজ থেকে দুশো বছর আগে ব্রিটিশ সরকার পলি সঞ্চয়ের কারণে কলকাতা বন্দরে জাহাজ ভিড়ানোর অসুবিধা লক্ষ্য করছিলেন। কারণ হুগলী-ভাগরথী নদী ক্রমশঃ নাব্যতা হারাচ্ছিল। ১৮৫১ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল অবধি কমপক্ষে পাঁচটি সমীক্ষা করা হয়েছে কিভাবে গঙ্গার পানির এক অংশ ঘুরিয়ে হুগলী-ভাগরথীতে প্রবাহিত করে পলি অপসারণ করা যায়। সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেন যে গঙ্গা/পদ্মার মত বিশাল নদীর গতি বাঁধ দিয়ে বিঘ্নিত করলে নদীর উজান এবং ভাটি উভয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে নষ্ট হতে পারে।

এ ধরণের নেতিবাচক অভিমত সত্ত্বেও ১৯৫৭ সালে ভারত সরকার ফারাক্কায় গঙ্গার উপর বাঁধ নির্মাণ ও হুগলী-ভাগরথীতে সংযোগ দেয়ার জন্য ফিডার খাল খননের পরিকল্পনা করে। পশ্চিম বঙ্গের তদানীন্তন চীফ ইঞ্জিনিয়ার শ্রী কপিল ভট্টাচার্য এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে নিম্নরূপ অভিমত প্রকাশ করেন। (১) গঙ্গা থেকে অপসারিত ৪০,০০০ কিউসেক পানি ফিডার খাল কিম্বা হুগলী-ভাগরথী ধারণ করতে পারবে না। (২) গঙ্গা এবং ভাগরথীর প্রবাহ রেখার উচ্চতার তারতম্যের কারণে পানি সঞ্চালন কষ্টকর হবে। ফলে গঙ্গা নদী তার স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য অন্য পথ খুঁজবে।

(৩) প্রথমোক্ত কারণের জন্য মুর্শিদাবাদ এবং মালদা জেলা জুড়ে দেখা দিবে জলাবদ্ধতা। (৪) ব্রক্ষপুত্রের তুলনায় গঙ্গা কম গতি শক্তি সম্পন্ন নদী। এ ধরণের নদীর গতিপথ হয় আঁকা-বাঁকা (meandering)। এক বাঁক থেকে আরেক বাঁকের দূরত্বকে বলে মিয়ান্ডার দৈর্ঘ্য এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে কয়টা বাঁক রয়েছে তাকে বলে মিয়ান্ডার ফ্রিকোয়েন্সি। হঠাৎ করে মৃতপ্রায় হুগলী-ভাগরথীর মধ্য দিয়ে কৃত্রিমভাবে বিপুল পরিমাণে পানি প্রবাহিত করলে হুগলী-ভাগরথী ও উজানে বিহার অবধি সব নদীর মিয়ান্ডার ফ্রিকোয়েন্সির উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে।

ফলে ঐ সমস্ত নদীতে জলাবদ্ধতা, নদী ভাঙ্গন এবং চর সৃষ্টি তরান্বিত হবে। (৬) ভাটি অঞ্চলের সকল নদীর নাব্যতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। (৭) শুষ্ক মওসুমে পানি প্রবাহ কম হওয়ার কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন দেখা দিবে। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার শ্রী কপিল ভট্ট্রাচার্য্যরে অভিমতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে একে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার অনুরোধ করেন। একই সাথে মার্কিন নদী বিশেষজ্ঞ ড. ইপেনকে সমীক্ষা করার জন্য নিয়োগ দেন।

ড. ইপেন সুস্পষ্টভাবে জানান যে ফারাক্কায় বাঁধ দিলে পশ্চিম বঙ্গ এবং বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। কিন্তু ভারত সরকার এসব আমল না দিয়ে শ্রী কপিল ভট্টাচার্য্যকে পাকিস্তানী এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করে। শ্রী ভট্টাচার্য্য চীফ ইঞ্জিনিয়ারের পদ থেকে ইস্তফা দেন। দেশীয় ও বিদেশী বিশেষজ্ঞ এবং সর্বপরি গত দেড় শতাব্দীর ভূতত্ত্ববিদ, প্রকৌশলী ও নদী বিশেষজ্ঞদের মতামতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ভারত সরকার নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা (এক্ষেত্রে আবহমান কালের গঙ্গা) ভঙ্গ করার ব্যবস্থা নেন। ১৯৬১ সালে নির্মাণ শুরু হয় ফারাক্কা বাঁধের এবং শেষ হয় ১৯৭১ সালে।

