চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)
আগের অংশ
ফিরে এসে কোনো ভূমিকা না দিয়েই বললেন, 'ম্যুনিকে নাবলুম এক বস্ত্রে। এমন ভান করে কেটে পড়লুম যাতে মেয়েটি মনে করে আমি ভ্যান থেকে মাল নামাতে গেলুম। যখন 'গুড বাই' বলে হাত বাড়ালুম তখন সে একবার আমার দিকে তাকিয়েছিল। প্রেমে পড়লে নাকি মানুষের পাখা গজায়--হবেও বা, কিন্তু একথা নিশ্চয় জানি মানুষ তখন চোখে মুখে এমন সব নূতন ভাষা পড়তে পারে যার জন্য কোন শব্দরূপ ধাতুরূপ মুখস্থ করতে হয় না। তবে সে পড়াতে ভল থাকে বিস্তর, কাকতালীয় এন্তার।
'
'আমি দেখলুম, লেখা রয়েছে 'বিষাদ' কিন্তু পড়লুম, 'এই কি শেষ'?'
আমিও অবাক হয়ে শুধালুম, 'বার্লিন থেকে ম্যুনিক অবধি হামলা করে স্টেশনে খেই ছেড়ে দিলেন?'
ডাক্তারদের বাঁকা হাসি হেসে বললেন, 'আদপেই না। কিন্তু কি আর দরকার পিছু নিয়ে? মেডিকেল কলেজে পড়ে, ওতেই ব্যস্। '
'সেদিনই গেলুম মেডিকেল কলেজের রেস্তোরাঁয়। লাঞ্চ খেতে নিশ্চয়ই আসবে। এবারে মেয়েটি আর লজ্জা দিয়ে মনের ভাব ঢাকতে পারল না।
আমাকে দেখা মাত্র আপন অজানাতে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে হাত বাড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত মুখে যে খুশী ছড়িয়ে পড়ল তা দেখে আমার মনে আর কোনো সন্দেহ রইল না, ভগবান মাঝে মাঝে বুদ্ধিমানকেও সাহায্য করেন।
'ততক্ষণে মেয়েটি তার আপন-হারা আচরণটাকে সামলে নিয়েছে--লজ্জা এসে আবার সমস্ত মুখ ঢেকে ফেলেছে। '
ডাক্তার খানিক্ষণ ভেবে নিয়ে বললেন, 'এখানেই যদি শেষ করা যেত তবে মন্দ হত না কিন্তু সর্দি-কাশির তো তা হলে কোনো হিল্লে হয় না। তাই কমিয়ে-সমিয়ে তাড়াতাড়ি শেষ করে দি।
'
আমি বললুম, 'কমাবেন না। তালটা একটু দ্রুত করে দিন। আমাদের দেশের ওস্তাদরা খানিকটে গান করেন বিলম্বিত একতালে, শেষ করেন দ্রুত তেতালে। '
ডাক্তার বললেন, 'দুঃখিনী মেয়ে। বাপ-মা নেই।
এক খাণ্ডার পিসির বাড়িতে মানুষ হয়েছে। দু'মুঠো খেতে দেয়, পরতে দেয়, ব্যস্। কলেজের ফীজটি পর্যন্ত বেচারী যোগাড় করে মাস্টারী করে। '
'তাতে আমার কিছু বলার নেই কিন্তু আমার ঘোরতর আপত্তি এভাবে বুড়ী এমনি নজরবন্দ করে রেখেছে যে চকিতা হরিণীর মত, সমস্তক্ষণ সে শুধু ডাইনে বাঁয়ে তাকায়, ঐ বুঝি পিসি দেখে ফেললে, সে পরপুরুষের সঙ্গে কথা কইছে। আমি তো বিদ্রোহ করে বললুম, 'এ কি বুখারার হারেম, না তুর্কী পাশার জেনা না? এ অত্যাচার আমি কিছুতেই সইব না।
এভা শুধু আমার হাত ধরে বলে, 'প্লীজ, প্লীজ, তুমি আর একটু বরদাস্ত করে নাই; আমি তোমাকে হারাতে চাইনে। ' এর বেশী সে কক্খনো কিছু বলেনি।
'এই মোকামে পৌঁছতে আমার লেগেছিল ঝাড়া একটি মাস। বিবেচনা করুন। সাত দিন লেগেছিল প্রেম নিবেদন করতে।
