দিনের আলোয় আছি আমি রাতের কালোয় নাই,, সবুজ ভোরে এসে আমি শিশির ধরে খাই। ধরায় আসি শূন্যে চড়ে লাগেনা ঘোড়ার গাড়ি,, রোদ আমি বন্ধু শোন সূর্য আমার বাড়ি।
গত বছরের বইমেলার কথা বলিতেছি। আমরা তিন বন্ধু- রেজা, মামুন আর আমি গিয়েছিলুম লাইব্রেরি-এর জন্য বই কিনিবার নিমিত্তে। তারিখ ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারী।
“সাভার হইতে বাসযোগে শাহাবাগ গিয়া উপস্থিত হইলাম। অতঃপর বাংলা একাডেমির পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়া হাটিতে লাগিলাম। পথের দুই ধারের দৃশ্য দেখিয়াই অনায়াসে বুঝিতে পারা যায় যে অমর একুশে বইমেলা বাঙ্গালির সাহিত্য- সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রে পরিনত হইয়াছে। বাঙ্গালির জন্য যে ইহা এক বিশাল উৎসব তাহাও বুঝিতে পারা যায়। হাটিতে হাটিতে টি, এস, সি-র সম্মুখে আসিয়া যাহা দেখিলাম তাহা বলিতে চাহিতেছি না।
কারণ ঐ সুবিশাল লাইনে আপনাদের অনেকেও নিশ্চই দাড়াইয়া ছিলেন। লাইনখানা দেখিয়াই বুঝিতে পারিলাম যে আজ আর বইমেলা চত্বরে আমাদের চরণ পরিবে না। কিন্তু তাই বলিয়া ফিরিয়া চলিয়া যাইব, ইহাও মানিয়া নিতে পারিলাম না। যে করিয়াই হোক ঢুকিতে হইবে, কিন্তু সময় নষ্ট করা যাইবে না। আর তাই লাইনখানার পাশ ধরিয়া আমরা তিনজন হাটিতে লাগিলাম।
সুযোগ পাইলেই মিশিয়া যাইব। হাটিতে হাটিতে বাংলা একাডেমির প্রধান ফটকের কাছকাছি আসিয়া পড়িয়াছি। কিন্তু সুবিধা করিতে পারিলাম না। কিছুক্ষণ দাড়াইয়া থাকিলাম। হঠাৎ করিয়া ফটকের কাছে কিছু একটা ঘটিল।
পুলিশ মামারা ঘেও ঘেও শুরু করিয়া দিল। ফটকের নিকটবর্তী যাহারা লাইনে দাড়াইয়া ছিল তাহরা অস্থির হইয়া উঠিল এবং কি ঘটিয়াছে তাহা বুঝিবার জন্য ঐ দিকেই দৃষ্টি এবং মন নিয়োগ করিল। এই সুযোগ কাজে লাগাইয়া আমরা অনায়াসে মিশিয়া গেলুম লাইনের সাথে। অল্পকিছুণের মধ্যেই প্রবেশ করিলাম অমর একুশে বইমেলায়। ঢুকিয়াই বুঝিতে পারিলাম কেউ একজন আমাদিগকে ডাকিতেছে।
ডাক শুনিয়াই টয়লেটখানা কোন দিকে খুঁজিতে লাগিলাম। কারণ স্বয়ং প্রকৃতিই আমাদিগকে ডাকিতেছে। টয়লেট চত্বরে গিয়া দেখি সেইখানেও মানব জটলা পাকাইয়া রহিয়াছে। যাহাদের ছোটমিয়া ডাক দিয়াছে তাহারা এথায়-সেথায় বসিয়াই কাজ সারিতেছে। কিন্তু যাহাদের বড়মিয়া ডাক দিয়াছে তাহারা মোটামুটি ধরনের লাইন করিয়া দাড়াইয়া রহিয়াছে।
মামুন আর রেজা এথায়-সেথায়ই কর্ম সম্পাদন করিল। কিন্ত আমি দাড়াইয়া রইলাম লাইনের শেষ প্রান্তে, বড়মিয়ার সাথে আমার সুবিশেষ ভালো সম্পর্কের কারণে। ইহা বুঝিতে পারিলাম যে, এই লাইনে সময় বাচাইবার জন্য রাজনীতি করা যাইবে না। কিছু করিবার চেষ্টা করিলে পাবলিক পিটাইয়া আলু ভর্তা বানাইয়া ফেলিবে। সবাই খুবই ‘সিরিয়াস মুডে’ রহিয়াছে।
আমার নিকট দুইখানা মোবাইল ফোন। একখানায় সিটিসেল আর অন্যখানায় বাংলালিংক চালু রহিয়াছে। যেহেতু আমাকে ঐ ছোট্ট ঘরখানায় বিশেষভাবে বসিয়া বিশেষ কাজ সম্পন্ন করিতে হইবে তাই বুদ্ধি করিয়া বাংলালিংক ওয়ালা মোবাইল ফোন রাখিয়া অন্য মোবাইল ফোন এবং আমার মানিব্যাগ খানা রেজার হাতে তুলিয়া দিলাম। এবং উহাদের বই কিনা শুরু করিয়া দিতে বলিলাম। কথা হইল কর্ম শেষে ফোন এ কল করিয়া উহাদের অবস্থান জানিয়া নিব।
প্রায় তিরিশ মিনিট দাড়াইয়া থাকিবার পর স্বর্গে যাইবার সুযোগ পাইলাম। আহা! বেজায় মজা!
কর্ম সারিয়া টয়লেট চত্বর ছাড়িলাম। পকেট হইতে মোবাইল ফোন বাহির করিলাম রেজা আর মামুনের অবস্থান জানিয়া নিবার নিমিত্তে। কিন্তু মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তাকাইয়া আহাম্মক হইয়া গেলুম। ‘নো নেটওয়ার্ক’।
এখন কি হইবে? আমার মানিব্যাগখানাও রেজার কাছে। পকেটে এক পয়সাও নাই। রেজা আর মামুনকে যদি খুঁজিয়া না পাই......... হাটিয়া হাটিয়া বাড়ি যাইতে হইবে যাহা আমার বাবার পক্ষেও অসম্ভব। সমগ্র বইমেলায় হাটিতে লাগিলাম। অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস, ওহাদের খুঁজিয়া পাইলাম না।
অনেককেই মোবাইল এ কথা বলিতে দেখিলাম। কিন্তু কারও কাছে মোবইল চাইবার সাহস হইল না। ঢাকা শহর। এইখানে বিশ্বাস একদম মূল্যহীন। চিন্তায় চিন্তায় মস্তক গরম হইয়া যাইতে লাগিল।
যদি হিসেব করিতে পারিতাম তাহা হইলে একদম নিশ্চিন্ত হইয়া বলিতে পারিতাম যে ঐ দিনই আমার কমপক্ষে দুইশত পঁচিশ খানা চুল পাকিয়া গিয়াছে।
প্রায় ঘন্টাখানেক পর বিধাতার কৃপায় উহাদের দেখা পইলাম। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।