আমি তখন ক্লাস ১০ এ পড়ি। আমাদের বাসায় একটা মেয়ে কাজ করত। আমার মামা মেয়েটিকে আমাদের বাসায় কাজ করার জন্য দিয়ে গিয়েছিলেন। ও ছিল আমার চেয়ে ২-৩ বছরের ছোট। ও আমাকে ভাইয়া ডাকত।
কিন্তু আমি ওর সাথে ভাল ব্যবহার করতাম না। তুই করে ডাকতাম। মাঝে মাঝে মারতামও। ও যেদিন এসেছিল তার পরের দিন আমি সোফায় বসে কোনো কাজ করছিলাম, ও এসে আমার পাশে বসল। আমার কাছে একটু খারাপ লাগল।
কিন্তু সেদিন কিছু বলিনি। পরবর্তী দুই তিনদিনও কিছু বলিনি। তারপর একদিন বললাম, "তুই কখনো সোফায় বসবি না। " এরপর থেকে ও আমার সামনে কখনো সোফায় বসেনি। একদিন আমি স্কুল থেকে এসেছি, দেখি ও সোফায় বসা।
আমাকে দেখে সাথে সাথে উঠে গেল। চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম খুব ভয় পেয়েছে। বকা দিলাম। কিন্তু মারলাম না। আমরা যখন সোফায় বসে, খাটে বসে, শুয়ে টিভি দেখতাম তখন ও ফ্লোরে বসে টিভি দেখত।
আমার কারণেই ও ঘাটে কিংবা সোফায় বসার সাহস করত না। ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম দেখে বাবা মা আমাকে বকা দিত। তারা আমাকে বোঝাতো যে ও বাবা মা ছেড়ে এখানে এসেছে, ওর সাথে তুই খারাপ ব্যবহার করবি না, ওকে মারবি না। কিন্তু আমি তাদের কথা শুনতাম না। বাবা বাসায় থাকলে অবশ্য মারতে পারতাম না।
বাবাকে ভয় পেতাম। এরপর একদিন শুনলাম ওকে দিয়ে ওর বাবা গার্মেন্সে কাজ করাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এস.এস.সি পরীক্ষার আগে বাড়ি গিয়েছিলাম। মেয়েটাও আমাদের সাথে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের সাথে আর ফিরল না।
আমরা যখন মামা বাড়িতে তখন ওর এক আত্মীয় এসে ওকে নিয়ে গেল। চলে যাওয়ার সময় নাকি আমার মাকে জড়িয়ে ধরে ও কেদেছিল। আমি তখন ছিলাম না। কাজিনদের সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম।
আজ যখন পত্রিকার পাতায় কাজের লোকদের উপর নির্যাতনের খবর দেখি তখন খুব খারাপ লাগে।
ওর কথা মনে পড়ে। জানিনা ও এখন কোথায় আছে। হয়তো ঢাকার কোনো গার্মেন্সেই চাকরি করছে। ওর সাথে দেখা হলে ওর প্রতি যে অন্যায় করেছি তার জন্য মাফ চেয়ে নিতাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।