হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে...
বেশ কিছুদিন আগে, তা প্রায় বছর দেড়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক (নাম উল্লেখ করা সমীচীন নয়) প্রফেসরের নিকট গিয়েছিলাম একটি পিএইচডি. থিসিস চাইতে। কারণটাও অবশ্য ব্যাখ্যা করা দরকার। আমি ব্যক্তিগতভাবে পিএইচডি. গবেষকের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে অনেকটা অসহায় হয়েই গিয়েছিলাম প্রফেসর মহোদয়ের নিকট। আমি জানতে পেরেছিলাম ঐ প্রফেসর সাহেব সেই পিএইচডি. ডিগ্রির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। অতএব তাঁর কাছে একটি কপি থিসিসের একটি কপি আছে, এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই।
আমি থিসিস পেপারটি দেখার জন্য চাওয়ার পর, উনি পরিষ্কার বলে দিলেন আমার প্রত্যাশিত থিসিস পেপারের কোন কপি তাঁর কাছে নেই। কিন্তু আমি নিশ্চিত হয়েই তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে জানতে পারলাম, উনি আসলে ঐ ডিগ্রি দেয়া থিসিস পেপারটি কাউকেই দেখাতে চান না।
একটি থিসিস বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি পাওয়ার পর কেন সেটি কাউকে দেখাতে প্রফেসর মহোদয়ের আপত্তি তা আমার বুঝতে বেশ কষ্ট হলো। এই বিষয়টি আমার কাছে স্বচ্ছ হলো অতীত স্মৃতি চারণের মাধ্যমে।
কারণ, আমি যখন এমফিল. ডিগ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিসে, তখন সেই অফিসের জনৈক কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল-- থিসিসটি আমি নিজে লিখেছি কিনা? সেদিন বিষয়টি আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়েছিল-- এটা আবার কি ধরনের কথা। তখন উনি বলেছিলেন, অনেক ডিগ্রি জমা হয়, কিন্তু সেটার এ থেকে জেড পর্যন্ত সবই অন্যের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেয়, এজন্যই আপনাকে এ কথাটি জিজ্ঞেস করলাম।
আমি তখন ঐ ভদ্রলোককে বলেছিলাম যে, দেখুন আমি যে বিষয়ে কাজ করেছি, সে বিষয়ে বাংলাদেশে কোন বই পুস্কক নেই। এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও নেই।
ওপরের কথাগুলো গল্প নয়, নিরেট সত্য।
এছাড়াও আছে অন্য আরেক অন্ধকার। সম্প্রতি আমার নজরে এসেছে, এটা আগে শুনতাম পশ্চিমবঙ্গের নাকি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে ডিগ্রি কিনতে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশেও এই প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, তাও অল্প কিছুদিন আগে আমার গোচরীভূত হয়েছে।
এর ফলে কার ডিগ্রি আসল আর কার ডিগ্রি নকল তা বুঝবার অবকাশ কই। যাদের থিসিস কখনো দিনের আলো দেখে না, তারাও তো দিব্যি ড. লাগিয়ে সমাজে পরিচয় দিচ্ছেন।
আমার দাদু বলতেন, তাদের আমলে নাকি কেউ বিএ. এমএ. পাশ করলে তাকে দু'চার গ্রামের লোক দেখতে যেতো। বিএ. এমএ. দূরে থাক পিএইচডি. ডিগ্রি অর্জনকারীকেও দেখার প্রশ্ন আসে না; কারণ আমার আপনার চারপাশেই অমুক ড. তমুক ড. আছেন।
এছাড়াও আছে আরো কথা। এখন এমফিল. পিএইচডি. করবার শিক্ষার্থীর অভাব নেই। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তো রীতিমতো এমফিল. পিএইচডি. কোর্সে ভর্তির জন্য পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল. ডিগ্রির জন্য নাকি পাবলিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু কেন? নিশ্চয় এসব অসততা কারণেই?
বলাবাহুল্য 'ড'-এর এই অন্ধকার জগৎ সম্পর্কে জানবার পর মনে হয়েছে, যারা কিনা নামের আগে ড. লাগিয়ে ফলাও করে পরিচয় দেয়-- তাদের নিশ্চয় সংযত হওয়া উচিত। অথবা কেউ যদি মনে করেন তিনি যেসব ডিগ্রি অর্জন করেছেন তা জানানো দরকার সেক্ষত্রে তিনি নামের শেষে --- ....... [এমফিল. ডিফিল. ডিলিট.] প্রভৃতি ডাক্তার বাবুদের মতো লাগাতে পারেন। কারণ, আমরা কেউ তো বিএ. এমএ. পাশ করে তা যেমন নামে আগে ব্যবহার করি না, কিংবা ডিগ্রিটিও গলায় ঝুলিয়ে পথে চলতে পারি না, তদ্রূপ 'ড.' নামের পূর্বে যুক্ত করে সাইনবোর্ড লাগানোর মধ্যে কোন কৃতিত্ব আছে বলে আমি মনে করি না।
আমার এসব কথায় অনেকের আঘাত লাগতে পারে, তবে আমি কাউকেই ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করবার উদ্দেশ্যে এসব কথা বলি নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।