পনরো দিন লেগেছিল হাতখানি ছুঁতে। তারো এক সপ্তাহ পর সে আমায় বললে কেন সে এমন ভয়ে ভয়ে ডাইনে বাঁয়ে তাকায়। '
'থিয়েটার সিনেমা মাথায় থাকুন, আমার সাথে রাস্তায় বেরতে রাজী হয় না--পাছে পিসি দেখে ফেলে। আমি একদিন থাকতে না পেরে বললুম, 'তোমার পিসির কি কুইনটুপ্লেট আছে নাকি যে তারা ম্যুনিকের সব স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টে দাঁড়িয়ে তোমার উপর নজর রাখছে?' উত্তরে শুধু কাতর স্বরে বলে, 'প্লীজ, প্লীজ। '
'যা-কিছু আলাপ-পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা-আত্মিয়তা সব ঐ কলেজ-রেস্তোরাঁয় বসে সেখানে ভিড় সার্ডিন্-টিনের ভিতর মাছের মত।
চেয়ারে চেয়ারে ঠাসাঠাসি কিন্তু তার হাতে যে হাতখানা রাখব তারও উপায় নেই। কেউ যদি দেখে ফেলে। '
আমি বললুম,
'সমুখে রয়েছে সুধা পারাবার
নাগাল না পায় তবু আঁখি তার
কেমনে সরাব কুহেলিকার এই বাধা রে। '
ডাক্তার বললেন, 'মানে বলুন। '
আমি বললুম, 'আপ যাইয়ে, পরে বলবো।
'
ডাক্তার বললেন, 'সেই ভিড়ের মাঝখানে, কিম্বা করিডরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলাপচারিতা। করিডরে কথা কওয়া যায় প্রাণ খুলে, কিন্তু তবু আমি রেস্তোরাঁর ভিড়ই পছন্দ করতুম বেশী কারণ সেখানে দৈবাৎ, ক্কচিৎ কখনো এভা তার ছোট্ট জুতোটি দিয়ে আমার পায়ের উপর দিত চাপ। '
'তার মাধুর্য আপনাকে কি করে বোঝাই? এভাকে পরে নিবিড়তর করে চিনেছি কিন্তু সেই পায়ের চাপ যে আমাকে কত কথা বলেছে, কত আশ্বাস দিয়েছে সেটা কি করে বোঝাই?'
হয়ত তার চেনা কোনো এক ছোকরা স্টুডেন্ট এসে হাসিমুখে তাকে দু'টি কথা বললে। অত্যন্ত হার্মলেস; কিন্তু আমি হিংসায় জরজর। টেবিলের উপর রাখা আমার হাত দুটো কাঁপতে আরম্ভ করেছে, আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছিনে--
'এমন সময় সেই পায়ের মৃদু চাপ।
সব সংশয়ের অবসান, সব দুঃখ অন্তর্ধান। '
ডাক্তার বললেন, 'তাই আমার দুঃখ আর বেদনার অবধি রইল না। এই বিরাট ম্যুনিক শহরে লক্ষ লক্ষ নরনারী নিভৃতে মনের ভার নামাচ্ছে, নিষ্ঠুর সংসারে লড়বার শক্তি একে অন্যের সঙ্গসুখ স্পর্শসুখ থেকে আহরণ করে নিচ্ছে, আর আমি তারই মাঝে এমন কিছুই করে উঠতে পারছিনে যাতে করে এভাকে অন্তত একবারের মত কাছে টানতে পারি। '
'শেষটায় আর সইতে না পেরে একদিন এভাকে কিছু না বলে ফিরে গেলুম বার্লিন। সেখান থেকে লিখে জানালুম, 'ও রকম কাছে থেকে না পাওয়ার দুঃখ আমার পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে--আমার নার্ভস একদম গেছে।
তোমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসা আমার কিছুতেই হয়ে উঠত না--তোমার মুখের কাতর ছবি আমার চলে আসার সব শক্তি নষ্ট করে ফেলত। '