ফারাক্কা বাঁধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: (১) বাঁধের দৈর্ঘ্য ২.২৫ কিলোমিটার। (২) সংযোগ খালের দৈর্ঘ্য ৪৩ কিলোমিটার। (৩) সংযোগ খালের পানি প্রবাহের ক্ষমতা ৪০,০০০ কিউসেক। (৪) গেটের সংখ্যা ১০৯টি। (৫) প্রতি গেটের প্রবাহ ক্ষমতা ৭০৯ কিউসেক।

(৬) হুগলী-ভাগরথীর প্রবেশস্থানে বাঁধের দৈর্ঘ্য ২২৪ মিটার। ফারাক্ক বাঁধ ফারাক্কা চুক্তি : ফারাক্কা নিয়ে ভারতের সাথে পাকিস্তান আমল থেকেই আলোচনা চলে আসছে। ভারত কখনোই এর সমাধানের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় নি। ১৯৭৪ সালের মে মাসে শেখ মুজিবের ভারত সফরকালে ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গার পানি ভাগ নিয়ে একটা ঐক্যমত্যে পৌছলেও উভয় সরকার গঙ্গায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধির উপরে জোর দিয়েছিল। বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল গঙ্গার উজানে ছোট ছোট জলাধার নির্মাণ করে এই নদীতে পানি প্রবাহ বাড়ানো।

কিন্তু ভারত অদ্ভুত এক প্রস্তাব করে। ব্রহ্মপুত্রের সাথে গঙ্গার ২০০ মেইল লম্বা খাল খুঁড়ে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় দুইটা বাঁধ নির্মাণ করবে ভারত। এতে আমাদের কোন লাভ না থাকায় আমরা তখন রাজি হই নি। কারণ বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে এই খাল খুঁড়লে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ বদলে দিলে ভাটি এলাকা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইন্দিরা মুজিব চুক্তির সময় বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক সাহস করে ইন্দিরা গান্ধীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন দুইটা প্রশ্ন।

প্রথম প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে পাকিস্তানের অধীনে থেকে গেলে ফারাক্কা বাঁধ চালু করার সাহস ভারত পেত কি না। এই প্রশ্নের উত্তর ইন্দিরা গান্ধী দেন নি। পরের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশ অন্য কোন রাষ্ট্র না হয়ে ভারতের প্রদেশ হলে বাংলাদেশের ক্ষতি করে এই বাঁধ ভারত চালু করত কি না। এই প্রশ্নের জবাবও ইন্দিরা গান্ধী দেন নি। শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কায় পানির প্রবাহের পরিমাণ ৫৫হাজার কিউসেক।

এক্ষেত্রে ভারত তার হুগলী বন্দরে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে চায় ৪০ হাজার পানি। ইন্দিরা মুজিব চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালের মে মাসে ৪৯ হাজার কিউসেক পানি পায়। ইন্দিরা মুজিব চুক্তি শেষ হবার পর পরই ভারত একতরফা ভাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করে নেয়, আমাদের শত প্রতিবাদেও তারা গা করে নি। ফলে আমাদের উপায় না থাকায় আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাই। জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৬ সালে ইস্তাম্বুলে ইসলামি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এই ফারাক্কা প্রশ্ন উত্থাপিত হলে মুসলিম দেশগুলির সমর্থন লাভ করে।

সেই বছরেই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনে ফারাক্কা ইস্যু আবার উত্থাপিত হয়। ভারত এই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা হবার কারণে এবার বাংলাদেশের আবেদন তেমন সাড়া ফেলে নি। উপায় না পেয়ে বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের ৩১তম অধিবেশনে প্রশ্ন উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ভারত ঢাকায় এসে এক বৈঠকে বসতে রাজি হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে ৫ বছর মেয়াদী যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সেখানে ভারত আমাদের ৩৭হাজার কিউসেক পানি দিতে রাজি হয়।

এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পানি চুক্তিতে নেপালকে অন্তর্ভুক্তির দাবি করা হয়। কেননা নেপালে বড় বড় জলাধার নির্মাণ করে শুষ্ক মৌসুমে সেখান থেকে পানি ছেড়ে দিলে আমাদের পানি সমস্যার অনেক সমাধান হতে পারে। কিন্তু ভারত রাজি হয় নি। এর কারণ ভারত আমাদের সাথে এই ফারাক্কা ইস্যুকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সবসময় চাপে রাখতে চাইছে। ১৯৭৫ এ যদি ভারত প্রায় ৫০ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে হুগলী বন্দর ঠিক রাখতে পারে, তবে এখন কেন পারবে না? এবার দেখা যাক ১৯৯৬ সালের পানি চুক্তির ফলে কি হয়েছে।

৭৭ সালে করা চুক্তিতে বাংলাদেশ যেখানে সর্বনিম্ন পানি পেয়েছিল ৩৪ হাজার কিউসেক, ৯৬ সালে শেখ হাসিনার করা চুক্তিতে সর্বনিম্ন পানি দেবার কথা হয়েছে ২৭হাজার কিউসেক। এই সর্বনিম্ন পানির হিসাব খাতা কলমে থাকলেও বাস্তবে তা আমরা পাচ্ছি না। এই কথা ভারত নিজেও স্বীকার করছে। এই চুক্তি থেকেই বোঝা যাচ্ছে, চুক্তি হয়েছে যা তাতে আমাদের নয় ভারতের স্বার্থই রক্ষা পেয়েছে। ভাসানীর নেতৃত্বে লংমার্চ : ১৯৭৬ সালের ১৮ এপ্রিল মাওলানা আব্দুল হামীদ খান ভাসানী ফারাক্কা সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে পত্র লিখেন।

১৯৭৬-এর ৪ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভাসানীকে লিখিত পত্রে ফারাক্কা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কথা না বলায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১৬ মে মাওলানার নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ শুরু হয়। দু’দিনে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এই লংমার্চ শেষ হয় ১৭ মে। ঐদিন তিনি ঐতিহাসিক সোনামসজিদে আছরের ছালাত আদায় করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করেন। কানসাট হাই স্কুল ময়দানে ফারাক্কা মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণার সময় মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ‘গঙ্গার পানিতে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নিতে ভারত সরকারকে বাধ্য করার জন্য আমাদের আন্দোলন, আমি জানি, এখানেই শেষ নয়’। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আরো বলেন, ‘ভারত সরকারের জানা উচিত, বাংলাদেশীরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না, কারও হুমকিকে পরোয়া করে না।

... যেকোন হামলা থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করা আমাদের দেশাত্মবোধক কর্তব্য এবং অধিকার’। ১৯৭৬ সালের লং মার্চে ভাসানী বক্তব্য দিচ্ছেন টিপাইমুখ বাঁধঃ বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বরাক নদীতে টিপাইমুখ নামক স্থানে বাঁধ নির্মাণের তোরজোড় শুরু করেছে ভারত। এই বরাক নদী থেকে বাংলাদেশের সুরমা কুশিয়ারা হয়ে মেঘনা নদী সৃষ্টি হয়েছে, এদেশে উজান থেকে আসা পানির মোট ৭-৮ শতাংশ আসে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের বরাক নদী থেকে। মৎস্য সম্পদ আহরণ ও চাষাবাদের জন্য বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এ নদীর পানি প্রবাহের উপর নির্ভরশীল। এ বাঁধ নির্মাণের ফলে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার বিশাল এলাকায় ও দীর্ঘমেয়াদি কুফল দেখা দেবে।