আমি বললুম, 'আপনি তো দারুণ লোক মশাই। তবে, হ্যাঁ, আপনাদের নীটশেই বলেছেন, 'কড়া না হলে প্রেম মেলে না'। '
ডাক্তার বললেন, 'ঠিক উল্টো। কড়া হতে পারলে ম্যুনিক থেকে পালাতুম না।
পলায়ন জিনিসটা কি বীরের লক্ষণ? তা সে কথা থাক। '
'উত্তর পেলুম সঙ্গে সঙ্গেই। সে চিঠিটা আমি এতবার পড়েছি, যে তার ফুলস্টপ, কমা পর্যন্ত আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। এবং তার চেয়েও বড় কথা , সে চিঠিটির বক্তব্য আমার কাছে সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য ঠেকলো। '
'আপনাদের দেশে অবিশ্বাস্য বলে কোনো জিনিস নেই--ভিখিরিকে মাথায় তুলে নিয়ে আপনাদের দেশে হাতী হামেশাই রাজা বানায়।
কিন্তু জর্মনিতে তো সেরকম ঐতিহ্য নেই। চিঠিতে লেখা ছিলঃ -
"বেশি লিখব না--আমারও অসহ্য হয়ে উঠেছে। তাই স্থির করেছি তোমার ইচ্ছামত তোমায় আমায় একবার নিভৃতে দেখা হবে। তারপর বিদায়। যতদিন পিসি আছেন ততদিন আমি আর কোনো পন্থা খুঁজে পাচ্ছিনে।
তুমি আসছে বুধবার দিন আমাদের বাড়ির সামনের ফুটপাতে অপেক্ষা করো। আমি তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে আসব। "
ডাক্তার বললেন, 'বিশ্বাস হয় আপনার; যে মেয়ে পিসির ভয়ে আমার সঙ্গে কলেজ রেস্তোরাঁর বাইরে যেতে রাজী হত না, সে আমাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে আপন ঘরে?'
আমি বললুম, 'পীরিতি-সায়রে ডোবারপূর্বে যে রাধা সাপের ছবিমাত্র দেখেই অজ্ঞান হতেন সেই রাধাই অভিসারে যাওয়ার সময় আপন হাত দিয়ে পথের পাশের সাপের ফনা চেপে ধরেছেন পাছে সাপের মাথার মণির আলোকে কেউ তাঁকে দেখে ফেলে। '
ডাক্তার বললেন, তাই বটে। তবে কি না আমি রাধার প্রেমকাহিনী কখনো পড়িনি।
সে কথা যাক। '
'আমি ম্যুনিক পৌঁছলুম বুধবার দিন সন্ধ্যের দিকে। কয়লার গুঁড়োয় সর্বাঙ্গ ঢেকে গিয়েছিল বলে ঢুকলুম একটা পাবলিক বাথে স্নান করতে। টাবে বসে সর্বশরীর ডলাই-মলাই করে আর গরম জলে সেদ্ধ চিংড়িটার মত লাল হয়ে যখন বেরলুম তখন আর হাতে বেশি সময় নেই। অথচ গরম টাব থেকে ও রকম হুট করে ঠাণ্ডায় বেরলে যে সঙ্গে সঙ্গে ঝপ্ করে সর্দি হয় সে কথাও জানি।
চানটা না করলেও যে হত সে তত্ত্বটা বুঝতে পারলুম রাস্তায় বেরিয়ে কিন্তু তখন আর আফসোস করে কোনো ফায়দা নেই। সেই ডিসেম্বরে শীতে চললুম এভার বাড়ির দিকে-- মা-মেরির উপর ভরসা করে, যে এ যাত্রায় সর্দিটা নাও হতে পারে। '
আমি বললুম, 'আমরা বাঙালায় বলি, 'দুগ্গা বলে ঝুলে পড়লুম। '
ডাক্তার বললেন, 'সাড়ে এগারটার সময় গিয়ে দাঁড়ালুম এভার বাড়ির সামনের রাস্তায়। টেম্পারেচার তখন শূন্যেরও নীচে--আপনাদের পাগলা ফারেন্হাইটের হিসেবে বত্রিশের ঢের নীচে।