টিপাইমুখ ড্যাম পরিচালনার পূর্বে যখন রিজার্ভারটি পূর্ণ করা হবে তখন তা ভাটি অঞ্চলের স্বাভাবিক পরিবেশ ও ইকো-সিস্টেমকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং মৎস্য প্রজননে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। শুষ্ক মৌসুমে সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকায় প্লাবন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৬০ ভাগ এবং ভরা মৌসুমে অন্তত ১২ ভাগ হ্রাস পাবে। এতে বাংলাদেশের অমলসিধের কাছে বরাকের পানি প্রবাহ ভরা মৌসুমে অন্তত ২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে, সেই অনুসারে পানির লেভেল ১ দশমিক ৬ মিটার নেমে যাবে। প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে বরাকের প্রবাহ অন্তত ৪ দশমিক ২ গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং পানি সমতল বাড়বে প্রায় ১ দশমিক ৭ মিটার। আবার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেওয়া পানির তাপমাত্রা ১ থেকে দুই ডিগ্রি বেশি হওয়ায় মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যহত হবে।

টিপাইমুখে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হলে নিয়ন্ত্রিত প্রবাহের ফলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পানি ছাড়া হবে। এর ফলে মাটির অভ্যন্তর দিয়ে পানির প্রবাহ প্রক্রিয়াও পরিবর্তিত হবে। সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকা নিচু জলাভূমি পূর্ণ, শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। সেই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলের পানি সহজে নামতে না পারার কারণে নিচু বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ বোরো ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাবে কালনী-কুশিয়ারা নদীর পলিভরাট প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।

ফলে নাব্যতা রায় অতিরিক্ত ড্রেজিংয়ের মতো ব্যয়বহুল পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। সুরমা-কুশিয়ারায় বন্যার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে পলল সমভূমিগুলো পলিমাটি বঞ্চিত হবে এবং নদী অববাহিকার মধ্যবর্তী সমভূমিগুলো নদীর সঙ্গে সংযোগহীন হয়ে পড়বে। তিস্তার পানি চুক্তিঃ এবার আশা যাক আরেকটি নদী তিস্তা নিয়ে। ৪০০ কিঃমিঃ দীর্ঘ খরস্রোতা তিস্তা সিকিম ও পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীর ভিতর দিয়ে ১২৪ কিঃমিঃ অতিক্রম করে ব্রহ্মপুত্র নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। উত্তরবঙ্গের কৃষির মান উন্নয়নে তিস্তা সেচ প্রকল্প নামে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

১৯৭৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর নীলফামারীর ডিমওলা উপজেলার ডালিয়া ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা নদীর উপর ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প (তিস্তা ব্যারেজ) নির্মাণ করা হয়। তিস্তায় গজলডোবার বাঁধের ফলে মরুকরণ কিন্তু তিস্তার পানি নিয়ে আমাদের সাথে ভারতের বিরোধ বাধে। তিস্তা ব্যারেজের ৯০ কিঃমিঃ উজানে ভারতের গজলডোবায় ওই নদীর উপর একটি বাঁধ নির্মাণ করে সেখানে ভারতের সুবিধা মতো পানি আটকে দেওয়া হয়। তিস্তা পারের হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচের অভাবে ইরি, বোরো মৌসুমে পড়ে থাকে। ৮৩ সালে যৌথ নদী কমিশনের ২৫ তম বৈঠকে তিস্তার পানির ৭৫% ভাগ করে নেওয়া হবে বলে মত দেওয়া হয়।

২০০৪ পর্যন্ত অজস্র বার বৈঠকের পরেও ভারত এই চুক্তি করতে চায় নি। সবশেষে মনমোহন সিং এর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে আমরা আশা করেছিলাম চুক্তিটি হবে। কিন্তু ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দোহাই দিয়ে এই চুক্তি করে নি। মমতা দিদি তো হাস্যকর কথা বলেছেন, বাংলাদেশ নাকি ভাটিতে নলকূপ বসিয়ে পানি টেনে নিচ্ছে, এই জন্য বাংলাদেশের সাথে তিস্তার পানি চুক্তি হবে না। নদীর পানি ছিনিয়ে নেবার ফলে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ঃ (১) পদ্মা নদী দিয়ে পলিপ্রবাহ প্রায় ২০% কমে গেছে (১৯৬০ সালের তুলনায়)।

(২) কার্বন প্রবাহ কমেছে ৩০%। (৩) পলিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে জমির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে। (৪) মিনারেল এবং নিউট্রিয়েন্ট কমে যাওয়ার ফলে নদী ও জলাভূমিতে ফাইটোপ্লাকটন উৎপাদন কমেছে ৩০%। ফাইটোপ্লাকটন হচ্ছে খাদ্য চক্রের প্রথম ধাপ। এ থেকে ক্রমান্বয়ে মাছ ও অন্যান্য জলজ জীবের উৎপাদন ঘটে।

পদ্মা-ব্রক্ষপুত্রের সঙ্গমস্থল আরিচাঘাটে সমীক্ষা থেকে যে ফিশ ক্যালেন্ডার তৈরী করা হয়েছে তাতে দেখা যায় ৩৫ বছর আগের তুলনায় বর্তমান মৎস্য উৎপাদন মাত্র ২৫%। ইলিশ মাছ এখানে পাওয়া যায় না বললেই চলে। ইলিশ মাছ স্যাড গোত্রীয় মাছ। যেখানেই সমূদ্র সংলগ্ন নদী রয়েছে সেখানেই এই মাছ পাওয়া যায়। বৎসরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই মাছ নোনা পানি থেকে মিঠা পানিতে আসে ডিম পাড়ার জন্য।

উজানে এদের আগমন বাঁধ কিম্বা ঐ ধরনের বাধার পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত সংবেদনশলীল। ফারাক্কার আগে এক সময় রাজশাহী পদ্মা অবধি ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। এখন আরিচাতেই এ মাছ পাওয়া যায় না। ফারাক্কা বিদ্যমান থাকলে আশংকা করা হয় পদ্মা এবং তার কমান্ড অঞ্চলে ইলিশ মাছ আদৌ পাওয়া যাবে না। (৫) জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুধারী তলোয়ারের মত কাজ করছে।

একদিকে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকুল অঞ্চল তলিয়ে যাওয়া আর তার সাথে যোগ হয়েছে বাংলাদেশের সমতল ভূমির ক্রমান্বয়ে দেবে যাওয়া যাকে বলা হয় সাবসিডেন্স। এর হার বছরে ৫ মি.মি.। নদীর প্লাবনের কারণে সঞ্চিত পলি সাবসিডেনসের নেতিবাচক প্রভাবকে এতকাল পুষিয়ে নিয়ে আসছিল। ফারাক্কার কারণে এমনটি আর হতে পারছে না। (৬) টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর টোশিও ইসুজুকার গবেষণায় ষ্ট্রনসিয়াম আইসোটপ সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে যে পুরো বঙ্গোপসাগর জুড়ে সময় অনুচক্রে তীব্র ফাইটোপ্লাকটন বিকাশ ঘটে।

আর এর অনুঘটক হচ্ছে নদী বাহিত নিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টি উপাদান ও মিনারেল। ভারতের নানান বাঁধের কারণে প্রক্রিয়াটি বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে সমগ্র বঙ্গোপসাগর জুড়ে মৎস্য উৎপাদন আশংকাজনকভাবে কমে যেতে পারে। বঙ্গোপসাগরের মাছের উপর ভারতের বিপুল জনগোষ্ঠিও নির্ভরশীল। একই সাথে কার্বন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার উপশম কম হবে।

(৭) বাঁধের কারণে নদী বাহিত পলির গ্রেইন সাইজ স্পেকট্রাল প্যার্টান অর্থাৎ পলি কণার সাইজ এর তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের মাটির ভৌত কাঠামোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। (৮) নদীর লবণাক্ততা বৃদ্ধিঃ গবেষণা হতে প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে জানা যায় ১৯৬০ সালের তুলনায় আশির দশকে নদীর লবণাক্ততা ১২ থেকে ২৫ গুণ বৃদ্ধি পায়। পরিস্থিতি এমনি মরিয়া হয়ে উঠেছে যে ৬০ মাইল উত্তরে উজান থেকে মিঠা পানি সংগ্রহ করে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখতে হচ্ছে। (৯) সুন্দরবন এর ক্ষতিঃ সুন্দরবন সমগ্র মানবজাতির ঐতিহ্য হিসেবে আজ স্বীকৃত।