রাস্তায় এক ফুট বরফ। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, আর আমার চতুর্দিকে যে হীম ঘনাতে লাগলো তার সঙ্গে তুলনা দিয়ে বলতে পারি আমাকে যেন কেউ একটা বিরাট ফ্রিজিডেরের ভিতর তালাবন্ধ করে রেখে দিল। '
'তিন মিনিট যেতে না যেতে নামল মুষলধারে--বৃষ্টি নয়--সর্দি। সঙ্গে সঙ্গে ডাইনামাইট ফাটার হাঁচি--হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো, হ্যাঁচ্চো। আপনার আজকের সর্দি তার তুলনায় নস্যি, অর্থাৎ নস্যির খোঁচায় নামানো আড়াই ফোঁটা জল।
হাঁচি আর জল, জল আর হাঁচি। '
'কি করি, কি করি ভাবছি, এমন সময় এভা এসে নিঃশব্দে আমার হাত ধরলো--বরফের গুঁড়োর উপর পায়ের শব্দ শোনা যায় না। তার উপর সে পরেছে সেই ক্রেপ-সোলের জুতো--বেচারীর মাত্র ঐ এক জোড়াই সম্বল।
'কোনো কথা না বলে আমাকে নিয়ে চলল তার সঙ্গে। ফ্লাটের দরজা খুলে, করিডরের খানিকটে পেরিয়েই তার কামরা।
নিঃশব্দে আমাকে সেখানে ঢুকিয়ে দরজায় খিল দিয়ে মাথা নীচু করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। '
'এভার গোলাপি মুখ ডাচ্ পনিরের মত হলদে, টুকটুকে লাল ঠোঁট দুটি ব্লু--ডানয়ুবের মত ঘন বেগুনি-নীল--ভয়ে, উত্তেজনায়। '
'আর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল আবার আমার সেই ডাইনামাইট ফাটানো হাঁচ্চো, হাঁচ্চো। '
'এভা আমাকে ধরে নিয়ে আমার মাথা গুঁজে দিল বিছানায়। মাথার উপরে চাপালো বালিশ আর সব ক'খানা লেপ-কম্বল।
বুঝতে পারলুম কেন; পাশে ঘরে পিসি যদি শুনতে পান তবেই হয়েছে। আমি প্রাণপণ হাঁচি চাপবার চেষ্টা করছি আর লেপ-কম্বলের ভিতর বমশেল্ ফাটাচ্ছি। '
'কতক্ষণ এ রকম কেটেছিল বলতে পারব না। হাঁচির শব্দ কিছুতেই থামছে না। এভা শুধু কম্বল চাপাচ্ছে, আমার দম বন্ধ হবার উপক্রম কিন্তু নিবিড় পুলকে বার বার আমার সর্বশরীর শিহরিত হচ্ছে--এভার হাতের চাপ পেয়ে।
'
'এমন সময় দরজায় ধাক্কা আর নারীকণ্ঠের তীব্র চিৎকার, 'দরজা খোল'। '
'পিসি!'
'আর লুকিয়ে লাভ নেই। আমি লেপের ভিতর থেকে বেরলুম। এভা ভয়ে ভিরমি গিয়েছে, খাটের উপর নেতিয়ে পড়েছে। '
'আমি দরজা খুলে দিলুম।
সাক্ষাৎ শকুনির মত বীভৎস এক বুড়ী ঘরে ঢুকে আমার দিকে না তাকিয়েই এভাকে বললো, 'কাল সকালেই তুই এ বাড়ী ছাড়বি'। '
'সঙ্গে সঙ্গে আর কি সব বকুনি দিয়েছিল, 'ঘেন্না', 'কেলেঙ্কারী', 'শোবার ঘরে পরপুরুষ', 'রাস্তার মেয়ের ব্যাভার', এই সব, সে আমার আর মনে নেই। বুড়ী আমার দিকে তাকায় না। গালের উপর গাল চড়ছে যেন ছ'গজী পিয়ানোর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অবধি কেউ আঙ্গুল চালাচ্ছে। '
'আমি আর থাকতে পারলুম না।