সুন্দরবনের ইকো সিসটেমকে রক্ষণশীল বলে বিবেচনা করা হয় অর্থাৎ এই প্রণালীবদ্ধ পুষ্টি উপাদান যথাসম্ভব পুর্নব্যবহার করে। যদি কোন ঘাটতি থাকে তাহলে তা নদীবাহিত পলি থেকে আহোরিত হয়। এই ধরণের প্রণালীবদ্ধ লবণাক্ততা এবং পলি সঞ্চয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে খুব সংবেদনশীল। ভারতের বসান বাঁধের ফলে সুন্দরবন অঞ্চলে পলি ও পানি প্রবাহে যে ব্যাঘাত ঘটেছে তার ফলে সুন্দরবনের অস্তিত্বই বিপন্ন হতে পারে। (১০) সমগ্র উত্তরাঞ্চল জুড়ে মরুকরণঃ পদ্মার পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় উত্তর অববাহিকায় বিশেষ করে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ভূগর্ভস্থ পানির প্রথম স্তর ৮-১০ ফুট জায়গা বিশেষে ১৫ ফুট নীচে নেমে গেছে।

খরার মওসুমে প্রথম স্তর থেকে সেচ তো দূরের কথা পান করার পানিও উত্তোলন করা যাচ্ছে না। মওসুমী বৃষ্টি ও এই স্তরে রিচার্য করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সেচের জন্য খরার মওসুমে এখন ভরসা দ্বিতীয় স্তর (>৩০০ ফুট)। বরেন্দ্র অঞ্চলে এই স্তরটা মোটামুটি ফসিল পানি দিয়ে পূর্ণ। ব্যাপক সেচের ফলে এই স্তর থেকে কতদিন পানি উত্তোলন করা যাবে কে জানে।

পানির অভাবে মাটির আদ্রতা শুষ্ক মওসুমে ৩৫% কমে গেছে। পানি প্রবাহের এমন করুণ অবস্থা থেকে সৃষ্ট হয় মরুকরণ প্রক্রিয়া। নদীর পানি থেকে জলীয় বাষ্প সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বায়ুর আদ্রতা সৃষ্টিতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। খরার সময় পদ্মা নিজেই যখন বিশুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হয় সে তখন স্থলভূমির বায়ুতে আদ্রতার যোগান কিভাবে দিবে। আদ্রতার অভাবে দিনের নিম্নতম এবং উচ্চতম তাপমাত্রার তারতম্য বৃদ্ধি পায়।

৬০ দশকে এই তারতম্য যেখানে ৫-৮ সে. ছিল এখন সেটা বৃদ্ধি পেয়ে ৮-১২ সে. এ দাঁড়িয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে মরুকরণ প্রক্রিয়ার ব্যাহিক রূপ এই অঞ্চলের জনগণ ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করছেন। আমাদের কী করা দরকারঃ বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই পানি আগ্রাসনে আক্রান্ত। এ ব্যাপারে সকল উপাত্ত সংগ্রহ করে জরুরী রিপোর্ট তৈরি করে নিরাপত্তা পরিষদের বিবেচনার জন্য পেশ করার প্রয়োজন। বিশ্বের জনগণকে এই পরিবেশ যুদ্ধ ও আগ্রাসন সম্পর্কে সম্যকরূপে অবহিত করতে হবে।

ভারতের সাথে আলোচনা অবশ্যই করতে হবে। তবে গঙ্গার প্রশ্নে নেপাল এবং ব্রহ্মপুত্রের প্রশ্নে চীনকে এবং তিস্তা প্রশ্নে ভূটানকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথে আলোচনাকালে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। (১) গঙ্গাসহ কোন নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা বিঘ্নিত করা যাবে না। (২) স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য গ্যারান্টি ক্লজ থাকতে হবে।

(৩) সংশ্লিষ্ট দেশদের নিয়ে সমতার ভিত্তিতে প্রতি নদীর জন্য উৎস থেকে সঙ্গম অবধি ঐ নদীর অববাহিকা ব্যবস্থাপনা কমিশন গঠন করা যেতে পারে। (৪) এক অববাহিকার পানি অন্য অববাহিকায় কোন ক্রমে প্রবাহিত করা যাবে না। (৫) ফারাক্কা বাঁধসহ ভারত বাংলাদেশগামী যে সব নদীতে বাঁধ দিয়েছে তা সব অবমুক্ত করে দিতে হবে। (৬) স্বাভাবিক প্রবাহ অক্ষুন্ন রেখে সেচ ও অন্যান্য কাজের জন্য পানির ব্যবহার অববাহিকা ব্যবস্থাপনা কমিশন নির্ধারণ করবে। প্রয়োজনবোধে মওসুমী বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণ করার জলাধার নির্মাণ করা যেতে পারে।

(৭) নদী থেকে সরাসরি পানি আহরণ করে নতুন সেচ প্রকল্পের জন্য অববাহিকা ব্যবস্থাপনা কমিশনের অনুমোদন ও তদারকি লাগবে। (৮) উজানের দেশে শিল্প দূষণ কিম্বা অন্য কোন দূষণ যাতে না হয় তার জন্য নদীর পাশে এ ধরণের শিল্প কারখানা স্থাপনের ব্যাপারে ব্যবস্থাপনা কমিশনের তদারকিতে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। (৯) এছাড়াও নদীর স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও প্রবাহকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য যা করণীয় তা সব বিবেচনায় রাখতে হবে। (১০) উৎস থেকে সাগর সঙ্গম অবধি নদীর পানি ও পলল প্রবাহ ও অন্যান্য উপাত্তের ও তথ্যের অবাধ আদান প্রদান হতে হবে। (১১) একইভাবে পরিবেশ মনিটরিং ও গবেষণার জন্য নদীর পানির নমুনা সংগ্রহের জন্য সার্বিক সহযোগিতা থাকতে হবে।

(১২) সংশ্লিষ্ট নদী যেমন বাংলাদেশের জীবন রেখা তেমনি ভারত, চীন ও নেপালের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বানঃ আবার ভারত করেছে কি, ভুটান আর নেপালের সাথে দুটি চুক্তি করে আমাদের পানি পাবার সম্ভাবনা আরও জটিল করে ফেলেছে। ৯১সালে নেপালের সাথে যে চুক্তি হয়, সেই অনুসারে তার চারটি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে, এতে ভাটির দেশ বাংলাদেশে পানির পরিমাণ আরও কমে যায়। ৯৩ সালে ভুটানের রাজার সাথে ভারত আরেকটি চুক্তি করে। যার ফলে ব্রহ্মপুত্রের উপনদী সাংকোশ নদীতে বহুমুখী বাঁধ বসায় ভুটান।

এছাড়া ভুটানের কুরিচু ড্যাম প্রকল্প আরেকটি সমস্যা। পরবর্তীতে ভারত ভুটানের ওয়াংচু নদীতে আরও তিনটা ড্যাম নির্মাণ করে। এসব ড্যাম নির্মাণ করে ব্রহ্মপুত্র আর তিস্তার গতিপথ বদলে দেওয়াই ভারতের লক্ষ্য। কিন্তু ভাসানীর কথা মত আমরা তো বাংলাদেশি, আমরা তো এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো চোখ রাঙানী কে ভয় পাই না, যে বাংলাদেশী জাতির প্রতীক বাঘ, যে বাংলাদেশী খালি হাতে পাকিস্তানী হায়েনাদের কচু কাটা করে এদেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, মৃত্যুভয় কী তা যে বাংলাদেশী জানে না, সে বাংলাদেশী কিভাবে স্বার্থপর মহলের প্ররোচনায় চুপ করে বসে থাকবে? এই দেশ আমাদের। এদেশের প্রয়োজনে আমরাই এগিয়ে আসব।

দেশের জন্য লড়াই করবো। আমাদের দেশের উপর কোন আক্রমণ আমরা মাথা পেতে নেব না। গর্জে উঠার সময় এসেছে। বিগত ৪০ বৎসরে আমরা আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করতে ব্যর্থ হয়েছি। শুধু ভারত কেন অন্যান্য শক্তিধর দেশের কাছে আমাদের রাজনিতিবিদ, আমলা, কুটনিতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিরা সেবাদাসের মত আচরণ করেছেন।

দেশের যৎসামান্য তেল ও গ্যাস অবিশ্বাস্য শর্তে ইজারা দিয়েছেন। এ এক ভীরুতা এবং কলংকের কাহিনী। কেয়ামতের দিন শহিদদের কী জবাব দেবেন? দেশপ্রেমের ভিত্তিতে জাতীয় বিকাশের অঙ্গীকার কোন বিমূঢ় আষ্ফালন নয়। জাতীয়বাদের অনুপ্রেরণায় আমাদের বলীয়ান হতে হবেই।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।