বুড়ীর দুই বাহু দু'হাত দিয়ে চেপে ধরে বললুম, 'আমার নাম পিটার সেল্বাখ্। বার্লিনে ডাক্তারি করি। ভদ্রঘরের ছেলে। আপনার ভাইঝিকে বিয়ে করতে চাই। '
ডাক্তার বললেন, 'মা-মেরি সাক্ষী, আমি এভাকে বিয়ে করার প্রস্তাব এত দিন করিনি পাছে সে 'না' বলে বসে।
আমি অপেক্ষা করছিলুম পরিচয়টা ঘনাবার জন্য বিয়ের প্রস্তাবটা আমার মুখ দিয়ে যে তখন কি করে বেরিয়ে গেল আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি। '
'পিসি আমার দিকে হাবার মত তাকালো--এক বিঘৎ চওড়া হা করে। পাকা দু'মিনিট তার লেগেছিল ব্যাপারটা বুঝতে। তারপর ফুটে উঠল মুখের উপর খুশীর পয়লা ঝলক। সেটা দেখতে আরো বীভৎস।
মুখের কুঁচকানো, এবড়ো-থেবড়ো গাল, ভাঙা-চোরা নাক-মুখ-চোঁট যেন আরো বিকৃত হয়ে গেল। '
'আমাকে জড়িয়ে ধরে কি যেন বলল ঠিক বুঝতে পারলুম না। তারপর হঠাৎ আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছুটল করিডরের দিকে। চিৎকার করে কাকে যেন ডাকছে। '
'এভা' তখনো অচৈতন্য।
'বুড়ী ফিরে এল বুড়োকে নিয়ে। বুড়ো ব্যাপারটা বুঝে নিয়েছে চট করে। তার চেহারার খুশীর পিছনে দেখলুম সেই ভীত ভাব--এভার মুখে যেটা অষ্টপ্রহর লেপা থাকে। বুঝলুম, পিসির দাপটে এ বাড়ির সকলেরই কণ্ঠশ্বাস। '
'মনে হল বুড়ো খুশী হয়েছে এভা যে এ বাড়ির অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছে তার জন্য।
হায়, তার তো নিষ্কৃতি নেই। '
ডাক্তার বললেন, 'সেই দুপুর রাতে ওয়াইন এল, শ্যাম্পেন এল। হোটেল থেকে সসেজ্, কটলেট্ এল। হৈহৈ রৈরৈ। এভা সম্বিতে ফিরেছে।
বুড়ো শ্যাম্পেন টানছে জলের মত। বুড়ী এক গেলাসেই টং। আমাকে জড়িয়ে ধরে শুধু কাঁদে আর এভার বাপের কথা স্মরণ করে বলে, ভাই বেঁচে থাকলে আজ সে কী খুশীটাই না হ'ত। '
'আর এভা? আমাকে শুধু একবার কানে কানে বলল, 'জীবনে এই প্রথম শ্যাম্পেন খাচ্ছি। তুমি আমার উপর একটু নজর রেখো'।
'
ডাক্তার উৎসাহিত হয়ে আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময়ে আস্তে আস্তে দরজা খুলে ঢুকলেন এক সুন্দরী--হ্যাঁ, সুন্দরী বটে।
এক লহমায় আমি নর্থ সীর ঘন নীল জল, দক্ষিণ ইটালির সোনালি রোদে রূপালি প্রজাপতি, ডানয়ুবের শান্ত-প্রশান্ত ছবি, সেই ডানয়ুবের লজ্জাশীল দেহছন্দ, রাইনল্যাণ্ডের শ্যামলিয়া মোহনীয়া ইন্দ্রজাল সব কিছুই দেখতে পেলুম।
আর সে কী লাজুক হাসি হেসে আমার দিকে তিনি হাত বাড়ালেন।
আমি মাথা নীচু করে ফরাসিস্ কায়দায় তার চম্পক করাঙ্গুলিপ্রান্তে ওষ্ঠ স্পর্শ করে মনে মনে বললুম,
"বেঁচে থাকো সর্দি-কাশি
চিরজীবী হয়ে তুমি। "
(সমাপ্ত)
দ্রঃ পুরো গল্পটি পি.ডি.এফ ভার্সনে পড়তে এবং সংগ্রহে রাখতে এখানে ক্লিক করুন।
কৃতজ্ঞতা: ব্লগার মানুষ ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।